স্বাধীন উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে পুরো মেট্রোরেল প্রকল্পের কাঠামোগত (সব লাইন ও পিলার) সক্ষমতা ও নিরাপত্তা নিরীক্ষা বিষয়ে বিস্তৃত তদন্ত করে ৩০ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

পৃথক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে আজ বুধবার বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি মো. আসিফ হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। তা পালন করতে হবে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিবকে।

একই সঙ্গে একটি রুলও দিয়েছেন হাইকোর্ট। নিহত আবুল কালামের পরিবারকে পর্যাপ্ত এবং অবিলম্বে দুই কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব, ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান প্রকৌশলীসহ বিবাদীদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

এক বছর আগে ঢাকার মেট্রোরেলের স্তম্ভের একটি বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ার পর গত রোববার (২৬ অক্টোবর) আবার একই ঘটনা ঘটে। এবার আবুল কালাম নামের পথচারী এক যুবকের মৃত্যু ঘটে। তাঁর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে পাঁচ লাখ টাকা দেওয়ার ঘোষণা সেদিনই দিয়েছিল সরকার, সেই সঙ্গে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়।

ওই দুটি ঘটনার প্রেক্ষাপট, কারণ ও ব্যক্তির মৃত্যুর কারণ উদ্ঘাটন এবং সংশ্লিষ্টদের গাফিলতি বা অবহেলা আছে কি না, তা নিরূপণে একটি স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠন করে বিস্তারিত তদন্তের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনা চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আবদুল্লাহ আল মামুন গত সোমবার একটি রিট আবেদন করেন।

ভুক্তভোগী পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে এবং পুরো মেট্রোরেল প্রকল্পের কাঠামোগত সক্ষমতা ও নিরাপত্তা নিরীক্ষা বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশনা চেয়ে একই দিন আরেকটি রিট আবেদন করেন ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্য আইনজীবী তনু হাওলাদার। আবেদন দুটির শুনানি নিয়ে আদালত আজ আদেশের জন্য রেখেছিলেন।

এদিকে মেট্রোরেল দুর্ঘটনায় ভুক্তভোগীদের ক্ষতিপূরণ দিতে সংশ্লিষ্ট আইন সংশোধন এবং নিহত আবুল কালামের পরিবারকে ৫০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশনা চেয়ে করা আরেকটি আবেদন আজ হাইকোর্টে দাখিল করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুমাইয়া বিনতে তানভীর। এটি সম্পূরক কার্যতালিকায় ওঠে।

তিনটি আবেদনের ওপর একসঙ্গে আদেশ দেওয়া হয়। পরবর্তী আদেশের জন্য আগামী ৩ ডিসেম্বর দিন রেখেছেন আদালত। আদালতে শুনানিতে রিট আবেদনকারী তিনজনই ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মুহাম্মদ শফিকুর রহমান ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইকরামুল কবির।

আদেশের পর আইনজীবী তানভীর আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক, অবকাঠামো বিষয়ক প্রকৌশলী ও বেসরকারি বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে স্বাধীন, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ওই কমিটি গঠন করতে হবে। মেট্রোরেল দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে আঘাতপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ প্রদান বিষয়ে বিস্তারিত বিধান অন্তর্ভুক্ত করে সংশ্লিষ্ট আইন সংশোধনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, সে বিষয়েও রুলে জানতে চাওয়া হয়েছে।

আইনজীবী সুমাইয়া বিনতে তানভীর প্রথম আলোকে বলেন, মেট্রোরেল আইন ২০১৫ সালে প্রণীত হয়েছিল। এই আইনের ২৫ ধারায় বলা আছে যে মেট্রোরেল পরিচালনার সময় দুর্ঘটনার ফলে যদি কোনো ব্যক্তি আঘাতপ্রাপ্ত বা ক্ষতিগ্রস্ত হন বা আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মারা যান, তাহলে লাইসেন্সি তাঁকে বা ক্ষেত্রমতে তাঁর পরিবারকে বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতি ও পরিমাণে ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য থাকবেন। এই আইনের অধীনে ২০১৬ সালে মেট্রোরেল বিধিমালা হয়। তবে এতে ক্ষতিপূরণ বিষয়ে কোনো পদ্ধতি বা পরিমাণ উল্লেখ নেই। যে কারণে রিটে সংশ্লিষ্ট আইন সংশোধনের নির্দেশনাও চান তিনি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: দ র ঘটন গঠন কর আইনজ ব ক ষমত

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজকে আরও এক মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হলো

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) সাবেক প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজকে মারধর, অপহরণচেষ্টা ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগে করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

আজ রোববার বাদীপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসান গ্রেপ্তার আবেদন মঞ্জুর করেন। পরে এ মামলায় তুরিনের পক্ষে জামিন শুনানি করেন আইনজীবী মোরশেদ হোসেন শাহীন।

শুনানিতে আইনজীবী বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দায়িত্ব পালনের কারণে তাঁর (তুরিন আফরোজ) বিরুদ্ধে বারবার মামলা দেওয়া হচ্ছে। এ পর্যন্ত তাঁর বিরুদ্ধে জুলাই আন্দোলনের হত্যা ও হত্যাচেষ্টা এবং সর্বশেষ আজ অপহরণ ও মারধরের অভিযোগে মোট ছয়টি মামলা হয়েছে।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, আজ সকালে তুরিন আফরোজকে আদালতে এনে হাজতখানায় রাখা হয়। হেলমেট ও বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরিয়ে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আদালতের উদ্দেশে হাজতখানা থেকে বের করা হয়। এ সময় তাঁর দুই পাশে দুই হাত ধরে রাখেন পুলিশের নারী সদস্যরা। সামনে ও পেছনে ছিলেন ১৫ থেকে ২০ জন পুলিশ সদস্য। নবম তলার ৩২ নম্বর আদালতে তোলার সময় তাঁকে হাস্যোজ্জ্বল দেখা যায়। আদালতের কাঠগড়ায় তোলার সময় তাঁর মাথার হেলমেট খুলে রাখা হয়। বিচারের জন্য অপেক্ষাধীন থাকা অবস্থায় আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেন তিনি।

পরে জানানো হয়, ৩৩ নম্বর আদালতে শুনানি হবে। আবারও হেলমেট ও জ্যাকেট পরিয়ে ৩৩ নম্বর আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের একজন আইনজীবী হাসিখুশির কারণ জানতে চেয়ে দূর থেকে প্রশ্ন করলে তিনি কোনো জবাব দেননি। পরে আদালতে তুরিন আফরোজকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করা হয়।

পরে বিচারকের অনুমতি নিয়ে আসামিপক্ষের আইনজীবী মোরশেদ হোসেন শাহীন বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দায়িত্ব পালনের কারণে তাঁর বিরুদ্ধে বারবার মামলা দেওয়া হচ্ছে। এ পর্যন্ত তাঁর বিরুদ্ধে মোট ছয়টি মামলা হয়েছে। এ মামলার অভিযোগ ২০২২ সালের। অভিযোগ আনা হয়েছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রভাব খাটিয়েছেন তিনি। কিন্তু তিনি ২০১৯ সালে ট্রাইব্যুনাল থেকে পদত্যাগ করেছেন। তিন বছর পর কীভাবে তিনি প্রভাব খাটাবেন? তখন তো তাঁর হাতে কোনো ক্ষমতাই নেই।

আইনজীবী বলেন, ‘তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো মিথ্যা। হয়রানি করার জন্য মিথ্যা অভিযোগে মামলা করা হয়েছে। তিনি অসুস্থ, জামিন পেলে পলাতক হবেন না। যেকোনো শর্তে তাঁর জামিন আবেদন করছি।’

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মো. কাইয়ুম হোসেন নয়ন বলেন, তুরিন আফরোজ বাদীর কাছ থেকে ৭৮ লাখ টাকায় দুটি বাস কিনেছেন। কিন্তু সব টাকা পরিশোধ না করে বাস নিয়ে যান। বাকি টাকা চাইতে গেলে তুরিন আফরোজ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের প্রভাব খাটিয়ে বাদীকে হুমকি দেন এবং বাদীর বাসায় গিয়ে ভাঙচুরের পর তাঁর মেয়েকে অপহরণের চেষ্টা করেন। ২০২২ সালে মামলা করতে গেলে থানা মামলা নেয়নি। পরে তিনি আদালতে মামলা করেন।

শুনানি শেষে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ১ জুলাই দুটি বাস কেনার জন্য বাদীর সঙ্গে ৭৮ লাখ টাকার চুক্তি করেন আসামি তুরিন আফরোজ। এরপর আসামি ৪৮ লাখ টাকা পরিশোধ করে অবশিষ্ট টাকা ২৪ মাসের মধ্যে পরিশোধ করবেন বলে বাস দুটি নিয়ে যান। পরে আসামি কোনো কিস্তির টাকা পরিশোধ না করে বাদীকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেন এবং মারধর করে পেশার প্রভাব দেখান।

অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, ২০২২ সালের ৫ এপ্রিল বাদী আসামির কাছে আবার টাকা চাইলে আসামির নির্দেশে ২৫ থেকে ৩০ জন অজ্ঞাতানামা সন্ত্রাসী বাদীর বাসায় গিয়ে বাদীকে অস্ত্রের মুখে মারধর করেন এবং বাদীর সাত বছরের কন্যাসন্তানকে অপহরণের চেষ্টা করেন। ওই সময় বাদী ৯৯৯–এ কল দিলে পুলিশের উপস্থিতিতে বাদীর কন্যাসন্তানকে বাসার বাইরে রেখে যান।

ওই ঘটনায় ২০২২ সালের ১৩ এপ্রিল নাবিশা এন্টারপ্রাইজের প্রতিষ্ঠাতা মনজুর আলম নাহিদ বাদী হয়ে অপহরণচেষ্টা, মারধর ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগে আদালতে মামলাটি করেন।

গত ৭ এপ্রিল রাতে উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরের ১১ নম্বর রোডের বাসা থেকে তুরিন আফরোজকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরের দিন একটি হত্যাচেষ্টা মামলায় তাঁর চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ঢাকার সিএমএম আদালত। এর পর থেকে তিনি কারাগারে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার চলাকালে ২০১৩ থেকে ২০১৯ সালের নভেম্বর পর্যন্ত প্রসিকিউটরের দায়িত্বে ছিলেন তুরিন আফরোজ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজকে আরও এক মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হলো
  • টিএফআই সেলে গুমের মামলায় অভিযোগ গঠন বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের আদেশ ২১ ডিসেম্বর
  • ইরানে নোবেলজয়ী মানবাধিকারকর্মী নার্গিস মোহাম্মদি গ্রেপ্তার
  • বিপিএলে ফিক্সিং: অভিযুক্তদের বিচার হবে ট্রাইব্যুনালে
  • আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নকে ফরিদপুর–৪ আসনে অন্তর্ভুক্ত করে গেজেট প্রকাশের নির্দেশ
  • বিয়ে-তালাকের তথ্য ডিজিটাল পদ্ধতিতে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক: হাইকোর্ট
  • মানিকগঞ্জ শহরে ককটেল বিস্ফোরণ
  • রিট খারিজ, জোটে গেলেও নিজ দলের প্রতীকে ভোট করার বিধান বহাল