Samakal:
2025-09-18@02:42:15 GMT

ক্ষোভের আগুনে ঘি ঢাললেন ইয়াহিয়া

Published: 28th, February 2025 GMT

ক্ষোভের আগুনে ঘি ঢাললেন ইয়াহিয়া

শুরু হলো অগ্নিঝরা মার্চ। মহান স্বাধীনতার মাস। ১৯৭১ সালের এ মাসে আনুষ্ঠানিক ঘোষণার মাধ্যমে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ, অচিরেই যা জনযুদ্ধের রূপ লাভ করে। ওই বছরেরই ১৬ ডিসেম্বর সফল পরিণতিস্বরূপ জন্ম হয় স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের। তাই ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের প্রথম দিনটিকে বলা যায় আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের চূড়ান্ত পর্যায়ের সূচনার দিন।
রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে সংঘটিত আন্দোলনকে বলা হয় আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রভাতকাল। 

১৯৫২ সালে এ আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ পেলেও তার সূচনা হয় ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ হরতালের মাধ্যমে। অনেক লড়াই-সংগ্রামের পরিণতিতে মাত্র কয়েক মাস আগে–১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট–প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তানে সেটিই ছিল প্রথম হরতাল। ওই আন্দোলনেই এ ভূখণ্ডের বাঙালি মুসলমান তার জাতিগত পরিচয় সম্পর্কে সম্বিৎ ফিরে পায়, অনুভব করে ধর্মীয় সাজুয্য সত্ত্বেও পাকিস্তানের অন্যান্য জাতিগোষ্ঠী থেকে তারা প্রায় সব অর্থেই স্বতন্ত্র। বাঙালি হিন্দুর সঙ্গে যৌথ পথচলাও শুরু হয় তখন থেকে। ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান পেরিয়ে এ দেশের মানুষ মুখোমুখি হয় ১৯৭০ সালের জাতীয় নির্বাচনের। 

যদি বলা হয় এ নির্বাচনই ছিল অগ্নিঝরা মার্চ তথা স্বাধীনতা সংগ্রামের চূড়ান্ত পর্বের ভিত্তি তাহলে ভুল হবে না। এই নির্বাচনটিই স্পষ্ট করে দেয় ছয় দফার ভিত্তিতে বাংলার মানুষ নিজের ভাগ্য নিজে গড়তে চায়। পশ্চিম পাকিস্তানিদের সঙ্গে সংলাপ বা লড়াইয়ে কে বা কোন দল প্রতিনিধিত্ব করবে তাও এতে নির্ধারিত হয়। ওই নির্বাচনই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বাঙালির অবিসংবাদিত নেতার স্বীকৃতি দেয়। 
তৎকালীন সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খানের অধীনে অনুষ্ঠিত ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পাকিস্তানি শাসকদের হতবাক করে দিয়ে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য বরাদ্দকৃত পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের ১৬২ আসনের মধ্যে ১৬০টিতে জয় পায়। ৩০০ আসনের সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের মর্যাদা লাভ করে। সংখ্যলঘু দল হয় জুলফিকার আলি ভুট্টোর পাকিস্তান পিপলস পার্টি–পিপিপি, যদিও তারা ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ দল।

কথা ছিল, নির্বাচনে বিজয়ী দলের কাছে ইয়াহিয়া খান ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন, সেই দল অন্যদের সঙ্গে নিয়ে পাকিস্তানের জন্য সংবিধান বানাবে। কিন্তু ইয়াহিয়ার পাশাপাশি পিপিপি সংসদের অধিবেশন নিয়ে টালবাহানা শুরু করে। 

বলে রাখা দরকার, নির্বাচনটি নিয়েও সরকার ও আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলো নানা টালবাহানা করে। এটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল ১৯৭০ সালের ৫ অক্টোবর; কিন্তু আওয়ামী লীগের বিরোধিতা উপেক্ষা করে বন্যার উছিলা দিয়ে ইয়াহিয়া তাঁর নতুন তারিখ ৭ ডিসেম্বর ঠিক করেন। ডিসেম্বরে ভোলায় প্রলঙ্করী এক ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসে প্রচুর হতাহতের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার আবারও নির্বাচনটি পিছিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু শেখ মুজিবের কড়া হুঁশিয়ারির পর সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়, শুধু সিদ্ধান্ত হয় দুর্গত এলাকার ভোট হবে জানুয়ারিতে।
সুতরাং জাতীয় পরিষদের অধিবেশন নিয়ে সরকার তথা পশ্চিম পাকিস্তানের এস্টাবলিশমেন্টের গড়িমসি বিচিত্র কিছু ছিল না। শেখ মুজিব ১৫ ফেব্রুয়ারি পরিষদের প্রথম অধিবেশন চেয়েছিলেন। কিন্তু ইয়াহিয়া জানালেন, দুই অঞ্চলের নেতাদের মধ্যে শাসনতন্ত্রের মৌলিক ধারা নিয়ে সমঝোতা না হলে তিনি অধিবেশন ডাকবেন না। শেখ মুজিব বলে দিলেন, সংসদের সভাতেই দুই অঞ্চলের সদস্যরা ওই আলোচনার সুযোগ পাবেন। ভুট্টো জানালেন, মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহের আগে তাঁর দলের পক্ষে সংসদ অধিবেশনে উপস্থিত থাকা সম্ভব নয়। ইয়াহিয়া এ প্রস্তাব গ্রহণ করে ৩ মার্চ সংসদের প্রথম অধিবেশনের তারিখ ঘোষণা করলেন।

কিন্তু ১৯৭১ সালের ১ মার্চ ইয়াহিয়া খান এক বেতার ভাষণে ৩ মার্চের গণপরিষদের অধিবেশন স্থগিত করেন। তাঁর যুক্তি, পিপিপি ও অন্য কয়েকটি দল এতে যোগদান করবে না বলায় তিনি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ ঘোষণায় পুরো ঢাকা প্রচণ্ড বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। ঢাকা স্টেডিয়ামে পাকিস্তান বনাম বিশ্ব একাদশের ক্রিকেট খেলা চলছিল। সেখানকার দর্শকরাও খেলা পণ্ড করে যোগ দেন পল্টন-গুলিস্তানে বিক্ষোভরত হাজার হাজার মানুষের সঙ্গে। সেদিন দিলকুশার পূর্বাণী হোটেলে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠক ছিল। জনতা সেখানে গিয়ে জোরদার কর্মসূচি দাবি করেন। পূর্বাণী হোটেলেই শেখ মুজিব দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে ২ ও ৩ মার্চ সারাদেশে সর্বাত্মক হরতালের ডাক দেন। তিনি জানিয়ে দেন, ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) জনসভা হবে, যেখানে মূল ঘোষণা দেবেন।

সাইফুর রহমান তপন: সহকারী সম্পাদক, সমকাল

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র প রথম আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

শিবিরের এই সাফল্য জাতীয় নির্বাচনে জামায়াতকে সুবিধা দেবে কি?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) নির্বাচনে ছাত্রশিবিরের ভূমিধস জয় কাউকে কাউকে আনন্দিত করেছে, কাউকে শঙ্কিত বা চিন্তিত করেছে। তবে প্রায় সবাইকে অবাক করেছে। অবাক হওয়ারই কথা। কারণ, কিছুদিন আগে পর্যন্ত যে ছাত্র সংগঠনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিচয় দিতে পারত না, তাদের এ ধরনের জয় বিস্মিত করার মতো ব্যাপার বৈকি।

এই ফল দেখে কিছু মানুষ এ কারণে খুশি যে কয়েক দশক পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই দলের একচেটিয়া আধিপত্য শেষ হয়ে গেল। তবে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, ছাত্রশিবিরের এ জয়ে অনেকে কেন শঙ্কিত বা চিন্তিত?

সম্ভবত এর প্রধান কারণ ছাত্রশিবির জামায়াতে ইসলামীর একটি অঙ্গসংগঠন এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে জামায়াত একটি প্রশ্নবিদ্ধ রাজনৈতিক দল। ১৯৭১ সালে তাঁরা শুধু মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধেই ছিল না, দলটি ছিল পাকিস্তানের সামরিক সরকারের সমর্থনপুষ্ট। দলটি কেবল মৌখিকভাবে পাকিস্তানের পক্ষ নেয়নি, ইতিহাস বলে, তারা রাজাকার, আলবদর, আলশামস ইত্যাদি স্বেচ্ছাসেবী বাহিনী গড়ে পাকিস্তানি বাহিনীকে গণহত্যায় সহায়তা করেছিল।

আরও পড়ুনশিবিরের বিজয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে কি নতুন ধারার সূচনা হলো১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

এ কারণে তাদের বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে বিবর্জিত করা একটি স্বাধীন দেশের পক্ষে খুব স্বাভাবিক ছিল। তাই এ দেশে জামায়াতে ইসলামী স্বাধীনতার পর অন্তত প্রথম কয়েক বছর রাজনীতি করতে পারেনি। তবে ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর পটপরিবর্তন হতে শুরু করে। কয়েকটি সামরিক অভ্যুত্থানের পর জেনারেল জিয়াউর রহমানের বাংলাদেশের রাজনীতিতে আবির্ভাব সেই পরিবর্তনকে আরও বেগবান করে।

মূলত জিয়াউর রহমান নতুন দল সৃষ্টির জন্য একটি বিরাট জাল ফেলেছিলেন এবং সেই দলে সব মতের লোকদের অন্তর্ভুক্তি এই পরিবর্তনকে ত্বরান্বিত করেছিল। তিনি নিজে মুক্তিযোদ্ধা হলেও তাঁর নতুন দলে এমন ব্যক্তিদের এনেছিলেন, যাঁরা সরাসরি মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিলেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন মুসলিম লীগের শাহ আজিজুর রহমান, যিনি ১৯৭১ সালের অক্টোবরে জাতিসংঘে পাকিস্তানের পক্ষে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন পাকিস্তান সরকারের সাফাই গাওয়ার জন্য। এই আজিজুর রহমানকে জিয়াউর রহমান ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বানান।

জাকসু নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর বিজয়ীদের উচ্ছ্বাস। এখানেও শিবিরের বড় সাফল্য অর্জিত হয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ১৩ সেপ্টেম্বর

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শিবিরের এই সাফল্য জাতীয় নির্বাচনে জামায়াতকে সুবিধা দেবে কি?