এবার ওপেনএআই কিনতে চান ইলন মাস্ক, দর দিয়েছেন ৯,৭৪০ কোটি ডলার
Published: 11th, February 2025 GMT
টুইটারের (বর্তমানে এক্স) পর এবার ওপেনএআইয়ের ওপর চোখ পড়েছে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী ইলন মাস্কের। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক চ্যাটবট চ্যাটজিপিটি তৈরি করে তাক লাগিয়ে দেওয়া ওপেনএআইয়ের দখল নিতে ইলন মাস্ক বড় দর হাঁকিয়েছেন তিনি।
সম্প্রতি ওপেনএআই কেনার জন্য দর হাঁকিয়েছেন ইলনের নেতৃত্বাধীন একদল বিনিয়োগকারী। রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে, ৯ হাজার ৭৪০ কোটি ডলারের বিনিময়ে ওপেনএআই কিনে নেওয়ার জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে প্রস্তাব দিয়েছেন ইলন মাস্কের নেতৃত্বে একদল বিনিয়োগকারী। যদিও মাস্কের নেতৃত্বাধীন বিনিয়োগকারীদের এই প্রস্তাব যে তারা মেনে নিচ্ছে না, ওপেনএআই ঠারেঠোরে তা বুঝিয়ে দিয়েছে। বরং উল্টো কাজ করেছেন ওপেনএআইয়ের প্রধান নির্বাহী স্যাম অল্টম্যান। মাস্কের হাতে থাকা টুইটার (বর্তমানে এক্স) কিনে নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি।
ইলন ও অল্টম্যান উভয়েই ওপেনএআইয়ের সহপ্রতিষ্ঠাতা। পরে কোম্পানি থেকে সরে দাঁড়ান ইলন মাস্ক, কিন্তু অল্টম্যান থেকে যান। তাঁর হাত ধরেই আসে চ্যাটজিপিটি। ওপেনএআই প্রাথমিকভাবে অলাভজনক সংস্থা হিসেবে চালু হলেও চ্যাটজিপিটির সাফল্যের পর ওপেনএআইকে লাভজনক কোম্পানিতে পরিণত করার চেষ্টা করছেন অল্টম্যান।
বাস্তবতা হলো, চ্যাটজিপিটি বাজারে আসার পর বিশ্বের বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর মাথা ঘুরে গেছে। সবাই বুঝে গেছে, ভবিষ্যৎ এআইয়ের হাতে। গুগল এই দৌড়ে কিছুটা পিছিয়ে পড়েছে। ওপেনএআইতে বিনিয়োগ করেছে মাইক্রোসফট। এই বাস্তবতায় ইলন মাস্কও এআই খাতে আসতে চাচ্ছেন। সম্প্রতি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক কোম্পানি ‘এক্সএআই’ চালু করেছেন তিনি। কিন্তু তাঁর চোখ ওপেনএআইয়ের ওপর; সে জন্য বোধ হয় প্রকাশ্যে সমালোচনা করেছেন স্যাম অল্টম্যানের নেতৃত্বের। এবার তো সরাসরি ওপেনএআই দখলে আনার চেষ্টা করছেন তিনি।
বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পরেই ইলনের মালিকানাধীন সামাজিক মাধ্যম এক্সে পোস্ট করেন ওপেনএআইয়ের প্রধান নির্বাহী স্যাম অল্টম্যান। লিখেছেন, ধন্যবাদ। তবে তিনি যেটা মনে করছেন সেটা হচ্ছে না; বরং তিনি চাইলে ওপেন এআই ৯ হাজার ৭৪ কোটি ডলারে টুইটার কিনব।’ অর্থাৎ বিষয়টি স্পষ্ট, ওপেনএআই হাতছাড়া করতে রাজি নন অল্টম্যান। জবাবে টুইটার কেনার বিষয়ে অল্টম্যানের কৌতুক অবশ্য ভালোভাবে নেননি ইলন। অল্টম্যানের পোস্টের জবাবে ইলন শুধু লিখেছেন, ‘প্রতারক’।
এ প্রসঙ্গে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে ইলন মাস্কের এক আইনজীবী বলেছেন, আগের মতো ওপেন সোর্স ও সুরক্ষা প্রদানকারী কোম্পানি হিসেবে আসার সময় হয়েছে ওপেনএআইয়ের; এটা নিশ্চিত করা হবে।
ব্যবসা-বাণিজ্যের জগতে ইলন মাস্ক অবশ্য নৃশংস হিসেবে পরিচিত এই অর্থে যে তিনি যা করতে চান, তা করে ছাড়েন। টুইটার কেনার ঘটনার মধ্য দিয়ে তা বোঝা যায়। শুরুতে টুইটারের মালিক বিক্রি করতে রাজি না হলেও শেষমেশ ৪৪ বিলিয়ন বা ৪৫ হাজার ৪০০ কোটি ডলারে মাস্কের কাছে তা বিক্রি করে দেন মালিক। এবার দেখা যাক, ওপেনএআই কেনায় মাস্ক কত দূর যেতে পারেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইলন ম স ক ট ইট র ন ইলন
এছাড়াও পড়ুন:
এআই দিয়ে তৈরি লেখা চিনবেন যেভাবে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির মাধ্যমে বার্তা পাঠানোর পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত লেখা যায়। আর তাই বিভিন্ন ব্লগ পোস্ট, প্রবন্ধ, ই–মেইল থেকে শুরু করে গবেষণাপত্র, পত্রিকার কলাম লেখায় এআইয়ের ব্যবহার বাড়ছে। বর্তমানে অনেক এআই মডেল মানুষের লেখার মতোই সাবলীলভাবে লিখতে পারায় সেগুলো মানুষ না এআই লিখেছে, তা সহজে বোঝা যায় না। তবে বেশ কিছু বিষয় পর্যালোচনা করে এআই দিয়ে লেখা বার্তা বা লেখা শনাক্ত করা সম্ভব। এআই দিয়ে তৈরি লেখা চেনার পদ্ধতিগুলো দেখে নেওয়া যাক।
এম ড্যাশ ব্যবহারবিভিন্ন এআই টুলে যে লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল ব্যবহার করা হয়, সেখানে প্রায়ই এম ড্যাশের অতিরিক্ত ব্যবহার দেখা যায়। সাধারণ লেখার ক্ষেত্রে আমরা এম ড্যাশ ব্যবহার করি না। সে ক্ষেত্রে কোনো লেখায় এম ড্যাশের উপস্থিতি থাকলে তা এআই দিয়ে তৈরি হতে পারে। এআই মডেলগুলো মূলত নিজস্ব তথ্যভান্ডারে থাকা তথ্য বিশ্লেষণ করে বিভিন্ন কাজ করে থাকে। এম ড্যাশ সাধারণত বই বা লেখা ছাপানোর সময় বিরতি বা অতিরিক্ত গুরুত্বপূর্ণ কোনো তথ্য প্রকাশে ব্যবহার করা হয়। এআই বিভিন্ন প্রকাশিত বইপত্রের লেখার শৈলী অনুকরণ করে বলে এম ড্যাশ বেশি ব্যবহার করে থাকে। আর তাই লেখায় অতিরিক্ত এম ড্যাশ ব্যবহার হলে তা এআই দিয়ে তৈরি বলে ধারণা করা যেতে পারে।
আরও পড়ুনএআই দিয়ে বানানো ছবি চিনবেন কীভাবে২২ আগস্ট ২০২৪যান্ত্রিক শব্দচয়নএআই মডেলগুলো প্রায়ই কিছু প্যাটার্ন ও শব্দকে পুনরাবৃত্ত করে, আর তাই এআই দিয়ে লেখায় পুনরাবৃত্তিমূলক বাক্য গঠন ও শব্দচয়ন বেশি দেখা যায়। শুধু তা–ই নয়, এআইয়ের মাধ্যমে লেখায় একই ধরনের বাক্য গঠন বেশি চোখে পড়ে। বিভিন্ন ধরনের সংযুক্তমূলক শব্দ যেমন এ ছাড়া, অতএব, ফলস্বরূপ বেশি ব্যবহার করে এআই মডেলে। আবার বিশেষ কিছু বিশেষণ বারবার ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। আর তাই লেখায় যান্ত্রিক শব্দচয়ন বেশি থাকলে বুঝতে হবে সেটি এআই দিয়ে লেখা।
গভীরতার অভাবএআই তথ্য সংগ্রহে পারদর্শী হলেও মানুষের মতো জটিল বা মৌলিক বিশ্লেষণ করতে পারে না। আর তাই এআইয়ের তৈরি লেখায় গভীরতা ও বিশ্লেষণের অভাব দেখা যায়। এআইয়ের মাধ্যমে লেখায় তথ্য উপস্থাপন বেশি থাকলেও লেখকের ব্যক্তিগত মতামত বা মানবীয় ভাব অনুপস্থিত থাকে। এআই দিয়ে তৈরি লেখাতে সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ, আবেগ বা গভীর চিন্তার অভাব থাকে। ফলে লেখাগুলোতে তথ্যের সারসংক্ষেপ বা অতিরঞ্জিত তথ্য দেখা যায়। এআই প্রায়ই এমন শব্দ বা শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করে, যা ব্যাকরণগতভাবে সঠিক হলেও মানুষের স্বাভাবিক ও দৈনন্দিন আলাপে অনুপস্থিত থাকে।
আরও পড়ুনএআই দিয়ে কণ্ঠ নকল করে প্রতারণা শনাক্ত করবেন যেভাবে২৫ মে ২০২৫মানবিক দিক অনুপস্থিতখুব স্বাভাবিকভাবে এআই দিয়ে লেখায় ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বা আবেগের অনুপস্থিতি থাকে। কিন্তু মানুষের লেখায় ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, অনুভূতি, হাস্যরস বা নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি জানা যায়। এআই মডেল গণিত অলিম্পিয়াডের প্রশ্ন সমাধান করতে পারলেও মানবিক স্পর্শ তৈরি করতে পারে না। যখন লেখা নিরপেক্ষ বা আবেগহীন মনে হয়, তখন তা এআই দিয়ে তৈরি হতে পারে। এআই দিয়ে তৈরি লেখায় বেশ অনাকাঙ্ক্ষিত অসংগতি বা তথ্যের ভুল দেখা যায়।
আরও পড়ুনএআই প্রযুক্তি দিয়ে প্রতারণা বাড়ছে জিমেইলে, নিরাপদ থাকবেন যেভাবে১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫এআই দিয়ে লেখা চেনার একাধিক পদ্ধতি সম্পর্কে জানার পরও নিজের বিচার–বিশ্লেষণ ক্ষমতা বাড়াতে হবে। শুধু তা–ই নয়, বিষয়ে সঙ্গে লেখার প্রাসঙ্গিকতাও বিবেচনা করতে হবে। এ বিষয়ে ছোট একটি পরীক্ষা করা যাক। দুটি অনুচ্ছেদ পড়ে নিজেই সিদ্ধান্ত নিন কোন লেখাটি এআই দিয়ে লেখা হয়েছে।
ক. সুন্দরবনের শ্বাসমূল থেকে কক্সবাজারের বেলাভূমি—বাংলাদেশ এক বৈচিত্র্যময় দেশ। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা বিধৌত এই ব-দ্বীপ সুজলা-সুফলা। ইতিহাস আর ঐতিহ্যের মিশেলে এটি যেন এক জীবন্ত জাদুঘর। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা এই ভূমি সত্যিই মন মুগ্ধ করে তোলে।
খ. প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর বাংলাদেশ, যেখানে সবুজ গ্রাম আর নদীর ঢেউয়ে জীবন প্রবাহিত হয়। এখানকার মানুষের হৃদয়ে উষ্ণতা, আর সংস্কৃতিতে লুকিয়ে আছে হাজার বছরের ঐতিহ্য।
লেখাগুলো পড়ে অনেকেই বলবেন ‘ক’ অনুচ্ছেদের লেখাটি এআই দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। কেউ বলবেন ‘খ’ অনুচ্ছেদের কথা। তবে মজার বিষয় হচ্ছে ‘ক’ ও ‘খ’ দুটি অনুচ্ছেদই গুগলের জেমিনি এআই দিয়ে লেখা হয়েছে। আর তাই এআই দিয়ে তৈরি লেখা চিনতে বেশ সতর্ক থাকতে হবে।
সূত্র: সেলজি ও ইস্ট সেন্ট্রাল কলেজ