আসামে রবীন্দ্র সংগীত গাওয়ায় কংগ্রেসের বাঙালি নেতাকে বাংলাদেশি বলে কটাক্ষ মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত বিশ্বশর্মার

ভারতের আসামের শ্রীভূমি জেলায় জাতীয় কংগ্রেসের এক কর্মসূচিতে ভারতের জাতীয় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘আমার সোনার বাংলা’ গাওয়া নিয়ে রাজ্যটির রাজনীতিতে তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। 

আরো পড়ুন:

৯ দিনে রাশমিকার সিনেমার আয় কত?

বাবা হতে যাচ্ছেন ‘বাহুবলি’ সিনেমার ‘বল্লালদেব’!

অনুষ্ঠানে জেলা পর্যায়ের এক কংগ্রেস নেতা ‘আমার সোনার বাংলা’ আমি তোমায় ভালোবাসি’ গানটি নিজস্ব কণ্ঠে গাওয়ার অপরাধে রাতারাতি তাকে বাংলাদেশি তকমা লাগিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে শাসক দল বিজেপির বিরুদ্ধে।

ঘটনাচক্রে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই গানটি প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশের ‘জাতীয় সংগীত’ হিসেবে পরিচিত। বিজেপির অভিযোগ, কংগ্রেস এখন ‘বাংলাদেশমুগ্ধ’। তাদের বক্তব্য, ‘এমন এক সময় এই ঘটনা ঘটল যখন বাংলাদেশের নতুন মানচিত্রে উত্তর-পূর্ব ভারতের বেশিরভাগ অংশকে নিজেদের বলে দেখানো হয়েছে।’ ঘটনাটি নিয়ে বিজেপি রাজনীতির মাঠ গরম করার চেষ্টা করলেও, কংগ্রেস এনিয়ে মাথা ঘামাতে নারাজ।

বিজেপির অভিযোগকে ‘অযৌক্তিক’ বলছেন অনেকেই। কারণ, ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ গানটি মূলত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা, যা দেশপ্রেমের গান হিসাবে পরিচিত। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে তিনি গানটি লিখেছিলেন। গানটি তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারের বিভাজন নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদের প্রতীক হয়ে উঠেছিল। ১৯১১ সালে সেই বঙ্গভঙ্গ প্রত্যাহার করা হয়। স্বাধীন হওয়ার বহু বছর পর ১৯৭১ সালে ‘আমার সোনার বাংলা’কে নিজেদের জাতীয় সংগীত হিসেবে গ্রহণ করে বাংলাদেশ।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখায় বাংলার প্রকৃতি, মাটি, আর মানুষের প্রতি ভালবাসা উঠে এসেছে। দুই বাংলার বাঙালিরা এখনও গানটি নানা অনুষ্ঠানে গেয়ে থাকেন। এমনকি, দেশের নানা প্রান্তে বাঙালি রেস্তোরাঁগুলোর নামেও ‘আমার সোনার বাংলা’ ব্যবহৃত হয়। ফলে আসামের শ্রীভূমি জেলা, যার ভৌগোলিক অবস্থান প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশের সীমানার খুব কাছাকাছি এবং বরাক উপত্যকার অন্তর্গত, সেখানে এই গান গাওয়া আদৌ আশ্চর্যের নয় বলে মনে করছেন অনেকেই।

এই বিতর্কে মুখ খুলেছেন কংগ্রেস সাংসদ তথা লোকসভার ডেপুটি লিডার গৌরব গগৈ। তার বক্তব্য, “বিধুভূষণ দাস, ৮০ বছরের একজন প্রবীণ সদস্য, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘আমার সোনার বাংলা’ আমি তোমায় ভালোবাসি গেয়েছেন। বিজেপি বলছে, এটা নাকি বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের গান। তারা বুঝতেই পারছে না এই গানের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব কতটা।”

তিনি আরো বলেন, “রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জাতীয় কবি হিসাবে ভারতের গর্ব এবং নোবেলজয়ী সাহিত্যিক। একটা বাংলা গান গাওয়া মানে আমাদের ঐতিহ্য ও সাহিত্যিক উত্তরাধিকারের উদযাপন, সেটাকে কেন বিকৃতভাবে দেখা হবে?”

তবে বিজেপি কিন্তু নিজের কথায় অনড়। দলের আসাম শাখা সামাজিক মাধ্যমে লিখেছে, “সংকেত একদম পরিষ্কার। কয়েক দিন আগেই বাংলাদেশ সাহস করে এমন মানচিত্র প্রকাশ করেছে যেখানে গোটা উত্তর-পূর্বকে নিজেদের অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। আর এখন সেই বাংলাদেশমুগ্ধ কংগ্রেস আসামে বসে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত গাইছে! এর পরেও কেউ যদি বোঝে না কী পরিকল্পনা চলছে, তাহলে হয় সে অন্ধ নয়তো সহযোগী।”

আসামের মন্ত্রী অশোক সিংহলও লিখেছেন, “বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা’ গাওয়া হয়েছে আসামের শ্রীভূমিতে কংগ্রেসের এক সভায়, সেই দেশ, যারা উত্তর-পূর্বকে আলাদা করতে চায়! এখন স্পষ্ট কেন কংগ্রেস বছরের পর বছর বেআইনি অনুপ্রবেশকারীদের উৎসাহ দিয়েছে, ভোটব্যাংক রাজনীতির জন্য, রাজ্যের জনতাত্ত্বিক ভারসাম্য নষ্ট করতেই।”

আসামের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত বিশ্ব শর্মা বিষয়টিকে জাতীয় স্তরের রাজনৈতিক বিতর্কে নিয়ে যেতে চান বলে জানিয়েছেন। তার জন্য তিনি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সংশ্লিষ্ট জাতীয় কংগ্রেস নেতার গানের ভিডিও ফুটেজ দিল্লির বিজেপি নেতৃত্বের কাছে পাঠিয়েছেন।

ঢাকা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আম র স ন র ব রব ন দ র র জন ত আস ম র

এছাড়াও পড়ুন:

রায়েদ সাদকে হত্যা যুদ্ধবিরতির স্পষ্ট লঙ্ঘন: হামাস

গাজা নগরীতে ইসরায়েলের হামলায় দলের জ্যেষ্ঠ কমান্ডার রায়েদ সাদ নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এর আগে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এক বিবৃতিতে গতকাল শনিবার হামাসের এই নেতাকে হত্যার দাবি করেছিল।

শনিবারের ওই হামলায় ৫ জন নিহত এবং অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ।

হামাস এ হামলার বিষয়ে বিবৃতি দিলেও প্রথমে রায়েদ সাদ নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেনি। তখন হামাস বলেছিল, গাজা নগরের বাইরে একটি বেসামরিক গাড়িতে হামলা হয়েছে। এই হামলা অক্টোবর থেকে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

পরে আজ রোববার এক ভিডিও বার্তায় হামাসের গাজাপ্রধান খলিল আল-হাইয়া বলেন, গাজায় ইসরায়েলের হামলায় নিহত পাঁচজনের মধ্যে রায়েদ সাদও রয়েছেন।

খলিল আল-হাইয়া বলেন, ‘ইসরায়েল বারবার যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে যাচ্ছে, যার সর্বশেষ সংযোজন হামাস কমান্ডারকে (রায়েদ সাদ) হত্যা। গতকালই এ ঘটনা ঘটেছে। এই প্রেক্ষাপটে আমরা সব মধ্যস্থতাকারী এবং বিশেষ করে চুক্তির প্রধান নিশ্চয়তাদাতা হিসেবে মার্কিন প্রশাসন ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আহ্বান জানাই, তাঁরা যেন ইসরায়েলকে যুদ্ধবিরতি চুক্তি সম্মান করতে ও তা মেনে চলতে বাধ্য করেন।’

রায়েদ সাদ হত্যাকাণ্ড অক্টোবরে গাজায় একটি ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হওয়ার পর হামাসের শীর্ষ পর্যায়ের কোনো নেতাকে হত্যার প্রথম ঘটনা।

এর আগে টেলিগ্রামে এক পোস্টে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলেছিল, ওই কমান্ডার (রায়েদ সাদ) হামাসের সক্ষমতা পুনর্গঠনে কাজ করছিলেন। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজা থেকে ইসরায়েলে হামাসের হামলা পরিকল্পনাকারীদের একজন ছিলেন তিনি।

আরও পড়ুনজ্যেষ্ঠ হামাস নেতা রায়েদ সাদকে হত্যার দাবি ইসরায়েলের১৭ ঘণ্টা আগে

রায়েদ সাদ হত্যাকাণ্ড অক্টোবরে গাজায় একটি ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হওয়ার পর হামাসের শীর্ষ পর্যায়ের কোনো নেতাকে হত্যার প্রথম ঘটনা।

একজন ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, রায়েদ সাদকে লক্ষ্য করেই এ হামলা চালানো হয়েছিল। তিনি রায়েদ সাদকে হামাসের অস্ত্র তৈরি শাখার প্রধান বলে দাবি করেন।

হামাস সূত্র রায়েদ সাদকে হামাসের সশস্ত্র শাখা কাসাম ব্রিগেডের সেকেন্ড ইন কমান্ড তথা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কর্মকর্তা বলে জানিয়েছে। এই সূত্রগুলো বলেছে, সাদ আগে হামাসের গাজা সিটি ব্যাটালিয়নের প্রধান ছিলেন। হামাসের সবচেয়ে বড় ও অস্ত্রসজ্জিত ব্যাটালিয়নের একটি এটি।

অক্টোবরে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও গাজায় ইসরায়েলের হামলা থামেনি। অক্টোবরে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর ইসরায়েলের প্রায় ৮০০ বার গাজায় হামলা চালিয়ে কমপক্ষে ৩৮৬ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে

আরও পড়ুনগাজার ‘হলুদ রেখা’ থেকে সরবে না সেনা, এটিই নতুন সীমান্ত: ইসরায়েলি বাহিনীর প্রধান০৯ ডিসেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ