টাঙ্গাইল শত্রুমুক্ত হয় ১১ ডিসেম্বর
Published: 11th, December 2025 GMT
আজ ১১ ডিসেম্বর টাঙ্গাইল হানাদারমুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে বাংলার সূর্যসেনারা পাকিস্তানি বাহিনীর কবল থেকে টাঙ্গাইলকে মুক্ত করে উত্তোলন করেন স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা।
প্রতিবছরের এদিন নানা আয়োজনের মাধ্যমে দিবসটি পালন করা হয়। মুক্তিযোদ্ধারা সম্মুখ সমরের স্থানগুলো সংরক্ষণের জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছেন।
আরো পড়ুন:
৩৬ ঘণ্টার যুদ্ধে শত্রুমুক্ত হয় মাদারীপুর
‘বাঙ্কারে গ্রেনেড থ্রো করাতে কাজ হয়েছিল’
মুক্তিযুদ্ধে টাঙ্গাইল নানাদিক থেকে অসামান্য ইতিহাস সৃষ্টি করে। এখানকার অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাহসিকতাপূর্ণ যুদ্ধের কাহিনী দেশের সীমানা পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়েছিল বিশ্বজুড়ে। মুক্তিযোদ্ধা কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে গঠিত ও পরিচালিত ‘কাদেরিয়া বাহিনী’র বীরত্বের কথা স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
১৯৭১ সালের মার্চ মাসের শুরুতেই ‘টাঙ্গাইল জেলা স্বাধীন বাংলা গণমুক্তি পরিষদ’ গঠন করা হয়। চলতে থাকে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ। ২৬ মার্চ থেকে গ্রামে-গ্রামে যুবকরা সংগঠিত হয়। ৩ এপ্রিল মির্জাপুরের গোড়ান-সাটিয়াচড়ায় মুক্তিযোদ্ধাদের অবরোধ ভেঙে হানাদার বাহিনী টাঙ্গাইল শহরে প্রবেশ করে। মুক্তিযোদ্ধারা নিরাপদ স্থানে চলে যান।
অল্পদিনের মধ্যেই সেদিনের যুবক কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে গড়ে ওঠে বিশাল ‘কাদেরিয়া বাহিনী’। শুরু হয় বিভিন্নস্থানে হানাদার বাহিনীর সঙ্গে তাদের যুদ্ধ। খন্দকার আবদুল বাতেনের নেতৃত্বে গঠিত ‘বাতেন বাহিনী’ও অনেক জায়গায় হানাদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে।
টাঙ্গাইলে মুক্তিযুদ্ধে প্রধান ভূমিকা পালন করে কাদেরিয়া বাহিনী। চারদিক থেকে তাদের আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়ে পাকিস্তানি বাহিনী। ১০ ডিসেম্বর বিকেলে টাঙ্গাইল শহরের অদূরে পৌলিতে মিত্রবাহিনীর প্রায় দুই হাজার ছত্রীসেনা অবতরণ করায় হানাদারদের মনোবল একেবারেই ভেঙে পড়ে। তারা ছুটতে থাকে ঢাকার দিকে। ১১ ডিসেম্বর ভোর থেকে বিজয়ী মুক্তিযোদ্ধারা টাঙ্গাইল শহরে প্রবেশ করতে থাকেন। টাঙ্গাইল শহর শত্রুমুক্ত হয়। মানুষ নেমে আসেন রাস্তায়। নানা স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে পুরো শহর।
বিগত বছরগুলোতে টাঙ্গাইল হানাদার মুক্ত দিবস উদযাপন উপলক্ষে টাঙ্গাইল পৌরসভার উদ্যোগে ৭ দিনব্যাপী কর্মসূচি থাকলেও দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের কারণে এ বছর সংক্ষিপ্ত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। শোভাযাত্রা ও আলোচনার সভা অনুষ্ঠিত হবে।
ঢাকা/কাওছার/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
দু–তিন দিনে পড়ার মতো মুক্তিযুদ্ধের অনবদ্য পাঁচ উপন্যাস
মুক্তিযুদ্ধের বঞ্চনা ও প্রতিরোধের মর্ম অনুধাবন ও সামষ্টিকভাবে জাতীয় চেতনাবোধ প্রজ্বালনে বৃহৎ পরিসরের উপন্যাস পাঠ অত্যন্ত জরুরি। যুদ্ধের ঘটনাশ্রয়ী বড় উপন্যাসগুলো কেবল ঐতিহাসিক ঘটনার বিবরণ দেয় না, বরং যুদ্ধের মনস্তাত্ত্বিক গভীরতা, মানুষের ব্যক্তিগত সংগ্রাম এবং নৈতিক দ্বন্দ্বের সঙ্গে পাঠককে নিবিড়ভাবে পরিচিত করায়। আজ থাকছে যুদ্ধনির্ভর অজস্র লিখিত ভাষ্যের মধ্যে বাংলা সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি উপন্যাস, যেগুলো পরবর্তী প্রজন্মকে আখ্যানের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার মূল্য সম্পর্কে সচেতন করতে সক্ষম এবং যুদ্ধের অভিঘাত, ত্যাগ ও প্রভাবের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত করে।
১. রাইফেল রোটি আওরাত‘রাইফেল রোটি আওরাত’ আনোয়ার পাশার (১৯২৮-১৯৭১) মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রেক্ষাপটে রচিত একটি কালজয়ী উপন্যাস। ১৮২ পৃষ্ঠার এ উপন্যাসের কাহিনি আবর্তিত হয়েছে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাত থেকে ২৮ মার্চের ভোর পর্যন্ত মাত্র তিন দিনের ঘটনাবলিকে কেন্দ্র করে। এতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বরোচিত গণহত্যা ও ধ্বংসলীলার স্বরূপ উন্মোচিত হয়েছে উদগ্র বীভৎসতায়। কেন্দ্রীয় চরিত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সুদীপ্ত শাহীন, যিনি সপরিবার টিচার্স কোয়ার্টারের ২৩ নম্বর ভবনে থাকতেন। চারপাশে সহকর্মী ও ছাত্রদের লাশের স্তূপের মাঝেও সুদীপ্ত শাহীন ও তাঁর পরিবার ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান। এই বেঁচে থাকার অপরাধবোধ, ভয়াবহ গণহত্যার চাক্ষুষ বিবরণ এবং নতুন ভোরের প্রতীক্ষাই উপন্যাসটির করুণ আবেদন।
আনোয়ার পাশা (১৯২৮—১৯৭১)