জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় রায়ের আগে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি ঘিরে বিভিন্ন স্থানে হাতবোমা বিস্ফোরণ ও গাড়িতে আগুন লাগানোর পাশাপাশি কয়েকটি জেলায় গ্রামীণ ব্যাংকের স্থানীয় কিছু কার্যালয়ও আক্রান্ত হয়েছে।

এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও ছড়িয়েছে, যাতে দাবি করা হচ্ছে, ঢাকার মিরপুরে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আগুন লেগেছে। তবে এই ভিডিও যাচাই করে দেখা যাচ্ছে, এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআইয়ের মাধ্যমে তৈরি করা।

ভাইরাল ভিডিওটিতে একটি বহুতল ভবনের ওপরের দিকে আগুন জ্বলতে দেখা যায়। নিচে ফায়ার সার্ভিসের কয়েকটি গাড়ি ও কর্মীদের দেখা যাচ্ছে। বোঝা যাচ্ছে যে তাঁরা আগুন নেভানোর চেষ্টা করছেন। একটি ভিডিওর ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, ‘সুনলাম মিরপুরে নাকি আগুন লাগছে’। পোস্টটি গ্রামীণ ব্যাংকের অফিশিয়াল পেজকে ট্যাগ করে প্রকাশ করা হয়েছে। ভিডিওর ভবনটির সঙ্গে মিরপুর–২ নম্বর সেকশনের গ্রামীণ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের মিল রয়েছে।

লিংক: এখানে, এখানে, এখানে, এখানে

ভিডিওটি বেশি ছড়াচ্ছে Mohammad Ullah (M U Anthony) নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে।

ভিডিও পর্যবেক্ষণে একাধিক অসংগতি দেখা যায়। ফায়ার সার্ভিসের গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকজন মানুষের মধ্যে কোনো দুশ্চিন্তা, আতঙ্ক বা তাড়াহুড়ার লক্ষণ নেই। এত বড় আগুনের পাশে মানুষের স্বাভাবিক ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে থাকা বাস্তব পরিস্থিতির সঙ্গে বৈসদৃশ ঠেকে।

বহুতল ভবনে বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ড হলে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে তীব্রতা বাড়ার কথা। কিন্তু ভিডিওতে আগুন একভাবেই জ্বলতে দেখা যায়। ফায়ার সার্ভিসের গাড়িকে যেদিকে পানি ছিটাতে দেখা যাচ্ছে, তা–ও আগুনের মূল উৎসের দিকের সঙ্গে মিলছে না।

অগ্নিকাণ্ডের ভিডিওতে ব্যাকগ্রাউন্ডে ‘কারার ঐ লৌহ–কবাট’ গান বাজতে শোনা যায়, যা একটি অস্বাভাবিক দিক নির্দেশ করে।

নোবেলজয়ী প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে বড় ধরনের আগুন লাগলে তা নিয়ে জাতীয় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের কথা। কিন্তু দেশ কিংবা বিদেশের কোনো সংবাদমাধ্যমে এমন কোনো প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি।

ভিডিওটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি কি না, তা যাচাই করতে হাইভ মডারেশন (Hive Moderation) নামের এআই কনটেন্ট শনাক্তকারী প্ল্যাটফর্মে পরীক্ষা করা হয়। ফলাফলে দেখা যায়, ভিডিওটি এআই দ্বারা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৯৯ শতাংশ।

তবে ভিডিওটির অডিও অংশটি এআই দিয়ে তৈরি নয় বলে শনাক্ত করা হয়। এটা হতে পারে যে অডিওটি আলাদাভাবে যুক্ত করা হয়েছে।

ভিডিওটি শেয়ারকারী Mohammad Ullah (M U Anthony) নামের ফেসবুক আইডি পর্যালোচনায় দেখা যায়, এর আগেও ওই আইডি থেকে এআই দিয়ে তৈরি অনেক ভিডিও ছড়ানো হয়েছে।

আইডিটিতে বিভিন্ন সময়ে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও আরও কয়েকটি দলের বিরুদ্ধে পোস্ট রয়েছে। আবার ক্ষমতাচ্যুত হয়ে কার্যক্রম নিষিদ্ধ অবস্থায় থাকা আওয়ামী লীগের পক্ষে রয়েছে কিছু পোস্ট।

কয়েকটি পুরোনো পোস্ট থেকে ধারণা পাওয়া যায়, আইডিটি দেশের বাইরে থেকে পরিচালিত হচ্ছে।

ভাইরাল ভিডিওটির ভিজ্যুয়াল ও আচরণগত অসংগতি, সংবাদমাধ্যমে যাচাইকৃত তথ্যের অভাব ও এআই শনাক্তকারী প্ল্যাটফর্মের ফলাফল—সব মিলিয়ে এটা স্পষ্ট যে ভিডিওটি ভুয়া।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আগ ন ল গ

এছাড়াও পড়ুন:

গ্রামীণ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আগুনের ভিডিওটি ভুয়া

জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় রায়ের আগে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি ঘিরে বিভিন্ন স্থানে হাতবোমা বিস্ফোরণ ও গাড়িতে আগুন লাগানোর পাশাপাশি কয়েকটি জেলায় গ্রামীণ ব্যাংকের স্থানীয় কিছু কার্যালয়ও আক্রান্ত হয়েছে।

এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও ছড়িয়েছে, যাতে দাবি করা হচ্ছে, ঢাকার মিরপুরে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আগুন লেগেছে। তবে এই ভিডিও যাচাই করে দেখা যাচ্ছে, এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআইয়ের মাধ্যমে তৈরি করা।

ভাইরাল ভিডিওটিতে একটি বহুতল ভবনের ওপরের দিকে আগুন জ্বলতে দেখা যায়। নিচে ফায়ার সার্ভিসের কয়েকটি গাড়ি ও কর্মীদের দেখা যাচ্ছে। বোঝা যাচ্ছে যে তাঁরা আগুন নেভানোর চেষ্টা করছেন। একটি ভিডিওর ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, ‘সুনলাম মিরপুরে নাকি আগুন লাগছে’। পোস্টটি গ্রামীণ ব্যাংকের অফিশিয়াল পেজকে ট্যাগ করে প্রকাশ করা হয়েছে। ভিডিওর ভবনটির সঙ্গে মিরপুর–২ নম্বর সেকশনের গ্রামীণ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের মিল রয়েছে।

লিংক: এখানে, এখানে, এখানে, এখানে

ভিডিওটি বেশি ছড়াচ্ছে Mohammad Ullah (M U Anthony) নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে।

ভিডিও পর্যবেক্ষণে একাধিক অসংগতি দেখা যায়। ফায়ার সার্ভিসের গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকজন মানুষের মধ্যে কোনো দুশ্চিন্তা, আতঙ্ক বা তাড়াহুড়ার লক্ষণ নেই। এত বড় আগুনের পাশে মানুষের স্বাভাবিক ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে থাকা বাস্তব পরিস্থিতির সঙ্গে বৈসদৃশ ঠেকে।

বহুতল ভবনে বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ড হলে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে তীব্রতা বাড়ার কথা। কিন্তু ভিডিওতে আগুন একভাবেই জ্বলতে দেখা যায়। ফায়ার সার্ভিসের গাড়িকে যেদিকে পানি ছিটাতে দেখা যাচ্ছে, তা–ও আগুনের মূল উৎসের দিকের সঙ্গে মিলছে না।

অগ্নিকাণ্ডের ভিডিওতে ব্যাকগ্রাউন্ডে ‘কারার ঐ লৌহ–কবাট’ গান বাজতে শোনা যায়, যা একটি অস্বাভাবিক দিক নির্দেশ করে।

নোবেলজয়ী প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে বড় ধরনের আগুন লাগলে তা নিয়ে জাতীয় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের কথা। কিন্তু দেশ কিংবা বিদেশের কোনো সংবাদমাধ্যমে এমন কোনো প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি।

ভিডিওটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি কি না, তা যাচাই করতে হাইভ মডারেশন (Hive Moderation) নামের এআই কনটেন্ট শনাক্তকারী প্ল্যাটফর্মে পরীক্ষা করা হয়। ফলাফলে দেখা যায়, ভিডিওটি এআই দ্বারা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৯৯ শতাংশ।

তবে ভিডিওটির অডিও অংশটি এআই দিয়ে তৈরি নয় বলে শনাক্ত করা হয়। এটা হতে পারে যে অডিওটি আলাদাভাবে যুক্ত করা হয়েছে।

ভিডিওটি শেয়ারকারী Mohammad Ullah (M U Anthony) নামের ফেসবুক আইডি পর্যালোচনায় দেখা যায়, এর আগেও ওই আইডি থেকে এআই দিয়ে তৈরি অনেক ভিডিও ছড়ানো হয়েছে।

আইডিটিতে বিভিন্ন সময়ে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও আরও কয়েকটি দলের বিরুদ্ধে পোস্ট রয়েছে। আবার ক্ষমতাচ্যুত হয়ে কার্যক্রম নিষিদ্ধ অবস্থায় থাকা আওয়ামী লীগের পক্ষে রয়েছে কিছু পোস্ট।

কয়েকটি পুরোনো পোস্ট থেকে ধারণা পাওয়া যায়, আইডিটি দেশের বাইরে থেকে পরিচালিত হচ্ছে।

ভাইরাল ভিডিওটির ভিজ্যুয়াল ও আচরণগত অসংগতি, সংবাদমাধ্যমে যাচাইকৃত তথ্যের অভাব ও এআই শনাক্তকারী প্ল্যাটফর্মের ফলাফল—সব মিলিয়ে এটা স্পষ্ট যে ভিডিওটি ভুয়া।

সম্পর্কিত নিবন্ধ