বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গার্মেন্টস, সব কর্মক্ষেত্রে ডে-কেয়ার করার পরিকল্পনা বিএনপির
Published: 30th, October 2025 GMT
সামনে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে নারীর অধিকার ও কর্মসংস্থান বিষয়ে নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো। বিএনপি নারীদের সুবিধা বাড়াতে সারা দেশে বিশ্ববিদ্যালয়, অফিস ও গার্মেন্টস কারখানায় ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপনের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে।
ক্ষমতায় গেলে পেশাজীবী মায়েদের কর্মঘণ্টা আট ঘণ্টা থেকে কমিয়ে পাঁচ ঘণ্টা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা.
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) সকালে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে তারেক রহমান বলেছেন, কোনো তরুণী মা যদি পর্যাপ্ত শিশু পরিচর্যার সুযোগ না পেয়ে চাকরি ছাড়তে বাধ্য হন, অথবা কোনো ছাত্রী পড়াশোনা বন্ধ করে দেন—তাহলে বাংলাদেশ হারায় সম্ভাবনা, উৎপাদনশীলতা ও অগ্রগতি।
তিনি বলেন, “বিএনপির লক্ষ্য একটি আধুনিক, গণমুখী বাংলাদেশ গড়া—যেখানে কোনো নারীকে তার পরিবার ও ভবিষ্যতের মধ্যে কোনো একটি বেছে নিতে হবে না।”
নারীর কর্মসংস্থানের বিষয়ে বিএনপির লক্ষ্য সহজ জানিয়ে তিনি বলেন, “এমন একটি আধুনিক, গণমুখী বাংলাদেশ গড়া- যেখানে কোনো নারীকে তার পরিবার ও ভবিষ্যতের মধ্যে যে কোন একটি কে বেছে নিতে না হয়।”
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর-২০২৪ সালের শ্রমশক্তি জরিপের পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, “পুরুষদের তুলনায় নারীদের শ্রমবাজারে অংশগ্রহণের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কম: মোট পুরুষদের ৮০ শতাংশের বিপরীতে মোট নারীদের মাত্র ৪৩ শতাংশ কর্মজীবী। এই ব্যবধান আমাদের সতর্ক করছে যে আমরা আমাদের জাতির অর্ধেকেরও বেশি মেধা ও দক্ষতাকে পিছনে ফেলে যাচ্ছি। এই কারণেই বিএনপি সারা দেশে এমন একটি উদ্যোগ গ্রহণের কথা বিবেচনা করছে, যাতে শিশু পরিচর্যা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কৌশলের অংশ হয়।”
নিজেদের পরিকল্পনার বিষয়ে তিনি বলেন, “আমাদের পরিকল্পনায় রয়েছে:
• সব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপন;
• সরকারি অফিসগুলোতে ধাপে ধাপে ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপনের জাতীয় পরিকল্পনা গ্রহণ;
• বড় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও কারখানায় বাধ্যতামূলক ডে-কেয়ার ব্যবস্থা;
• যেসব নিয়োগকর্তা শিশু পরিচর্যার ব্যবস্থা রাখবে তাদের জন্য কর সুবিধা ও সিএসআর (CSR) ক্রেডিট প্রদান; এবং
• নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মান অনুযায়ী কেয়ারগিভারদের প্রশিক্ষণ ও সার্টিফিকেশন প্রদান।
এই একটি সংস্কার নারীদের কর্মসংস্থান বাড়াতে পারে, পারিবারিক আয় বৃদ্ধি করতে পারে, ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে আর্থিক স্থিতিশীলতা দিতে পারে, এবং আমাদের জিডিপিতে ১ শতাংশ পর্যন্ত যোগ করতে পারে। যেহেতু তৈরি পোশাক শিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ নারী, তাই কর্মজীবী মায়েদের অবদানকে অবমূল্যায়ন করা উচিত নয়।
ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স কর্পোরেশন (আইএফসি) ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)’র গবেষণায় বরাত দিয়ে তিনি বলেন, “যেসব কারখানায় শিশু পরিচর্যার সুবিধা রয়েছে, সেখানে কর্মী ধরে রাখার হার বেশি, অনুপস্থিতি কম, এবং প্রতিষ্ঠানগুলো এক বছরের মধ্যেই খরচ তুলে আনতে পারে।”
“শিশু পরিচর্যা কোনো দয়া-দাক্ষিণ্য নয়, এটি সামাজিক-অর্থনৈতিক অবকাঠামোর একটি অপরিহার্য অংশ। সড়ক যেমন বাজারকে সংযুক্ত করে, তেমনি ডে-কেয়ার সেন্টার নারীদের কর্মজীবনে সাফল্যের সঙ্গে সংযুক্ত করে” বলেন তিনি।
তারেক রহমান বলেন, “আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট: ২০৩৪ সালের মধ্যে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ট্রিলিয়ন-ডলারের অর্থনীতি গড়ে তোলা, যা লক্ষ লক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে- যেখানে প্রতিটি নাগরিক, বিশেষ করে নারী, গর্বের সঙ্গে দেশের প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখবে।”
“আমরা এমন যে কোনো পশ্চাৎমুখী ধারণা প্রত্যাখ্যান করি যা নারীর সম্ভাবনাকে সীমাবদ্ধ করে। শিশু পরিচর্যা, সমান মজুরি ও কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন শুধু ন্যায়সংগত নয়; এটিই বুদ্ধিবৃত্তিক অর্থনীতি।”
সুন্দর পরিবেশ নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আসুন, আমরা এমন একটি বাংলাদেশ গড়ি- যেখানে প্রতিটি কর্মজীবী মা ও প্রতিটি ছাত্রী নিজের সাফল্যের স্বাধীনতা পায়, এবং যেখানে সমাজের যত্ন ও সহযোগিতাকে অগ্রগতির ভিত্তি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।”
ঢাকা/ইভা
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ র আম দ র র পর ব রহম ন ন একট
এছাড়াও পড়ুন:
ফরিদপুরে পদ্মা নদীতে ভাঙন, ঝুঁকিতে ২০০ পরিবার
ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার পদ্মা নদী তীরবর্তী গ্রামগুলোতে নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ফলে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, নদীর পানি কমতে শুরু করায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
গ্রামগুলোর বাসিন্দারা জানান, উপজেলার আকোটের চর ইউনিয়নের শয়তানখালী ও ছলেনামা গ্রাম এলাকায় নতুন করে ভাঙন শুরু হয়েছে। পাশাপাশি আকোটের চর গুচ্ছ গ্রামটিও চরম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এই তিন এলাকার প্রায় দুই শতাধিক পরিবার নদীগর্ভে বাড়ি বিলীন হওয়ার শঙ্কায় এখন নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন।
আরো পড়ুন:
বিষখালীতে হঠাৎ ভাঙন
ফুঁসছে তিস্তা, লালমনিরহাটে রেড অ্যালার্ট জারি
স্থানীয় বাসিন্দা মালেক প্রামাণিক উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “সারা বছরই ভাঙনের শিকার হচ্ছি। হঠাৎ করে ভাঙন তীব্র হওয়ায় এখন বাড়ি না সরালে নদীতে চলে যাবে। কোথায় যাব, তা নিয়ে চিন্তায় আছি।”
মো. মোজাম্মেল বেপারী নামে অপর এক বাসিন্দা বলেন, “এ বছর পদ্মায় ফসলি জমি ও গাছপালা বিলীন হয়েছে। অনেকেই ইতোমধ্যে নিরাপদ স্থানে চলে গেছেন, অনেকে ঘর সরানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন।”
ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব হোসেন বলেন, “নদীর পানি কমতে শুরু করায় ভাঙনের ঝুঁকি বেড়েছে। ভাঙন প্রবণ এলাকা পর্যবেক্ষণ করে ইতোমধ্যেই ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৩ হাজার জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। ভাঙন রোধে খুব শিগগিরই টেকসই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সদরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকিয়া সুলতানা বলেন, “নদী ভাঙনের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জরুরি ভিত্তিতে জানানো হয়েছে। ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা চলছে।
ঢাকা/তামিম/মাসুদ