কনে দেখা হয়ে গেছে। চলছিল বিয়ের প্রস্তুতি। পরিকল্পনামাফিক আগামী ৭ এপ্রিল সৌদি আরব থেকে দেশে ফেরার কথা ছিল প্রবাসী আনিসুর রহমানের (২৬)। এর আগে হঠাৎ হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে গত শুক্রবার তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে পরিবার।

আনিসুর কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের রাধানগর গ্রামের লাখ মিয়ার ছেলে। তিনি রিয়াদ বিমানবন্দরে কর্মরত ছিলেন। তাঁর এমন মৃত্যুর খবরে শোকে মুহ্যমান পুরো পরিবার ও গ্রামবাসীরা। দেশে দ্রুত তাঁর লাশটি ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্টদের সহায়তা চেয়েছেন তাঁরা।

গতকাল রোববার রাতে আনিসুরের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, শোকে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন তাঁর মা-বাবা, কান্নায় ভেঙে পড়েছেন স্বজনেরা। বন্ধুবান্ধব ও প্রতিবেশীরা যেন এমন মৃত্যুর কথা বিশ্বাস করতে পারছেন না।

আনিসুরের মেজ ভাই ও উপজেলার মুগারচর কেরামত আলী উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আমজাদ হোসেন জানান, তাঁর বড় ভাই রমজান ১৪ বছর ধরে সৌদি আরবের দাম্মাম বিমানবন্দরে কাজ করছেন। সেই সুবাদে এইচএসসি পাসের পর ছোট ভাই আনিসুরকে প্রায় সাত বছর আগে সৌদি আরবে নিয়ে যান তিনি। সেখানে রিয়াদ বিমানবন্দরে কর্মরত ছিলেন আনিসুর। চলতি বছরের ৭ এপ্রিল দেশে এসে তাঁর বিয়ে করার কথা ছিল।

গত বৃহস্পতিবার রাতেও আনিসুরের সঙ্গে দুই ঘণ্টাব্যাপী মুঠোফোনে কথা বলেন আমজাদ। তখনো তিনি বুঝতে পারেননি এটি দুই ভাইয়ের মধ্যে শেষ কথা। সেই স্মৃতি উল্লেখ করে আমজাদ বলেন, ‘ওই সময় অনেক হাসাহাসি হয়। বিয়ের অনুষ্ঠান কোথায় করবেন, কীভাবে করবেন, কী কী করবেন—এ নিয়ে দীর্ঘ সময় আলোচনা হয়। ওই রাতে প্রথম আনিসুরের বুকে ব্যথা হয়। পরদিন শুক্রবার বিকেলে আবার তাঁর বুকে ওঠে। এ সময় তাঁর সহকর্মীরা প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করেন। অবস্থার অবনতি হলে শহরের হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে আনিস চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।’

আমজাদ আফসোস করে বলেন, ‘ভাই যে দুনিয়া ছেড়ে চলে যাবেন—তা বুঝতেই পারিনি। ভাইয়ের শোকে মা (আনজিমুননেছা) খাওয়াদাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। সারাক্ষণ শুধু মা বিলাপ করছেন। আনিসুরের স্মৃতিচারণা করছেন।’

ছেলে হারানো শোকে চোখের পানি ধরে রাখতে পারছিলেন না বাবা লাখ মিয়া। কাঁদতে কাঁদতে প্রশ্ন করেন, আদরের ছোট ছেলেকে হারানোর কষ্ট তিনি বাবা হয়ে কীভাবে সইবেন? ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস—এ বয়সে লাশ হয়ে ছেলেটা দেশে ফিরছে।’

আনিসুরের মৃত্যুর শোক স্পর্শ করেছে প্রতিবেশী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের মনেও। তাঁরাও শোক প্রকাশ করেছেন। রাধানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আনিসুরের মৃত্যুর খবর গ্রামে ছড়িয়ে পড়লে, প্রায় প্রতিটি মানুষই তাঁর জন্য চোখের জল ফেলেছেন। আর কয়েক দিন পরই তাঁর দেশে ফেরার কথা ছিল, বিয়ে করার কথা ছিল। নতুন ঘর বাধার স্বপ্ন দেখছিল আনিসুর। কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণের আগেই দুনিয়া ছেড়ে চলে গেল।’

আনিসুরের মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনতে সৌদি আরবের প্রবাসী বাংলাদেশিদের সহযোগিতা নিচ্ছেন আনিসের বড় ভাই রমজান। তিনি আশা করছেন, এক সপ্তাহের মধ্যে তাঁর মরদেহ দেশে ফিরবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আমজ দ করছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

আমি গর্বিত আমি একজন মুসলিম: আমির খান

বলিউডের মিস্টার পারফেকশনিস্ট আমির খানকে নিয়ে রাজকুমার হিরানি নির্মাণ করেন আলোচিত সিনেমা ‘পিকে’। ২০১৪ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় এটি। মুক্তির পর বক্স অফিসে সুপারডুপার হিট হয়।

এ সিনেমা মুক্তির আগে প্রকাশিত হয় আমিরের পোস্টার। সিনেমাটিতেও নগ্ন আমিরের দেখা মেলে। তারপর দারুণ আলোচনায় উঠে আসেন এই অভিনেতা। সমালোচনাও কম সইতে হয়নি তাকে। এখানেই শেষ নয়, হিন্দু ধর্মের প্রতি কটাক্ষ করার অভিযোগে তীব্র সমালোচনা মুখে পড়েন আমির। ভাঙচুর করা হয় প্রেক্ষাগৃহ।

প্রায় এক যুগ পর এসব বিষয় নিয়ে মুখ খুলেছেন আমির খান। ইন্ডিয়া টিভি চ্যানেলের ‘আপ কি আদালত’ শোয়ে এসব বিষয় নিয়ে কথা বলেন আমির। তার ভাষায়— “ধর্ম নয়, ধর্মের নামে যারা প্রতারণা করে ‘পিকে’ সেসব লোকদের সমালোচনা করেছে।”

আরো পড়ুন:

জোড়া লাগল অর্জুন-মালাইকার ভাঙা প্রেম!

অন্তঃসত্ত্বা কিয়ারাকে কী উপহার দিলেন রাম চরণ?

ব্যাখ্যা করে আমির খান বলেন, “তারা ভুল। আমরা কোনো ধর্মের বিরুদ্ধে নই। আমরা সমস্ত ধর্ম ও সমস্ত ধর্মের মানুষদের শ্রদ্ধা করি। যারা ধর্মকে ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে বোকা বানিয়ে টাকা কামায়, তাদের বিষয়ে সচেতন করাই ‘পিকে’ সিনেমার উদ্দেশ্য ছিল। প্রতিটি ধর্মেই এমন লোক পাওয়া যায়।”

‘পিকে’ সিনেমায় পাকিস্তানি এক মুসলিম ছেলেরি প্রেমে পড়ে ভারতীয় হিন্দু ধর্মের অনুসারী এক নারী (আনুশকা শর্মা)। এটাকে ‘লাভ জিহাদ’ বলে অনেকে অভিযোগ করেন। এ বিষয়ে আমির খান বলেন, “সবসময়ই এটিকে লাভ জিহাদ বলা উচিত নয়। এটি মানবতা। মানবতা ধর্মের উর্ধ্বে।”

গত ৭-৮ বছরে দেশদ্রোহী, হিন্দুবিরোধী হওয়ার অভিযোগের মুখোমুখি হয়েছেন আমির খান। এ বিষয়ে তিনি বলেন, “আমি গর্বিত আমি একজন মুসলিম। আমি গর্বিত আমি একজন ভারতীয়। দুটোই একসঙ্গে সত্যি হতে পারে।”

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ