নারায়ণগঞ্জে আদালত প্রাঙ্গণে মামলার বাদীর পরিবারকে মারধরের ঘটনায় মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ও আইনজীবী সাখাওয়াত হোসেন খানের বিরুদ্ধে অবশেষে মামলা নিয়েছে পুলিশ। আজ বুধবার দুপুরে ফতুল্লা মডেল থানার পুলিশ মামলাটি নেয়। বাদী রাজিয়া সুলতানা মামলায় সাখাওয়াত হোসেন ছাড়াও ৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।

মামলার অপর আসামিরা হলেন ইসমাঈল হোসেন (৪৬), হিরণ (৩৮), শাহ্ আলম (৪৮), টিটু (৫০), রাসেল ব্যাপারী (৩৫), খোরশেদ আলম, আল আমিন, বিল্লাল হোসেন।

এর আগে ফতুল্লা মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দিলেও বিএনপি নেতা সাখাওয়াত হোসেনের নাম থাকায় মামলা নিতে পুলিশ গড়িমসি করে বলে অভিযোগ করেছিলেন রাজিয়া সুলতানা ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা। এ ঘটনায় রাজিয়া সুলতানা তাঁর পরিবার নিয়ে থানার সামনে অবস্থান নেন। সাখাওয়াত হোসেন নারায়ণগঞ্জ-৫ (শহর-বন্দর) আসনের বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী। তিনি নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি।

আরও পড়ুনআদালত প্রাঙ্গণে সন্তানের সামনে বাবা-মাকে মারধর, মামলা না নেওয়ায় থানায় অবস্থান২৮ অক্টোবর ২০২৫

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ফতুল্লা মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আনোয়ার হোসেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা, মারধর, চুরি ও শ্লীলতাহানির অভিযোগে মামলা করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় রাত পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।

মামলার এজাহারে বাদী রাজিয়া সুলতানা উল্লেখ করেন, তাঁর স্বামী ইরফান ভুঁইয়া দীর্ঘদিন ধরে ইসদাইর এলাকার ইসমাইলের কাছে ২৫ লাখ টাকা পাওনা ছিলেন। এক বছর ধরে টাকা ফেরত না পেয়ে টালবাহানা করতে থাকেন। এর জের ধরে সাখাওয়াত হোসেনের হুকুমে আসামিরা তাঁদের হুমকি দিয়ে আসছিলেন। পাওনা টাকার জন্য তাঁরা আদালতে মামলা করেন। ওই মামলার জেরে ২৬ অক্টোবর দুপুর ১২টার দিকে তিনি (বাদী) ও তাঁর স্বামী ইরফান মিয়া আদালতপাড়া এলাকায় উপস্থিত হলে প্রধান অভিযুক্ত সাখাওয়াত হোসেন খানের নির্দেশে ইসমাইলসহ আরও কয়েকজন তাঁদের ওপর হামলা চালান। হামলাকারীরা তাঁকে ও তাঁর স্বামীকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন, পরে এলোপাতাড়ি কিলঘুষি ও লাথি মেরে রক্তাক্ত জখম করেন।

রাজিয়া সুলতানার অভিযোগ, হামলার সময় তাঁর জামাকাপড় ছিঁড়ে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করা হয়। হামলাকারীরা তাঁর স্বামীর কাছ থেকে নগদ ৬৫ হাজার ৫২৭ টাকা, ২টি মুঠোফোন এবং তাঁর গলা থেকে সোনার চেইন ছিনিয়ে নেন। এ সময় তাঁদের চিৎকার শুনে ছেলে জিদান (১৭) ও আবদুল্লাহ (৫) এগিয়ে এলে তাঁদেরও পিটিয়ে আহত করা হয়।

এর আগে সোমবার দুপুরে বাদী, তাঁর সন্তানসহ পরিবারের চার সদস্যকে সাখাওয়াত হোসেনের অনুসারী আইনজীবী ও সহকারীর মাররের ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

অভিযোগ অস্বীকার করে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘ঘটনার সময় আমি সেখানে ছিলাম না। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে আমি কোথাও নেই। আমি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী। একটি পক্ষ ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে।’

এ বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, মামলা হয়েছে। মামলা করার পর যা যা প্রক্রিয়া অনুসরণ করা দরকার, তার সবই করা হবে।

আরও পড়ুননারায়ণগঞ্জে আদালত প্রাঙ্গণে বাদীর ওপর হামলা, অভিযোগ বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে২৬ অক্টোবর ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ পর ব র ঘটন য় ব এনপ

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজকে আরও এক মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হলো

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) সাবেক প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজকে মারধর, অপহরণচেষ্টা ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগে করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

আজ রোববার বাদীপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসান গ্রেপ্তার আবেদন মঞ্জুর করেন। পরে এ মামলায় তুরিনের পক্ষে জামিন শুনানি করেন আইনজীবী মোরশেদ হোসেন শাহীন।

শুনানিতে আইনজীবী বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দায়িত্ব পালনের কারণে তাঁর (তুরিন আফরোজ) বিরুদ্ধে বারবার মামলা দেওয়া হচ্ছে। এ পর্যন্ত তাঁর বিরুদ্ধে জুলাই আন্দোলনের হত্যা ও হত্যাচেষ্টা এবং সর্বশেষ আজ অপহরণ ও মারধরের অভিযোগে মোট ছয়টি মামলা হয়েছে।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, আজ সকালে তুরিন আফরোজকে আদালতে এনে হাজতখানায় রাখা হয়। হেলমেট ও বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরিয়ে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আদালতের উদ্দেশে হাজতখানা থেকে বের করা হয়। এ সময় তাঁর দুই পাশে দুই হাত ধরে রাখেন পুলিশের নারী সদস্যরা। সামনে ও পেছনে ছিলেন ১৫ থেকে ২০ জন পুলিশ সদস্য। নবম তলার ৩২ নম্বর আদালতে তোলার সময় তাঁকে হাস্যোজ্জ্বল দেখা যায়। আদালতের কাঠগড়ায় তোলার সময় তাঁর মাথার হেলমেট খুলে রাখা হয়। বিচারের জন্য অপেক্ষাধীন থাকা অবস্থায় আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেন তিনি।

পরে জানানো হয়, ৩৩ নম্বর আদালতে শুনানি হবে। আবারও হেলমেট ও জ্যাকেট পরিয়ে ৩৩ নম্বর আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের একজন আইনজীবী হাসিখুশির কারণ জানতে চেয়ে দূর থেকে প্রশ্ন করলে তিনি কোনো জবাব দেননি। পরে আদালতে তুরিন আফরোজকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করা হয়।

পরে বিচারকের অনুমতি নিয়ে আসামিপক্ষের আইনজীবী মোরশেদ হোসেন শাহীন বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দায়িত্ব পালনের কারণে তাঁর বিরুদ্ধে বারবার মামলা দেওয়া হচ্ছে। এ পর্যন্ত তাঁর বিরুদ্ধে মোট ছয়টি মামলা হয়েছে। এ মামলার অভিযোগ ২০২২ সালের। অভিযোগ আনা হয়েছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রভাব খাটিয়েছেন তিনি। কিন্তু তিনি ২০১৯ সালে ট্রাইব্যুনাল থেকে পদত্যাগ করেছেন। তিন বছর পর কীভাবে তিনি প্রভাব খাটাবেন? তখন তো তাঁর হাতে কোনো ক্ষমতাই নেই।

আইনজীবী বলেন, ‘তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো মিথ্যা। হয়রানি করার জন্য মিথ্যা অভিযোগে মামলা করা হয়েছে। তিনি অসুস্থ, জামিন পেলে পলাতক হবেন না। যেকোনো শর্তে তাঁর জামিন আবেদন করছি।’

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মো. কাইয়ুম হোসেন নয়ন বলেন, তুরিন আফরোজ বাদীর কাছ থেকে ৭৮ লাখ টাকায় দুটি বাস কিনেছেন। কিন্তু সব টাকা পরিশোধ না করে বাস নিয়ে যান। বাকি টাকা চাইতে গেলে তুরিন আফরোজ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের প্রভাব খাটিয়ে বাদীকে হুমকি দেন এবং বাদীর বাসায় গিয়ে ভাঙচুরের পর তাঁর মেয়েকে অপহরণের চেষ্টা করেন। ২০২২ সালে মামলা করতে গেলে থানা মামলা নেয়নি। পরে তিনি আদালতে মামলা করেন।

শুনানি শেষে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ১ জুলাই দুটি বাস কেনার জন্য বাদীর সঙ্গে ৭৮ লাখ টাকার চুক্তি করেন আসামি তুরিন আফরোজ। এরপর আসামি ৪৮ লাখ টাকা পরিশোধ করে অবশিষ্ট টাকা ২৪ মাসের মধ্যে পরিশোধ করবেন বলে বাস দুটি নিয়ে যান। পরে আসামি কোনো কিস্তির টাকা পরিশোধ না করে বাদীকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেন এবং মারধর করে পেশার প্রভাব দেখান।

অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, ২০২২ সালের ৫ এপ্রিল বাদী আসামির কাছে আবার টাকা চাইলে আসামির নির্দেশে ২৫ থেকে ৩০ জন অজ্ঞাতানামা সন্ত্রাসী বাদীর বাসায় গিয়ে বাদীকে অস্ত্রের মুখে মারধর করেন এবং বাদীর সাত বছরের কন্যাসন্তানকে অপহরণের চেষ্টা করেন। ওই সময় বাদী ৯৯৯–এ কল দিলে পুলিশের উপস্থিতিতে বাদীর কন্যাসন্তানকে বাসার বাইরে রেখে যান।

ওই ঘটনায় ২০২২ সালের ১৩ এপ্রিল নাবিশা এন্টারপ্রাইজের প্রতিষ্ঠাতা মনজুর আলম নাহিদ বাদী হয়ে অপহরণচেষ্টা, মারধর ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগে আদালতে মামলাটি করেন।

গত ৭ এপ্রিল রাতে উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরের ১১ নম্বর রোডের বাসা থেকে তুরিন আফরোজকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরের দিন একটি হত্যাচেষ্টা মামলায় তাঁর চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ঢাকার সিএমএম আদালত। এর পর থেকে তিনি কারাগারে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার চলাকালে ২০১৩ থেকে ২০১৯ সালের নভেম্বর পর্যন্ত প্রসিকিউটরের দায়িত্বে ছিলেন তুরিন আফরোজ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজকে আরও এক মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হলো
  • টিএফআই সেলে গুমের মামলায় অভিযোগ গঠন বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের আদেশ ২১ ডিসেম্বর
  • ওসমান হাদীর উপর গুলির ঘটনায় মাসুদুজ্জামানের তীব্র নিন্দা 
  • ওসমান হাদীর উপর গুলির ঘটনায় মাসুদুজ্জামানের গভীর নিন্দা 
  • ইরানে নোবেলজয়ী মানবাধিকারকর্মী নার্গিস মোহাম্মদি গ্রেপ্তার
  • বিপিএলে ফিক্সিং: অভিযুক্তদের বিচার হবে ট্রাইব্যুনালে
  • আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নকে ফরিদপুর–৪ আসনে অন্তর্ভুক্ত করে গেজেট প্রকাশের নির্দেশ
  • বিয়ে-তালাকের তথ্য ডিজিটাল পদ্ধতিতে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক: হাইকোর্ট
  • মানিকগঞ্জ শহরে ককটেল বিস্ফোরণ
  • রিট খারিজ, জোটে গেলেও নিজ দলের প্রতীকে ভোট করার বিধান বহাল