Prothomalo:
2025-08-16@00:00:22 GMT

শিশুদের বদ নজর থেকে বাঁচাতে

Published: 16th, August 2025 GMT

ইসলামে বদ নজর বা নজরে লাগা একটি বাস্তব বিষয় হিসেবে বিবেচিত, যা মানুষের হিংসা বা প্রশংসার দৃষ্টির মাধ্যমে ক্ষতি করতে পারে। বিশেষ করে শিশুরা, যারা দুর্বল ও সংবেদনশীল, তারা বদ নজরের প্রভাবে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

হাদিসে শিশুদের বদ নজর থেকে রক্ষার জন্য নির্দিষ্ট দোয়া ও আমল বর্ণিত আছে। মহানবী (সা.) নিজে তাঁর নাতি হাসান ও হুসাইন (রা.

)-এর জন্য বদ নজর থেকে রক্ষার দোয়া পড়তেন।

শিশুদের বদ নজর থেকে রক্ষা করতে

ইসলামে বদ নজর থেকে রক্ষার জন্য কুরআনের আয়াত, হাদিসে বর্ণিত দোয়া এবং ‘রুকইয়া’ ব্যবহার করা হয়। শিশুদের জন্য নিচের দোয়া ও আমলগুলো বিশেষভাবে ফজিলতপূর্ণ:

১. নবীজি (সা.)-এর শেখানো দোয়া

ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) তাঁর নাতি হাসান ও হুসাইন (রা.)-এর জন্য বদ নজর ও ক্ষতি থেকে রক্ষার জন্য এই দোয়া পড়তেন:
উচ্চারণ: আউজু বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন শাররি মা খালাক।
অর্থ: আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কালিমার মাধ্যমে তাঁর সৃষ্ট সব কিছুর ক্ষতি থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৭০৮)

পড়ার নিয়ম:

শিশুর কপালে বা শরীরে হাত রেখে এই দোয়া তিনবার পড়া।

প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায় বা শিশুকে বাইরে নিয়ে যাওয়ার আগে পড়া।

দোয়া পড়ার পর শিশুর শরীরে হালকাভাবে ফুঁ দেওয়া।

আরও পড়ুনপরিবেশ–সচেতন করে তুলতে শিশুকে ইসলামি শিক্ষা০৪ আগস্ট ২০২৫

২. সুরা ইখলাস, ফালাক ও নাস

সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক এবং সুরা নাস পাঠ বদ নজর ও সব ধরনের ক্ষতি থেকে রক্ষার জন্য কার্যকারী আমল আয়েশা (রা.) বলেন, নবীজি (সা.) এই তিনটি সুরা পড়ে নিজের শরীরে ফুঁ দিতেন এবং অন্যদের জন্যও পড়তেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫০১৭)

পড়ার নিয়ম:

তিনটি সুরা তিনবার করে পড়া।

পড়ার পর হাতে ফুঁ দিয়ে শিশুর পুরো শরীরে মুছে দেওয়া।

প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায় বা শিশু অসুস্থ মনে হলে পড়া।

৩. সুরা ফাতিহা

সুরা ফাতিহা বদ নজর ও রোগ নিরাময়ের জন্য অত্যন্ত কার্যকর। হাদিসে আছে, একজন সাহাবি সুরা ফাতিহা পড়ে একজন ব্যক্তির ক্ষতি দূর করেছিলেন এবং নবীজি (সা.) তা অনুমোদন করেছেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৭৩৬)

পড়ার নিয়ম:

সুরা ফাতিহা সাতবার পড়ে শিশুর শরীরে ফুঁ দেওয়া।

শিশুর কপালে হাত রেখে পড়া উত্তম।

আরও পড়ুনসন্তানদের দৃঢ়চেতা মুসলিম হিসেবে গড়ে তোলার উপায়০৮ আগস্ট ২০২৫

৪. আয়াতুল কুরসি

আয়াতুল কুরসি (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৫৫) বদ নজর, শয়তান ও সব ধরনের ক্ষতি থেকে রক্ষার জন্য অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত একটি হাদিসে আছে, নবীজি (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আয়াতুল কুরসি পড়ে, তাকে আল্লাহ রক্ষা করেন।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫০১০)

পড়ার নিয়ম:

প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায় বা শিশুকে ঘুমানোর আগে আয়াতুল কুরসি পড়া।

পড়ার পর শিশুর শরীরে ফুঁ দেওয়া।

৫. সাধারণ দোয়া

নিজের ভাষায়ও শিশুর জন্য দোয়া করা যায়। উদাহরণ: “হে আল্লাহ! আমার শিশুকে বদ নজর ও সব ধরনের ক্ষতি থেকে রক্ষা করো, তাকে সুস্থ ও নিরাপদ রাখো।”
নবীজি (সা.) বলেছেন, “দোয়া ইবাদতের মূল।” (সুনান তিরমিজি, হাদিস: ৩৩৭১)

আরও পড়ুনতিন শিশু দোলনা থেকে কথা বলেছিল ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪বদ নজর থেকে রক্ষার আমল

১. রুকিয়া

রুকিয়া হলো কুরআনের আয়াত ও হাদিসে বর্ণিত দোয়া পড়ে শিশুর ওপর ফুঁ দেওয়া। উপরে উল্লিখিত সুরা ফাতিহা, ইখলাস, ফালাক, নাস এবং আয়াতুল কুরসি রুকিয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়।

২. শিশুকে বাইরে নিয়ে যাওয়ার সময় সতর্কতা

শিশুকে অতিরিক্ত প্রশংসা বা জনসম্মুখে বেশি উপস্থাপন না করা, কারণ বদ নজর প্রায়ই প্রশংসার মাধ্যমে হয়। নবীজি (সা.) বলেছেন, “নজর সত্য।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৭৩৯)

শিশুকে বাইরে নিয়ে যাওয়ার আগে দোয়া পড়া এবং কালো কাপড় বা সাধারণ পোশাক পরানো।

৩. সকাল-সন্ধ্যার জিকির

প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় তিনবার করে “আউজু বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন শাররি মা খালাক” পড়া শিশুকে বদ নজর ও শয়তানের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৭০৮)

সতর্কতা

শিরক এড়ানো: বদ নজর থেকে রক্ষার জন্য তাবিজ, কালো সুতা বা অপ্রমাণিত পদ্ধতি ব্যবহার না করে শুধু কুরআন ও হাদিসে বর্ণিত দোয়া ব্যবহার করা উচিত।

চিকিৎসার গুরুত্ব: বদ নজরের পাশাপাশি শিশুর শারীরিক অসুস্থতার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। নবীজি (সা.) বলেছেন, “প্রতিটি রোগের জন্য চিকিৎসা রয়েছে।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৬৭৮)

আন্তরিকতা: দোয়া করার সময় পূর্ণ মনোযোগ ও আল্লাহর ওপর ভরসা রাখতে হবে।

আরও পড়ুনশিশু ও প্রবীণের সুরক্ষায় ইসলামের শিক্ষা১২ জুন ২০২০

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সহ হ ব খ র সন ধ য য ত ল ক রস ব যবহ র বল ছ ন আল ল হ বর ণ ত ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

শুভ জন্মাষ্টমী আজ

অত্যাচারীর বিরুদ্ধে দুর্বলের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং দুষ্টের দমন ও শিষ্টের লালন করতে পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছিলেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ—এই বিশ্বাস পোষণ করেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। শ্রীকৃষ্ণের এই আবির্ভাব তিথি শুভ জন্মাষ্টমী হিসেবে উদ্‌যাপন করা হয়।

সনাতন ধর্মের মানুষ বিশ্বাস করেন, পাশবিক শক্তি যখন ন্যায়নীতি, সত্য ও সুন্দরকে গ্রাস করতে উদ্যত হয়েছিল, তখন সেই শক্তিকে দমন করে মানবজাতির কল্যাণ এবং ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠার জন্য মহাবতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব ঘটেছিল। আজ শনিবার শ্রীকৃষ্ণের শুভ জন্মতিথি।

জন্মাষ্টমী উপলক্ষে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল শুক্রবার এক বাণীতে তিনি বলেন, ছাত্র-শ্রমিক-জনতার ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার সম্প্রীতির বন্ধন অটুট রাখতে বদ্ধপরিকর। সমাজে বিদ্যমান শৃঙ্খলা, ভ্রাতৃত্ববোধ ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে কেউ যেন নষ্ট করতে না পারে, সে জন্য সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সমাজে সাম্য ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে শ্রীকৃষ্ণ আজীবন ন্যায়, মানবপ্রেম ও শান্তির বাণী প্রচার করেছেন। শ্রীকৃষ্ণ যেখানেই অন্যায়-অবিচার দেখেছেন, সেখানেই অপশক্তির হাত থেকে শুভশক্তিকে রক্ষার জন্য আবির্ভূত হয়েছেন।

মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আবহমানকাল থেকে এ দেশের মানুষ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে নিজ নিজ ধর্ম পালন করছে। শ্রীকৃষ্ণের আদর্শ ও শিক্ষা পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনকে আরও সুদৃঢ় করবে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে ভরপুর বৈষম্যমুক্ত এক নতুন বাংলাদেশ গড়ার আহ্বান জানান তিনি।

বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদ ও মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটি জানিয়েছে, ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে আজ সকাল আটটায় দেশ-জাতির মঙ্গল কামনায় শ্রীশ্রী গীতাযজ্ঞ, বেলা তিনটায় ঐতিহাসিক কেন্দ্রীয় জন্মাষ্টমী মিছিল ও রাতে শ্রীকৃষ্ণপূজা অনুষ্ঠিত হবে।

পূজা উদ্‌যাপন পরিষদ ও মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটি জানিয়েছে, রাজধানীর পলাশীর মোড়ে আজ বেলা তিনটায় কেন্দ্রীয় জন্মাষ্টমী মিছিলের উদ্বোধন করবেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান, বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন ও নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল মো. মঈন খান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ