Samakal:
2025-06-15@20:52:30 GMT

রাজনীতিতে ভুল ও ভুলের রাজনীতি

Published: 16th, February 2025 GMT

রাজনীতিতে ভুল ও ভুলের রাজনীতি

রাজনীতিতে ভুল করেননি– এমন কোনো রাজনৈতিক নেতা পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া যাবে না। তবে যাঁর ভুলের পরিমাণ যত কম, তিনি তত বেশি সফল। তাঁকে জনগণ তত বেশি ভালোবেসে মনে রেখেছে। রাজনীতিতে ভুল বলতে এমন সিদ্ধান্ত বা পদক্ষেপ বোঝায়, যা অবিবেচনাপ্রসূত; বাস্তবতা থেকে বিচ্যুত। বাংলাদেশের ইতিহাসে বিভিন্ন সময়ে এমন ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে, যা সমাজের একাংশ বা পুরো রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর প্রভাব ফেলেছে। এসব ভুল সিদ্ধান্ত শুধু রাজনৈতিক অস্থিরতা নয়, বরং দেশের অর্থনীতি ও সামাজিক স্থিতিশীলতাকেও জটিলতার দিকে ঠেলে দিয়েছে। 
স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় থেকে আজ পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলো অসংখ্য ভুল করেছে। কিন্তু তারা কখনোই তা স্বীকার করতে চায় না। বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী দলগুলো তাদের ঐতিহাসিক ভুলে অনড়। অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ দাবিদার দলগুলো সরকারে থাকাকালীন দমনপীড়ন, হামলা-মামলা, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে বিরোধী দলকে দমন করে। রাষ্ট্রীয় দুর্যোগেও ভুলের দায় অন্যের ওপর চাপিয়ে দেয়। 

গত ১৫ বছরে যে তিনটি নির্বাচন হয়েছে, তা নির্বাচনের নামে জনগণের সঙ্গে কেবল প্রতারণা নয়, রীতিমতো জনগণের ক্ষমতাকে হেয় করেছে। প্রশাসন ও নিরাপত্তা বাহিনীর সহযোগিতায় নির্বাচিত হয়ে আওয়ামী লীগ যে গণবিচ্ছিন্নতার চর্চা করেছে এবং জনগণের মধ্যে বিরাগ সৃষ্টি করেছে– তা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে। 
বাংলাদেশের রাজনীতিতে ক্ষমতার আকাঙ্ক্ষা, জনগণের স্বার্থ উপেক্ষা, দুর্বল ব্যবস্থাপনা এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অবহেলা ভুলের রাজনীতির মূল কারণ। নেতারা নিজেদের স্বার্থে দুর্নীতি, অর্থের অপব্যবহার ও বিভাজন সৃষ্টি করেন, যা জনগণের আস্থা কমায়। নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নে ব্যর্থতা ও গোষ্ঠীগত স্বার্থ রক্ষা রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করে। সহিষ্ণুতা ও গঠনমূলক বিতর্কের অভাবে বিভাজন বাড়ে, যা দেশের সংকটকে আরও গভীর করে তোলে। 

বাংলাদেশের বামপন্থি দলগুলো দেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও কিছু ভুল রাজনীতির কারণে তাদের শক্তি ও জনসমর্থন কমে গেছে। তাদের প্রধান সমস্যাগুলোর মধ্যে ঐক্যবদ্ধতার অভাব, বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে ব্যর্থতা, সাধারণ মানুষের সমস্যা ও চাহিদার সঙ্গে সংযুক্ত হতে না পারা, কার্যকর নেতৃত্ব ও দলীয় কাঠামোর অভাব, আধুনিক রাজনৈতিক বাস্তবতা বুঝতে ব্যর্থতা, শক্তিশালী জোট ও কার্যকর কৌশল তৈরি করতে না পারা উল্লেখযোগ্য। এসব কারণে বামপন্থি দলগুলো তাদের জনপ্রিয়তা হারিয়েছে, তবে তাদের ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও জনগণের অধিকার আদায়ের আন্দোলন সবসময় সমাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয়েছে।

রাজনীতিতে ভুল ও ভুলের রাজনীতি বাংলাদেশের অর্থনীতি, সমাজ এবং গণতান্ত্রিক চর্চায় ভালোমন্দের দীর্ঘস্থায়ী ছাপ রেখে গেছে। তবু এ দীর্ঘ সময়ের সবচেয়ে বড় শিক্ষা হলো– বিভেদ ও প্রতিহিংসা নয়, বরং সমঝোতা, গণতান্ত্রিক চর্চা এবং জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণই একটি জাতিকে সমৃদ্ধির শিখরে পৌঁছে দিতে পারে। যদি দলগুলো এই শিক্ষা হৃদয়ে ধারণ করতে পারে, তবে ২০৫০ সালের মধ্যেই এটি একটি আদর্শ গণতান্ত্রিক ও উন্নত দেশ হিসেবে বিশ্বে আপন স্থান করে নিতে সক্ষম হবে।
বিএনপি তাদের রাজনৈতিক ভুল ও ভুলের রাজনীতি থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে বর্তমানে বলছে, অতীতের বিভাজন, বিরোধ ও প্রতিশোধের রাজনীতি শেষ করতে হবে এবং একটি শান্তিপূর্ণ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশ প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। তারা বিরোধীদের প্রতিপক্ষ হিসেবে না দেখে, সহযোগী হিসেবে দেখার আহ্বান জানাচ্ছে। তাদের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে মামলার ধারা, দমনপীড়ন বা শক্তি প্রয়োগের পথ পরিহার করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরছে। বর্তমানে জনগণ সুষ্ঠু, অবাধ নির্বাচনের দাবি করছে, যেখানে সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ থাকবে। 
বিএনপি মনে করে, গণতন্ত্রের প্রাণশক্তি নির্বাচন, যা দেশের শাসন ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে সহায়ক। অতীতে সহিংস রাজনীতির ফলে দেশের ক্ষতি হয়েছে। তাই রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত আলোচনা ও আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করা এবং দেশের স্বার্থে সুদূরপ্রসারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। সব রাজনৈতিক মতাদর্শ, ধর্ম, ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি সম্মান রেখে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক দর্শন গড়ে তুলতে হবে।

‘অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ ও সংস্কৃতি’, যা ‘সবার বাংলাদেশ’ নির্মাণের ভিত্তি– এই ধারণাটি তারেক রহমানের রাজনৈতিক দর্শনের মূল বিষয়, যা গণতন্ত্র, সাম্য ও সামাজিক ন্যায়বিচারের প্রতীক। এটি বাংলাদেশের জনগণের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অধিকারের পুনর্জাগরণ ও মর্যাদার ঐতিহাসিক সনদ, যা বিএনপির রাষ্ট্র সংস্কারের ৩১ দফা এবং ভিশন ২০৩০-এ যুক্ত রয়েছে।

সাঈদ খান: সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: মত মত ভ ল র র জন ত গণত ন ত র ক ক র জন ত র জন ত ক র জন ত ত জনগণ র গ রহণ দলগ ল

এছাড়াও পড়ুন:

লন্ডন বৈঠকে অবিশ্বাস দূর, সরকারের সম্মানজনক প্রস্থানের পথ সুগম হবে: সাইফুল হক

লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠক দেশে আগামী সংসদ নির্বাচনকেন্দ্রিক অচলাবস্থা, সন্দেহ ও অবিশ্বাস দূর করবে বলে আশা করছেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। আজ শনিবার সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির ২১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে এ কথাগুলো বলেন তিনি।

লন্ডনে দুই নেতার বৈঠকের বিস্তারিত সব রাজনৈতিক দল ও জনগণের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করারও আহ্বান জানিয়েছেন সাইফুল হক।

সরকারের এই উদ্যোগ বিলম্বিত বোধদয়ের ফল বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। সাইফুল হক বলেন, আরও আগে সরকারের এই বোধদয় হলে অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত বিতর্ক ও রাজনৈতিক বিরোধ এড়িয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতিসহ মৌলিক কাজে আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া যেত।

সব অংশীজনকে আস্থায় নিয়ে সরকারকে কাজ করার আহ্বান জানান সাইফুল হক। তিনি বলেন, এই বৈঠকের মধ্য দিয়ে বিচার, সংস্কার ও নির্বাচনের মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারের সম্মানজনক প্রস্থানের রাস্তা সুগম হলো।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সাইফুল হক বলেন, দেশের মানুষের অধিকার ও মুক্তি অর্জনে তাঁর দল জনগণের ভালোবাসা নিয়ে আগামীতে আপসহীন ধারায় সংগ্রাম অব্যাহত রাখবে।

সংক্ষিপ্ত সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য বহ্নিশিখা জামালী, আকবর খান, আবু হাসান টিপু, আনছার আলী দুলাল ও মীর মোফাজ্জল হোসেন মোশতাক। সমাবেশে সংহতি জানান গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিষদের আহবায়ক শেখ আবদুর নূর।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সাইফুল ইসলাম মীর, রেজাউল আলম, ফিরোজ আলী, কেন্দ্রীয় সংগঠক আইয়ুব আলী, বাবর চৌধুরী, ঢাকা মহানগর কমিটির নেতা মো. সালাউদ্দীন, মিজারুল রহমান ডালিম, আরিফুল ইসলামসহ পার্টির ঢাকা মহানগরের নেতারা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইরানের শাসকদের ক্ষমতাচ্যুত করার আহ্বান সাবেক শাহের পুত্রের
  • আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিলেন ইশরাক হোসেন
  • আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিলেন ইশরাক হোসেন
  • আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা ইশরাকের
  • রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে জনগণের হিস্যা কোথায়
  • লন্ডন বৈঠকে অবিশ্বাস দূর, সরকারের সম্মানজনক প্রস্থানের পথ সুগম হবে: সাইফুল হক
  • বাজেটের ত্রুটি সংশোধনের আহ্বান
  • ড. ইউনূসকে দেশের কাজে যুক্ত রাখতে চায় বিএনপি
  • জনগণের উদ্দেশে ভাষণ দেবেন ইরানের প্রেসিডেন্ট
  • সহসাই রাজনীতির কালো মেঘ কেটে যাবে: ডা. জাহিদ