তলপেটে ব্যথার প্রধান কারণ—
১. পরিপাকতন্ত্রের সমস্যাকোষ্ঠকাঠিন্য ও গ্যাস: এটি তলপেটে ব্যথার সবচেয়ে সাধারণ কারণ। মল দীর্ঘ সময় অন্ত্রে জমে থাকলে বা অতিরিক্ত গ্যাস তৈরি হলে এই ব্যথা হয়।
ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম (আইবিএস): হজমের এই দীর্ঘস্থায়ী সমস্যায় তলপেটে ব্যথা, ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা যায়।
অ্যাপেন্ডিসাইটিস: তলপেটের ডান দিকে হঠাৎ তীব্র ব্যথা শুরু হলে তা অ্যাপেন্ডিসাইটিসের লক্ষণ হতে পারে। এই অবস্থায় পেট শক্ত হয়ে যাওয়া, বমিভাব ও জ্বরও থাকতে পারে। এটি একটি জরুরি অবস্থা।
২.মূত্রতন্ত্রের সমস্যা
মূত্রনালির সংক্রমণ (ইউটিআই): তলপেটে চাপ, ঘন ঘন প্রস্রাব এবং প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়ার সঙ্গে ব্যথা হলে তা ইউটিআই হতে পারে।
কিডনিতে পাথর: ছোট পাথর যখন মূত্রনালি দিয়ে নামে, তখন কোমরের নিচ থেকে তলপেট পর্যন্ত তীব্র ব্যথা ছড়িয়ে পড়তে পারে।
আরও পড়ুনলিভার বা যকৃতের যত্ন নেবেন কীভাবে০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫৩. নারীদের বিশেষ কারণনারীদের তলপেটে ব্যথার জন্য কিছু নির্দিষ্ট কারণ থাকে, যা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত।
মাসিকের ব্যথা (মেনস্ট্রুয়াল ক্র্যাম্প): মাসিকের সময় জরায়ুর সংকোচনের কারণে এ ধরনের ব্যথা হতে পারে।
ডিম্বাশয়ের সিস্ট (ওভারিয়ান সিস্ট): ডিম্বাশয়ে সিস্ট হলে তলপেটে ব্যথা হতে পারে, বিশেষত সিস্ট ফেটে গেলে বা পেঁচিয়ে গেলে তীব্র ব্যথা হয়।
এন্ডোমেট্রিওসিস: জরায়ুর ভেতরের টিস্যু জরায়ুর বাইরে বৃদ্ধি পেলে মাসিকের সময় প্রচণ্ড ব্যথা হয়।
এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি: জরায়ুর বাইরে ভ্রূণ স্থাপিত হলে তলপেটে তীব্র ব্যথা হতে পারে। এই জটিল পরিস্থিতি জীবনহানিকর হতে পারে।
আরও পড়ুনকিডনি ভালো আছে কি না, বুঝবেন যেভাবে০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫৪. পুরুষের বিশেষ কারণপুরুষদের ক্ষেত্রে অণ্ডকোষে আঘাত, স্পার্মাটিক কর্ড পেঁচিয়ে যাওয়া কিংবা সংক্রমণ থেকেও ব্যথা তলপেটে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
কখন চিকিৎসকের পরামর্শ জরুরিতলপেটে ব্যথা যদি তীব্র হয়।
যদি ব্যথা হঠাৎ শুরু হয়।
যদি এর সঙ্গে জ্বর, বমি, রক্তাক্ত মল বা প্রস্রাব, অথবা জ্ঞান হারানোর মতো লক্ষণ দেখা যায়।
এসব লক্ষণ থাকলে দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক।
আরও পড়ুনপেট ভরা থাকলেও কেন আমরা মিষ্টি খাবার এড়াতে পারি না০৯ এপ্রিল ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: তলপ ট
এছাড়াও পড়ুন:
যেভাবে বাঁচবে মেছো বিড়াল
তিন মোটরসাইকেলের ছোট কাফেলা থামল মেহেরপুরের এক নাম না-জানা বিলে। দিনের শেষ গন্তব্যে বিকেলের আলো তখনো তেজীয়ান। মনে হচ্ছিল গল্পের তেপান্তরের মাঠে এসে পড়েছি। সারা দিনে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার পেরিয়ে আমরা ছুটেছি এই রকম এক বিল থেকে আরেক বিলে—হারিয়ে যেতে বসা এক ছোট বুনো বিড়ালকে বোঝার ও বাঁচানোর অভিযানে। সে আমাদের জলাভূমির মেছো বিড়াল।
পানকৌড়ি সংরক্ষণ ক্লাবের ১০ বছর ধরে চালানো নিরলস-নীরব প্রচেষ্টায় চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর এখন ‘মেছো বিড়ালের স্বর্গভূমি’ নামে সারা দেশে পরিচিত। তাদের সহায়তা করছে আরণ্যক ফাউন্ডেশন। বিল-খামারের মাঝে এই বিড়াল কীভাবে টিকে আছে আর মানুষই–বা কী ভাবছে, তাই নিয়ে কাজ করছি।
বিলের মাঝখানে ছোট খামার। চারপাশে ধানি জমি। চারপাশের শুকনো জমিজুড়ে মেছো বিড়াল-বনবিড়ালের পায়ের ছাপ। খামারের দেখভালের দায়িত্বে থাকা মানুষটি একসময় মেছো বিড়াল মারতেন। পানকৌড়ি সংরক্ষণ ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা বখতিয়ার হামিদসহ অন্যদের চেষ্টায় তিনি এখন মেছো বিড়াল রক্ষায় নিয়োজিত। বুনো প্রাণীদের কিছু হলেই পানকৌড়িকে জানান। এখানে আমরা একটি ক্যামেরা ট্র্যাপ বসালাম।
মেছো বিড়াল দক্ষিণ এশিয়ার জলাভূমির এক অনন্য বাসিন্দা। গড় ওজন ৫ থেকে ১৬ কেজি—না অনেক বড়, না একেবারে ছোট। বাসার বিড়ালের মতো নয়, এরা জলপ্রেমী প্রাণী। পানিতে সাঁতার কাটা, মাছ ধরা, জলচর পাখি শিকার—সবই এদের দৈনন্দিন আচরণ। ব্যাঙের মতো জালযুক্ত পা, ছোট লেজ আর খয়েরি-হলুদ শরীরে ছোট কালো ছোপ—এই চেহারাই এদের আলাদা করে। কিন্তু এই ছোপই যেন কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে তাদের জন্য। গ্রামীণ জনপদে এদের দেখা গেলেই মানুষ ভাবে, ‘বাঘ বেরিয়েছে’। ভয় বা ভুল ধারণা থেকে অনেক সময় প্রাণ হারায় এই নিরীহ প্রাণী। ফেসবুকে প্রায়ই দেখা যায়, ‘মেছো বাঘ’ ধরার বা মারার পোস্ট। অথচ তারা বাঘ নয়, আমাদের জলাভূমির ভারসাম্য রক্ষাকারী এক গুরুত্বপূর্ণ প্রজাতি। বন বিভাগের এক পোস্টারে দেখলাম, প্রতিটি মেছো বিড়াল জীবদ্দশায় ইঁদুর খেয়ে ৫০ লাখ টাকার ফসল রক্ষা করে। মেছো বিড়ালদের খাদ্যাভ্যাস নিয়ে প্রয়োজন গবেষণা, যাতে উঠে আসবে আরও চমকপ্রদ তথ্য।
ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে পেরোলেই নব্বইয়ের দশকের জলাভূমিবিধৌত বাংলাদেশ কেমন ছিল, তার আঁচ পাওয়া যায়। বিস্তীর্ণ বিল-বাঁওড় আর পাড়ের নলবনগুলোতে আমাদের ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী আর পাখি এখনো বেশ আছে। তবে বছর দুই আগেও পদ্মার দক্ষিণের জেলাগুলোয় মেছো বিড়ালেরা শুধু বেঘোরে মারা পড়ত। নতুন হওয়া মাওয়া হাইওয়েতে পড়ে থাকা মৃত মেছো বিড়াল ছিল নিত্যসংবাদ। তখন কিন্তু দেখার মতো কেউ ছিল না। ২০০৫ থেকে ২০২১ সালে শুধু চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরেই ৫০টির বেশি মেছো বিড়ালের মৃত্যুর খবর সংবাদপত্রে এসেছে। ২০২১ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত তিন বছরে প্রায় সমানসংখ্যক মেছো বিড়ালের মৃত্যুসংবাদ এসেছে। কোথাও তাকে পিটিয়ে মারা হয়েছে, কোথাও পড়েছে গাড়ির নিচে। কিছু বাচ্চাকে মায়ের কাছ থেকে আলাদা করে খাঁচায় পোরা হয়েছিল চিত্তবিনোদনের নামে।
চুয়াডাঙ্গার বিরান বিলে ক্যামেরা ট্র্যাপে ধরা পড়া মেছো বিড়াল