রবীন্দ্ররচনাবলি, নজরুলরচনাবলি, বাংলাপিডিয়া কিংবা মুক্তিযুদ্ধের দলিলসংবলিত বই-সব জলে গেছে। ২০২৩ সালের আগস্টের বন্যায় আক্ষরিক অর্থেই ভেসে গেছে বান্দরবানের জেলা সরকারি গ্রন্থাগারটি। ছাদ ছুঁই ছুঁই পানিতে গ্রন্থাগারের ২৮ হাজার বইয়ের সব কটিই নষ্ট হয়ে যায়। এখন আবার মাথা তুলে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে গ্রন্থাগারটি।

২০২৩ সালের ২ আগস্ট শুরু হওয়া অতিবৃষ্টিতে বান্দরবান সদরসহ বিভিন্ন উপজেলা তলিয়ে গিয়েছিল। আদালত ভবন, জেলা প্রশাসন কার্যালয়সহ এমন কোনো সরকারি দপ্তর ছিল না, যেখানে পানি ওঠেনি। বন্যার ছোবল পড়ে গণপাঠাগারটিতেও। কয়েক দিন পানির নিচে ছিল পাঠাগারটি।

সেই ভয়াবহ বন্যার চিহ্ন এখনো গ্রন্থাগারের ভেতরে-বাইরে। বাইরের প্রাঙ্গণে এখনো বৃষ্টিতে ভিজে নষ্ট হয়ে যাওয়া বই এবং আসবাবের স্তূপ। দেয়ালে পানির আবছা দাগ। ভেতরের কয়েকটি তাকে ভিজে যাওয়া কিছু বই শুকিয়ে রাখা হয়েছে। কিন্তু সেগুলো এতটাই ধুলায় মলিন যে ছুঁয়ে দেখা দায়।

গ্রন্থাগারের সহকারী গ্রন্থাগারিক মা শৈ থুই চাক বলেন, ‘বইগুলো বাঁচানোর জন্য প্রথমে আমরা ওপরের দুই তাকে রেখেছিলাম। পরে যখন দেখি ওই তাকগুলোও ডুবে যাচ্ছে, তখন কিছু বই সিঁড়ির ওপরের অংশে রেখেছিলাম। ওখানেও পানিতে সব নষ্ট হয়ে যায়। দুটি কম্পিউটারও নষ্ট হয়। ২৮ হাজারের বেশি বই নষ্ট হয়।’

 মা শৈ থুই চাক বলেন, বেশির ভাগ বই ফেলে দেওয়া হয়। কিছু বই শুকিয়ে তাকে রাখা হয়। কিন্তু ওগুলো ধরতে গেলেই ধুলাবালুতে শুধু হাঁচি আসে। এখন নতুন করে আড়াই হাজারের বেশি বই এসেছে।

বান্দরবান জেলা গণগ্রন্থাগারটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৮২ সালে। ২০১০ সালে শহরের নয়াপাড়ায় নিজস্ব নতুন ভবনে গণগ্রন্থাগারটি স্থানান্তরিত হয়। এর আগে ২০১৯ সালে আরেকবার বন্যায় প্লাবিত হয় পাঠাগারটি। সেবার প্রায় ৯ হাজার বই নষ্ট হয়। এবার বাকি ২৮ হাজারের বেশি সম্পূর্ণ ভিজে নষ্ট হয়ে যায়। এখানে ১৯৮৮ সাল থেকে বাঁধাই করা দৈনিক পত্রিকা ছিল। সব কটি পত্রিকা ভিজে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। বাংলাপিডিয়া, রবীন্দ্ররচনাবলি, নজরুলরচনাবলি, মুক্তিযুদ্ধের দলিলের দুটি সেট, স্বাধীনতাযুদ্ধের দলিলের দুটি সেট পানিতে নষ্ট হয়ে যায়। এ ছাড়া অফিসের গুরুত্বপূর্ণ নথিও পানিতে তলিয়ে যায়।

বান্দরবান নার্সিং কলেজের বিএসসি তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী সুমাইয়া আকতার নিয়মিত আসেন পাঠাগারে। সুমাইয়া বলেন, বান্দরবানে আগে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি ছিল। এখন ওটা বন্ধ হয়ে গেছে। তাই একমাত্র ভরসা এই পাঠাগার। কিন্তু এখানেও পর্যাপ্ত বই নেই। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ বা সাধারণ জ্ঞানের কিংবা ইতিহাসনির্ভর বই, যা চাকরির জন্য দরকার, তা-ও পাওয়া যাচ্ছে না। রেফারেন্সের জন্য পুরোনো পত্রিকাও দরকার। কিন্তু সেগুলো নষ্ট হয়ে গেছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব ন দরব ন

এছাড়াও পড়ুন:

সুদানে কারা গণহত্যা চালাচ্ছে, আরব আমিরাতের ভূমিকা কী

২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে সুদান এক ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের মধ্যে পড়ে। ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নিতে দেশটির সামরিক বাহিনী এবং শক্তিশালী আধা সামরিক গোষ্ঠী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে শুরু হওয়া তীব্র লড়াই থেকে এই গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে পশ্চিম দারফুর অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয় এবং সেখানে গণহত্যা সংঘটিত হওয়ার অভিযোগও ওঠে।

সম্প্রতি আরএসএফ এল-ফাশের শহরটি দখল করার পর এর বাসিন্দাদের নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত সারা দেশে দেড় লাখের বেশি মানুষ মারা গেছেন এবং প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। জাতিসংঘ এটিকে বিশ্বের বৃহত্তম মানবিক সংকট বলে অভিহিত করেছে।

পাল্টাপাল্টি অভ্যুত্থান ও সংঘাতের শুরু

১৯৮৯ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরকে ২০১৯ সালে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকেই দফায় দফায় যে উত্তেজনা চলছিল, তার সর্বশেষ পরিস্থিতি হচ্ছে বর্তমান গৃহযুদ্ধ।

বশিরের প্রায় তিন দশকের শাসনের অবসানের দাবিতে বিশাল জনবিক্ষোভ হয়েছিল। তারই প্রেক্ষিতে তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয় সেনাবাহিনী। কিন্তু দেশটির মানুষ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন চালিয়ে যায়। যার পরিপ্রেক্ষিতে একটি যৌথ সামরিক-বেসামরিক সরকার গঠিত হয়। কিন্তু ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে আরও একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারটিকে উৎখাত করা হয়। এই অভ্যুত্থানের কেন্দ্রে ছিলেন সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ও দেশটির কার্যত প্রেসিডেন্ট জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এবং তাঁর ডেপুটি ও আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো।

এই দুই জেনারেল দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ ও বেসামরিক শাসনে ফিরে যাওয়া নিয়ে প্রস্তাবিত পদক্ষেপে একমত হতে পারেননি। তাঁদের মধ্যে মূল বিরোধের বিষয় ছিল প্রায় এক লাখ সদস্যের আরএসএফ-কে সেনাবাহিনীর সঙ্গে একীভূত করার পরিকল্পনা এবং নতুন এই যৌথ বাহিনীর নেতৃত্ব নিয়ে। ধারণা করা হয়, দুজন জেনারেলই তাঁদের ক্ষমতা, সম্পদ ও প্রভাব ধরে রাখতে চেয়েছিলেন।

আরএসএফ সদস্যদের দেশের বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করা হলে সেনাবাহিনী বিষয়টিকে নিজেদের জন্য হুমকি হিসেবে দেখে। এ নিয়ে ২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। সেই লড়াই দ্রুত তীব্র আকার ধারণ করে এবং আরএসএফ খার্তুমের বেশির ভাগ অংশ দখল করে নেয়। যদিও প্রায় দুই বছর পর সেনাবাহিনী খার্তুমের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায়।

জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান (বামে) এবং আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো (ডানে)

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সুদানে কারা গণহত্যা চালাচ্ছে, আরব আমিরাতের ভূমিকা কী