চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের এ কেমন শুরু
Published: 20th, February 2025 GMT
বাংলাদেশ: ৪৯.৪ ওভারে ২২৮ ভারত: ৪৬.৩ ওভারে ২৩১/৪ ফল: ভারত ৬ উইকেটে জয়ী।
তামিম ইকবালের একটা ভিডিও মোবাইলে মোবাইলে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। ভিডিওতে দেখা গেছে, ফোনে স্কোর দেখতে দেখতে দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে ঢুকছেন সাবেক বাংলাদেশ অধিনায়ক। হঠাৎ মাথায় হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন। কেন, সেটিও বলে দেওয়া যাক। তামিম যখন মোবাইল খুললেন, ততক্ষণে বাংলাদেশের ৩৫ রানে পঞ্চম উইকেটও পড়ে গেছে। সেটা দেখেই তাঁর ওই প্রতিক্রিয়া।
আরেকটা ঘটনা। নবম ওভারে পরপর ২ বলে তানজিদ হাসান আর মুশফিকুর রহিমকে আউট করে দিয়েছেন অক্ষর প্যাটেল। এর একটু পর প্রেসবক্সের নিচে গিয়ে দুই দুবাইপ্রবাসী বাংলাদেশি পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কথোপকথন কানে এল। বাংলাদেশের ব্যাটিং নিয়ে তাঁদের ‘বিশেষজ্ঞ মতামত’ হুবহু তুলে না ধরাই ভালো। শুধু সারমর্মটা বলা যাক। তাঁরা দুজনই একমত যে বাংলাদেশের এই ব্যাটসম্যানদের ক্রিকেট খেলা বাদ দিয়ে অন্য কোনো কাজ খুঁজে নেওয়া উচিত। সম্ভাব্য বিকল্প একটি পেশার কথাও তাঁরা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করলেন, সংগত কারণে সেটিও উহ্য রাখা হলো।
বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত ম্যাচটা হেরেছে ৬ উইকেটে। তানজিম হাসানকে পুল শটে ছক্কা মেরে ২১ বল বাকি থাকতে জয়ের আনুষ্ঠানিকতা সেরেছেন লোকেশ রাহুল (৪১*)। সেঞ্চুরিতে দলের জয় সহজ করে তোলা শুবমান গিল অপরাজিত ১০১ রানে। তাসকিন আহমেদের বলে রোহিত শর্মার আউটে ৬৯ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙলেও আরেক ওপেনার ফিরেছেন ম্যাচ শেষ করে। ১৪৪ রানে চতুর্থ উইকেট পড়ার পর ৮৭ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গিল-রাহুলের।
শুরুতে বাংলাদেশের ব্যাটিং নিয়ে যে দুটি প্রতিক্রিয়ার কথা বলা হলো, সেগুলো হয়তো পরে কিছুটা সান্ত্বনা খুঁজে নিয়েছে তাওহিদ হৃদয়ের লড়াকু সেঞ্চুরি আর তাঁকে সঙ্গ দেওয়া জাকের আলীর ফিফটি (৬৮) থেকে। নবম ওভারে ৩৫ রানে ৫ উইকেট পড়ার পর ষষ্ঠ উইকেটে ৪৩তম ওভার পর্যন্ত খেলে ১৫৪ রানের জুটি। চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে যা ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে এটিই সর্বোচ্চ জুটি।
তবে এই জুটির পেছনে আছে সংগ্রামের এক গল্প। ব্যক্তিগত ৮৬ রানের সময় পায়ের মাংসপেশিতে টান পড়ায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন হৃদয়। কখনো ব্যথায়, কখনো ভারসাম্য হারিয়ে এরপর পড়েছেন আরও তিনবার, যার দুবারই ৯০ পার হয়ে। ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরির ইনিংসটাকে হৃদয় তবু খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়েই নিয়ে যান শেষ ওভার পর্যন্ত। ১১৪ বলে সেঞ্চুরি করার পর ১১৮তম বলে হৃদয় ওই ১০০ রানেই আউট হন হর্ষিত রানার করা শেষ ওভারের চতুর্থ বলে। শেষ পর্যন্ত ওই সেঞ্চুরি শুধু একটু মানই বাঁচাতে পেরেছে বাংলাদেশের।
তার আগে ব্যক্তিগত ২৩ রানে মিড অফে হার্দিক পান্ডিয়ার হাত থেকে একবার ক্যাচ পড়েছে হৃদয়ের। উইকেটে এসে প্রথম বলে জীবন পেয়েছিলেন জাকেরও। পরপর ২ বলে তানজিদ ও মুশফিককে ফেরানো অক্ষর প্যাটেলের হ্যাটট্রিক বলে স্লিপে ক্যাচ ফেলে দেন ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা।
এবারের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে বাংলাদেশ এসেছে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ঘোষণা দিয়ে। পরশু অধিনায়ক নাজমুল হোসেন এমনও আশা প্রকাশ করেছিলেন, দুবাইয়ে ভারতের বিপক্ষে বড় কিছু ঘটিয়ে দিতে পারলে ঘোষণা বাস্তবায়নে বড় একটা পদক্ষেপ দিয়ে ফেলবে বাংলাদেশ। রাওয়ালপিন্ডির পরের দুই ম্যাচে সেটি জোগাবে বাড়তি আত্মবিশ্বাস। তবে বড় লক্ষ্যের ভারত ম্যাচে ব্যাটিংয়ের শুরুটা ও রকম ভয়ংকর হতে দেখার পর ভবিষ্যতের জন্য আশাবাদী থাকা একটু মুশকিলই।
বাংলাদেশের ইনিংসে এক মোহাম্মদ শামিই ধাক্কা দিয়েছেন পাঁচবার। ২০২৩ সালের নভেম্বরের পর থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বাইরে ছিলেন এই ভারতীয় পেসার। ফিরে এসে মাত্র তৃতীয় ম্যাচেই ৫ উইকেট। প্রথম আঘাত ইনিংসের প্রথম ওভারের শেষ বলে, ড্রাইভ করতে গিয়ে কট বিহাইন্ড ওপেনার সৌম্য সরকার। রানার করা পরের ওভারে অধিনায়ক নাজমুলও নেই। শুরুর দিকে বাংলাদেশের ব্যাটিং বলতে ছিল ওপেনার তানজিদ হাসানের ২৫ বলে ২৫ রান। চার বাউন্ডারির দুটি মেরেছেন শামির করা তৃতীয় ওভারে পরপর ২ বলে।
অন্যদিকে উইকেট পড়তেই থাকল। ২৬ রানে ৩ উইকেট পড়ার পর যখন হৃদয় এসে পড়া থামালেন, তখন আবার তানজিদ নিজেই পড়ে (পড়ুন আউট) গেলেন। পরের বলে কট বিহাইন্ড মুশফিকও। টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচ, খেলা হয়েছে দুবাই স্টেডিয়ামের এমন এক উইকেটে, যেটিতে আইএল টি-টোয়েন্টিরও কোনো ম্যাচ হয়নি। বোলারদের জন্য একেবারেই কিছু না থাকা এই ‘ফ্রেশ উইকেটে’ও বাংলাদেশের শুরুর ভঙ্গুর ব্যাটিং চিন্তার খোরাক জোগাচ্ছে বৈকি।
আধুনিক ক্রিকেটে ওয়ানডে জয়ের মূল শর্তই হলো হয় বড় রান করো, না হয় বড় রান তাড়া করতে শেখো। রানটাকে তিন শ পার না করলে বা তিন শর কাছাকাছি নিতে না পারলে জয়ের স্বপ্ন দেখা বাড়াবাড়ি। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে করা কারও সেঞ্চুরিতে বীরত্ব মিশে থাকলেও দলকে সেটা জয়ের তিলক পরাতে পারে তখনই, যখন অন্যদের ব্যাটেও রানের প্রবাহ থাকে। ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের সেই জায়গাটাই মরুভূমির মতো হয়ে থাকল।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
আফগানিস্তানে মধ্যরাতে শক্তিশালী ভূমিকম্পের আঘাত
আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলীয় হিন্দুকুশ অঞ্চলে ৬ দশমিক ৩ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। যুক্তরাষ্ট্র ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) এ তথ্য জানিয়েছে। দুই মাস আগেই দেশটিতে এক ভূমিকম্পে কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।
ইউএসজিএস জানায়, রোববার দিবাগত রাতে আফগানিস্তানের হিন্দুকুশ অঞ্চলে মাজার-ই-শরিফ শহরের কাছে খোলম এলাকায় ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। স্থানীয় সময় রাত ১২টা ৫৯ মিনিটে আঘাত হানা এই ভূমিকম্পের গভীরতা প্রথমে ১০ কিলোমিটার বলা হয়। পরে তা সংশোধন করে গভীরতা ২৮ কিলোমিটার বলে জানায় সংস্থাটি।
আফগানিস্তানের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা জানিয়েছে, হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পরে জানানো হবে।
উল্লেখ্য, গত ৩১ আগস্ট আফগানিস্তানের সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে প্রাণঘাতী ভূমিকম্পটি আঘাত হেনেছিল। দেশটির পূর্বাঞ্চলে আঘাত হানা রিখটার স্কেলে ৬ মাত্রার ওই ভূমিকম্পে ২ হাজার ২০০ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারান।
আরও পড়ুনআফগানিস্তানে ভূমিকম্পে নিহত বেড়ে ২২০৫, খোলা আকাশের নিচে মানুষ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫আফগানিস্তানে প্রায়শই ভূমিকম্প আঘাত হানে। বিশেষ করে হিন্দুকুশ পর্বতমালা বরাবর, যেখানে ইউরেশীয় এবং ভারতীয় টেকটোনিক প্লেটগুলো মিলিত হয়েছে।
ব্রিটিশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার ভূমিকম্পবিদ ব্রায়ান ব্যাপটির দেওয়া তথ্য মতে, ১৯০০ সাল থেকে উত্তর-পূর্ব আফগানিস্তানে রিখটার স্কেলে ৭ মাত্রার বেশি ১২টি ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে।
আরও পড়ুন৩৫ বছরে আফগানিস্তানে ভয়াবহ যত ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫