অমর একুশে বইমেলায় লিজা কামরুন্নাহারের দু’টি বই
Published: 31st, January 2025 GMT
নারায়ণগঞ্জের কৃতি সন্তান কবি, সাংবাদিক লিজা কামরুন্নাহারের নতুন কবিতার বই “অন্তর্দাহ” ও “পত্রালাপ” এবারের বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে।
বই ২টি প্রকাশ করেছে প্রকাশনা সংস্থা “কারুবাক” ও “ মেঘদুত”। একুশে বইমেলায় কারুবাকের ৩৫৭ ও ৩৫৮ নাম্বার স্টল ও মেঘদুতের ৬ ও ৭ নং স্টলে বইগুলো পাওয়া যাবে।
“অন্তর্দাহ” প্রসঙ্গে লেখক লিজা কামরুন্নাহার বলেন- মুক্তি বলতে আমি বুঝি শক্তি, অন্তরের আধরি বচন মানে কবিতা। কবিতা হলো মনের মুক্তি। যেখানে শব্দগুলো খেলা করে অনুভূতির আদলে। যে কবিতা শুনতে জানে না, সে কোন আনন্দ উপভোগ করতে জানে না।
সৃষ্টিশীল অনুভূতির অপূর্ব সমন্বয় হলো মুক্তি। স্বাধীনতা মানে হলো সকল অশুচি থেকে মনের মুক্তির আস্বাদন। চাই মনের স্বাধীনতা, সততা ও স্বচ্ছতা। যেখানে আনন্দগুলো আলোয় হাসে।
অপর বই “পত্রালাপ” প্রসঙ্গে লেখক বলেন, চিঠি লেখার সময় কোন সাহিত্য নয় অন্তরের ডাক এর প্রকাশ পায় সতত, শ্বাশত ও সুন্দরভাবে। চিঠির ফাঁকে ফাঁকে ঘণ্টাধ্বনি আমাদের মনে করিয়ে দেয় সময়ের পরিক্রমায় ধাবিত, আমরা পরিভ্রমণ করবো।
জয়িতা-রুদ্র এর জীবনের পথে পথে বিভিন্ন ধাপ তথা স্কুল, কলেজ জীবন, বিশ্ববিদ্যালয় জীবন, বিবাহিত জীবন এবং জীবনের শেষ প্রান্তে এসে লব্ধ অনুভূতি।
উপলব্ধি যাপিত জীবনের ভালো-মন্দের মিশেলে মানবিক জীবনের আত্ম-অনুধাবন দু'টি চরিত্রের মাধ্যমে মানব জীবন সময় ও প্রকৃতির কাছে কতটা দায়বদ্ধ তা জানা যাবে। পাস্কাল মনে করেন, প্রকৃতি হচ্ছে এক অসীম পরিমন্ডল যার কেন্দ্র আছে সর্বত্রই কিন্তু পরিধি নেই কোথাও। চিঠির একটি ধ্রুপদি ঐতিহ্য আছে।
ডাক হরকরার ডাক হয়তো একদিন থেমে আসবে কিন্তু চিঠির গুরুত্ব থেকে যাবে মানব সভ্যতার অস্তিত্ব অবধি। সেই সাথে দু'টি চরিত্রের আদলে ও কথোপকথনে-মাধ্যম চিঠি হলে আমরা ভিন্ন ভিন্ন সময় ও সম্পর্ককে, সহজ ও দুর্বোধ্য, রোমান্টিক, বাস্তবিক, প্রগতিশীল আধুনিকতাকে ভিন্ন আঙ্গিকে দেখবো।
প্রসঙ্গত, লিজা কামরুন্নাহার জন্ম ১৬ মে ১৯৭৫, পেশাগত জীবনে সাংবাদিকতা, শিক্ষকতা ও লেখালেখি নিয়ে জীবন যাপন করেছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে মাস্টার্স করেছেন।
এছাড়া তিনি বাংলাদেশ ফুড সেফটি মুভমেন্টে জয়েন্ট সেক্রেটারি হিসেবে কাজ করছেন। যাপিত জীবনে সমাজ সেবামূলক কাজ করার তাগিদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এক্স স্টুডেন্টন্স ক্লাব অফ নারায়ণগঞ্জ লিঃ নামক সংগঠনে ডাইরেক্টর হিসেবে কাজ করছেন। সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে লেখালেখিতে মনোযোগী হয়েছেন তিনি।
লিজা কামরুন্নাহার এর প্রকাশিত বই সমূহ হলো- ১.
তাঁর পিতা মরহুম কাইয়ুম মাহতাব এবং মা রিজিয়া কাইয়ুম। তাঁর পিতৃ-পিতামহ তৌশাদ্দল হোসেন বৃটিশ আমলে নারায়ণগঞ্জ মহকুমার শাসক ছিলেন। ব্যক্তিজীবনে তিনি স্বামীসহ দুই সন্তানের জননী। এছাড়া তিনি কলামিস্ট। বাবা একজন বীর মুক্তিযোদ্বা ছিলেন।
লিজা কামরুন্নাহার এর লেখা কবিতা কলকাতায় একটি প্রকাশনায় প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া তাঁর লেখা যৌথভাবে সম্পাদনায় বহু প্রকাশিত হয়েছে।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ জ বন র ত জ বন
এছাড়াও পড়ুন:
সিদ্ধিরগঞ্জে সেনাবাহিনীর উদ্ধারকৃত ডিএনডি খাল দখল করে চাঁদাবাজি!
সিদ্ধিরগঞ্জের হীরার্ঝিল আবাসিক এলাকায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উদ্ধারকৃত ডিএনডি (ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা) খাল দখল করে দোকান বসিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে কয়েকজন বাড়ির মালিকের বিরুদ্ধে। এর ফলে ডিএনডি খালটি ফের সংকুচিত হতে শুরু করেছে। পাশাপাশি তৈরি হচ্ছে জলাবদ্ধতা।
এদিকে এই এলাকাটি শিমরাইল পাম্প স্টেশনের নিকটবর্তী এলাকা হওয়ায় দোকানগুলোর কারণে ঠিকমতোন পানি সরবরাহ হতে পারছে না। তবে প্রশাসনের ভাষ্য, খুব শিগগিরই এখানে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।
বুধবার (৩০ জুলাই) বিকেলে নাসিক ১নং ওয়ার্ডের হীরাঝিল আবাসিক এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বালু খালপাড় দখল করে হরেক রকমের ছোট-বড় প্রায় ২৫টি দোকান বসানো হয়েছে। হাবিবুল্লাহ হবুলের মালিকানাধীন হাবিবুল্লাহ টাওয়ার থেকে শুরু করে মোক্তার হোসেন সরকারের মালিকানাধীন বিএম ভবন, সিদ্দিকুর রহমানের মালিকানাধীন মমতাজ ভিলা, নূর মোহাম্মদ টাওয়ার, নুরুল হুদা’র বাড়ির সামনে এসব স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে।
এর বিনিময়ে প্রতি দোকান থেকে টাকা তুলছেন স্ব স্ব বাড়ির মালিকরা। চাঁদা তোলার বিষয়টি কয়েকজন বাড়িওয়ালা অকপটে স্বীকারও করেছেন।
এদিকে, দোকানগুলোর কারণে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নির্মিত ওয়াকওয়ে দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে পথচারীদের চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। পাশাপাশি হীরাঝিল এলাকাবাসীকেও ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, হীরাঝিল আবাসিক এলাকা একটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। যানবাহন ও মানুষের চাপ বেশি থাকায় এই এলাকায় সবসময় যানজট লেগেই থাকে। চলাচলের সুবিধার্তে এলাকাবাসী ডিএনডি খালের পাড় দিয়ে নিজ নিজ গন্তব্যস্থলে যেতেন। কিন্তু কয়েকজন বাড়িওয়ালা এহেন কর্মকান্ডের কারণে হাজার হাজার মানুষ দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন।
এসব দোকানের কারণে খালের সৌন্দর্য নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি পানি নিষ্কাশন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং চাঁদাবাজি প্রশাসন বন্ধ করতে না পারলে আগামীতে ফের বন্যা হওয়ার শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। তাই এ বিষয়ে প্রশাসনের দ্রুত প্রদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।
এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে ‘কাবাব বাড়ি’ ভবনের মালিক মো. রফিক বলেন, আমার বাড়ির সামনে ডিএনডি খাল দখল করে আমি কোনো দোকান বসাই নি। আমি নিজেও চাই এখানে কোনো দোকান না বসুক। কিন্তু আমি যতটুকু শুনেছি টিএইচ তোফা নামের এক ব্যক্তি এই দোকানগুলো বসিয়েছেন। আমি অনেক চেষ্টা করেছে দোকানগুলো সরিয়ে দেওয়ার। আর এখানে দোকান বসিয়ে টাকা তোলার প্রশ্নই উঠে না।
একই অভিযোগ স্বীকার করে মমতাজ ভিলার মালিক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, অন্যসবাই দোকান বসিয়েছে। আমি তা দেখাদেখি ২টি দোকান বসিয়েছি। এটা আমার অপরাধ হয়েছে তা আমি নিজেও বুঝি। আমি মূলত সবার দেখাদেখি দোকান বসিয়েছি।
নুরুল হুদা নামের আরেক বাড়িওয়ালা বলেন, আমি দোকান বসিয়েছি। কিন্তু ওইখান থেকে কোনো অর্থ আদায় করি না। চাইলে এ বিষয়ে তদন্ত করা হতে পারে। আর এখানে দীর্ঘদিন ধরেই দোকান ছিল।
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাফর সাদিক চৌধুরী বলেন, এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহিনূর আলম বলেন, চাঁদাবাজির বিষয়টি আমাদের জানা নেই। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নারায়ণগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শুভ আহমেদ বলেন, এ বিষয়ে আমি অবগত ছিলাম না। তবে অভিযোগ যেহেতু পেয়েছি তাহলে অবশ্যই ঘটনাস্থলে লোক পাঠানো হবে। ডিএনডি খালপাড় থেকে স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার জন্য প্রথমে আমরা একাধিকবার তাদের নোটিশ পাঠাবো।
যদি তারা কথা না শোনেন তাহলে আইন অনুযায়ী উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে। খাল দখলের বিরুদ্ধে আমরা সবসময় জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছি।
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ডিসি) জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে আমরা এরই মধ্যে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন খাল পরিষ্কার করা শুরু করেছি। ডিএনডি খালসহ যেকোনো খাল এভাবে দখল হয়ে থাকলে দখলকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি শিগগিরই এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে ৮ ডিসেম্বর ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়নে ডিএনডি প্রকল্প হাতে নেয় পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। শুরুতে প্রকল্পের বাজেট ৫৫৮ কোটি টাকা ধরা হলেও তা বাস্তবায়নে সবমোট ১৩০০ কোটি টাকা খরচ হয়।
২০২৫ সালের জুন মাসে এই প্রকল্পের কাজ শেষ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনীর প্রকল্প বাস্তবায়ন করাকালে তখন খালটি দখল না হলেও প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার পর পরই হীরাঝিল এলাকার কয়েকজন বাড়িওয়ালা ডিএনডি খাল দখল করে দোকান বসানো শুরু করে।