বরেণ্য বলিউড অভিনেতা সুধীর দালভি গুরুতর অসুস্থ। গত ৮ অক্টোবর মুম্বাইয়ের লীলাবতী হাসপাতালে তাকে ভর্তি করানো হয়। ৮৬ বছর বয়েসি এই প্রবীণ অভিনেতা মারাত্মক সেপসিসে (রক্ত সংক্রমণ) ভুগছেন। এটি জীবনঘাতী সংক্রমণ, ফলে নিবিড় চিকিৎসা প্রয়োজন। কিন্তু আর্থিক সংকটে পড়েছে অভিনেতার পরিবার। পিঙ্কভিলা এ খবর প্রকাশ করেছে। 

এ প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, সুধীর দালভির চিকিৎসার জন্য এরই মধ্যে ১০ লাখ রুপির বেশি খরচ হয়েছে। চিকিৎসকরা অনুমান করছেন, চিকিৎসার মোট ব্যয় ১৫ লাখ রুপি পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। অভিনেতার পরিবার ক্রমবর্ধমান চিকিৎসার খরচ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।  

আরো পড়ুন:

৯ দিনে রাশমিকার সিনেমার আয় কত?

আয়ুষ্মানের সঙ্গে বাংলাদেশি ক্রিকেটার মারুফা

পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, দালভির শারীরিক অবস্থা সংকটজনক এবং চিকিৎসা অব্যাহত রাখা অত্যন্ত জরুরি। সুধীর দালভির পরিবার তার ভক্ত ও চলচ্চিত্র জগতের সহকর্মীদের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়েছে। তারা সবাইকে আহ্বান জানিয়েছেন যেন, যতটা সম্ভব সাহায্য করা হয়, যাতে প্রায় ১৫ লাখ রুপির চিকিৎসা ব্যয় মেটানো যায়। 

ভারতীয় সিনেমা ও টেলিভিশনে দীর্ঘ গৌরবময় কর্মজীবন সুধীর দালভির। ১৯৭৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘শিরডি কে সাইবাবা’ সিনেমায় শিরডির সাইবাবার চরিত্রে অভিনয়ের জন্য খ্যাতি কুড়ান এই অভিনেতা, যা আজও দর্শকদের কাছে সমানভাবে প্রিয়। ১৯৮৭ সালে প্রচারিত টেলিভিশন ধারাবাহিক ‘রামায়ণ’-এ ঋষি বশিষ্ঠ চরিত্রে অভিনয় করে ব্যাপক প্রশংসা পান। তার এই আইকনিক চরিত্রগুলো ছাড়াও জনপ্রিয় চলচ্চিত্র ‘জুনুন’ (১৯৭৮), ‘চাঁদনী’ (১৯৮৯)-তেও অভিনয় করেছেন। 

সুধীর দালভি অভিনীত সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা ‘এক্সকিউজ মি’। এটি মুক্তি পায় ২০০৩ সালে। সর্বশেষ টেলিভিশন সিরিজ ‘ওহ হুয়ে না হামারে’। এটি ২০০৬ সালে প্রচার হয়। 

ঢাকা/শান্ত

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পর ব র

এছাড়াও পড়ুন:

যেভাবে বাঁচবে মেছো বিড়াল

তিন মোটরসাইকেলের ছোট কাফেলা থামল মেহেরপুরের এক নাম না-জানা বিলে। দিনের শেষ গন্তব্যে বিকেলের আলো তখনো তেজীয়ান। মনে হচ্ছিল গল্পের তেপান্তরের মাঠে এসে পড়েছি। সারা দিনে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার পেরিয়ে আমরা ছুটেছি এই রকম এক বিল থেকে আরেক বিলে—হারিয়ে যেতে বসা এক ছোট বুনো বিড়ালকে বোঝার ও বাঁচানোর অভিযানে। সে আমাদের জলাভূমির মেছো বিড়াল।

পানকৌড়ি সংরক্ষণ ক্লাবের ১০ বছর ধরে চালানো নিরলস-নীরব প্রচেষ্টায় চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর এখন ‘মেছো বিড়ালের স্বর্গভূমি’ নামে সারা দেশে পরিচিত। তাদের সহায়তা করছে আরণ্যক ফাউন্ডেশন। বিল-খামারের মাঝে এই বিড়াল কীভাবে টিকে আছে আর মানুষই–বা কী ভাবছে, তাই নিয়ে কাজ করছি।

বিলের মাঝখানে ছোট খামার। চারপাশে ধানি জমি। চারপাশের শুকনো জমিজুড়ে মেছো বিড়াল-বনবিড়ালের পায়ের ছাপ। খামারের দেখভালের দায়িত্বে থাকা মানুষটি একসময় মেছো বিড়াল মারতেন। পানকৌড়ি সংরক্ষণ ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা বখতিয়ার হামিদসহ অন্যদের চেষ্টায় তিনি এখন মেছো বিড়াল রক্ষায় নিয়োজিত। বুনো প্রাণীদের কিছু হলেই পানকৌড়িকে জানান। এখানে আমরা একটি ক্যামেরা ট্র্যাপ বসালাম।

মেছো বিড়াল দক্ষিণ এশিয়ার জলাভূমির এক অনন্য বাসিন্দা। গড় ওজন ৫ থেকে ১৬ কেজি—না অনেক বড়, না একেবারে ছোট। বাসার বিড়ালের মতো নয়, এরা জলপ্রেমী প্রাণী। পানিতে সাঁতার কাটা, মাছ ধরা, জলচর পাখি শিকার—সবই এদের দৈনন্দিন আচরণ। ব্যাঙের মতো জালযুক্ত পা, ছোট লেজ আর খয়েরি-হলুদ শরীরে ছোট কালো ছোপ—এই চেহারাই এদের আলাদা করে। কিন্তু এই ছোপই যেন কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে তাদের জন্য। গ্রামীণ জনপদে এদের দেখা গেলেই মানুষ ভাবে, ‘বাঘ বেরিয়েছে’। ভয় বা ভুল ধারণা থেকে অনেক সময় প্রাণ হারায় এই নিরীহ প্রাণী। ফেসবুকে প্রায়ই দেখা যায়, ‘মেছো বাঘ’ ধরার বা মারার পোস্ট। অথচ তারা বাঘ নয়, আমাদের জলাভূমির ভারসাম্য রক্ষাকারী এক গুরুত্বপূর্ণ প্রজাতি। বন বিভাগের এক পোস্টারে দেখলাম, প্রতিটি মেছো বিড়াল জীবদ্দশায় ইঁদুর খেয়ে ৫০ লাখ টাকার ফসল রক্ষা করে। মেছো বিড়ালদের খাদ্যাভ্যাস নিয়ে প্রয়োজন গবেষণা, যাতে উঠে আসবে আরও চমকপ্রদ তথ্য।

ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে পেরোলেই নব্বইয়ের দশকের জলাভূমিবিধৌত বাংলাদেশ কেমন ছিল, তার আঁচ পাওয়া যায়। বিস্তীর্ণ বিল-বাঁওড় আর পাড়ের নলবনগুলোতে আমাদের ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী আর পাখি এখনো বেশ আছে। তবে বছর দুই আগেও পদ্মার দক্ষিণের জেলাগুলোয় মেছো বিড়ালেরা শুধু বেঘোরে মারা পড়ত। নতুন হওয়া মাওয়া হাইওয়েতে পড়ে থাকা মৃত মেছো বিড়াল ছিল নিত্যসংবাদ। তখন কিন্তু দেখার মতো কেউ ছিল না। ২০০৫ থেকে ২০২১ সালে শুধু চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরেই ৫০টির বেশি মেছো বিড়ালের মৃত্যুর খবর সংবাদপত্রে এসেছে। ২০২১ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত তিন বছরে প্রায় সমানসংখ্যক মেছো বিড়ালের মৃত্যুসংবাদ এসেছে। কোথাও তাকে পিটিয়ে মারা হয়েছে, কোথাও পড়েছে গাড়ির নিচে। কিছু বাচ্চাকে মায়ের কাছ থেকে আলাদা করে খাঁচায় পোরা হয়েছিল চিত্তবিনোদনের নামে।

চুয়াডাঙ্গার বিরান বিলে ক্যামেরা ট্র্যাপে ধরা পড়া মেছো বিড়াল

সম্পর্কিত নিবন্ধ