চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলায় চাঞ্চল্যকর মাসুদ ও রায়হান হত্যা মামলার দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁরা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন। আজ রোববার সকালে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুলিশ সুপার রেজাউল করিম।

পুলিশ সুপার বলেন, নাচোলে রায়হান ও মাসুদ রানা হত্যা মামলার ১ নম্বর আসামি মো.

শাহিন রেজা (২২)। ঘটনার পর থেকেই মামলার আসামিদের ধরতে প্রশাসন তৎপর ছিল। চলছিল গোয়েন্দা কার্যক্রমও। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত শুক্রবার ঢাকার সাভার থানা এলাকা থেকে শাহিন রেজাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর দেওয়া তথ্যমতে একই দিন ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা থানা এলাকা থেকে মামলার ৭ নম্বর আসামি মো. সামাদ আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের দেওয়া তথ্যমতে খুনের ঘটনাস্থলের পাশে ময়লার স্তূপ থেকে লোকজনের উপস্থিতিতে হত্যায় ব্যবহৃত ছুরি উদ্ধার করা হয়। এরপর উভয় আসামিকে আদালতে হাজির করা হলে তাঁরা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। হত্যাকাণ্ডে জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

গত ১৭ ডিসেম্বর রাত ১১টার দিকে উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের মল্লিকপুর বাজারে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান দেখে ফেরার পথে এক কিশোরসহ দুজনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। নিহত দুজন হলেন ফতেপুর ইউনিয়নের আবদুর রহিমের ছেলে রায়হান (১৫) ও এজাবুল হকের ছেলে মাসুদ রানা (২২)। মাসুদ রানা নাচোল উপজেলা ছাত্রলীগের সহসম্পাদক ছিলেন। এ ঘটনায় মাসুদ রানার বাবা এজাবুল হক বাদী হয়ে নাচোল থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় ১০ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা সাত-আটজনকে আসামি করা হয়েছে।

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

‘আমরার এইতা দিবস-টিবস দিয়া কী অইব’

ঘড়ির কাঁটায় তখন দুপুর ২টা ২০ মিনিট। মাথার ওপর প্রখর রোদের উত্তাপ। প্রচণ্ড গরমে ত্রাহি অবস্থায় একটু বিশ্রাম নিতে গাছের ছায়ার খোঁজে ক্লান্ত পথিক। এমন সময় ঘর্মাক্ত শরীরে একটি ভবন নির্মাণের কাজ করতে দেখা গেল কয়েকজন শ্রমিককে। তাদের একজন তোঁতা মিয়া, অপরজন হাবিবুল।

হাবিবুল পাথর ভরেই যাচ্ছেন, তোঁতা মিয়া সেগুলো মাথায় করে একের পর এক টুড়ি ছাদ ঢালাইয়ের জন্য পৌঁছে দিচ্ছেন নির্দিষ্ট স্থানে। সেখানেও বালু-পাথরের মিশ্রণ করছেন আরও কয়েকজন। তাদের কর্মযজ্ঞের এক ফাঁকে কথা হয় তোঁতা মিয়ার সঙ্গে।

আলাপকালে তোঁতা মিয়া বলেন, ‘সারাদিন কাম (কাজ) কইরা ৫০০ ট্যাহা (টাকা) হাজিরা পাই। এইডি দিয়া কোনোমতে বউ-পুলাপান নিয়া দিন পার করতাছি। মে দিবস-টিবস কী কইতারতাম না। আমরার মতো গরিব মানুষ কাম না করলে পেডে ভাত জুটতো না এইডাই কইতারবাম।’

গতকাল বুধবার ঈশ্বরগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণকাজ করার সময় এসব কথা বলেন তোঁতা মিয়া (৪৫)। তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার আকুয়া এলাকায়। এ সময় কথা হয় আরেক নির্মাণ শ্রমিক একাদুল মিয়ার সঙ্গে। একাদুলও জানেন না মে দিবস কী। তিনি বলেন, ‘এই কাম কইরা খাইয়া-না খাইয়া বউ-পুলাপান লইয়া কোনোরহমে দিন পার করতাছি। বর্তমান বাজারো জিনিসপাতির দাম বাড়লেও আমরার মজুরি বাড়ে না। পাঁচ বছর আগেও যা পাইতাম, অহনও তাই পাই।’ তিনি বলেন, ‘কয়েক ট্যাহা সঞ্চয় করবাম এই বাও (উপায়) নাই। অসুখ অইয়া চার দিন ঘরে পইড়া থাকলে না খাইয়া থাহন লাগব। আমরার এইতা দিবস-টিবস দিয়া কী অইব?’

আজ বৃহস্পতিবার মহান মে দিবস। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের এই দিনটি সারাবিশ্বের শ্রমিক শ্রেণির কাছে গুরুত্বপূর্ণ। বহির্বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হয় নানা আয়োজনে। কিন্তু যাদের অধিকার আদায়ের জন্য এ দিনটি পালন করা হয়– তারাই জানেন না দিবসটি সম্পর্কে। তাদের আরেকজন দিনমজুর রাজন মিয়া। রাজন জানান, এসব দিবসে তাদের মতো গরিব মানুষের কোনো লাভ-লোকসান নেই। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ