রাজবাড়ী–১ আসনে বিএনপির প্রাথমিক মনোনীত প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে ঢাকা–খুলনা মহাসড়ক ও রাজবাড়ী–কুষ্টিয়া আঞ্চলিক সড়ক ঘণ্টাব্যাপী অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে স্থানীয় বিএনপির একটি পক্ষ। এ সময় কারও কারও গায়ে কাফনের কাপড় দেখা যায়। এই কর্মসূচির ফলে দুই সড়কে যানজট তৈরি হয়ে ভোগান্তির সৃষ্টি হয়।

রাজবাড়ী–১ আসন সদর ও গোয়ালন্দ উপজেলা নিয়ে গঠিত। এই আসনে কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সহসভাপতি, রাজবাড়ী জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো.

আসলাম মিয়ার মনোনয়নের বিষয়ে স্থানীয় নেতা–কর্মীদের অনেকে আশায় ছিলেন। কিন্তু দল বেছে নিয়েছে রাজবাড়ী জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি, সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়মকে। এই মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে আসছেন আসলাম মিয়ার অনুসারীরা।

রাজবাড়ী জেলা বিএনপির ব্যানারে আজ রোববার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কারের ৩১ দফা প্রচার এবং জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে শোভাযাত্রা ও আওয়ামী লীগের নৈরাজ্যের প্রতিবাদেও বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়। সেখান থেকে রাজবাড়ী–১ আসনে মনোনয়ন পরিবর্তন করে আসলাম মিয়াকে দেওয়ার জোরালো দাবি তোলা হয়। রাজবাড়ী সদর ও গোয়ালন্দ উপজেলাসহ বিএনপির ১২টি ইউনিটের কয়েক হাজার নেতা–কর্মী কর্মসূচিতে অংশ নেন।

এর আগে গোয়ালন্দ মোড়ে দলীয় কার্যালয়ে উপস্থিত হতে থাকেন নেতা–কর্মীরা। তাঁরা মিছিল নিয়ে ঢাকা–খুলনা ও রাজবাড়ী–কুষ্টিয়া সড়ক প্রদক্ষিণ করে গোয়ালন্দ মোড়ের শহীদ গণি চত্বরে দুটি মহাসড়কের সংযোগস্থলে অবস্থান নেন। নেতা–কর্মীদের কয়েকজনের গায়ে কাফনের কাপড় দেখা যায়। তাঁরা প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন।

বিকেল সাড়ে চারটা থেকে সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত প্রায় এক ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচির ফলে সড়ক দুটির উভয় দিকে যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে দুর্ভোগে পড়েন শত শত যানবাহনের যাত্রী ও চালক। বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় বিক্ষোভকারীরা মহাসড়ক থেকে সরে গেলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য দেন রাজবাড়ী সদর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবুল হোসেন গাজী, রাজবাড়ী পৌর বিএনপির সভাপতি, সাবেক মেয়র তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, গোয়ালন্দ উপজেলা বিএনপির সভাপতি নিজাম উদ্দিন শেখ, সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ আহম্মেদ, পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মজিবর রহমান মোল্লা প্রমুখ।
রাজবাড়ী সদর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবুল হোসেন গাজী বলেন, ‘যাঁরা এক–এগারোর সময় জিয়া পরিবারকে বাদ দিয়ে সংস্কার করতে চেয়েছিলেন, কখনো রাজপথে পাওয়া যায়নি, আজ তাঁকেই নমিনেশন দেওয়া হলো। অথচ যিনি ১৭টি বছর নেতা–কর্মীদের পাশে থেকে রাজপথে সংগ্রাম করেছেন, সেই অ্যাডভোকেট আসলাম মিয়াকে বঞ্চিত করা হলো, এটা কেমন নিয়ম।’

গোয়ালন্দ উপজেলা বিএনপির সভাপতি নিজাম উদ্দিন শেখ বলেন, ‘দ্রুত এই মনোনয়ন বাতিল করে যিনি নেতা–কর্মীদের নিয়ে চলেন, সেই আসলাম মিয়াকে মনোনয়ন দিতে হবে। নতুবা আমরা এই রাজপথে আন্দোলন চালিয়ে যাব।’

এ বিষয়ে মনোনয়নপ্রত্যাশী আসলাম মিয়া বলেন, ‘১৭টি বছর দলের দুর্দিনে সব সময় নেতা–কর্মীর পাশে ছিলাম। আন্দোলন–সংগ্রামে মাঠে তাঁদের নিয়ে সক্রিয় থাকায় ফ্যাসিস্ট সরকারের মামলার আসামি হয়ে দুর্বিষহ জীবন যাপন করেছি। ফ্যাসিস্ট সরকারের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বহু নেতা–কর্মী। অথচ যিনি (আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম) প্রাথমিকভাবে মনোনয়ন পেয়েছেন, তাঁকে কখনোই মাঠে দেখা যায়নি।’ তৃণমূলের নেতা–কর্মীদের চাওয়ার বিষয়টি বিএনপির হাইকমান্ড বিবেচনায় নেবে বলে তিনি আশাবাদী।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আসল ম ম য় ব এনপ র স কর ম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

আওয়ামী লীগের মতোই গোপনে বন্দর ও টার্মিনাল বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে: বাম জোট

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের মতো অন্তর্বর্তী সরকারও গোপনে দেশের বন্দর ও টার্মিনাল বিদেশিদের হাতে তুলে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে বাম গণতান্ত্রিক জোট।

চট্টগ্রামের লালদিয়ার এবং ঢাকার পানগাঁওয়ের কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব বিদেশি কোম্পানিকে দেওয়ার প্রতিবাদে আজ রোববার ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক বিক্ষোভ সমাবেশে এ অভিযোগ করা হয়।

সমাবেশে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি সাজ্জাদ জহির চন্দন বলেন, ‘দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষার বদলে এসব চুক্তির মাধ্যমে তা ধ্বংসের পাঁয়তারা চলছে। আওয়ামী লীগ সরকার যেভাবে একের পর এক গোপন চুক্তি করেছিল, বর্তমান সরকারও একইভাবে গোপন চুক্তির মাধ্যমে দেশের বন্দর ও টার্মিনাল বিদেশিদের হাতে তুলে দিচ্ছে।’

১২ নভেম্বর অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের কমিটির এক সভায় চট্টগ্রাম বন্দরের লালদিয়া চরে কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ এবং ৩০ বছরের জন্য পরিচালনার দায়িত্ব ডেনমার্কের একটি প্রতিষ্ঠানকে দিতে চুক্তি করার সিদ্ধান্ত হয়। ঢাকার কেরানীগঞ্জের পানগাঁও ইনল্যান্ড কনটেইনার টার্মিনালটি সুইজারল্যান্ডের একটি কোম্পানিকে দিয়ে পুনরায় চালু করার আলোচনাও হয় ওই সভায়।

‘দেশবিরোধী’ এসব চুক্তি রুখে দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে সমাবেশে সাজ্জাদ জহির বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ এগুলো নয়। আপনাদের কাজ হলো দ্রুত একটা সাধারণ নির্বাচন দিয়ে জনগণের প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে বিদায় নেওয়া। কিন্তু সেটি না করে একের পর এক দেশের স্বার্থবিরোধী নীতি গ্রহণ করা হচ্ছে।’

সমাবেশে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সহকারী সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, ‘দেশের বন্দর ও টার্মিনাল বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার এই চুক্তি হলে দেশে নিত্যপণ্যের দাম বাড়বে। সব জিনিসপত্রের ওপর শুল্ক বসবে। এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। বাংলাদেশের ভূরাজনীতি নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। বাংলাদেশকে সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধের অংশ বানানোর চেষ্টা হচ্ছে। এটি দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও সম্পদের ওপর বড় আঘাত।’

সরকারকে এসব চুক্তি থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়ে গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু বলেন, ‘বিদেশিদের কাছে বন্দর ইজারা দেওয়ার মানে দেশের বন্দরকে নিরাপত্তাহীন করে ফেলা। দেশকে আরও বৈষম্যের দিকে ঠেলা দেওয়া। আমরা সেটি হতে দেব না। অবিলম্বে এই চুক্তি থেকে সরে আসুন। দেশীয় মালিকানায় বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি করুন। না করলে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।’

কমিউনিস্ট লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আবদুস সাত্তার বলেন, ‘অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বতী সরকারের ওপর কী দায়িত্ব ছিল, আর তিনি কী করছেন? আমরা অবাক হয়ে যাচ্ছি। সাম্রাজ্যবাদীদের হাতে দেশের বন্দর ও টার্মিনাল তুলে দিয়ে তাদের দালালি করছেন। সাম্রাজ্যবাদীর দালালি করে রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকবেন, সেটা হবে না।’

বাসদের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নিখিল দাসের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এ সমাবেশে বাসদের (মার্ক্সবাদী) প্রধান সমন্বয়ক মাসুদ রানাও বক্তব্য দেন। সমাবেশ শেষে প্রেসক্লাবের সামনে থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে বাম জোট।

সম্পর্কিত নিবন্ধ