‘শিক্ষার্থীদের জিম্মি করা, বাজে নজির হয়ে থাকবে’
Published: 1st, December 2025 GMT
সকালটা ছিল বার্ষিক পরীক্ষার টেনশনে ভরা। কেউ শেষ মুহূর্তে নোট দেখে এসেছে, কেউ আবার মা–বাবার সঙ্গে দ্রুত বিদ্যালয়ে পৌঁছেছে। কিন্তু বাগেরহাটের সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর ফটকে ঢুকতেই টেনশন উবে গিয়ে শিক্ষার্থীদের চোখে-মুখে হতাশা জেগে ওঠে। বিদ্যালয়গুলোর ফটকে টানানো হয়েছে পরীক্ষা স্থগিতের নোটিশ।
চার দফা দাবিতে দেশের সরকারি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের কর্মবিরতিতে আজ সোমবার শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। এমন সিদ্ধান্তের ফলে বার্ষিক পরীক্ষার অনিশ্চয়তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অভিভাবকেরাও। তাঁরা বলছেন, শিক্ষকদের আকস্মিক এই কর্মবিরতির কারণে সকাল থেকে বিদ্যালয়গুলোতে পরীক্ষা দিতে যাওয়া শিক্ষার্থীদের আবার ফিরে যেতে হয়েছে।
হেদায়েত হোসেন নামের এক অভিভাবক প্রথম আলোকে জানান, তাঁর ছেলে নাবিল হোসাইন বাগেরহাট সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রভাতি শাখার দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। নাবিলের টেস্ট পরীক্ষা চলছিল। সকালে পরীক্ষায় অংশ নিতে বিদ্যালয়ে গিয়ে তাকে ফিরে আসতে হয়েছে। শিক্ষকেরা নাকি ধর্মঘট করছেন, তাই পরীক্ষা নিচ্ছেন না তাঁরা। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক এবং দুশ্চিন্তার।
বাগেরহাট সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফাতেমাতুজ জোহরা বলে, ‘সকালে প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষা দিতে গেছিলাম। স্কুলে পৌঁছে দেখি পরীক্ষা বন্ধের নোটিশ টানানো। এখন বাড়ি ফিরে যাচ্ছি।’
জোহরার বাবা আলী আকবর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘সকালে মেয়েকে স্কুলে দিয়ে চলে আসছিলাম। পরীক্ষা হবে না জেনে আবার তাঁকে আনতে যেতে হয়েছে—এটা চরম বিড়ম্বনা। সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছ থেকে এমন দায়িত্বহীন আচরণ আশা করা যায় না।’
বাগেরহাট সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী আরিজ আহনাফের বাবা আমিরুল হক বাবু বলেন, ‘স্কুল থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার দূরে আমাদের বাসা। আগে থেকে কোনো নোটিশ না দিয়ে এভাবে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা বন্ধ করা মোটেও ঠিক হয়নি। এটা কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ওপর প্রভাব ফেলবে। শিক্ষকদের দাবিদাওয়া থাকতে পারে। শিক্ষার্থীদের জিম্মি করা, বাজে নজির হয়ে থাকবে।’
বাংলাদেশ সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির ব্যানারে এ কর্মসূচি চলছে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ভোগান্তির বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় বাগেরহাট সরকারি উচ্চবিদ্যালয় ও সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের তিন শিক্ষকের কাছে। তাঁরা জানান, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে তাঁরা কর্মবিরতি পালন করছেন। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত যে কদিন থাকবে, সে পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে। আপাতত আজ পরীক্ষা স্থগিতের নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
বাগেরহাট সদর ছাড়াও মোংলা, কচুয়া, মোরেলগঞ্জসহ জেলার ৯ উপজেলার সবগুলো সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা একযোগে এই কর্মবিরতি পালন করছেন। বার্ষিক পরীক্ষার মধ্যে এমন কর্মসূচিতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন অভিভাবকেরা।
শিক্ষার্থীদের হতাশা ও অভিভাবকদের ক্ষোভের বিষয়ে জানতে চাইলে বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক গোলাম বাতেন মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা গতকাল শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। সারা দেশে এ কর্মসূচি হচ্ছে। আমরা আবারও শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলছি।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব র ষ ক পর ক ষ শ ক ষকদ র
এছাড়াও পড়ুন:
সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় স্থাপন–কার্যক্রম চালুর জন্য গেজেটসহ যাবতীয় কাজ শেষ করার আহ্বান
জরুরি ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্টের জন্য পৃথক সচিবালয় স্থাপন, সচিবালয়ের কার্যক্রম চালুর জন্য গেজেট প্রজ্ঞাপনসহ যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন।
আজ সোমবার বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানানো হয়।
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে খসড়া অনুমোদনের পর গতকাল রোববার সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ ২০২৫ জারি করেন রাষ্ট্রপতি। সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠা হলে অধস্তন আদালত ও প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণসংক্রান্ত সব প্রশাসনিক ও সাচিবিক দায়িত্ব পালন করবে এই সচিবালয়।
বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন বিবৃতিতে বলেছে, জারি করা অধ্যাদেশের ধারা ১ (২)–এ উল্লেখ রয়েছে, ‘(২) সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় স্থাপন সম্পন্ন ও ইহার কার্যক্রম পূর্ণরূপে চালু হওয়া সাপেক্ষে সরকার, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সহিত পরামর্শক্রমে, ধারা ৭–এর বিধানাবলি সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা কার্যকর করিবে।’ অর্থাৎ সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠার আইন হলেও তা বাস্তবায়ন হওয়ার আগপর্যন্ত বিচারকদের বদলি, পদায়ন, নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলাবিধান–সংক্রান্ত বিষয় সরকারের অধীনই রয়ে গেছে। তাই অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে তার মেয়াদের মধ্যেই জরুরি ভিত্তিতে পৃথক সচিবালয় স্থাপন ও এর কার্যক্রম চালুর জন্য গেজেট প্রজ্ঞাপনসহ যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছে।
বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আমিরুল ইসলাম ও মহাসচিব মুহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম বিবৃতিতে বলেছেন, তাঁরা অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার দেশের জনগণের বহুল আকাঙ্ক্ষিত স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ ২০২৫ জারি করেছে। এই অধ্যাদেশ জনগণের ন্যায়বিচার প্রাপ্তির অন্যতম বন্দোবস্ত এবং ঐতিহাসিক দলিল হয়ে থাকবে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ঐতিহাসিকভাবে আলোচিত হলেও তা বিভিন্ন কারণে এ দেশে বাস্তবায়ন করা হয়নি। ১৯৯৯ সালে বিখ্যাত মাসদার হোসেন মামলার রায়ে স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, ২০০৭ সালে নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ আলাদা হলেও কার্যত তা নির্বাহী বিভাগের অধীন থেকে যায়। জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের পরবর্তী সময়ে আপামর জনগণ স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠার বিষয়ে আশাবাদী হয়। অভ্যুত্থানের পরবর্তী সময়ে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথমবারের মতো তরুণ বিচারকদের সমন্বয়ে গঠিত ‘ইয়ং জাজেস ফর জুডিশিয়াল রিফর্ম’ তাদের ১২ দফা দাবি ঘোষণা করে। এর ১ নম্বর দফা ছিল সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় গঠন।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, দেশের প্রধান বিচারপতি সারা দেশের বিচারকদের সম্মুখে অভিভাষণের সময় স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন, যা বিচারকদের মনে অকৃত্রিম আশার সঞ্চার করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে অ্যাসোসিয়েশন ২০২৪ সালের ২০ নভেম্বর অফিশিয়াল বিবৃতির মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দ্রুত সময়ের মধ্যে বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানায়। পাশাপাশি প্রথমবারের মতো গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি গত ১ বছরে স্বাধীন বিচার বিভাগ ও পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রতিটি বিভাগীয় শহরে সব বিচারক এবং বিচার বিভাগ–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে মতবিনিময় সভা ও সেমিনারের আয়োজন করে।
‘আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় মাইলফলক হয়ে থাকবে’
বিবৃতিতে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন বলেছে, অবশেষে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ৩০ নভেম্বর অন্তর্বর্তী সরকার সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ ২০২৫ জারি করেছে, যা এ দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় মাইলফলক হয়ে থাকবে। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য অ্যাসোসিয়েশন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি, আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, সর্বোপরি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে।