যে কারণে স্টার্ক নেই চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে
Published: 27th, February 2025 GMT
আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে এবার মাঠে নামতে পারেননি মিচেল স্টার্ক। প্রাথমিক স্কোয়াডে নাম থাকলেও টুর্নামেন্ট শুরুর আগে সরে দাঁড়ান এই বাঁহাতি পেসার। সরে যাওয়ার কারণ তখন প্রকাশ করেননি এই ৩৫ বছর বয়সী অজি। তাতে তৈরী হয়েছিল ধোঁয়াশা। তবে অনেক ক্রিকেট বিজ্ঞই ধারণা করেছিলেন চোটের কারণেই সরে যেতে হয়েছিল স্টার্ককে। অবশেষে স্টার্ক এক পডকাস্টে কথা বলায়, সেই ধারনা সত্য হলো। তবে সঙ্গে দিয়ে গেল কিছু প্রশ্নের জন্ম!
স্টার্ক ছাড়াও এবারের আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে নেই অস্ট্রেলিয়ার অন্য দুই পেসার প্যাট কামিন্স ও জশ হ্যাজেলউড। চোটের কারণে অধিনায়ক কামিন্স ও হ্যাজলউডের না খেলা মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায় বেশ আগেই। সেটা আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দেয় ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়াও। তবে স্টার্ক ব্যক্তিগত কারণের সরে যাওয়ার কথা বলেছিলেন।
অবশেষে এক পডকাস্টে নিজের অনুপস্থিতির কারণ নিয়ে কথা বলেছেন স্টার্ক। বলেন, গোড়ালির ইনজুরিতে আছেন তিনি। ভারতের বিপক্ষে বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফির সময় ব্যথা সত্ত্বেও খেলেছিলেন। পডকাস্টে স্টার্ক বলেন, “কয়েকটি কারণ আছে না খেলার। কিছু ব্যক্তিগত কারণও আছে। বোর্ডার-গাভাস্কার টেস্ট সিরিজ চলার সময়েই আমার গোড়ালিতে কিছুটা ব্যথা ছিল। সেটা ঠিক করা দরকার। সামনে আমাদের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল এবং তারপর ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর রয়েছে।”
আরো পড়ুন:
পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ পরিত্যক্ত, বাংলাদেশের পকেটে ১ পয়েন্ট
নিয়ম রক্ষার ম্যাচে বাংলাদেশ যেখানে এগিয়ে!
টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল বেশ গুরুত্বপূর্ণ অস্ট্রেলিয়ার জন্য। সাদা পোষাকে সেরা হতে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে না খেলার যুক্তিটা শক্তিশালী। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাপারটা এনে কিছুটা লেজে গোবর করে ফেললেন স্টার্ক। ঢাল হিসেবেই এই সফরকে টেনে আনা। কারণ, বর্তমানের খর্ব শক্তির ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে যে অজি সেরা দলটা না খেললেও চলে।
স্টার্ক এর পর যা বললেন তাতেই বের হয়ে আসে থলের বিড়াল। এই বাঁহাতি পেসার জানান আইপিএলের আগে নিজেকে তিন ফিট করতে চেয়েছিলেন! স্টার্ক বলে, “আইপিএলের কিছু ম্যাচও আছে, তবে আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো টেস্ট ফাইনাল। শরীর ঠিক রাখা, আগামী কয়েক মাস কিছু ম্যাচ খেলা এবং টেস্ট ফাইনালের জন্য প্রস্তুত হওয়া। আমরা পরপর দ্বিতীয়বার এটি জয়ের সুযোগের সামনে রয়েছি।”
ঢাকা/নাভিদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চ য ম প য়নস ফ ইন ল
এছাড়াও পড়ুন:
নোয়াখালীর কৃষকেরা কেন হাইব্রিড ধানবীজ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন
দুই একর জমিতে জিংকসমৃদ্ধ ব্রি-৭৪ জাতের ধান চাষ করেছেন নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার পূর্ব চরবাটা এলাকার কৃষক মো. মোস্তফা। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট-ব্রি উদ্ভাবিত এই জাতের প্রতি হেক্টরে ফলন হয়েছে ৯ দশমিক ২৩ মেট্রিক টন, যা বাজারে থাকা যেকোনো হাইব্রিড ধানের চেয়ে বেশি।
নিজের খেতে চোখজুড়ানো সোনালি ধান দেখে অনেক বেশি উচ্ছ্বসিত কৃষক মোস্তফা। কারণ, বাজার থেকে কেনা হাইব্রিড ধান থেকে বীজ করা যায় না। কিন্তু ব্রি উদ্ভাবিত এই ধান থেকে অনায়াসে বীজ তৈরি করতে পারবেন তিনি। এতে থাকবে না বীজ কেনা নিয়ে দুশ্চিন্তা। সেই সঙ্গে ধানগুলো জিংকসমৃদ্ধ হওয়ায় পরিবারের জিংকের ঘাটতিও দূর হবে। মোস্তফা বলেন, আগামী দিনে তিনি আরও বেশি পরিমাণ জমিতে এই ধান চাষ করবেন।
মোস্তফার মতো একই এলাকার আরেক কৃষক ওমর ফারুকও বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট(ব্রি) উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান ব্রি-৯২ চাষ করেছেন দুই একর জমিতে। বীজ ও সারসহ এ পর্যন্ত তাঁর খরচ হয়েছে ৬২ হাজার টাকা। খেতের ধান এরই মধ্যে পাকা শুরু করেছে। ফলনের যে অবস্থা দেখছেন, তাতে মনে হচ্ছে, একরে ফলন হবে কমপক্ষে ১৭০ মণ। যার বাজারমূল্য দেড় লাখ টাকার বেশি।
ওমর ফারুকের খেতে ব্রির এই উচ্চ ফলনশীল ধানের আবাদ দেখে এরই মধ্যে আশপাশের এলাকার অনেক কৃষক যোগাযোগ করেছেন বীজ নেওয়ার জন্য। কারণ, তাঁরা হাইব্রিড চাষ করে ঝুঁকিতে পড়তে চান না। নিজের বীজে নিজেই স্বয়ংসম্পন্ন হতে চান। তাই ওমর ফারুক ঠিক করেছেন, উৎপাদিত ধান থেকে ২৫ মণ রেখে দেবেন বীজের জন্য। এই বীজ বিক্রি করে বাড়তি আয় হবে তাঁর।
শুধু কৃষক হাজি মোস্তফা কিংবা ওমর ফারুকই নন, নোয়াখালীর সুবর্ণচরসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলার কৃষকেরা চলতি বোরো মৌসুমে ব্রি উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান চাষ করে সফলতার মুখ দেখেছেন। পাচ্ছেন হাইব্রিড ধানের চেয়েও বেশি ফলন। এর মধ্যে মোহাম্মদপুর গ্রামের কৃষক মাহফুজা বেগম ও আশরাফ হোসেন দম্পতির খেতে চাষ করা ডায়াবেটিক রোগীদের সহনীয় ব্রি-১০৫ জাতের ধানের ফলন পাওয়া গেছে হেক্টরপ্রতি ৮ দশমিক ২ টন, যা বাজারের হাইব্রিড বীজের সমান। এই ধানেরও বীজ সংরক্ষণ করতে পারবেন কৃষকেরা।
চলতি বোরো মৌসুমে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বৃহত্তর নোয়াখালী অঞ্চলে নতুন জাতের ব্রি ধানের ৪৯০টি প্রদর্শনী খামার করেছে। পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন-পিকেএসএফের স্থানীয় সহযোগী প্রতিষ্ঠান সাগরিকা সমাজ উন্নয়ন সংস্থার মাধ্যমে এসব প্রদর্শনীতে ব্রি উদ্ভাবিত ৮ জাতের ধান চাষ করা হয়েছে। এই জাতের ধানগুলো উচ্চ ফলনশীল, রোগ প্রতিরোধী এবং বিভিন্ন পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ।
কৃষকেরা জানান, এত দিন তাঁরা বাজার থেকে বিভিন্ন কোম্পানির হাইব্রিড ও দেশীয় উফশী (উচ্চ ফলনশীল) জাতের ধানের বীজ কিনে আবাদ করে আসছেন। এবার এসবের বাইরে ব্রি উদ্ভাবিত উফশী ২৮, ২৯, ৫০ ও ৫৫ ধান আবাদ করেছেন অনেকে। এর মধ্যে হাইব্রিড বীজের প্রতি কেজির দাম ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা। আর ব্রির উফশী ধানের বীজ ৫০-১০০ টাকায় পাওয়া যায়। এর মধ্যে প্রতি একর জমিতে চাষ করতে হাইব্রিড ধানের বীজ লাগে ৬ কেজি এবং উফশী জাতের বীজ লাগে ১০ কেজি। এসব বীজের মধ্যে হাইব্রিড প্রতি একরে উৎপাদন হয় ৯০ মণ, উফশী (উচ্চ ফলনশীল) ব্রি-২৮, ২৯, ৫০ ও ৫৫ উৎপাদন হয় ৭০-৭৫ মণ।
পিকেএসএফের কৃষি ইউনিট পরিচালিত সাগরিকা সমাজ উন্নয়ন সংস্থার কৃষিবিদ শিবব্রত ভৌমিক প্রথম আলোকে বলেন, নোয়াখালী অঞ্চলের ৯৫ শতাংশ কৃষক বোরো মৌসুমে মূলত বাজারের হাইব্রিড ধানের ওপর নির্ভর থাকেন। আর দেশীয় উদ্ভাবিত ব্রি ধান জাত আবাদ করেন মাত্র ৫ শতাংশ কৃষক। সাম্প্রতিক সময়ে দেখা গেছে, হাইব্রিড ধান রোগবালাইয়ে আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। এতে অনেক কৃষকই লোকসানের মুখে পড়ছেন। তবে এ ক্ষেত্রে ব্রি উদ্ভাবিত নতুন ব্রি-ধানগুলোর ফলন হাইব্রিডের মতো ফলন দেয় এবং কিন্তু রোগবালাই নেই বললেই চলে। এতে কৃষকের খরচ কমে। লাভ হয়, আর বীজও থাকে নিজের হাতে।
ব্রির উচ্চফলনশীল জাতের নতুন জাতের ধান চাষের কথা বলতে গিয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মীরা রানী দাশ প্রথম আলোকে বলেন, ব্রি-উদ্ভাবিত বিভিন্ন পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ ধানগুলো চাষাবাদে কৃষকদের মধ্যে তাঁরা ব্যাপক আগ্রহ লক্ষ করছেন। এর প্রধান কারণ হলো, এসব ধান চাষ করলে একদিকে পুষ্টির ঘাটতি পূরণ হবে, অন্যদিকে কৃষকেরা নিজেরা নিজেদের বীজ সংরক্ষণ করতে পারবেন। তা ছাড়া ব্রি উদ্ভাবিত এসব ধানে রোগবালাইয়ের আক্রমণ হাইব্রিডের তুলনায় কম এবং ফলন হাইব্রিডের সমান কিংবা ক্ষেত্রবিশেষে হাইব্রিড থেকেও বেশি।
এ বিষয়ে ব্রির ফেনীর সোনাগাজীর আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আমিনুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ব্রি এ পর্যন্ত ১১৫টি জাত আবিষ্কার করেছে। আগে আমাদের উদ্দেশ্য ছিল খাদ্যের অভাব দূর করা, ফলন বাড়ানো। বর্তমানে আমাদের উদ্দেশ্য খাদ্য ও পুষ্টির নিরাপত্তা। খাবার যাতে পুষ্টিমানসম্পন্ন হয়। অধিকাংশই আমিষ ও ভিটামিনের উৎস মাছ, মাংস, ডিম এবং ফলমূল। কিন্তু এসব সবাই কিনে খেতে পারেন না। যেহেতু ভাত প্রধান খাদ্য, এখন আমাদের যে জাতগুলো, এগুলো উদ্ভাবনে পুষ্টির দিকে বেশি মনোযোগ দেওয়া হয়েছে।’ নতুন জাতগুলো পুষ্টিনিরাপত্তা নিশ্চিত করবে, সেই সঙ্গে হাইব্রিডের প্রতি নির্ভরতা কমাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে তাঁরা আশা করছেন।