হাসপাতালে বা মেডিকেল কলেজে দলীয় রাজনীতি মানুষের পছন্দ নয়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জরিপ বলছে, দেশের ৭৫ শতাংশ মানুষ মনে করেন, চিকিৎসক, মেডিকেল শিক্ষক, নার্স বা অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের কর্মস্থলে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করা উচিত নয়।

বিবিএসের করা স্বাস্থ্য খাতবিষয়ক জনমত জরিপে মানুষের এই মতামত উঠে এসেছে। গত সপ্তাহে বিবিএসের পক্ষ থেকে জরিপের প্রাথমিক প্রতিবেদন সংস্কার কমিশনের সদস্যদের দেওয়া হয়। বিবিএস ৬৪ জেলার শহর ও গ্রামের ৮ হাজার ২৫৬টি পরিবারের ওপর জরিপ করেছে। জরিপে প্রতিটি পরিবার থেকে ১৮ বছর বা এর বেশি বয়সী একজন নারী বা পুরুষের মতামত নেওয়া হয়েছে।

জনমতের সঙ্গে আমি শতভাগ একমত। চিকিৎসকেরা হাসপাতালে বা মেডিকেল কলেজে রাজনীতি করলে হাসপাতালে সেবার মান পড়ে যায়, ঝুঁকি বাড়ে রোগীদের। আবু জামিল ফয়সাল, জনস্বাস্থ্যবিদ

মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ, নার্সিং কলেজসহ স্বাস্থ্যবিষয়ক বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থায় (বিএমআরসি, বিএমডিসি) দলীয় রাজনীতি প্রবলভাবে প্রভাব বিস্তার করে আছে। জ্ঞান, পাণ্ডিত্য, দক্ষতা বা যোগ্যতার চেয়ে নিয়োগ বা পদোন্নতিতে বা গুরুত্বপূর্ণ পদে দলীয় পরিচয় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। চিকিৎসকদের মধ্যে এখন প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রতাপ নিয়ে আছে বিএনপি-সমর্থিত চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) এবং জামায়াত-সমর্থিত চিকিৎসকদের সংগঠন ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরাম (এনডিএফ)। আগস্টে সরকার পরিবর্তনের আগে স্বাস্থ্য খাতে একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল আওয়ামী লীগ-সমর্থিত চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ)। তাঁদের অনেকেই এখন কোণঠাসা হয়ে আছেন। আওয়ামী লীগের সর্বশেষ ১৫ বছরের শাসনামলে অনেক যোগ্য চিকিৎসক ও শিক্ষক যথাস্থানে বসতে পারেননি ড্যাব বা এসডিএফের সদস্য হওয়ার কারণে।

জানতে চাইলে জনস্বাস্থ্যবিদ আবু জামিল ফয়সাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘জনমতের সঙ্গে আমি শতভাগ একমত। চিকিৎসকেরা হাসপাতালে বা মেডিকেল কলেজে রাজনীতি করলে হাসপাতালে সেবার মান পড়ে যায়, ঝুঁকি বাড়ে রোগীদের। একইভাবে নানা ধরনের ঝুঁকিতে পড়ে যায় শিক্ষার্থীরা। এর প্রভাব পড়ে মেডিকেল শিক্ষার ওপর, শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার ফলাফলের ওপর।’

জরিপে কী পাওয়া গেছে

জরিপকারীরা মানুষের কাছে চিকিৎসক, মেডিকেল শিক্ষক, নার্স ও অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের নিজ কর্মস্থলে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকা উচিত কি না, তা জানতে চেয়েছিলেন। জরিপ ফলাফলে দেখা গেছে, ৭৫ দশমিক ৬ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, তাঁরা কর্মস্থলে চিকিৎসকসহ সব ধরনের স্বাস্থ্যকর্মীর রাজনীতির বিপক্ষে। রাজনীতির পক্ষে মত দিয়েছেন ২১ দশমিক ৭ শতাংশ উত্তরদাতা। এ বিষয়ে কোনো কিছু জানেন না এমন বলেছেন ২ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ। অন্যদিকে এ ব্যাপারে কোনো উত্তর দিতে রাজি হননি শূন্য দশমিক ১ শতাংশ মানুষ।

স্বাস্থ্য পেশাজীবীদের রাজনীতির বিপক্ষে গ্রামের চেয়ে শহরের মানুষের হার বেশি। শহরের ৭৭ দশমিক ১ শতাংশ মানুষ রাজনীতি চান না। গ্রামে তা ৭৪ দশমিক ৯ শতাংশ। রাজনীতির বিপক্ষে এই মনোভাব নারী ও পুরুষের মধ্যে প্রায় সমান। বয়সের ক্ষেত্রে দেখা যায়, ১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সীরা তুলনামূলকভাবে বেশি রাজনীতির বিপক্ষে।

কর্মক্ষেত্রে চিকিৎসক বা অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের রাজনীতির বিরুদ্ধে মত দিয়েছেন বরিশালের ৮৫ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ। এই হার সবচেয়ে কম রাজশাহী বিভাগে, ৬৯ দশমিক ৭ শতাংশ। যাঁরা কখনো স্কুলে যাননি, যাঁরা অল্প শিক্ষিত অথবা যাঁরা স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী—সব ধরনের মানুষই রাজনীতির বিপক্ষে। একইভাবে মতামত জানতে কৃষিকাজ, ব্যবসা, সরকারি চাকরিজীবী, বেসরকারি চাকরিজীবী, শিক্ষক, শ্রমিক, শিক্ষার্থী, বেকার, অবসরপ্রাপ্ত, গৃহিণীসহ অনেক পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলেন জরিপকারীরা। সব পেশার মানুষই কর্মক্ষেত্রে চিকিৎসক ও অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের রাজনীতির বিপক্ষে মতামত দিয়েছেন। এর মধ্যে সরকারি চাকরিজীবীদের ৮৫ শতাংশ বলেছেন, কর্মক্ষেত্রে তাঁরা চিকিৎসক ও অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের রাজনীতির বিপক্ষে। অন্যদিকে এই হার সবচেয়ে কম বেসরকারি চাকরিজীবীদের মধ্যে। তাঁদের ৭১ দশমিক ৯ শতাংশ চিকিৎসকদের রাজনীতির বিপক্ষে।

চিকিৎসক ও অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের রাজনীতি এবং বিবিএসের জরিপের ফলাফল সম্পর্কে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যক্ষ আবু মুহাম্মদ জাকির প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি উত্তরদাতাদের মতামতের সঙ্গে শতভাগ সহমত পোষণ করি। অতীতে সেবাপ্রতিষ্ঠানে দলীয় রাজনীতির মারাত্মক অভিজ্ঞতা আমাদের হয়েছে। রাজনীতি করলে করতে হবে হাসপাতাল, ক্লিনিক বা মেডিকেল কলেজের বাইরে। এটা যেন আর না হয়, সেই সুপারিশ আমরা সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে দেব।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম ড ক ল কল জ চ ক ৎসকদ র চ ক ৎসক ও চ কর জ ব ব ব এস মত মত সরক র দশম ক

এছাড়াও পড়ুন:

উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হওয়া ভবনটি ছিল চিকিৎসকদের হোস্টেল: পুলিশ

ভারতের গুজরাট রাজ্যের আহমেদাবাদ থেকে যুক্তরাজ্যের লন্ডনগামী উড়োজাহাজটি একটি আবাসিক এলাকায় চিকিৎসকদের হোস্টেলের ওপর বিধ্বস্ত হয়েছে।

আহমেদাবাদ পুলিশের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এএনআইকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

জ্যেষ্ঠ ওই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, আহমেদাবাদ থেকে লন্ডনের গ্যাটউইক বিমানবন্দরের উদ্দেশে উড্ডয়ন করা উড়োজাহাজটি চিকিৎসকদের একটি হোস্টেলে বিধ্বস্ত হয়েছে।

ওই কর্মকর্তা বলেন, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসের কর্মী এবং অন্য বেসামরিক কর্মীরা কয়েক মিনিটের মধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে গেছেন। এখনো উদ্ধারকাজ চলছে।

এয়ার ইন্ডিয়ার এআই ১৭১ ফ্লাইটটি আহমেদাবাদের সরদার বল্লভভাই প্যাটেল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে লন্ডনের গ্যাটউইক বিমানবন্দরের উদ্দেশে যাচ্ছিল। উড়োজাহাজটি বেলা ১টা ৩৮ মিনিটে সরদার বল্লভভাই প্যাটেল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন করেছিল।

দুর্ঘটনায় কতজন হতাহত হয়েছেন, তা এখনো নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। যে বাড়ির ওপর বিধ্বস্ত হয়েছে, সেখানে কেউ হতাহত হয়েছেন কি না, তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।

এক কর্মকর্তা জানান, আহমেদাবাদ থেকে লন্ডনের (গ্যাটউইক) উদ্দেশে ১টা ৩৮ মিনিটে উড্ডয়ন করে উড়োজাহাজটি। উড্ডয়নের পাঁচ মিনিট পরই মেঘানি নগরের একটি আবাসিক এলাকায় চিকিৎসকদের হোস্টেল ভবনে এটি বিধ্বস্ত হয়।

উড়োজাহাজের প্রধান পাইলট ছিলেন ক্যাপ্টেন সুমিত সাবহারওয়াল ও সহকারী পাইলট ছিলেন ক্লাইভ কুন্ডার। প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উড্ডয়নের পরপরই বিমানে বড় ধরনের যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়, যে কারণে দ্রুত নিচে নামতে গিয়ে উড়োজাহাজটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে।

ফ্লাইট সেফটি বিশেষজ্ঞ মার্কো চ্যান জানিয়েছেন, উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হওয়ার সময় আবহাওয়া স্থিতিশীল ও আকাশ পরিষ্কার ছিল।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • উদ্ধার হলো এয়ার ইন্ডিয়ার বিধ্বস্ত উড়োজাহাজের ব্ল্যাক বক্স
  • মুসলিম নারী চিকিৎসকেরা হারিয়ে গেলেন কেন
  • চিকিৎসকদের হোস্টেলে বিধ্বস্ত হয়েছিল ভারতের বিমানটি
  • উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হওয়া ভবনটি ছিল চিকিৎসকদের হোস্টেল: পুলিশ