স্ট্রোকে কথা বলা আর চলার শক্তি হারিয়ে ফেলা শাহরিয়ার যেভাবে সুস্থ হলেন
Published: 29th, October 2025 GMT
শাহরিয়ারের স্ত্রী আসমা-উল হুসনা ঘরে ঢুকে দেখেন, ছটফট করছেন শাহরিয়ার। বাঁ হাতে ফোন নিয়ে ফ্রন্ট ক্যামেরায় নিজেকে দেখার চেষ্টা করছেন; কিন্তু কিছুই বলছেন না। তখনো বিষয়টা বুঝে উঠতে পারছিলেন না আসমা। তবে শাহরিয়ার সম্ভবত বুঝেছিলেন, তাই দেখতে চেষ্টা করছিলেন তাঁর মুখটা বেঁকে গেছে কি না। ডান পাশটা অবশ হয়ে যাওয়ায় ব্যবহার করেছিলেন বাঁ হাত। তবে সেই সময়ের কথা এখন আর শাহরিয়ারের মনে নেই।
দ্রুত শুরু হলো স্ট্রোকের চিকিৎসাশাহরিয়ারের ভাইকে দ্রুত খবর দেওয়া হলো। তিনি এসে হুইলচেয়ারে করে ভাইকে হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করলেন। বাসার খুব কাছেই স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেড। সেখানকার জরুরি বিভাগে যাওয়ার পর জানা গেল, শাহরিয়ারের স্ট্রোক হয়েছে। মস্তিষ্কের রক্তনালির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ার কারণে এই স্ট্রোক হয়।
স্ট্রোকে অবশ হয়ে যাওয়া দেহে আগের মতো শক্তি ফিরে পাওয়াটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। বছরের পর বছর বিছানায় পড়ে থাকেন বহু রোগী। কথা বলার ক্ষমতাও অনেকের থাকে না। দীর্ঘ মেয়াদে দেখা দিতে পারে নানান জটিলতা। তবে স্ট্রোকের আধুনিক চিকিৎসা রয়েছে। এই চিকিৎসাপদ্ধতির নাম থ্রম্বোলাইসিস। সঠিক সময়ে থ্রম্বোলাইসিস করা হলে জটিলতা অনেক কমে যায়। সহজে সুস্থ হয়ে ওঠেন রোগী। তবে সব হাসপাতালে থ্রম্বোলাইসিসের সুযোগ নেই। আর অন্যান্য চিকিৎসার মতো এরও কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ভয় থাকে। তাই সব দিক ভেবেই সিদ্ধান্ত নিতে হয়। একদিকে সুস্থতার আশা, অন্যদিকে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার আশঙ্কা। দ্রুততম সময়ে নিউরো আইসিইউতে নেওয়া হলো শাহরিয়ার কবীরকে। করা হলো থ্রম্বোলাইসিস।
আরও পড়ুননারীদের স্ট্রোক কেন বেশি হয়২৪ জুন ২০২৫চিকিৎসার বাকি ধাপস্ট্রোকের পর একটু একটু করে স্বাভাবিক হচ্ছেন শাহরিয়ার.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বাবার কবরে শায়িত বিজ্ঞানী ও লেখক রেজাউর রহমান
বাবার কবরে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ও বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক ড. রেজাউর রহমান। গতকাল বুধবার তাঁকে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে সলিমুল্লাহ রোড জামে মসজিদ কমপ্লেক্স কবরস্থানে বাবা ফজলুর রহমানের কবরে দাফন করা হয়। এর আগে বাদ আসর এই মসজিদে মরহুমের তৃতীয় জানাজা হয়।
ধানমন্ডির ১২/এ সড়কের তাকওয়া মসজিদে বাদ জোহর রেজাউর রহমানের প্রথম জানাজা সম্পন্ন হয়। এখানে মসজিদের মুসল্লিরা ছাড়াও মরহুমের আত্মীয়, সুহৃদ, অনুরাগী ও শুভানুধ্যায়ী, স্কুল–কলেজের সতীর্থদের অনেকে অংশ নেন। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ পরে দাফনেও অংশ নিয়েছেন। জানাজা ও দাফনে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, শিল্পী রফিকুন নবী, প্রাবন্ধিক মফিদুল হক, শিল্পী আবুল বার্ক্ আলভী, মনিরুল ইসলাম, অধ্যাপক সৈয়দ আজিজুল হক, প্রাণিবিজ্ঞানী অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম, এথিকস অ্যাডভান্স টেকনোলজি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ মুবিন খান, লেখক আনিসুল হকসহ কবি, শিল্পী, চিকিৎসকদের অনেকে।
প্রথম জানাজার পরে শেষবারের মতো রেজাউর রহমানের মরদেহ তাঁর ধানমন্ডির বাসভবনে আনা হয়। এখানে পরিবারের সদস্য, বিশেষত নারী আত্মীয়স্বজনসহ অনেকে শেষবারের মতো তাঁকে দেখতে আসেন। বাসভবন ছেড়ে যাওয়ার আগে এখানে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিবেশী ও স্বজনেরা জানাজায় অংশ নেন। এরপর দাফনের জন্য মোহাম্মদপুর সলিমুল্লাহ রোড জামে মসজিদে আনা হয়।
রেজাউর রহমান ৮১ বছর বয়সে ২৬ অক্টোবর রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় ল্যাবএইড হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন।
আরও পড়ুনরেজাউর রহমানের চলে যাওয়া শুধু ব্যক্তিগত ক্ষতি নয়…২৭ অক্টোবর ২০২৫ব্যক্তিগত জীবনে বিনয়ী ও সদাচারী ছিলেন রেজাউর রহমান। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান বিভাগ থেকে ১৯৬৫ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন। পরে ১৯৭৯ সালে চেক একাডেমি অব সায়েন্সেস-প্রাগ থেকে কীটতত্ত্বে পিএইচডি সম্পন্ন করেন। দীর্ঘ ৩৫ বছর কাজ করেছেন বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনে। পেশাগত জীবনে কীটপতঙ্গ নিয়ে দেশ-বিদেশে গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা করেছেন তিনি।
পেশাগতভাবে বিজ্ঞানী হলেও লেখক
হিসেবে রেজাউর রহমান বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। দেশের বিজ্ঞানবিষয়ক লেখক হিসেবে তিনি ছিলেন বিশিষ্ট স্থানে। বিজ্ঞানে সামগ্রিক অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৪ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। সাহিত্যচর্চা ও বিজ্ঞান গবেষণার পাশাপাশি দেশের বিজ্ঞানচর্চার বিভিন্ন আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন রেজাউর রহমান।
আরও পড়ুনগ্রহান্তরে ভালো থাকবেন ড. রেজাউর রহমান২৮ অক্টোবর ২০২৫