সরকার বদলেও থামেনি মানবাধিকার লঙ্ঘন
Published: 12th, February 2025 GMT
গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ মাথায় নিয়ে গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের কর্তৃত্ববাদী শাসনের যবনিকা টানতে হয়। এর মধ্য দিয়ে সবাই আশা করেছিল, মানবাধিকার লঙ্ঘনের আগের অভ্যাসের বদল হবে। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও একই চর্চা জারি রেখেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান দলের খসড়া প্রতিবেদনে এমন তথ্যই উঠে এসেছে।
খসড়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েই গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং নির্যাতনের জবাবদিহি নিশ্চিত করার ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) পাশাপাশি নিয়মিত আদালতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও বিচার বিভাগের বিদ্যমান কাঠামোগত ত্রুটির কারণে সরকারের এসব প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত হতে থাকে। পুলিশ এখনও আগের মতো ক্ষমতার অপব্যবহার করে যাচ্ছে। এখনও তারা ভিত্তিহীন অভিযোগে গণমামলা দিয়ে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। কোনো কোনো কর্মকর্তা প্রমাণ নষ্ট করছেন। তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এখনও স্বপদে বহাল আছেন। এ ছাড়া আইসিটি আদালতের পাশাপাশি নিয়মিত আদালতের প্রক্রিয়াগত বিষয়েও উদ্বেগ রয়ে গেছে।
যদিও বিভিন্ন ধর্মীয় ও আদিবাসী গোষ্ঠীর ওপর হামলার সঙ্গে জড়িত অভিযোগে ১০০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে সরকার। তবে প্রতিশোধমূলক সহিংসতা এবং বিভিন্ন গোষ্ঠীর ওপর আক্রমণের সঙ্গে জড়িতরা এখনও আইনের আওতায় আসেনি।
পুলিশ মামলায় হাজারো মানুষকে অভিযুক্ত করেছে। বর্তমানে ১ হাজার ১৮১টি তদন্ত চলমান। এতে অভিযুক্তের সংখ্যা ৯৮ হাজার ১৩৭। এদের মধ্যে ২৫ হাজার ৩৩ জনের রাজনৈতিক পরিচয় রয়েছে। এ অনুযায়ী প্রতি মামলায় গড়ে ৮৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। বিপুল সংখ্যক মানুষকে অভিযুক্ত করায় তাদের বিরুদ্ধে হয় তদন্ত অথবা গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাদের এসব অপরাধের সঙ্গে সম্পর্কই নেই। জাতিসংঘ বেশ কিছু মামলা পর্যালোচনা করে দেখেছে, যাতে চিহ্নিত আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়নি। আর যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তা জনগণের চাপে পড়ে। পুলিশের তদন্তের ওপর জনগণের আস্থা কম।
বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আইনের উদ্বেগের বিষয়গুলো অন্তর্বর্তী সরকার আমলে নিয়ে সম্প্রতি কিছু সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে, তবে সবকিছু আমলে নেওয়া হয়নি। এ আইনে মৃতুদণ্ড, আসামির অনুপস্থিতিতে বিচারের মতো বিষয়গুলোতে উদ্বেগ রয়েছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের মানদণ্ড বজায় রেখে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা নিয়ে জাতিসংঘের গভীর উদ্বেগ আছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
গংগাচড়ায় হিন্দুদের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ, আতঙ্ক কাটেনি এখনও
রংপুরের গংগাচড়ায় ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ ঘিরে সহিংসতার শিকার হিন্দু পরিবারের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। তবে ঘটনার তিন দিন পরেও এলাকায় ফেরেনি অনেক পরিবার। আতঙ্কে এখনো আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে অনেকে।
গত ২৭ জুলাই রাতে ওই গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলার আগে এলাকায় মাইকিং করে লোকজন জড়ো করা হয়।
পুলিশ, প্রশাসন ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বলছেন, যারা হামলা করেছেন, তাদের মধ্যে অনেকে ছিলেন ‘বহিরাগত’। পাশের নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলা থেকে লোকজন এসে হামলা চালিয়ে চলে যায়। হামলার সময় ২২টি ঘরবাড়ি তছনছ ও লুটপাট করা হয়।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এলাকায় অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প বসানো হয়েছে, বাড়ানো হয়েছে পুলিশ টহল। প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ঢেউটিন, কাঠ, চাল-ডাল ও শুকনো খাবার বিতরণ করেছে এবং ঘরবাড়ি মেরামতের কাজও শুরু হয়েছে। তবু আতঙ্কিত পরিবারগুলো।
ক্ষতিগ্রস্তদের একজন অশ্বিনী চন্দ্র মোহান্ত বলেন, “সেদিনের ঘটনা ছিল এক ভয়াবহ। আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে ধর্ম অবমাননাকারী কিশোরকে থানা হেফাজতে দিয়েছি। কিন্তু তারপরও ঘরবাড়ি রক্ষা হয়নি। স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি এবং কিছু মুরুব্বি আমাদেরকে অভয় দিয়েছিলেন, কিন্তু রক্ষা হয়নি।”
তিনি আরো বলেন, “আমরা নিজেরাই অভিযুক্ত কিশোরকে থানায় সোপর্দ করেছি। তারপরও মিছিল নিয়ে এসে দুই দফায় আমাদের ২০ থেকে ২৫টি ঘরবাড়ি তছনছ করে দিয়ে লুটপাট করেছে তারা। এদের মধ্যে অধিকাংশ লোকেই অপরিচিত।”
আরেক ভুক্তভোগী দেবেন্দ্র চন্দ্র বর্মন জানান, “প্রথমে অল্পসংখ্যক কম বয়সী কিছু ছেলে আসে। পরে হাজারো লোকজন এসে আমাদের বাড়িঘরে তাণ্ডব চালায়। অনেকেই এখনো আত্মীয়দের বাড়িতে। আমরা চরম আতঙ্কে আছি।”
রবীন্দ্র চন্দ্রের স্ত্রী রুহিলা রানী বলেন, “ছোট ছেলেটা যদি ভুল করে থাকে, আমরা তাকে থানায় দিয়েছি। কিন্তু তারপরও এমন ধ্বংসযজ্ঞ কেন? আমাদের গরু, সোনা-টাকা সব লুটে নিয়েছে। শুধু চাল-ডাল আর টিনে কি জীবন চলে?”
গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন রংপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম ও সদস্য সচিব আনিসুর রহমান লাকুসহ একটি প্রতিনিধি দল। তারা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে শাড়ি ও লুঙ্গি বিতরণ করেন এবং পাশে থাকার আশ্বাস দেন।
গংগাচড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আল এমরান বলেন, “ঘটনার খবর পেয়ে কিশোরটিকে গ্রেপ্তার করে থানায় আনা হয় এবং পরে আদালতের মাধ্যমে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। এখন পর্যন্ত কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়নি। তারপরও পুলিশ প্রশাসন সর্বাত্মক নিরাপত্তায় নিয়োজিত।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহামুদ হাসান মৃধা বলেন, “অপরাধীদের ধরতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের দেওয়া হচ্ছে সহায়তা। পুলিশ ও সেনাবাহিনী পুরো এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে।”
উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের তথ্যমতে, হামলায় ১৫টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যাতে ২২টি পরিবার বসবাস করতেন। ঘর মেরামতের পর কিছু পরিবার ফিরলেও অভিযুক্ত কিশোর ও তার চাচার পরিবারের কেউ এখনো ফিরে আসেনি।
ঢাকা/আমিরুল/ইভা