জুনের মধ্যে সম্ভব স্থানীয় নির্বাচন
Published: 23rd, February 2025 GMT
আগামী জুনের মধ্যে স্থানীয় সরকারের সব স্তরে নির্বাচন করা যেতে পারে বলে সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন। মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে ইউনিয়ন, উপজেলা এবং জেলা পরিষদের জন্য একটি এবং পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের জন্য আরেকটি অধ্যাদেশ জারি করা যেতে পারে। প্রস্তাবিত ‘স্থানীয় সরকার কমিশন’ এপ্রিলে বিস্তারিত কাজ করলে জুনে ভোট সম্ভব।
গত বুধবার প্রধান উপদেষ্টা ড.
কমিশন স্থানীয় সরকারে সংসদীয় ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করেছে। মত দিয়েছে, নির্বাচন নির্দলীয় পদ্ধতিতে আয়োজনের। ইউনিয়ন পরিষদে জনসংখ্যার অনুপাতে ওয়ার্ড সংখ্যা ৯ থেকে ৩০ করার সুপারিশ করা হয়েছে। উপজেলা পরিষদে ওয়ার্ডের প্রস্তাব এসেছে। বিদ্যমান প্রতি ইউনিয়নকে তিনটি ওয়ার্ডে বিভক্ত করার কথা বলা হয়েছে। উপজেলায় ওয়ার্ড সংখ্যা হবে সর্বোচ্চ ৩৩। প্রতি উপজেলায় জেলা পরিষদের তিন থেকে পাঁচটি ওয়ার্ড থাকবে। পৌরসভা এবং সিটি করপোরেশনে ওয়ার্ড সংখ্যা হবে জনসংখ্যার অনুপাতে।
স্থানীয় সরকারের নির্বাচনের দায়িত্ব সরকারের হাত থেকে নির্বাচন কমিশনে নিতে সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে প্রতিবেদনে। বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশনই নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করবে।
সুপারিশে বলা হয়েছে, স্থানীয় নির্বাচনের জন্য জাতীয় নির্বাচনের চেয়েও বেশি টাকা খরচ হয়। প্রতি পাঁচ বছরে অন্তত ২২৫ দিন থাকে নির্বাচনী সময়। এতে সারা বছরই রাজনৈতিক উত্তেজনা, অস্থিরতা থাকে। এতে সরকারের কাজ বিঘ্নিত হয়। তাই স্থানীয় নির্বাচন একই তপশিলে একই দিনে আয়োজনের সুপারিশ করা হয়েছে। ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা পরিষদের ভোট একই সঙ্গে হবে। একজন ভোটার তিনটি পরিষদের সদস্যপদে তিনটি আলাদা ভোট দেবে। বর্তমানেও ভোটাররা স্থানীয় নির্বাচনে তিনটি ভোট দেন। একসঙ্গে নির্বাচন প্রতি পাঁচ বছরে মাত্র ৪৫ দিন থাকবে নির্বাচনী সময়। এতে সময় এবং ব্যয়সাশ্রয়ী হবে।
স্থানীয় পরিষদ বা কাউন্সিলে জাতীয় সংসদের আদলে স্পিকার থাকবেন। যিনি পরিচিত হবেন সভাধ্যক্ষ হিসেবে। প্রতি ওয়ার্ড থেকে নির্বাচিত সদস্য বা কাউন্সিলরা গোপন ভোটে চেয়ারম্যান বা মেয়র নির্বাচিত করবেন। চেয়ারম্যান বা মেয়ররা নির্বাচিত সদস্যদের মধ্য থেকে তিন থেকে পাঁচজন নিয়ে নির্বাহী পরিষদ গঠন করবেন। এ পরিষদ মন্ত্রিসভার মতো কাজ করবে। বাকিরা একজন ছায়া নেতা নির্বাচিত করবেন। যিনি বিরোধীদলীয় নেতা হবেন।
সদস্যপদে প্রার্থী হতে মাধ্যমিক পাস হতে হবে। চেয়ারম্যান-মেয়রদের শিক্ষাগত যোগ্যতা হবে ন্যূনতম স্নাতক। সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও সদস্য পদে নির্বাচন করতে পারবেন। তবে তারা চেয়ারম্যান-মেয়র হতে পারবেন না।
স্থানীয় সরকারের সংস্কারে গত ১৮ নভেম্বর আট সদস্যের স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। কমিশনের প্রতিবেদনে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে গ্রাম ও পৌর পুলিশ গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে নতুন দুটি পুলিশ বাহিনী গঠিত হওয়ার পর কমিউনিটি পুলিশকে সম্পূর্ণভাবে বিলুপ্ত করা হবে।
স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে সময়ের সঙ্গে আধুনিকায়নের জন্য পাঁচ সদস্যের স্থায়ী স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। স্থায়ী সংস্কার কমিশন সব সংস্কার কর্মের একটি ধারাবাহিকতা রক্ষায় সক্ষম হবে। এটি স্থানীয় পর্যায়ে আইনের শাসন ও প্রশাসনিক শৃঙ্খলা রক্ষার একটি নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠতে পারে।
প্রতিটি স্থানীয় সরকারের সংগঠন কাঠামো দুটি প্রধান অংশে বিভক্ত থাকবে। একটি হলো বিধানিক অংশ (লেজিসলেটিভ পার্ট), আরেকটি নির্বাহী অংশ (এক্সিকিউটিভ পার্ট)। বিধানিক অংশের প্রধান হবেন জনপ্রতিনিধিদের মধ্য থেকে নির্বাচিত সভাধ্যক্ষ ও নির্বাহী অংশের প্রধান হবেন পরিষদের চেয়ারম্যান বা মেয়র।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে উপজেলা চেয়ারম্যান ও সাধারণ আসনের ভাইস চেয়ারম্যান ও সংরক্ষিত নারী আসনের ভিন্ন পদধারী তিনজন একই আকারের নির্বাচনী এলাকা থেকে নির্বাচিত হন। আবার জাতীয় সংসদ সদস্যের নির্বাচনী এলাকা প্রায় ক্ষেত্রে অভিন্ন। এই চার প্রতিনিধির মধ্যে রাজনৈতিক সংঘাত তাই অনিবার্য।
নির্বাচিত জেলা পরিষদ গঠনের সুপারিশ করেছে কমিশন। ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলায় মোট ওয়ার্ডের এক-তৃতীয়াংশ আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে তিন নির্বাচনের পর থাকবে না এই সংরক্ষণ। একইভাবে নির্বাহী পরিষদ এবং স্থায়ী কমিটিতে এক-তৃতীয়াংশ চেয়ারম্যান পদ নারীদের জন্য সংরক্ষিত রাখার সুপারিশ করা হয়েছে।
মেয়র বা চেয়ারম্যান পরিষদের সার্বক্ষণিক কর্মী হিসেবে বিবেচিত হবেন। তারা বেতন সম্মানী পাবেন। প্রতিটি পরিষদ বছরের এপ্রিলে বার্ষিক বা পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা নিতে অধিবেশন করবে। পরিষদের সার্বিক কার্যক্রম ও উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় টাকার ৫০ শতাংশ সরকার অর্থায়ন করবে। বাকিটা নিজস্ব উৎস থেকে পরিষদকে সংগ্রহ করতে হবে। জেলা ও উপজেলা পরিষদের প্রধান দায়িত্ব হবে উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন। পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্ব হবে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের নাম বদল করে ‘স্থানীয় সরকার, জনসংগঠন ও জনপ্রকৌশল সেবা মন্ত্রণালয়’ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। স্থানীয় সরকার জনসংগঠন অংশটি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সব এনজিওর কার্যক্রম তদারকি করবে। আর জনপ্রকৌশল ও সেবা বিভাগের অধীনে থাকে ওয়াসা, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরসহ অন্যান্য সংস্থা। এই মন্ত্রণালয়ে একজন মন্ত্রী, একজন প্রতিমন্ত্রী ও একজন উপমন্ত্রী থাকতে পারবে।
দুই ভাগে একজন করে সিনিয়র সচিব, একজন করে অতিরিক্ত সচিব, ৪ জন করে যুগ্ম সচিব, ৮ জন করে উপসচিব, ৮ জন করে সিনিয়র সহকারী সচিব ও ৮ জন করে সহকারী সচিব থাকবেন। এলজিইডি ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরকে একীভূত করে এলজিইডির অধীনে থাকবে। সব উপজেলা পর্যায়ে দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত স্থাপন করতে হবে। এ জন্য বিচারক নিয়োগের সুপারিশ করেছে কমিশন। গ্রাম আদালত বিলুপ্ত করে বিকল্প হিসেবে বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য ওয়ার্ড ও কমিউনিটি পর্যায়ে একটি সালিশি ব্যবস্থা যুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এই ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের বিচারকরা সম্পৃক্ত থাকবেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স থ ন য় সরক র র র স প র শ কর ছ ব যবস থ মন ত র র জন য পর য য় সদস য উপজ ল প রসভ
এছাড়াও পড়ুন:
ফরিদপুর জেলা এনসিপি’র কমিটি গঠনের দায়িত্বে মহিলা আ’লীগ সভাপতি মেয়ে
ফরিদপুরে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এর কমিটি গঠনের দায়িত্ব পেয়েছেন জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহ্মুদা বেগমের মেয়ে সৈয়দা নীলিমা দোলা।গত মঙ্গলবার এনসিপির সদস্যসচিব আক্তার হোসেন ও মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহ স্বাক্ষরিত এক চিঠি থেকে এ তথ্য জানা গেছে। ওই চিঠিতে ফরিদপুর অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক করা হয়েছে মো. আব্দিুর রহমানকে এবং সংগঠক করা হয়েছে মো. রাকিব হোসেনকে।
এছাড়া ফরিদপুর অঞ্চলের পাঁচটি জেলা, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, রাজবাড়ী জেলার দু’জন করে ব্যক্তিকে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
ফরিদপুর জেলার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে যে দু’জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তাদের একজন হলেন সৈয়দা নীলিমা দোলা। তিনি জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহ্মুদা বেগমের মেয়ে এবং জেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোহাম্মদ নাসিরের ভাগনি। দোলার বাবা সৈয়দ গোলাম দস্তগীর পেশায় ব্যবসায়ী।
সৈয়দা নীলিমা ২০১৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংগীত বিভাগে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি কিছুদিন একটি মোবাইল ফোন কোম্পানিতে চাকরি করেন। বর্তমানে ‘সিনে কার্টেল’ নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সত্ত্বাধিকারী।
এ বিষয়ে সৈয়দা নীলিমা দোলা বলেন, ‘আমার পরিবারের সদস্যদের আওয়ামী রাজনীতি করা সংক্রান্ত কিছু পোস্ট আপনাদের সামনে আসতে পারে। আমি নিজে এর একটা ব্যাখ্যা রাজপথের সহযোদ্ধাদের দিয়ে রাখতে চাই। আমি ১০ বছর ধরে আওয়ামী ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলন করছি। নো মেট্রো অন ডিইউ মুভমেন্ট, রামপাল বিরোধী আন্দোলন, ডিএসএ বাতিলের আন্দোলন, সুফিয়া কামাল হলকে ছাত্রলীগ মুক্ত করাসহ অন্যান্য সকল আন্দোলনে আমি পরিচিত মুখ। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আমার লেখালেখিও পুরনো। ২০১২ সালে পরিবার ছাড়ার পর রাজপথই আমার আসল পরিবার। জুলাইয়ে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া অন্যতম মামলা তাহির জামান প্রিয় হত্যা মামলার একজন প্রত্যক্ষদর্শী আমি।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরাসরি ছাত্রলীগ করে অনেকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত হয়েছেন। আমি কখনও ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম না, তাই আমার নাগরিক কমিটির সদস্য হতে বাধা কোথায়? এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা জেনে-বুঝে এবং আমি ‘লিটমাস’ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরই আমাকে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য করা হয়েছে।’
আওয়ামী লীগ নেত্রীর মেয়ে দায়িত্ব পেয়েছেন জেলার এনসিপি কমিটি গঠনে-এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফরিদপুর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব সোহেল রানা বলেন, ‘তার (সৈয়দা নীলিমা) পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড আওয়ামী লীগ। আমরা দেখেছি, গত জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে তার মামা গোলাম নাসির কিভাবে আমাদের ওপর নির্বিচার গুলি ছুড়েছিল। তার মায়ের কর্মকাণ্ডও আমাদের অজানা নয়।’
সৈয়দা নীলিমা দোলার সঙ্গে আমাদের পরিচয় পর্যন্ত নেই মন্তব্য করে সোহেল রানা বলেন, ‘আসলে দায়িত্ব দেওয়ার আগে সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করে নেওয়া হলে ভাল হতো। যাচাই-বাছাই করা হলে এ রকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না।’