পাবনায় প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকদের কর্মবিরতি, পরীক্ষা নিচ্ছেন প্রধান শিক্ষকরা
Published: 1st, December 2025 GMT
তিন দফা বাস্তবায়নের দাবিতে পাবনায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে সোমবার (১ ডিসেম্বর) থেকে শুরু হয়েছে বার্ষিক পরীক্ষা। স্কুলগুলোতে পরীক্ষা নিতে দেখা গেছে প্রধান শিক্ষকদের।
গত বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) থেকে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি পালন করছেন সহকারী শিক্ষকরা। তারা জানান, তাদের দাবি বাস্তবায়ন না হওয়ায় কর্মবিরতি অব্যাহত রেখেছেন। শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা ব্যাহত হচ্ছে স্বীকার করলেও তারা নিরুপায় বলে জানান।
আরো পড়ুন:
কুয়েটে শিক্ষার্থীকে অস্ত্রাঘাত, অপর শিক্ষার্থী বহিষ্কার
পাবনায় প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকদের কর্মবিরতি, ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা
সাধুপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রোজিনা খাতুন বলেন, “সহকারী শিক্ষকরা কর্মবিরতিতে থাকলেও, কর্তৃপক্ষের নির্দেশ আসছে, বিকল্প পদ্ধতিতে পরীক্ষা নিতে হবে। তাই নিজেদের চেষ্টায়, আমি আমার কৌশলে শিশুদের বার্ষিক পরীক্ষা নিচ্ছি।” একার পক্ষে পরীক্ষা নিতে সমস্যা ও কষ্টের কথা জানান তিনি।
পাবনা পৌর সদরের শিবরামপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফারজানা ইয়াসমিন ও সাইদ উল ইসলাম জানান, সহকারী শিক্ষকদের বেতন স্কেল ১০ম গ্রেডে নির্ধারণ, ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তির বিষয়ে জটিলতার অবসান এবং সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতি; এই তিন দাবিতে তাদের আন্দোলন। কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশে কর্মবিরতি চলছে। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমাজ পাবনার যুগ্ম-আহ্বায়ক মোকাররম হোসেন এবং পাবনা সদর উপজেলা শিক্ষা কমিটির শিক্ষক প্রতিনিধি আরিছুর রহমান হীরা জানান, কোমলমতী শিশুদের বার্ষিক পরীক্ষার সময় আন্দোলন করায় তাদেরও কষ্ট হচ্ছে। তারা নিরুপায়। দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়ে এখন তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। তাই সরকারের কাছে তারা আহ্বান জানান, দ্রুত দাবি বাস্তবায়ন করে শিশু শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ করে দেওয়ার।
এদিকে, বার্ষিক পরীক্ষার সময় শিক্ষকদের এমন কর্মসূচিতে ক্ষুব্ধ অভিভাবক মহল। শিবরামপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় চত্বরে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় দুজন অভিভাবক ফারজানা আক্তার ও শারমিন আক্তার তমার। তারা জানান, বার্ষিকী পরীক্ষা শুরু হলেও সহকারী শিক্ষকদের এমন সময় আন্দোলন কাম্য নয়। ক্ষতি তো সন্তানের হচ্ছে। ভালো পরীক্ষা দিতে না পারলে ভালো রেজাল্ট করে পরবর্তী ক্লাসে তাদের সন্তানরা উঠবে কীভাবে এমন প্রশ্ন তাদের। জটিলতা নিরসনের দাবি জানিয়েছেন এই দুই অভিভাবক।
ঢাকা/শাহীন/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব র ষ ক পর ক ষ শ ক ষকদ র সরক র সহক র
এছাড়াও পড়ুন:
সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় স্থাপন–কার্যক্রম চালুর জন্য গেজেটসহ যাবতীয় কাজ শেষ করার আহ্বান
জরুরি ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্টের জন্য পৃথক সচিবালয় স্থাপন, সচিবালয়ের কার্যক্রম চালুর জন্য গেজেট প্রজ্ঞাপনসহ যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন।
আজ সোমবার বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানানো হয়।
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে খসড়া অনুমোদনের পর গতকাল রোববার সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ ২০২৫ জারি করেন রাষ্ট্রপতি। সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠা হলে অধস্তন আদালত ও প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণসংক্রান্ত সব প্রশাসনিক ও সাচিবিক দায়িত্ব পালন করবে এই সচিবালয়।
বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন বিবৃতিতে বলেছে, জারি করা অধ্যাদেশের ধারা ১ (২)–এ উল্লেখ রয়েছে, ‘(২) সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় স্থাপন সম্পন্ন ও ইহার কার্যক্রম পূর্ণরূপে চালু হওয়া সাপেক্ষে সরকার, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সহিত পরামর্শক্রমে, ধারা ৭–এর বিধানাবলি সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা কার্যকর করিবে।’ অর্থাৎ সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠার আইন হলেও তা বাস্তবায়ন হওয়ার আগপর্যন্ত বিচারকদের বদলি, পদায়ন, নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলাবিধান–সংক্রান্ত বিষয় সরকারের অধীনই রয়ে গেছে। তাই অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে তার মেয়াদের মধ্যেই জরুরি ভিত্তিতে পৃথক সচিবালয় স্থাপন ও এর কার্যক্রম চালুর জন্য গেজেট প্রজ্ঞাপনসহ যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছে।
বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আমিরুল ইসলাম ও মহাসচিব মুহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম বিবৃতিতে বলেছেন, তাঁরা অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার দেশের জনগণের বহুল আকাঙ্ক্ষিত স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ ২০২৫ জারি করেছে। এই অধ্যাদেশ জনগণের ন্যায়বিচার প্রাপ্তির অন্যতম বন্দোবস্ত এবং ঐতিহাসিক দলিল হয়ে থাকবে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ঐতিহাসিকভাবে আলোচিত হলেও তা বিভিন্ন কারণে এ দেশে বাস্তবায়ন করা হয়নি। ১৯৯৯ সালে বিখ্যাত মাসদার হোসেন মামলার রায়ে স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, ২০০৭ সালে নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ আলাদা হলেও কার্যত তা নির্বাহী বিভাগের অধীন থেকে যায়। জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের পরবর্তী সময়ে আপামর জনগণ স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠার বিষয়ে আশাবাদী হয়। অভ্যুত্থানের পরবর্তী সময়ে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথমবারের মতো তরুণ বিচারকদের সমন্বয়ে গঠিত ‘ইয়ং জাজেস ফর জুডিশিয়াল রিফর্ম’ তাদের ১২ দফা দাবি ঘোষণা করে। এর ১ নম্বর দফা ছিল সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় গঠন।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, দেশের প্রধান বিচারপতি সারা দেশের বিচারকদের সম্মুখে অভিভাষণের সময় স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন, যা বিচারকদের মনে অকৃত্রিম আশার সঞ্চার করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে অ্যাসোসিয়েশন ২০২৪ সালের ২০ নভেম্বর অফিশিয়াল বিবৃতির মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দ্রুত সময়ের মধ্যে বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানায়। পাশাপাশি প্রথমবারের মতো গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি গত ১ বছরে স্বাধীন বিচার বিভাগ ও পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রতিটি বিভাগীয় শহরে সব বিচারক এবং বিচার বিভাগ–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে মতবিনিময় সভা ও সেমিনারের আয়োজন করে।
‘আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় মাইলফলক হয়ে থাকবে’
বিবৃতিতে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন বলেছে, অবশেষে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ৩০ নভেম্বর অন্তর্বর্তী সরকার সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ ২০২৫ জারি করেছে, যা এ দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় মাইলফলক হয়ে থাকবে। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য অ্যাসোসিয়েশন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি, আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, সর্বোপরি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে।