গদখালীতে শেষ মুহূর্তেও বাড়ল না ফুলের দাম
Published: 13th, February 2025 GMT
ঘন কুয়াশা উপেক্ষা করে যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার তাওরা গ্রামের মিলন হোসেন ৮০০টি লালগোলাপ নিয়ে ভোর সোয়া ৬টায় গদখালী পাইকারি ফুলের মোকামে আসেন। বাইসাইকেলের ওপরে রেখে হাক ডাকে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন। সকাল পৌনে ৯টা পর্যন্ত একটি গোলাপও তিনি বিক্রি করতে পারেননি। কাঙ্ক্ষিত দাম পাচ্ছেন না বলে তিনি বিক্রি করতে পারছেন না।
মিলন হোসেন বলেন, এ বছর গোলাপের বাজার ভালো না। প্রতিটি গোলাপের দাম ৭ থেকে ৮ টাকার বেশি দাম কেউ বলছে না। ব্যাপারীরা যে দাম বলছে, তাতে উৎপাদন খরচ উঠছে না। গত বছরের তুলনায় এ বছর অর্ধেকের কম দাম বলছে।
বুধবার ভোরে ঘন কুয়াশা। শীত ও কুয়াশা উপেক্ষা করে ফুলচাষীরা গোলাপ, গাদা, জারবেরা, গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা, মল্লিকা, জিপসী ফুল ও কামিনী পাতা নিয়ে গদখালী পাইকারি মোকামে আসেন। দুই হাজারের বেশি চাষী এই মোকামে ফুল বিক্রি করতে পসরা সাজিয়ে বসেন। সেই ফুল কিনতে সারাদেশ থেকে পাইকারি ফুলের ক্রেতারাও বাজারে জড়ো হন। ভোর থেকে জমজমাট কেনাবেচা শুরু হয়। যা চলতে থাকে বেলা ১১টা পর্যন্ত।
ফুলচাষীরা বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে গত বছরের তুলনায় এ বছর ফুলের দাম কমেছে। পটুয়াপাড়া গ্রামের গেলাপ চাষী মনিরুল ইসলাম বাবু বলেন, ৩৬ শতক জমিতে গোলাপ ফুল চাষ করেছি। সকালে তিন হাজার গোলাপ নিয়ে বাজারে এসেছি। এরমধ্যে এক হাজার ২০০টি লালগোলাপ ও এক হাজার ৮০০টি ক্যাপ পরানো গোলাপ রয়েছে। ক্যাপ পরানো পোলাপ ৫ টাকা ও ক্যাপ বাদে লালগোলাপ সাড়ে ১১ টাকা করে প্রতিটি বিক্রি করেছি।
ফুলচাষীরা জানান, ৩৩ শতকের এক বিঘা গোলাপ চাষ করতে দেড় লাখ টাকা খরচ হয়। রোপণের তিন মাস পর থেকে ফুল কাটা যায়। একবার রোপণ করলে ১০ থেকে ১২ বছর ফুল কাটা যায়। পরিচর্যার জন্যে প্রতি মাসে সার কীটনাশক ছিটাতে শ্রমিক খরচ হয় তিন থেকে চার হাজার টাকা। বছরে শীতের তিন মাস ফুলের ভরা মৌসুম। এই তিন মাস ফুল বিক্রির জন্যে সারাবছর খেত পরিচর্যা করতে হয়। কিন্তু এ বছর ফুলের দাম পড়ে গেছে।
ফুলচাষী জালাল উদ্দীন বলেন, এ বছর ৩৮ শতক জমিতে চাষ করেছি। সকালে তিন হাজার গোলাপ হাটে এনেছি। সাড়ে তিন টাকা দরে প্রতিটা গোলাপ বিক্রি হয়েছে। এক লাখ ২০ হাজার টাকা উৎপাদন খরচ। এ বছর এখন পর্যন্ত মাত্র ২৫ হাজার টাকার গোলাপ ফুল বিক্রি হয়েছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গোলাপ, গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা, জারবেরা ও গাদা ফুলের সরবরাহ অনেক বেশি। ঢাকা, বরিশাল, সিরাজগঞ্জ, চুয়াডাঙ্গাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা ফুল কিনে বাসের ছাদ, মাইক্রোবাস, পিকআপে তুলে গন্তব্যে নিয়ে যাচ্ছেন।
ব্যবসায়ীরা জানান, মানভেদে প্রতিটা গোলাপ সাড়ে ৩ টাকা থেকে ১৪ টাকা, গ্লাডিওলাস ৬ থেকে ১২, রজনীগন্ধা ৩ থেকে ৬, জারবেরা ১০ থেকে ১৮, গাদা প্রতি হাজার ৫০০ টাকা, জিপসী ফুল প্রতি মুঠো ২০ ও কামিনী পাতা প্রতিমুঠো ৫০ টাকা দরে বেচাকেনা হয়েছে।
বরিশাল থেকে ফুল কিনতে আসা পাইকারি ব্যবসায়ী তওসিফ রহমান বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর গোলাপ ও গ্লাডিওলাস কম দামে কিনেছি। গোলাপ, গ্লাডিওলাস, জারবেরা, গাদা সব ধরনের ফুল কিনে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যাচ্ছি।
পয়লা ফাল্গুন, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘিরে যশোরের গদখালী এলাকার চাষীদের ব্যাপক প্রস্তুতি থাকে। প্রতি বছর ১২ ফেব্রুয়ারি গদখালী বাজারে সবচেয়ে জমজমাট হাট বসে। চাষীরা এই দিনটির অপেক্ষায় সারাবছর বসে থাকেন। কিন্তু এ বছর রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ভালোবাসা দিবসের দিনেই পবিত্র শবে বরাত পড়ায় ফুল ব্যবসায় ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। ফলে শেষমুহুর্তেও দাম বাড়েনি ফুলের। আর দাম পড়ে যাওয়ায় ফুল চাষীদের মধ্যে হতাশা বেড়েছে।
গোলাপ ও গ্লাডিওলাস ফুলের দাম কমে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে গদখালী ফুল চাষী ও ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর বলেন, এ বছর হঠাৎ গরম পড়ায় ফুল বেশি ফুটেছে। গ্লাডিওলাসের উৎপাদন তুলনামূলক এবার বেশি। যে কারণে গেলাপের চাহিদা একটু কমেছে। এতে গোলাপ ও গ্লাডিওলাসের দাম কমেছে। এছাড়া এ বছর বিশ্ব ভালোবাসা দিবসেই মুসলিম ধর্মীয় অনুষ্ঠান শবে বরাত পড়ছে। যে কারণে ফুলের খুচরা ব্যবসায়িরা ঝুঁকি নিচ্ছেন না।
তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা আবু তালহা বলেন, যশোর জেলায় ৬৩৭ হেক্টর জমিতে ফুলের চাষ রয়েছে। প্রায় তিন হাজার চাষী ফুল চাষের সাথে সম্পৃক্ত। এখন ফুল চাষের ভরা মৌসুম। ফলে উৎপাদন বেশি। পয়লা ফাল্গুন, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘিরে ফুলের উৎপাদন বাড়ে। এখন বাজারে চাহিদার তুলনায় ফুলের যোগান বেশি। যে কারণে দাম কিছুটা কমেছে। দুই একদিন পরে দাম আবার একটু বাড়বে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ভ য ল ন ট ইন স ড ব যবস য় গদখ ল এ বছর বছর র
এছাড়াও পড়ুন:
রাজশাহীতে জুলাই শহীদদের স্মরণে মিনি ম্যারাথন
রাজশাহীতে জুলাই শহীদদের স্মরণে মিনি ম্যারাথন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ শুক্রবার সকাল ছয়টার দিকে নগরের বিনোদপুর এলাকা থেকে এ দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু হয়। আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) রাজশাহী মহানগর শাখা এ ম্যারাথনের আয়োজন করে।
ম্যারাথনে অংশ নিতে প্রতিযোগীরা আজ ভোর সাড়ে পাঁচটার পর থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়–সংলগ্ন বিনোদপুর বাজারে জমায়েত হতে থাকেন। সকাল ছয়টার পর শুরু হয় পাঁচ কিলোমিটারের ম্যারাথন প্রতিযোগিতা।
অংশগ্রহণকারীরা বিনোদপুর থেকে শুরু হয়ে নগরের তালাইমারী মোড় হয়ে আবার বিনোদপুর হয়ে চৌদ্দপায় ফায়ার সার্ভিস মোড় হয়ে আবার বিনোদপুরে ফিরে আসেন।পরে সেখানে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। প্রথম পুরস্কার ১০ হাজার টাকা, দ্বিতীয় পুরস্কার ৮ হাজার টাকা, তৃতীয় পুরস্কার হিসেবে ৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অংশগ্রহণকারী তিন নারীসহ আরও ১০ জনকে পুরস্কৃত করা হয়।
ম্যারাথন উপলক্ষে আগে থেকেই মেডিকেল টিমসহ একটি অ্যাম্বুলেন্স ছিল। এ ছাড়া সবার জন্য টি-শার্ট, গ্লুকোজ পানিসহ বিশেষ খাবার পরিবেশন করা হয়। ম্যারাথনে অংশ নেওয়াদের বেশির ভাগই ছিল তরুণ। তাঁদের মধ্যে বেশি বয়সী নারীরাও অংশ নেন।
প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া ৫৮ বছর বয়সী পিয়ারুল ইসলাম বলেন, এ উদ্যোগ খুবই ভালো হয়েছে। অসুস্থমুক্ত জীবন গড়তে হলে দৌড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। শারীরিক বিভিন্ন অ্যাকটিভিটিসের মধ্যে থাকলে সুস্থ জীবন গড়া যায়। এ বয়সে তাঁর কোনো ওষুধ লাগে না। তাঁরও অনেক সিনিয়র আছেন, কারও বয়স ৭৫, তাঁদেরও ওষুধ লাগে না। তাই এ ধরনের প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে হবে। সবাইকে উদ্ধুব্ধ করতে হবে। যাতে নিজেদের শরীরকে সব সময় উপযুক্ত রাখে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, অনেক দিন পর তিনি দৌড়াবেন। সাধারণত দৌড়ানো হয় না। আজকের পর থেকে তিনি প্রতিদিন সকালে উঠে দৌড়াবেন।
স্থানীয় বাসিন্দা নাঈম হাসান বলেন, জুলাই গণ–অভ্যুত্থান শুধু সরকারের পতন নয়। এর মাধ্যমে এ দেশের মানুষ একটি নতুন নিশ্বাস নেওয়ার সুযোগ পেয়েছে। সেই নতুন নিশ্বাস নিয়ে ম্যারাথনে তিনি অংশ নিয়েছেন।
ম্যারাথন প্রতিযোগিতায় ১৩ জনকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। আজ শুক্রবার সকালে রাজশাহী নগরের বিনোদপুর এলাকায়