ইসলামে বদ নজর বা নজরে লাগা একটি বাস্তব বিষয় হিসেবে বিবেচিত, যা মানুষের হিংসা বা প্রশংসার দৃষ্টির মাধ্যমে ক্ষতি করতে পারে। বিশেষ করে শিশুরা, যারা দুর্বল ও সংবেদনশীল, তারা বদ নজরের প্রভাবে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
হাদিসে শিশুদের বদ নজর থেকে রক্ষার জন্য নির্দিষ্ট দোয়া ও আমল বর্ণিত আছে। মহানবী (সা.) নিজে তাঁর নাতি হাসান ও হুসাইন (রা.
ইসলামে বদ নজর থেকে রক্ষার জন্য কুরআনের আয়াত, হাদিসে বর্ণিত দোয়া এবং ‘রুকইয়া’ ব্যবহার করা হয়। শিশুদের জন্য নিচের দোয়া ও আমলগুলো বিশেষভাবে ফজিলতপূর্ণ:
১. নবীজি (সা.)-এর শেখানো দোয়া
ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) তাঁর নাতি হাসান ও হুসাইন (রা.)-এর জন্য বদ নজর ও ক্ষতি থেকে রক্ষার জন্য এই দোয়া পড়তেন:
উচ্চারণ: আউজু বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন শাররি মা খালাক।
অর্থ: আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কালিমার মাধ্যমে তাঁর সৃষ্ট সব কিছুর ক্ষতি থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৭০৮)
পড়ার নিয়ম:
শিশুর কপালে বা শরীরে হাত রেখে এই দোয়া তিনবার পড়া।
প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায় বা শিশুকে বাইরে নিয়ে যাওয়ার আগে পড়া।
দোয়া পড়ার পর শিশুর শরীরে হালকাভাবে ফুঁ দেওয়া।
আরও পড়ুনপরিবেশ–সচেতন করে তুলতে শিশুকে ইসলামি শিক্ষা০৪ আগস্ট ২০২৫২. সুরা ইখলাস, ফালাক ও নাস
সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক এবং সুরা নাস পাঠ বদ নজর ও সব ধরনের ক্ষতি থেকে রক্ষার জন্য কার্যকারী আমল আয়েশা (রা.) বলেন, নবীজি (সা.) এই তিনটি সুরা পড়ে নিজের শরীরে ফুঁ দিতেন এবং অন্যদের জন্যও পড়তেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫০১৭)
পড়ার নিয়ম:
তিনটি সুরা তিনবার করে পড়া।
পড়ার পর হাতে ফুঁ দিয়ে শিশুর পুরো শরীরে মুছে দেওয়া।
প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায় বা শিশু অসুস্থ মনে হলে পড়া।
৩. সুরা ফাতিহা
সুরা ফাতিহা বদ নজর ও রোগ নিরাময়ের জন্য অত্যন্ত কার্যকর। হাদিসে আছে, একজন সাহাবি সুরা ফাতিহা পড়ে একজন ব্যক্তির ক্ষতি দূর করেছিলেন এবং নবীজি (সা.) তা অনুমোদন করেছেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৭৩৬)
পড়ার নিয়ম:
সুরা ফাতিহা সাতবার পড়ে শিশুর শরীরে ফুঁ দেওয়া।
শিশুর কপালে হাত রেখে পড়া উত্তম।
আরও পড়ুনসন্তানদের দৃঢ়চেতা মুসলিম হিসেবে গড়ে তোলার উপায়০৮ আগস্ট ২০২৫৪. আয়াতুল কুরসি
আয়াতুল কুরসি (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৫৫) বদ নজর, শয়তান ও সব ধরনের ক্ষতি থেকে রক্ষার জন্য অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত একটি হাদিসে আছে, নবীজি (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আয়াতুল কুরসি পড়ে, তাকে আল্লাহ রক্ষা করেন।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫০১০)
পড়ার নিয়ম:
প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায় বা শিশুকে ঘুমানোর আগে আয়াতুল কুরসি পড়া।
পড়ার পর শিশুর শরীরে ফুঁ দেওয়া।
৫. সাধারণ দোয়া
নিজের ভাষায়ও শিশুর জন্য দোয়া করা যায়। উদাহরণ: “হে আল্লাহ! আমার শিশুকে বদ নজর ও সব ধরনের ক্ষতি থেকে রক্ষা করো, তাকে সুস্থ ও নিরাপদ রাখো।”
নবীজি (সা.) বলেছেন, “দোয়া ইবাদতের মূল।” (সুনান তিরমিজি, হাদিস: ৩৩৭১)
১. রুকিয়া
রুকিয়া হলো কুরআনের আয়াত ও হাদিসে বর্ণিত দোয়া পড়ে শিশুর ওপর ফুঁ দেওয়া। উপরে উল্লিখিত সুরা ফাতিহা, ইখলাস, ফালাক, নাস এবং আয়াতুল কুরসি রুকিয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়।
২. শিশুকে বাইরে নিয়ে যাওয়ার সময় সতর্কতা
শিশুকে অতিরিক্ত প্রশংসা বা জনসম্মুখে বেশি উপস্থাপন না করা, কারণ বদ নজর প্রায়ই প্রশংসার মাধ্যমে হয়। নবীজি (সা.) বলেছেন, “নজর সত্য।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৭৩৯)
শিশুকে বাইরে নিয়ে যাওয়ার আগে দোয়া পড়া এবং কালো কাপড় বা সাধারণ পোশাক পরানো।
৩. সকাল-সন্ধ্যার জিকির
প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় তিনবার করে “আউজু বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন শাররি মা খালাক” পড়া শিশুকে বদ নজর ও শয়তানের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৭০৮)
সতর্কতাশিরক এড়ানো: বদ নজর থেকে রক্ষার জন্য তাবিজ, কালো সুতা বা অপ্রমাণিত পদ্ধতি ব্যবহার না করে শুধু কুরআন ও হাদিসে বর্ণিত দোয়া ব্যবহার করা উচিত।
চিকিৎসার গুরুত্ব: বদ নজরের পাশাপাশি শিশুর শারীরিক অসুস্থতার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। নবীজি (সা.) বলেছেন, “প্রতিটি রোগের জন্য চিকিৎসা রয়েছে।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৬৭৮)
আন্তরিকতা: দোয়া করার সময় পূর্ণ মনোযোগ ও আল্লাহর ওপর ভরসা রাখতে হবে।
আরও পড়ুনশিশু ও প্রবীণের সুরক্ষায় ইসলামের শিক্ষা১২ জুন ২০২০উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সহ হ ব খ র সন ধ য য ত ল ক রস ব যবহ র বল ছ ন আল ল হ বর ণ ত ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
বিশ্বের সেরা কর্মস্থল হিলটন হোটেল, সেরা তালিকায় আছে মেটলাইফ
আধুনিক মানুষের দিনের বড় একটা সময় যায় কর্মস্থলে। ফলে সেই কর্মস্থলের পরিবেশ কেমন, কর্তৃপক্ষ কর্মীদের কথা কতটা ভাবছে—এ সবকিছু এখন অনেক গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের সঙ্গে তার সম্পর্ক আছে।
সম্মান, নিরাপত্তা, উন্নতির সুযোগ ও কাজের অর্থবহতা আছে—মানুষ সাধারণত এমন কর্মস্থলই চায়। এসব মানদণ্ডের ভিত্তিতে ফরচুন ম্যাগাজিন বিশ্বের সেরা কর্মস্থলের তালিকা প্রকাশ করে থাকে। তারা মূলত বিশ্বের সেরা ২৫ কর্মস্থলের তালিকা করে। সেই তালিকায় সবার ওপরে আছে হিলটন হোটেল। মূলত বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে নিয়ে এই জরিপ ও তালিকা করা হয়েছে।
এবারের তালিকায় ২৫টি কোম্পানির মধ্যে ১৬টি যুক্তরাষ্ট্রের। অন্যগুলো বিভিন্ন দেশের, মূলত ইউরোপের। কোম্পানিগুলোর মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের প্রাধান্য দেখা যাচ্ছে—২৫টি কোম্পানির মধ্যে ৮টি এই খাতের। এ ছাড়া নির্মাণ, জৈব ওষুধ, উৎপাদন, কুরিয়ার, আর্থিক ও পেশাদার সেবা দেওয়া কোম্পানিগুলোও তালিকায় আছে।
সেই বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর মধ্যে একটি কোম্পানি হলো বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় জীবনবিমা কোম্পানি মেটলাইফ। ২০২৫ সালে দশম স্থান অর্জন করে টানা দ্বিতীয় বছরের মতো এই মর্যাদাপূর্ণ বৈশ্বিক স্বীকৃতি ধরে রাখল কোম্পানিটি। বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৪০টি দেশে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম রয়েছে।
৯০ লাখের বেশি উত্তরের ওপর ভিত্তি করে ফরচুনের সেরা ২৫টি কর্মক্ষেত্রের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। জরিপ প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাপী আড়াই কোটি কর্মীর কাজের অভিজ্ঞতাকে তুলে ধরা হয়েছে।
এ বিষয়ে মেটলাইফের প্রেসিডেন্ট ও সিইও মিশেল খালাফ বলেন, ‘টানা দ্বিতীয় বছরের মতো বিশ্বের সেরা কর্মস্থলের তালিকায় স্থান পাওয়া কর্মীদের নিষ্ঠা ও উদ্যোগের প্রমাণ।’
কারা আছে তালিকায়দেখে নেওয়া যাক এবারের তালিকায় কোন কোন দেশের কোম্পানি আছে। তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে আছে কুরিয়ার ও যাতায়াত খাতের কোম্পানি ডিএইচএল। তৃতীয় স্থানে আছে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কোম্পানি সিসকো। এর সদর দপ্তর যুক্তরাষ্ট্রে। চতুর্থ স্থানে আছে পেশাদার সেবা দেওয়া আইরিশ কোম্পানি অ্যাক্সেনচিউর, পঞ্চম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের আরেক বিশ্বখ্যাত হোটেল ম্যারিয়ট ইন্টারন্যাশনাল। ষষ্ঠ স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের জৈব ওষুধ কোম্পানি অ্যাব ভিয়ে, সপ্তম স্থানে আছে ফ্রান্সের পেশাদার সেবা দেওয়া কোম্পানি টিপি। অষ্টম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদনভিত্তিক কোম্পানি স্ট্রাইকার, নবম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি সেলস ফোর্স।
দশম স্থানে আছে মার্কিন বিমা কোম্পানি মেটলাইফ, ১১তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কোম্পানি সার্ভিস নাউ। ১২তম স্থানে আছে যুক্তরাজ্যের খুচরা বিক্রেতা কোম্পানি স্পেকসেভার্স। ১৩তম স্থানে আছে জার্মানির স্বাস্থ্যসেবা কোম্পানি সিমেন্স হেলদিনেস; ১৪তম স্থানে আছে আইরিশ তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি এক্সপেরিয়েন। ১৫তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রে তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি এনভিডিয়া, ১৬তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি কেডেন্স। ১৭তম স্থানে আছে জার্মানির বিমা ও আর্থিক কোম্পানি আলিয়াঞ্জ এবং ১৮তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদন খাতের কোম্পানি ডাও।
১৯ থেকে ২১তম স্থানে আছে তিনটি মার্কিন কোম্পানি। ১৯তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের জৈব ওষুধ কোম্পানি ভিয়াট্রিস, ২০তম স্থানে তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি অ্যাডোবি, ২১তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি ক্রাউডস্ট্রাইক।
২২ ও ২৩তম স্থানেও আছে যুক্তরাষ্ট্রের দুটি কোম্পানি—উৎপাদন খাতের এসসি জনসন ও খুচরা বিক্রয় খাতের ট্রেক বাইসাইকেল। ২৪তম স্থানে আছে লিচেনস্টাইনের নির্মাণ কোম্পানি হিলতি ও ২৫তম স্থানে আছে যুক্তরাজ্যের বিমা ও আর্থিক খাতের কোম্পানি অ্যাডমিরাল গ্রুপ।
কীভাবে এই মূল্যায়ন৩০ বছর ধরে এই জরিপ পরিচালনা করছে ফরচুন ম্যাগাজিন। সারা বিশ্বের কর্মীদের কাছ থেকে তারা জানতে চায়, কর্মস্থলে তাঁদের অভিজ্ঞতা কেমন। এই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তারা কিছু মানদণ্ড তৈরি করে। সেই মানদণ্ডের ভিত্তিতে বোঝা যায়, কোনো কর্মস্থল প্রকৃত অর্থেই ‘দারুণ’ কি না। সেই সঙ্গে কর্মীরা সে প্রতিষ্ঠানে থাকতে চান কি না, প্রতিষ্ঠান কত দ্রুত পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে ও তার সামগ্রিক ব্যবসায়িক সাফল্য কতটা মিলবে—এসব বিষয়েও ধারণা পাওয়া যায় জরিপে।
ফরচুন ম্যাগাজিন নিজস্ব ট্রাস্ট ইনডেক্স বা আস্থাসূচক তৈরি করেছে। ব্যবস্থাপনার প্রতি কর্মীদের আস্থা কতটা, সহকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন ও কোম্পানির প্রতি কর্মীদের আনুগত্য কতটা—এসব আস্থাসূচকের মাধ্যমে এসব বিষয় পরিমাপ করা হয়।
এ জরিপে কর্মীরা গোপনীয়তার সঙ্গে তাঁদের মতামত জানাতে পারেন। ৬০টি বিষয়ের ওপর ৫ পয়েন্টের ভিত্তিতে উত্তর দিতে হয়, সঙ্গে থাকে ২টি উন্মুক্ত প্রশ্ন।
কর্মীদের কাছ থেকে যেসব বিষয় জানতে চাওয়া হয়, সেগুলো হলো নেতৃত্বের কাছে কি সহজে যাওয়া যায়, নেতৃত্ব সততা ও স্বচ্চতার সঙ্গে কথা বলেন ও কাজ করেন কি না, নেতৃত্বের কথা ও কাজে মিল আছে কি না। সেই সঙ্গে কর্মীরা ব্যক্তিগতভাবে সম্মানিত বোধ করেন কি না এবং তাঁদের প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা কতটা। নেতৃত্ব কর্মীদের কৃতজ্ঞতা জানান কি না এবং কর্মীদের সুস্থতা বজায় রাখার ব্যবস্থা নেওয়া হয় কি না। এ ছাড়া কর্মীদের অবদান রাখার সুযোগ আছে কি না, তা–ও জানতে চাওয়া হয়।
জরিপে কর্মীদের কাছে আরও যেসব বিষয় জানতে চাওয়া হয় সেগুলো হলো:বেতন, মুনাফা, পদোন্নতি, স্বীকৃতি ও সুযোগের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান কতটা ন্যায়সংগত;
কর্মীরা নিজেদের কাজ, কর্মদল ও প্রতিষ্ঠানের জন্য গর্ব বোধ করেন;
কাজ অর্থবহ এবং তা পরিবর্তন আনতে সহায়তা করে;
সহকর্মীদের সঙ্গে কাজ করতে ভালো লাগে;
কর্মীরা নিজেদের মতো করে কাজ করতে পারেন।
প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের অভিজ্ঞতার ভিন্নতা কতটা, তা–ও জরিপে পরিমাপ করা হয়। কর্মীদের অভিজ্ঞতার ধারাবাহিকতা ও গুণগত মানও মূল্যায়ন করা হয়। এভাবে প্রতিটি ধাপে কঠোর মানদণ্ড মেনে এই তালিকা করা হয় বলে জানিয়েছে ফরচুন ম্যাগাজিন।