রাজনীতিতে ভুল করেননি– এমন কোনো রাজনৈতিক নেতা পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া যাবে না। তবে যাঁর ভুলের পরিমাণ যত কম, তিনি তত বেশি সফল। তাঁকে জনগণ তত বেশি ভালোবেসে মনে রেখেছে। রাজনীতিতে ভুল বলতে এমন সিদ্ধান্ত বা পদক্ষেপ বোঝায়, যা অবিবেচনাপ্রসূত; বাস্তবতা থেকে বিচ্যুত। বাংলাদেশের ইতিহাসে বিভিন্ন সময়ে এমন ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে, যা সমাজের একাংশ বা পুরো রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর প্রভাব ফেলেছে। এসব ভুল সিদ্ধান্ত শুধু রাজনৈতিক অস্থিরতা নয়, বরং দেশের অর্থনীতি ও সামাজিক স্থিতিশীলতাকেও জটিলতার দিকে ঠেলে দিয়েছে।
স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় থেকে আজ পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলো অসংখ্য ভুল করেছে। কিন্তু তারা কখনোই তা স্বীকার করতে চায় না। বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী দলগুলো তাদের ঐতিহাসিক ভুলে অনড়। অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ দাবিদার দলগুলো সরকারে থাকাকালীন দমনপীড়ন, হামলা-মামলা, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে বিরোধী দলকে দমন করে। রাষ্ট্রীয় দুর্যোগেও ভুলের দায় অন্যের ওপর চাপিয়ে দেয়।
গত ১৫ বছরে যে তিনটি নির্বাচন হয়েছে, তা নির্বাচনের নামে জনগণের সঙ্গে কেবল প্রতারণা নয়, রীতিমতো জনগণের ক্ষমতাকে হেয় করেছে। প্রশাসন ও নিরাপত্তা বাহিনীর সহযোগিতায় নির্বাচিত হয়ে আওয়ামী লীগ যে গণবিচ্ছিন্নতার চর্চা করেছে এবং জনগণের মধ্যে বিরাগ সৃষ্টি করেছে– তা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে ক্ষমতার আকাঙ্ক্ষা, জনগণের স্বার্থ উপেক্ষা, দুর্বল ব্যবস্থাপনা এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অবহেলা ভুলের রাজনীতির মূল কারণ। নেতারা নিজেদের স্বার্থে দুর্নীতি, অর্থের অপব্যবহার ও বিভাজন সৃষ্টি করেন, যা জনগণের আস্থা কমায়। নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নে ব্যর্থতা ও গোষ্ঠীগত স্বার্থ রক্ষা রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করে। সহিষ্ণুতা ও গঠনমূলক বিতর্কের অভাবে বিভাজন বাড়ে, যা দেশের সংকটকে আরও গভীর করে তোলে।
বাংলাদেশের বামপন্থি দলগুলো দেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও কিছু ভুল রাজনীতির কারণে তাদের শক্তি ও জনসমর্থন কমে গেছে। তাদের প্রধান সমস্যাগুলোর মধ্যে ঐক্যবদ্ধতার অভাব, বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে ব্যর্থতা, সাধারণ মানুষের সমস্যা ও চাহিদার সঙ্গে সংযুক্ত হতে না পারা, কার্যকর নেতৃত্ব ও দলীয় কাঠামোর অভাব, আধুনিক রাজনৈতিক বাস্তবতা বুঝতে ব্যর্থতা, শক্তিশালী জোট ও কার্যকর কৌশল তৈরি করতে না পারা উল্লেখযোগ্য। এসব কারণে বামপন্থি দলগুলো তাদের জনপ্রিয়তা হারিয়েছে, তবে তাদের ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও জনগণের অধিকার আদায়ের আন্দোলন সবসময় সমাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয়েছে।
রাজনীতিতে ভুল ও ভুলের রাজনীতি বাংলাদেশের অর্থনীতি, সমাজ এবং গণতান্ত্রিক চর্চায় ভালোমন্দের দীর্ঘস্থায়ী ছাপ রেখে গেছে। তবু এ দীর্ঘ সময়ের সবচেয়ে বড় শিক্ষা হলো– বিভেদ ও প্রতিহিংসা নয়, বরং সমঝোতা, গণতান্ত্রিক চর্চা এবং জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণই একটি জাতিকে সমৃদ্ধির শিখরে পৌঁছে দিতে পারে। যদি দলগুলো এই শিক্ষা হৃদয়ে ধারণ করতে পারে, তবে ২০৫০ সালের মধ্যেই এটি একটি আদর্শ গণতান্ত্রিক ও উন্নত দেশ হিসেবে বিশ্বে আপন স্থান করে নিতে সক্ষম হবে।
বিএনপি তাদের রাজনৈতিক ভুল ও ভুলের রাজনীতি থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে বর্তমানে বলছে, অতীতের বিভাজন, বিরোধ ও প্রতিশোধের রাজনীতি শেষ করতে হবে এবং একটি শান্তিপূর্ণ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশ প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। তারা বিরোধীদের প্রতিপক্ষ হিসেবে না দেখে, সহযোগী হিসেবে দেখার আহ্বান জানাচ্ছে। তাদের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে মামলার ধারা, দমনপীড়ন বা শক্তি প্রয়োগের পথ পরিহার করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরছে। বর্তমানে জনগণ সুষ্ঠু, অবাধ নির্বাচনের দাবি করছে, যেখানে সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ থাকবে।
বিএনপি মনে করে, গণতন্ত্রের প্রাণশক্তি নির্বাচন, যা দেশের শাসন ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে সহায়ক। অতীতে সহিংস রাজনীতির ফলে দেশের ক্ষতি হয়েছে। তাই রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত আলোচনা ও আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করা এবং দেশের স্বার্থে সুদূরপ্রসারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। সব রাজনৈতিক মতাদর্শ, ধর্ম, ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি সম্মান রেখে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক দর্শন গড়ে তুলতে হবে।
‘অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ ও সংস্কৃতি’, যা ‘সবার বাংলাদেশ’ নির্মাণের ভিত্তি– এই ধারণাটি তারেক রহমানের রাজনৈতিক দর্শনের মূল বিষয়, যা গণতন্ত্র, সাম্য ও সামাজিক ন্যায়বিচারের প্রতীক। এটি বাংলাদেশের জনগণের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অধিকারের পুনর্জাগরণ ও মর্যাদার ঐতিহাসিক সনদ, যা বিএনপির রাষ্ট্র সংস্কারের ৩১ দফা এবং ভিশন ২০৩০-এ যুক্ত রয়েছে।
সাঈদ খান: সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: মত মত ভ ল র র জন ত গণত ন ত র ক ক র জন ত র জন ত ক র জন ত ত জনগণ র গ রহণ দলগ ল
এছাড়াও পড়ুন:
বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা হাবিবকে নিয়ে বাবুলের গণসংযোগ ও ৩১ দফার লিফলেট
বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষিত রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের রূপ রেখার ৩১ দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নারায়ণগঞ্জ শহরে গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ করেছেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব।
রোববার (২ নভেম্বর) বিকেলে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী বিএনপি নেতা আবু জাফর আহাম্মেদ বাবুলের নেতৃত্বে গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ কর্মসূচীতে উপস্থিত ছিলেন হাবিবুর রহমান হাবিব।
এদিন আবু জাফর আহাম্মেদ বাবুলের নেতৃত্বে শহরের মন্ডলপাড়া, বাবুরাইল, বেপারীপাড়া, দেওভোগ, আখড়া, জিউস পুকুর, নন্দীপাড়া, বোয়ালিয়া খালসহ বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করা হয়।
এসময় বিএনপি ও বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও স্থানীয় জনগণ উপস্থিত ছিলেন। লিফলেট বিতরণকালে আবু জাফর আহাম্মেদ বাবুল বাবুরাইলে একটি ক্রীড়া সংগঠনের ক্লাব উদ্বোধন করেন।
এরপর নাসিকের সাবেক প্যানেল মেয়র ওবায়েদ উল্লাহর বাসায় গিয়ে তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। লিফলেট বিতরণকালে হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, বাবুল ভাই আমার অত্যন্ত প্রিয়।
আমি আশা করি আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সব দিক বিবেচনা করে সঠিক সিদ্ধান্ত নিবেন। জনগণ যাকে চাইবে যার ভেতরে দোষ ত্রুটি নেই এমন লোককে মনোনয়ন দেয়া হবে।
এবারের নির্বাচনে আমাদের বিরুদ্ধ ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এই ষড়যন্ত্রকে মোকাবেলা করে জনগণকে নিয়ে যিনি পাশ করতে পারবে তাকে মনোনয়ন দেয়া হবে।
বাবুল ভাই আপনাদের নিয়ে কাজ করছেন আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দৃষ্টিতেও আছেন। আশা করি দল তাকে মূল্যায়ন করবে।