নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে বাস ও ব্যাটারিচালিত রিকশার (মিশুক) সংঘর্ষে মা–শিশুসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। আজ শুক্রবার বিকেলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাঁচপুর সেতুর ঢালে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত ব্যক্তিরা হলেন গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম সীচা এলাকার আশরাফুল আলমের স্ত্রী কাকলী আক্তার (৩৫), তাঁর ছেলে শিশু আরিয়ান আহাম্মেদ ওরফে রাফি (৫) এবং রংপুরের পীরগাছা উপজেলার সুকানপুর গ্রামের আবদুল ওহাবের ছেলে আনিসুর রহমান (২৩)। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে কাকলী ও আরিয়ান রিকশার আরোহী এবং আনিসুর চালক ছিলেন।

কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী ওয়াহিদ মুর্শেদ প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, আজ বিকেলে সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল মোড় থেকে একটি মিশুক ওই নারী ও তাঁর সন্তানকে নিয়ে উল্টো পথে কাঁচপুরের দিকে আসছিল। মিশুকটি কাঁচপুর সেতু পার হওয়ার পর ঢাকামুখী একটি বাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই মিশুকচালক নিহত হন। পরে পথচারীরা মিশুকের আরোহী এক নারী ও এক শিশুকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁদের মৃত ঘোষণা করেন।

ওসি আরও বলেন, দুর্ঘটনাকবলিত বাস ও অটোরিকশা জব্দ করা হয়েছে। পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নিহত ব্যক্তিদের লাশ বিনা ময়নাতদন্তে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।

নিহত কাকলীর স্বামী আশরাফুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, তিনি ও তাঁর স্ত্রী প্রায় ১০ বছর ধরে কাঁচপুরের সোনাপুর এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন। কাঁচপুর এলাকার একটি তৈরি একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন তাঁরা। কাকলী শারীরিকভাবে অসুস্থ ছিলেন। আজ দুপুরে নিজের পাঁচ বছরের ছেলেকে নিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল মোড়ের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক দেখাতে যান কাকলী। চিকিৎসক দেখিয়ে মিশুকে করে বাসায় ফিরছিলেন। পথেই বাসের সঙ্গে সংঘর্ষ হলে মা ও ছেলের মৃত্যু হয়।

স্ত্রী–সন্তানকে একসঙ্গে হারিয়ে ভেঙে পড়েছেন আশরাফুল। তিনি জানান, রাতেই স্ত্রী–সন্তানকে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাবেন। সেখানেই তাঁদের দাফন হবে। এ ঘটনায় স্ত্রী–সন্তানের কোনো ময়নাতদন্ত করতে চান না তিনি। এর কারণে বিনা ময়নাতদন্তে লাশ দুটি নেওয়ার আবেদন করেছেন তিনি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: চ ক ৎসক

এছাড়াও পড়ুন:

কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন

টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।

এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।

গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।

প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ