কথা ছিল আনিসুর দেশে ফিরে বিয়ের পিঁড়িতে বসবেন, এখন তাঁর লাশের অপেক্ষায় পরিবার
Published: 17th, February 2025 GMT
কনে দেখা হয়ে গেছে। চলছিল বিয়ের প্রস্তুতি। পরিকল্পনামাফিক আগামী ৭ এপ্রিল সৌদি আরব থেকে দেশে ফেরার কথা ছিল প্রবাসী আনিসুর রহমানের (২৬)। এর আগে হঠাৎ হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে গত শুক্রবার তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে পরিবার।
আনিসুর কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের রাধানগর গ্রামের লাখ মিয়ার ছেলে। তিনি রিয়াদ বিমানবন্দরে কর্মরত ছিলেন। তাঁর এমন মৃত্যুর খবরে শোকে মুহ্যমান পুরো পরিবার ও গ্রামবাসীরা। দেশে দ্রুত তাঁর লাশটি ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্টদের সহায়তা চেয়েছেন তাঁরা।
গতকাল রোববার রাতে আনিসুরের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, শোকে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন তাঁর মা-বাবা, কান্নায় ভেঙে পড়েছেন স্বজনেরা। বন্ধুবান্ধব ও প্রতিবেশীরা যেন এমন মৃত্যুর কথা বিশ্বাস করতে পারছেন না।
আনিসুরের মেজ ভাই ও উপজেলার মুগারচর কেরামত আলী উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আমজাদ হোসেন জানান, তাঁর বড় ভাই রমজান ১৪ বছর ধরে সৌদি আরবের দাম্মাম বিমানবন্দরে কাজ করছেন। সেই সুবাদে এইচএসসি পাসের পর ছোট ভাই আনিসুরকে প্রায় সাত বছর আগে সৌদি আরবে নিয়ে যান তিনি। সেখানে রিয়াদ বিমানবন্দরে কর্মরত ছিলেন আনিসুর। চলতি বছরের ৭ এপ্রিল দেশে এসে তাঁর বিয়ে করার কথা ছিল।
গত বৃহস্পতিবার রাতেও আনিসুরের সঙ্গে দুই ঘণ্টাব্যাপী মুঠোফোনে কথা বলেন আমজাদ। তখনো তিনি বুঝতে পারেননি এটি দুই ভাইয়ের মধ্যে শেষ কথা। সেই স্মৃতি উল্লেখ করে আমজাদ বলেন, ‘ওই সময় অনেক হাসাহাসি হয়। বিয়ের অনুষ্ঠান কোথায় করবেন, কীভাবে করবেন, কী কী করবেন—এ নিয়ে দীর্ঘ সময় আলোচনা হয়। ওই রাতে প্রথম আনিসুরের বুকে ব্যথা হয়। পরদিন শুক্রবার বিকেলে আবার তাঁর বুকে ওঠে। এ সময় তাঁর সহকর্মীরা প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করেন। অবস্থার অবনতি হলে শহরের হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে আনিস চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।’
আমজাদ আফসোস করে বলেন, ‘ভাই যে দুনিয়া ছেড়ে চলে যাবেন—তা বুঝতেই পারিনি। ভাইয়ের শোকে মা (আনজিমুননেছা) খাওয়াদাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। সারাক্ষণ শুধু মা বিলাপ করছেন। আনিসুরের স্মৃতিচারণা করছেন।’
ছেলে হারানো শোকে চোখের পানি ধরে রাখতে পারছিলেন না বাবা লাখ মিয়া। কাঁদতে কাঁদতে প্রশ্ন করেন, আদরের ছোট ছেলেকে হারানোর কষ্ট তিনি বাবা হয়ে কীভাবে সইবেন? ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস—এ বয়সে লাশ হয়ে ছেলেটা দেশে ফিরছে।’
আনিসুরের মৃত্যুর শোক স্পর্শ করেছে প্রতিবেশী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের মনেও। তাঁরাও শোক প্রকাশ করেছেন। রাধানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আনিসুরের মৃত্যুর খবর গ্রামে ছড়িয়ে পড়লে, প্রায় প্রতিটি মানুষই তাঁর জন্য চোখের জল ফেলেছেন। আর কয়েক দিন পরই তাঁর দেশে ফেরার কথা ছিল, বিয়ে করার কথা ছিল। নতুন ঘর বাধার স্বপ্ন দেখছিল আনিসুর। কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণের আগেই দুনিয়া ছেড়ে চলে গেল।’
আনিসুরের মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনতে সৌদি আরবের প্রবাসী বাংলাদেশিদের সহযোগিতা নিচ্ছেন আনিসের বড় ভাই রমজান। তিনি আশা করছেন, এক সপ্তাহের মধ্যে তাঁর মরদেহ দেশে ফিরবে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার
অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেলে সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় ওই চারজনের কারণ দর্শানো নোটিশের জবাবের শুনানি শেষে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বহিষ্কৃত সদস্যরা হলেন আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক, সৈয়দ কবির হোসেন, রফিকুল ইসলাম রফিক ও তরফদার আবদুল মুকিত। তাঁদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত আদালতের সব কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
এ সমিতির সাধারণ সম্পাদক এম এ গফুর বলেন, ‘অভিযোগ প্রমাণিত হওয়াতে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কেউ সমিতির নিয়মনীতির ঊর্ধ্বে নন। বৃহস্পতিবার ওই চার সদস্যকে বহিষ্কারের বিষয়টি নোটিশ দিয়ে জানানো হবে।’
সমিতি সূত্রে জানা গেছে, যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য সৈয়দ কবির হোসেনের (জনি) কাছে ৩৫ লাখ টাকায় শহরের বারান্দীপাড়া কদমতলা এলাকায় জমি বিক্রি করেন ইমরান হাসান। জমি রেজিস্ট্রির আগে সব টাকা পরিশোধের কথা থাকলেও সৈয়দ কবির হোসেন ১০ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। বাকি ২৫ লাখ টাকা না দিয়ে টালবাহানা করতে থাকেন। পরে তিনি আরও ১৭ লাখ টাকা দেন। বাকি ৮ লাখ টাকা চাইলে হুমকি দিতে থাকেন কবির হোসেন। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে ইমরান হাসান আইনজীবী সমিতি বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন।
সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর শুনানি শেষে কবির হোসেনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন করায় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কবির হোসেনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।
এ বিষয়ে আইনজীবী কবির হোসেন বলেন, ‘বহিষ্কারের বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে যে বিষয়ে আমাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, সেই বিষয়ে অভিযুক্ত আমি নই। তারপরও আইনজীবী সমিতি আমার অভিভাবক; তারা যে ব্যবস্থা নিয়েছে, তার বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।’
অন্যদিকে অভয়নগরের নওয়াপাড়ার জয়েন্ট ট্রেডিং করপোরেশন পাওনা টাকা আদায়ে আবদুর রাজ্জাককে মামলার আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছিল। ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত আবদুর রাজ্জাক আটটি চেকের মামলা পরিচালনা করেন। এসব মামলার রায় ও আপিল বাদীর অনুকূলে যাওয়ার পর আটটি চেকের ৪১ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে নেন আবদুর রাজ্জাক। এ টাকা জয়েন্ট ট্রেডিং কর্তৃপক্ষকে না দিয়ে তিনি ঘোরাতে থাকেন। চলতি বছরের ৪ জুন তিনি ১৫ লাখ টাকার একটি চেক দেন। চেকটি ব্যাংকে জমা দিলে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় নগদায়ন করা যায়নি। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে জয়েন্ট ট্রেডিং করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল ওহাব গত ২৮ জুলাই আবদুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে যশোর আইনজীবী সমিতি বরাবর অভিযোগ করেন।
এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আবদুর রাজ্জাককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় যশোর আইনজীবী সমিতি। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় আবদুর রাজ্জাককে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। এ ছাড়া রফিকুল ইসলাম রফিক তাঁর সহকর্মীর সঙ্গে অসদাচরণ ও মামলা করতে টাকা ও কাগজপত্র নিয়ে মামলা না করায় সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন করায় সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। আইনজীবী তরফদার আবদুল মুকিতের বিরুদ্ধেও নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে তাঁকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।