কুঁড়েঘর থেকে প্রাসাদের মালিক হওয়ার গল্প নতুন কিছু নয়। পৃথিবীর অনেক মানুষই একসময় একেবারে গরিব ছিলেন। সেখান থেকে উঠে এসে তাঁরা শতকোটিপতি হয়েছেন বা শতকোটি ডলারের মালিক হয়েছেন।

তাঁদেরই একজন অপরাহ উইনফ্রে। যুক্তরাষ্ট্রের এই জনপ্রিয় টক শো উপস্থাপক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্বের বাল্যকাল কেটেছে সাদামাটা। বাবার সঙ্গে থাকতেন না তাঁর মা। সেই মায়ের সন্তান হিসেবে তেমন একটা সুখকর বাল্যকাল যে তাঁর থাকবে না, সে কথা বলাই বাহুল্য। বাল্যকালে প্রতি ক্রিসমাস বা বড়দিনের উপহারও জুটত না তাঁর।

১২ বছর বয়সে অপরাহ জানতে পারেন, সান্তা ক্লজ নামে বাস্তবে কারও অস্তিত্ব নেই এবং সে বছর মা তাঁকে বলেন, ক্রিসমাস বা বড়দিন উদ্‌যাপন করার সামর্থ্য তাঁদের নেই। এ কথা নিজের টক শোতে তিনি একবার দর্শকদের উদ্দেশে বলেছিলেনও। একধরনের আতঙ্ক ঘিরে ধরেছিল তাঁকে—সমবয়সীদের বলতে হবে যে সে বছর ক্রিসমাসের গিফট পাননি। শেষমেশ একদল সন্ন্যাসিনী বাড়িতে এসে কিছু খাবার ও পুতুল দিয়ে যান তাঁকে। সেটাই তাঁর জীবনের সেরা ক্রিসমাস উপহার হিসেবে তিনি এখনো মনে করেন।

অপরাহ উইনফ্রের মোট সম্পদমূল্য এখন ৩ বিলিয়ন বা ৩০০ কোটি মার্কিন ডলার। সেই যে সন্ন্যাসীরা তাঁকে উপহার হিসেবে পুতুল ও খাবার দিয়ে গিয়েছিলেন, তার প্রতিদান হিসেবে তিনি এখনো প্রতিবছর লাখ লাখ খেলনা উপহার হিসেবে দান করেন।

আরেক বিখ্যাত নারী পপ তারকা রিহানা। বার্বাডোজে জন্ম নেওয়া এই পপ তারকার বাল্যকাল ছিল খুবই কঠিন। তাঁর বাবা পথের ধারে জামাকাপড় বিক্রি করতেন, কিন্তু মাদক ও অ্যালকোহলে আসক্ত ছিলেন তিনি। এমন এক পরিবেশে বেড়ে উঠেছেন তিনি—এর মধ্যে আবার ছিল মাইগ্রেনের ব্যথা। চিকিৎসকদের সন্দেহ ছিল, তাঁর শরীরে টিউমার বাসা বেঁধেছে। তবে একবার গায়িকা হিসেবে নিজের নাম প্রতিষ্ঠিত করার পর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। এখন পর্যন্ত তিনি আটটি প্লাটিনাম স্টুডিও অ্যালবাম বের করেছেন। এখন তাঁর সম্পদমূল্য প্রায় দেড় বিলিয়ন বা ১৫০ কোটি ডলারের বেশি।

স্টারবাকস কফির স্বত্বাধিকারী হাওয়ার্ড শুলজের ছেলেবেলাও ছিল অত্যন্ত করুণ। তাঁর বাবা ছিলেন ডায়াপার বিক্রেতা। শুলজের বয়স যখন সাত বছর, তখন কাজ করার সময় তাঁর বাবা আহত হন। কিন্তু তাঁদের কোনো বিমা বা নিয়মিত আয়ের উৎস ছিল না। ডায়াপার বিক্রির কমিশন থেকেই পরিবারের ব্যয় নির্বাহ করতেন তাঁর বাবা। যুক্তরাষ্ট্রের ব্রুকলিন হাউজিংয়ে বসবাস ছিল শুলজের পরিবারের; কিন্তু এমনো সময় গেছে, যখন তাঁর বাবা বাসাভাড়া পর্যন্ত নিয়মিত দিতে পারেননি।

২০১৯ সালে লেখা আত্মজীবনীতে শুলজ বলেছেন, নর্দার্ন মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার খরচ চালাতে তিনি বারটেন্ডার হিসেবে কাজ করেছেন এবং কখনো কখনো নিজের শরীরের রক্ত বিক্রি করেছেন। ১৯৮৭ সালে তিনি স্থানীয় একটি ব্র্যান্ড হিসেবে স্টারবাকস কিনে নেন; তখন এর শাখা ছিল মাত্র ১২টি। স্টারবাকসকে তিনি মানুষের ঘর ও অফিসের মধ্যবর্তী একটি স্থান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। উন্নত মানের কফি পরিবেশনের সঙ্গে মানুষকে ভিন্ন অভিজ্ঞতা দেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি; যার ফল তিনি পরবর্তীকালে হাতেনাতে পেয়েছেন। এখন তাঁর সম্পদমূল্য ৩ দশমিক ৩ বিলিয়ন বা ৩৩০ কোটি ডলারের বেশি।

কুঁড়েঘরের ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে পরবর্তী জীবনে শতকোটি ডলারের মালিক হওয়া বব পারসনসের জীবন খুবই ঘটনাবহুল। বাল্টিমোর শহরের এক দরিদ্র অঞ্চলে তাঁর জন্ম। তাঁর মা ঘরেই থাকতেন। তাঁদের দেখাশোনা করতেন। একই সঙ্গে তাঁর মানসিক অসুস্থতা ছিল। অন্যদিকে তাঁর বাবা ছিলেন একজন ক্ষুদ্র বিক্রেতা। তাঁর আবার ছিল জুয়ার অভ্যাস। জুয়া খেলার অভ্যাস থাকলে পকেটে সাধারণত টাকাপয়সা থাকে না। পুরো বিদ্যালয়–জীবনেই বব পারসনসকে সংগ্রাম করতে হয়েছে এবং দ্বাদশ গ্রেডে তিনি প্রায় ফেল করে বসেছিলেন। এই সময় ভিয়েতনাম যুদ্ধে মার্কিন মেরিন সেনার হয়ে যোগ দেন। যুদ্ধ থেকে ফেরেন চারটি মেডেল নিয়ে। যুদ্ধ থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে তিনি গো ড্যাডি নামের ওয়েব হোস্টিং ফার্ম প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীকালে তিনি সেটি বিক্রি করে দেন। বর্তমানে তিনি গলফ ক্লাব ব্র্যান্ড পিএক্সজির স্বত্বাধিকারী। একই সঙ্গে তাঁর মোটরসাইকেলের ডিলারশিপ ও বাণিজ্যিক আবাসন প্রতিষ্ঠান আছে। তিনি যুদ্ধফেরত বয়োজ্যেষ্ঠদের কল্যাণে অনেক অর্থ দান করেন। বর্তমানে তাঁর সম্পদমূল্য প্রায় চার বিলিয়ন বা ৪০০ কোটি ডলার।

আরেক স্বপ্রতিষ্ঠিত শতকোটিপতি ডেভিড মার্ডকের মা–বাবার নিয়মিত উপার্জন ছিল না। তাঁর বাবা ছিলেন একজন ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় প্রতিনিধি এবং মা ছিলেন লন্ড্রির দোকানের কর্মী। ১৪ বছর বয়সে তিনি স্কুল থেকে ঝরে পড়েন। এরপর তিনি এক গ্যাস স্টেশনের ছাদে বসবাস শুরু করে সেখানেই কাজ করা শুরু করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সৈনিক হিসেবে যোগ দেন। যুদ্ধ থেকে ফিরে তিনি ১ হাজার ৮০০ ডলার ধার করে ছোট খাবারের দোকান চালু করেন। আবাসন খাতেও বিনিয়োগ করেন। একপর্যায়ে বিভিন্ন কোম্পানি কেনা শুরু করেন, যেমন কেসেলেন্ট কুক। বর্তমানে তাঁর বয়স ১০১ বছর; ১২৫ বছর বয়স পর্যস্ত বাঁচার ইচ্ছা তাঁর। বর্তমানে তাঁর সম্পদমূল্য ৩ দশমিক ৭ বিলিয়ন বা ৩৭০ কোটি ডলারের বেশি।

ক্রিস গার্ডনার নামের মার্কিন স্টক ব্রোকারের ব্যবসায়ীর প্রথম জীবন ঠিক এখনকার মতো ছিল না। নানা ঘাতপ্রতিঘাত পেরিয়ে এবং কঠোর পরিশ্রমের বদৌলতে তিনি সফল হয়েছেন। এমন পরিস্থিতি হয়েছিল যে তাঁকে এক রাত সন্তানকে নিয়ে পাবলিক টয়লেটেও থাকতে হয়েছে। টানা কয়েক মাস তাঁর থাকার জায়গা ছিল না, সকালে সন্তানকে রেখে যেতেন দিবাযত্ন কেন্দ্রে, সেখান থেকে কাজে যেতেন এবং রাতে গৃহহীনদের অ্যাসাইলামে রাত কাটাতেন। কঠোর পরিশ্রম করে একপর্যায়ে তিনি স্টক ব্রোকার হন। এরপর বদলাতে শুরু করে তাঁর ভাগ্যের চাকা। প্রতিষ্ঠা করেন নিজের ব্রোকারেজ হাউস। ক্রিস গার্ডনার অবশ্য শতকোটিপতি হতে পারেননি। তাঁর সম্পদমূল্য ৭০ মিলিয়ন বা ৭ কোটি ডলারের ওপরে। তাঁর জীবন নিয়ে পারস্যুট অব হ্যাপিনেস নামে একটি সিনেমা বানানো হয়েছে। এই সিনেমা তাঁকে বিখ্যাত করেছে।

সূত্র: ফোর্বস, সিএনবিসি,

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জ বন র বয়স উপহ র

এছাড়াও পড়ুন:

নীল সমুদ্রে দক্ষিণ আফ্রিকার নীল বেদনা, ভারত বিশ্ব চ‌্যাম্পিয়ন

অনুমিত চিত্রনাট্যই যেন অনুসরণ করল মুম্বাইয়ের ফাইনাল ম্যাচ। ভারতের জার্সি গায়ে দর্শকে ঠাসা গ্যালারি রূপ নিল নীল সমুদ্রে। ২২ গজে আরও একবার ভারতের আধিপত‌্য, শাসন। যেন শিরোপার পায়চারি অনেক আগের থেকেই। 

ব‌্যাটিংয়ে পর্বত ছুঁই-ছুঁই রান। এরপর স্পিনে ফুল ফোটালেন স্পিনাররা। দক্ষিণ আফ্রিকা লড়াই করল সাধ‌্যের সবটুকু দিয়ে। ব্যাটে-বলে সহজে হাল ছাড়ল না তারাও। হৃদয় জিতলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পাত্তাই পেল না। ভারতের শক্তি-সামর্থ‌্যের গভীরতার কাছে হার মানতেই হলো প্রোটিয়া নারীদের।

আরো পড়ুন:

৪১১ রানের টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ৯ রানে হারল জিম্বাবুয়ে

কেন বিপিএল থেকে বাদ পড়ল চিটাগং কিংস

মুম্বাইয়ের নাভি স্টেডিয়ামের নীল সমুদ্রে সব আতশবাজি আজ রাতে ফুটল ভারতের বিশ্বকাপ  উদ্‌যাপনে। প্রথমবার ভারতের নারী ক্রিকেট দল ওয়ানডেতে বিশ্ব চ‌্যাম্পিয়ন। ৫২ রানের বিশাল জয় বুঝিয়ে দেয় হারমানপ্রীত কৌর, জেমিমা রদ্রিগেজ, দীপ্তি শর্মা কিংবা শেফালি বার্মা, স্মৃতি মান্ধানা, রিচা ঘোষরা ২২ গজকে কতটা আপন করে নিয়েছেন। শিরোপা জয়ের মঞ্চে ছাড় দেননি একটুও। ২০০৫ ও ২০১৭ বিশ্বকাপে যে ভুলগুলো হয়েছিল...সেগুলো আজ ফুল হয়ে ঝরল। 

বৃষ্টি বাঁধায় বিঘ্ন ম‌্যাচে আগে ব‌্যাটিংয়ে নেমে ৭ উইকেটে ২৯৮ রানের স্কোর পায় ভারত। ৪৫.৩ ওভারে অলআউট হওয়ার আগে ২৪৬ রান করতে পারে প্রোটিয়া নারীরা। নাডিন ডি ক্লার্ক শেষ ব‌্যাটসম‌্যান হিসেবে যখন আউট হলেন, স্টেডিয়ামের প্রায় ষাট হাজার ভারতীয় সমর্থকদের মুখে একটাই স্লোগান, চাক দে ইন্ডিয়া।

ওই জনসমুদ্রের স্লোগান, ‘ভারত মাতা কি জয়’, ‘বন্দে মাতরম’। 

বিস্তারিত আসছে …

 

ঢাকা/ইয়াসিন

সম্পর্কিত নিবন্ধ