গ্রেনেড ছোড়ার প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন ফোরকান বেগম
Published: 11th, December 2025 GMT
বীর মুক্তিযোদ্ধা ফোরকান বেগম। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অনেক নারী প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ করেন। একাত্তরের বাঙালি নারীদের ভূমিকা ছিল সে সময় সমরে ও নেপথ্যে। বীর মুক্তিযোদ্ধা ফোরকান সমরে লড়া এক নারী। বর্তমান নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জে ১৯৫০ সালের ৬ মে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার বাবার নাম মো. তমিজউদদীন ভূইয়া এবং মায়ের নাম রোকেয়া বেগম।
১৯৬৬ সালে ঢাকা কামরুন্নেসা বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং ইন্টারমিডিয়েট কলেজ থেকে ১৯৬৮ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। বিশ্ববিদ্যালয় পড়াকালীন প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে তিনি সক্রিয় ছিলেন। উনসত্তুরের গণ অভ্যুত্থান থেকে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত। ১৯৭১ সারে তিনি স্নাতক শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন।
আরো পড়ুন:
৩৬ ঘণ্টার যুদ্ধে শত্রুমুক্ত হয় মাদারীপুর
শরীরে লুকিয়ে রেখেছিলেন গোপন নথি
২৫ মার্চ ১৯৭১-এ পাকিস্তানী বাহিনীর নিষ্ঠুরতা শুরু হলে ফোরকান বেগম নিজ গ্রামে চলে যান। গ্রামে গিয়ে একজন বিমান বাহিনীর সদস্য এবং দুইজন সেনাবাহিনীর কর্মকর্তার সাক্ষাৎ পান। তাদের সহযোগিতায় পুটিনা বিদ্যালয়ের মাঠে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ডামি রাইফেল হিসেবে প্রথমে মানকচুর বড় বড় গাছ কেটে এবং কলার ডগা দিয়ে প্রাথমিকভাবে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। আর গ্রেনেড ছোড়ার প্রশিক্ষণ হিসেবে মাটির ঢেলা ছোড়ার প্রশিক্ষণ নেন। এবং পরে দক্ষতার পরিচয় দেন।
ফোরকান বেগম আরও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করার জন্য আগরতলা যাওয়ার চেষ্টা শুরু করেন। তারপর একদিন বান্ধবী ঝুনুকে সঙ্গে করে,মামা নাসির এর সঙ্গে আগরতলার উদ্দেশ্য রওনা হন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিটঘর পৌঁছে প্রচন্ড বৃষ্টির মধ্যে একবার আটকে পড়েন। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন, একদিন আগে পাক সেনারা ওই গ্রাম থেকে লোক ধরে নিয়ে গেছে এবং ঘরবাড়িতে আগুন দিয়েছে। সিএনবি রোডে পাক আর্মি টহল বাড়িয়ে দিয়েছে। বিটঘরে তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা নিখিল চন্দ্র সাহার বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেন। নিখিলচন্দ্র, তখন বুয়েটের মেকানিক্যাল এর মেধাবী ছাত্র ছিলেন। সে সময় পাক আর্মির ভয়ে গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের অধিকাংশ মানুষ গ্রাম ছেড়ে ভারত চলে যাচ্ছিলেন, নিখিল ওইসব মানুষদের পারাপারে সহযোগিতা করতেন। তিনি প্রায় রাতে সি এন বি রোডে টহলরত পাকবাহিনীর, টহল নস্যাৎ করার জন্য তাদের উপর গ্রেনেড ছুড়ে আক্রমণ করতেন। ৮ দিন সেখানে অবস্থান করার পর, ফোরকান বেগমসহ অন্যান্যদের পার হওয়ার সুযোগ ঘটে। আগরতলা পৌঁছে তাদের থাকার ব্যবস্থা হয় সাঈদ ভাই এর বাড়ি।
সেখান থেকে জিবি হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে শরনার্থী শিবিরে সেবার কাজ শুরু করেন ফোরকান বেগম। একদিন খবর পান আগরতলা শরণার্থী শিবির মার্কিন সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডি পরিদর্শনে আসছেন। তিনি এবং ঝুনু সেখানে উপস্থিত হয়ে—মুক্তিযুদ্ধের পরিস্থিতি কেনেডির কাছে তুলে ধরেন। এবং বঙ্গবন্ধু কোথায় আছেন, কেমন আছেন- তা জানার জন্য অনুরোধ জানান। পরবর্তী ৭ দিনের মধ্যে কেনেডি বঙ্গবন্ধুর অবস্থান জানান। বঙ্গবন্ধুর অবস্থান জানার পর মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে উৎসাহ বেড়ে যায়।
এসে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করেন। পাশাপাশি চালিয়ে যেতে থাকেন অসমাপ্ত, লেখা পড়া। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাট স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
ঢাকা/লিপি
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
দু–তিন দিনে পড়ার মতো মুক্তিযুদ্ধের অনবদ্য পাঁচ উপন্যাস
মুক্তিযুদ্ধের বঞ্চনা ও প্রতিরোধের মর্ম অনুধাবন ও সামষ্টিকভাবে জাতীয় চেতনাবোধ প্রজ্বালনে বৃহৎ পরিসরের উপন্যাস পাঠ অত্যন্ত জরুরি। যুদ্ধের ঘটনাশ্রয়ী বড় উপন্যাসগুলো কেবল ঐতিহাসিক ঘটনার বিবরণ দেয় না, বরং যুদ্ধের মনস্তাত্ত্বিক গভীরতা, মানুষের ব্যক্তিগত সংগ্রাম এবং নৈতিক দ্বন্দ্বের সঙ্গে পাঠককে নিবিড়ভাবে পরিচিত করায়। আজ থাকছে যুদ্ধনির্ভর অজস্র লিখিত ভাষ্যের মধ্যে বাংলা সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি উপন্যাস, যেগুলো পরবর্তী প্রজন্মকে আখ্যানের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার মূল্য সম্পর্কে সচেতন করতে সক্ষম এবং যুদ্ধের অভিঘাত, ত্যাগ ও প্রভাবের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত করে।
১. রাইফেল রোটি আওরাত‘রাইফেল রোটি আওরাত’ আনোয়ার পাশার (১৯২৮-১৯৭১) মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রেক্ষাপটে রচিত একটি কালজয়ী উপন্যাস। ১৮২ পৃষ্ঠার এ উপন্যাসের কাহিনি আবর্তিত হয়েছে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাত থেকে ২৮ মার্চের ভোর পর্যন্ত মাত্র তিন দিনের ঘটনাবলিকে কেন্দ্র করে। এতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বরোচিত গণহত্যা ও ধ্বংসলীলার স্বরূপ উন্মোচিত হয়েছে উদগ্র বীভৎসতায়। কেন্দ্রীয় চরিত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সুদীপ্ত শাহীন, যিনি সপরিবার টিচার্স কোয়ার্টারের ২৩ নম্বর ভবনে থাকতেন। চারপাশে সহকর্মী ও ছাত্রদের লাশের স্তূপের মাঝেও সুদীপ্ত শাহীন ও তাঁর পরিবার ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান। এই বেঁচে থাকার অপরাধবোধ, ভয়াবহ গণহত্যার চাক্ষুষ বিবরণ এবং নতুন ভোরের প্রতীক্ষাই উপন্যাসটির করুণ আবেদন।
আনোয়ার পাশা (১৯২৮—১৯৭১)