চব্বিশের চেতনা নস্যাতের ষড়যন্ত্র রুখতে হবে: হাবিপ্রবি উপাচার্য
Published: 20th, February 2025 GMT
চব্বিশের চেতনা নস্যাতের ষড়যন্ত্র রুখতে সর্বদা সজাগ ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. এনামউল্যা।
তিনি বলেন, “বাঙালি জাতিকে কেউ দাবিয়ে রাখতে পারেনি। ফলে পঁচাত্তর সালে বিপ্লব হয়েছিল, যা জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস নামে পরিচিত। একই চেষ্টা গত ১৭ বছর করা হয়েছিল, যারই ফসল চব্বিশের বিপ্লব। চব্বিশের চেতনা নস্যাতের ষড়যন্ত্র রুখতে সর্বদা সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে সব ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।”
বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১১টায় হাবিপ্রবির অডিটোরিয়াম-২ তে ‘অমর একুশের ধারাবাহিকতায় জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের চেতনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। মহান শহীদ দিবস ও আন্তজার্তিক মাতৃভাষা দিবস ২০২৫ উপলক্ষে আয়োজিত এ সভায় তিনি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, “একুশের ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ এ আমরা স্বাধীনতা অর্জন করি। সেই সময়ও বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিল আমাদের তরুণ সমাজ। চব্বিশ সালে এসেও আমাদের তরুণ সমাজকে আবার রাজপথে রক্ত দিতে হয়েছে। তারা ছিল সম্মুখ সারিতে, আর পেছনে কৃষক, শ্রমিক, জনতাসহ সাধারণ মানুষ।”
তিনি আরো বলেন, “অনেক বড় স্বপ্ন নিয়ে ১৯৭১ সালে আমরা দেশকে স্বাধীন করেছিলাম। কিন্তু দেখা গেল স্বাধীনতার পরপরই একটা সরকার জনগণের স্বাধীনতার চেতনার সঙ্গে বিশ্বাস ঘাতকতা করে, গণতন্ত্র ধ্বংস করে বাকশাল কায়েম করে জাতিকে একটা দুর্ভিক্ষ উপহার দেয়। আমাদের মনে আছে, বাসন্তীরা গায়ে জাল জড়িয়ে কিভাবে লজ্জা নিবারণ করেছিল।”
এ অনুষ্ঠানের প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নওগাঁ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড.
ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ড. এস. এম. এমদাদুল হাসানের সভাপতিত্বে ও সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. আবুল কালামের সঞ্চালনায় সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিন, চেয়ারম্যান, হল সুপার, প্রক্টর, বিভিন্ন শাখার পরিচালকসহ অন্যান্য শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন।
প্রধান আলোচক অধ্যাপক ড. মোহা. হাছানাত আলী তার বক্তব্যে বলেন, “পাকিস্তানি শোষকরা মাতৃভাষায় কথা বলতে দিতে চায়নি, আমাদের কণ্ঠ রোধ করা হয়েছিল। সেই সময় ছাত্ররা বুক পেতে দিয়েছিল, রক্তে রাজপথ লাল হয়ে গিয়েছিল। এরই ধারাবাহিকতায় চব্বিশের আন্দোলনেও একজন ছাত্রের টুটি চেপে ধরে এক পুলিশ অফিসার বলেছিল, ‘কথা বলবি না।’ বায়ান্ন তে বলেছিল উর্দুতে কথা বলতে হবে, বাংলায় না। এখানেই স্বৈরশাসক তথা ফ্যাসিস্টদের চমৎকার একটি মিল। তারা কথা বলতে দিতে চায়না।”
তিনি বলেন, “একুশের চেতনা ছিল আমরা স্বাধীনভাবে মায়ের ভাষায় কথা বলবো, সেটা বলতে দিতে চায়নি পাকিস্তান। একাত্তর আসলো, আমরা স্বাধীন হলাম। ভেবেছিলাম স্বাধীনভাবে কথা বলবো, শোষিত হব না। কিন্তু ১৭ বছর এদেশে জন্মগ্রহণ করা কিছু মানুষই আমাদের শোষণ করেছে, বঞ্চিত করেছে; পাকিস্তানী বা অন্যরা না। আমাদের সন্তানদের হলে থাকতে দেয়নি, তাদের ছাত্র সংগঠন বাকশালি কায়দায় চাঁদাবাজি করেছে, সিট বাণিজ্য করেছে, মেধাবীদের বঞ্চিত করা হয়েছে।”
“আন্দোলনকে দমাতে হেলিকপ্টার থেকে গুলি করা হয়েছে। নিজের বাবার হত্যার প্রতিশোধ নিতে গিয়ে বাংলাদেশে ভয়াবহ ম্যাসাকার করলেন। পৃথিবীর কোন সভ্য দেশে এটা কল্পনা করা যায় না। চব্বিশ এর চেতনা ধারণ করে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। গণঅভ্যুত্থানের সঙ্গে জড়িত সব শক্তিকে এক থাকতে হবে, ছোট ছোট বিষয় নিয়ে নিজেদের মধ্যে মনোমালিন্য তৈরি করা যাবে না।”
ঢাকা/সংগ্রাম/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপ চ র য আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
শিবিরের এই সাফল্য জাতীয় নির্বাচনে জামায়াতকে সুবিধা দেবে কি?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) নির্বাচনে ছাত্রশিবিরের ভূমিধস জয় কাউকে কাউকে আনন্দিত করেছে, কাউকে শঙ্কিত বা চিন্তিত করেছে। তবে প্রায় সবাইকে অবাক করেছে। অবাক হওয়ারই কথা। কারণ, কিছুদিন আগে পর্যন্ত যে ছাত্র সংগঠনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিচয় দিতে পারত না, তাদের এ ধরনের জয় বিস্মিত করার মতো ব্যাপার বৈকি।
এই ফল দেখে কিছু মানুষ এ কারণে খুশি যে কয়েক দশক পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই দলের একচেটিয়া আধিপত্য শেষ হয়ে গেল। তবে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, ছাত্রশিবিরের এ জয়ে অনেকে কেন শঙ্কিত বা চিন্তিত?
সম্ভবত এর প্রধান কারণ ছাত্রশিবির জামায়াতে ইসলামীর একটি অঙ্গসংগঠন এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে জামায়াত একটি প্রশ্নবিদ্ধ রাজনৈতিক দল। ১৯৭১ সালে তাঁরা শুধু মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধেই ছিল না, দলটি ছিল পাকিস্তানের সামরিক সরকারের সমর্থনপুষ্ট। দলটি কেবল মৌখিকভাবে পাকিস্তানের পক্ষ নেয়নি, ইতিহাস বলে, তারা রাজাকার, আলবদর, আলশামস ইত্যাদি স্বেচ্ছাসেবী বাহিনী গড়ে পাকিস্তানি বাহিনীকে গণহত্যায় সহায়তা করেছিল।
আরও পড়ুনশিবিরের বিজয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে কি নতুন ধারার সূচনা হলো১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫এ কারণে তাদের বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে বিবর্জিত করা একটি স্বাধীন দেশের পক্ষে খুব স্বাভাবিক ছিল। তাই এ দেশে জামায়াতে ইসলামী স্বাধীনতার পর অন্তত প্রথম কয়েক বছর রাজনীতি করতে পারেনি। তবে ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর পটপরিবর্তন হতে শুরু করে। কয়েকটি সামরিক অভ্যুত্থানের পর জেনারেল জিয়াউর রহমানের বাংলাদেশের রাজনীতিতে আবির্ভাব সেই পরিবর্তনকে আরও বেগবান করে।
মূলত জিয়াউর রহমান নতুন দল সৃষ্টির জন্য একটি বিরাট জাল ফেলেছিলেন এবং সেই দলে সব মতের লোকদের অন্তর্ভুক্তি এই পরিবর্তনকে ত্বরান্বিত করেছিল। তিনি নিজে মুক্তিযোদ্ধা হলেও তাঁর নতুন দলে এমন ব্যক্তিদের এনেছিলেন, যাঁরা সরাসরি মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিলেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন মুসলিম লীগের শাহ আজিজুর রহমান, যিনি ১৯৭১ সালের অক্টোবরে জাতিসংঘে পাকিস্তানের পক্ষে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন পাকিস্তান সরকারের সাফাই গাওয়ার জন্য। এই আজিজুর রহমানকে জিয়াউর রহমান ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বানান।
জাকসু নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর বিজয়ীদের উচ্ছ্বাস। এখানেও শিবিরের বড় সাফল্য অর্জিত হয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ১৩ সেপ্টেম্বর