এখনো কুপিবাতির আলোয় জমজমাট শতবর্ষী মিরতিংগার হাট
Published: 16th, August 2025 GMT
সন্ধ্যা নামতেই যেন ‘আবার আকাশে অন্ধকার ঘন হয়ে উঠছে’। ‘আলোর রহস্যময়ী সহোদরার মতো এই অন্ধকার’—আরও রহস্যময় করে তুলেছে মিরতিংগার হাটকে। চা-বাগানের ভেতর একটুকরা পণ্যের হাট। কালের যাত্রা থেকে বহুদূর ছিন্ন পালকের মতো পড়ে থাকা একদল শ্রমজীবী মানুষের হাট এটি। ‘সমস্ত দিনের শেষে’ ক্লান্তি নিয়ে এই মানুষেরা এখানে আসেন। তাঁদের অর্থবিত্ত কম, চাওয়া-পাওয়ার তালিকাটাও ছোট। হাটের পণ্যে সেই অল্প চাওয়ার চিহ্ন লেগে আছে।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার একটি চা-বাগান মিরতিংগা। মিরতিংগা চা-বাগানে পুরোনো সময়ের গন্ধমাখা এই হাটের বয়স এখন কত, তা নিশ্চিত করতে পারেন না কেউ। তবে তা যে শত বছরের কাছাকাছি হবে, এ নিয়ে কারও দ্বিধা নেই।
স্থানীয় লোকজন জানান, হাটটি আগে মিরতিংগা চা-বাগানেরই অন্য একটি স্থানে বসত। পরে কোনো একসময় বর্তমান স্থানটিতে হাট বসছে। চা-শ্রমিক, তাঁদের পরিবারের লোকজনই এ হাটের প্রধান ক্রেতা। তবে বেশির ভাগ ব্যবসায়ীই আসেন আশপাশের এলাকা থেকে। এই হাটের সঙ্গে অনেক ব্যবসায়ীর নাড়ির সম্পর্ক। কারও বাপ-দাদা এই হাটে পণ্য নিয়ে আসতেন। কারও হাটে নিয়মিত আসার বয়স হয়ে গেছে ২৫-৩০ বছর। চা-শ্রমিকদের সঙ্গে তাঁদের লেনদেনের এক অলিখিত নগদ-বাকির রোজনামচা আছে, এটা দুই পক্ষই মেনে চলে।
সপ্তাহে দুই দিন বসে মিরতিংগা বাজার—সোম ও বৃহস্পতিবার। বিকেল তিনটার পর থেকে একটু একটু করে হাটটি জমতে শুরু করে। সন্ধ্যায় একদম জমজমাট। সন্ধ্যার পর শ্রমক্লান্ত মানুষের থাকে ঘর ফেরার তাড়া। হাটটি ফাঁকা হতে থাকে। রাত নয়টার দিকে হাট ভেঙে যায়। এর মধ্যে সোমবারের হাটটি অতটা জমে না। এদিন চা-শ্রমিকদের হাতে টাকা থাকে না। যাঁরা ওই দিন (সোমবার) বাজারে আসেন, তাঁদের অনেকেই বাকিতে পণ্য কেনেন। কেউ মজা করে বলেন, সোমবার হচ্ছে বাকির হাটবার। বৃহস্পতিবারেই বাজারটি ভালো জমে। এদিন ‘তলববার’, শ্রমিকেরা সপ্তাহের মজুরি পান। অনেকের হাতে হাজারখানেকের মতো টাকা আসে। তা দিয়েই বাকির টাকা পরিশোধ করেন, সম্ভব হলে মাছ কেনেন। নয়তো চাল, আনাজ-তরকারি, তেল-নুন, যা না কিনলেই নয়। সেগুলো নিয়ে ঘরে ফেরেন। এই একটা নিয়মে সেই কবেকার সময় থেকে মিরতিংগা বাজার চলছে।
সন্ধ্যা নামতে নামতেই জমে ওঠে হাট। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের মিরতিংগা হাটে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সন ধ য
এছাড়াও পড়ুন:
শতবর্ষী প্যাডেল স্টিমার ‘পিএস মাহসুদ’ চালু
প্রমোদতরী হিসেবে দেশের অভ্যন্তরীণ নৌপথে শনিবার (১৫ নভেম্বর) চালু হয়েছে শতবর্ষী প্যাডেল স্টিমার ‘পিএস মাহসুদ’।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম. সাখাওয়াত হোসেন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে রাজধানীর সদরঘাটে শতবর্ষী এ প্যাডেল স্টিমার যাত্রার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
আরো পড়ুন:
‘নৌপথ ও মৎস্য সম্পদ রক্ষায় যৌথ উদ্যোগে কাজ করবে নৌপরিবহন ও মৎস্য মন্ত্রণালয়’
শ্রম উপদেষ্টার সঙ্গে জার্মান সংসদ সদস্যের সাক্ষাৎ
আগামী প্রজন্মের কাছে বাংলাদেশের নদীমাতৃক ঐতিহ্য তুলে ধরাই এর মূল লক্ষ্য।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুতফে সিদ্দিকীসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “পিএস মাহসুদ বাংলাদেশের ঐতিহ্য ও নৌ-পর্যটনের মধ্যে এক অনন্য সেতুবন্ধন তৈরি করবে।”
তিনি আরো বলেন, “আগামী ২১ নভেম্বর থেকে ঢাকা-বরিশাল রুটে নিয়মিত পর্যটন সেবা শুরু করবে জাহাজটি।”
তিনি বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিআইডব্লিউটিসির শতবর্ষী প্যাডেল স্টিমার ‘পিএস মাহসুদ’কে সংস্কার ও পুনরায় চালু করার সিদ্ধান্তে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন।”
সাখাওয়াত বলেন, “পিএস মাহসুদ শুধু একটি জাহাজ নয়, এটি বাংলাদেশের নদীমাতৃক সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের জীবন্ত প্রতীক। আমরা চাই নতুন প্রজন্ম দেখুক, একসময় নদীই ছিল যোগাযোগ ও সংস্কৃতির প্রাণ।”
তিনি জানান, নদী ঐতিহ্য সংরক্ষণ এবং নৌ-পর্যটনের সম্ভাবনা বাড়াতে পিএস অস্ট্রিচ, পিএস লেপচা ও পিএস টার্নসহ আরও কয়েকটি পুরনো স্টিমার মেরামতের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্পোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) কর্মকর্তারা জানান, স্টিমারটির সংস্কার ও আধুনিকীকরণে মূল কাঠামো ও ঐতিহাসিক নকশা অক্ষুণ্ন রাখা হয়েছে। তবে, ইঞ্জিন, নিরাপত্তা ও অগ্নি-নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পূর্ণ আধুনিক করা হয়েছে।
এতে রয়েছে আধুনিক কেবিন, পর্যটকবান্ধব ডেক ও ডিজিটাল নেভিগেশন ব্যবস্থা।
স্টিমারটি প্রতি শুক্রবার ঢাকা থেকে বরিশাল এবং প্রতি শনিবার বরিশাল থেকে ঢাকা যাবে। সকাল ৮টায় রাজধানীর সদরঘাট থেকে ছেড়ে রাতে বরিশালে পৌঁছাবে।
আগে স্টিমারটি শুধু রাতেই চলত। এবার দিনের ভ্রমণ চালু হওয়ায় পর্যটকরা নদী ও নদীর তীরের সৌন্দর্য আরও বেশি উপভোগ করতে পারবেন বলে আশা করছেন বিআইডব্লিউটিসির কর্মকর্তারা। খবর বাসসের।
ঢাকা/এসবি