পরিবার সঞ্চয়পত্র কীভাবে কিনবেন, মুনাফা কত
Published: 1st, March 2025 GMT
পরিবার সঞ্চয়পত্র মধ্যবিত্ত নারীদের মধ্যে জনপ্রিয় সঞ্চয় স্কিম। এটা থেকে প্রতি মাসেই মুনাফার টাকা তোলা যায়। মুনাফাও বেশ ভালো। ২০০৯ সালে পাঁচ বছর মেয়াদি এই সঞ্চয়পত্র চালু হওয়ার পর দেড় দশকেই সবচেয়ে জনপ্রিয় সঞ্চয় স্কিমে পরিণত হয়েছে। সবাই এই সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন না। মূলত নারীদের জন্য এই সঞ্চয়পত্র।
এবার দেখা যাক, এই সঞ্চয়পত্র কীভাবে কিনবেন, কোথায় পাওয়া যায়, মুনাফার হার কত ইত্যাদি।
মুনাফা কতএকজন ক্রেতা সর্বোচ্চ ৪৫ লাখ টাকা পর্যন্ত একক নামে পরিবার সঞ্চয়পত্র কিনতে পারবেন। অন্য সঞ্চয়পত্র যৌথ নামে কেনার সুযোগ থাকলেও পরিবার সঞ্চয়পত্র যৌথ নামে কেনা যায় না।
এই সঞ্চয়পত্রের মুনাফা দুইভাগে বিভক্ত। যেমন সাড়ে ৭ লাখ টাকা পর্যন্ত প্রথম বছর শেষে ১০ দশমিক ২০ শতাংশ; দ্বিতীয় বছর শেষে ১০ দশমিক ৭২ শতাংশ, তৃতীয় বছর শেষে ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ, চতুর্থ বছর শেষে ১১ দশমিক ৮৭ শতাংশ ও পঞ্চম বছর শেষে বা মেয়াদ পূর্ণ হলে সাড়ে ১২ শতাংশ মুনাফা মিলবে। চলমান সঞ্চয় স্কিমগুলোর মধ্যে এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মুনাফা।
অন্যদিকে সাড়ে ৭ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্রের ক্ষেত্রে মুনাফার হার প্রথম বছর শেষে ১০ দশমিক ১১ শতাংশ; দ্বিতীয় বছর শেষে ১০ দশমিক ৬২ শতাংশ, তৃতীয় বছর শেষ ১১ দশমিক ১৭ শতাংশ, চতুর্থ বছর শেষে ১১ দশমিক ৭৫ শতাংশ ও পঞ্চম বছর শেষে বা মেয়াদ পূরণ হলে ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ।
মাসিক মুনাফা নেওয়ার পর পাঁচ বছর শেষে মূল টাকা ফেরত পাওয়া যায়। মেয়াদপূর্তির আগে নগদায়ন করলে মাসিক মুনাফা কর্তন করে সরকার বাকি অর্থ ফেরত দেবে। যেমন প্রথম বছর চলাকালে এক লাখ টাকা ভাঙালে মুনাফা পাওয়া যাবে না।
কারা কিনতে পারবেনএটি বিশেষায়িত সঞ্চয়পত্র। ১৮ ও তদূর্ধ্ব বয়সের যেকোনো বাংলাদেশি নারী এই সঞ্চয়পত্র কিনতে পারবেন। যেকোনো বাংলাদেশি শারীরিক প্রতিবন্ধী পুরুষ ও নারী এবং ৬৫ ও তদূর্ধ্ব বয়সের যেকোনো বাংলাদেশি পুরুষ ও নারী চাইলে এই সঞ্চয়পত্র কিনতে পারবেন।
কোথায় পাওয়া যায়জাতীয় সঞ্চয় ব্যুরো, বাংলাদেশ ব্যাংকের শাখা, বাণিজ্যিক ব্যাংকের শাখা ও ডাকঘর থেকে এই সঞ্চয়পত্র কেনা ও ভাঙানো যায়।
মূল্যমান১০ হাজার টাকা, ২০ হাজার টাকা, ৫০ হাজার টাকা, ১ লাখ টাকা, ২ লাখ টাকা, ৫ লাখ টাকা ও ১০ লাখ টাকা।
উৎসে করজাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট বলছে, পরিবার সঞ্চয়পত্রে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত সর্বমোট বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মুনাফার ওপর ৫ শতাংশ হারে এবং এর অধিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মুনাফার ওপর ১০ শতাংশ হারে উৎসে কর কর্তন করা হয়।
অন্য সুবিধাপরিবার সঞ্চয়পত্রের বেশ কিছু সুবিধা আছে। যেমন প্রতি মাসেই মুনাফার টাকা তোলা যায়। যেকোনো সময় নমিনি বা মনোনীতক নির্বাচন, পরিবর্তন ও বাতিল করা যায়। সঞ্চয়পত্রের ক্রেতার মৃত্যুর পর নমিনি সঙ্গে সঙ্গে সঞ্চয়পত্র নগদায়ন করে টাকা উত্তোলন করতে পারেন অথবা মেয়াদ পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত যথারীতি মাসে মাসে মুনাফা উত্তোলন করতে পারেন।
হারিয়ে গেলে, পুড়ে গেলে বা নষ্ট হলে গ্রাহকের নামে বিকল্প (ডুপ্লিকেট) সঞ্চয়পত্রও ইস্যু করা হয়।
বিক্রি কমেছে ৩১%উচ্চ মূল্যস্ফীতিসহ বিভিন্ন কারণে পরিবার সঞ্চয়পত্রের বিক্রি কমেছে। মধ্যবিত্ত পরিবারের অনেক নারী বিনিয়োগকারী পরিবার সঞ্চয়পত্র ভাঙছেন। সেই সঙ্গে বিক্রিও কমেছে।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরর প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) পরিবার সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ হয়েছে ৮ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের প্রথম চার মাসে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ১২ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা। বিক্রি কমেছে ৩১ শতাংশ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ত য় বছর শ ষ ১০ দশম ক প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আবার বসার দাবি উচ্ছেদ হওয়া হকারদের
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এলাকা থেকে সম্প্রতি উচ্ছেদের শিকার হকাররা আবারও আগের জায়গায় বসার দাবি জানিয়েছেন।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে শাহবাগে বাংলাদেশ টেনিস ফেডারেশন ভবনের ২ নম্বর কক্ষে জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন বাংলাদেশ ও ভুক্তভোগী হকারদের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন বাংলাদেশ থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন মাশরুমচাষি ও ক্যাম্পাসে হকারদের কাছে মাশরুম সরবরাহকারী রুবি আক্তার। সঞ্চালনা করেন জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন ঢাকা জেলার আহ্বায়ক শবনম হাফিজ। এতে বক্তব্য দেন অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ, ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শামীম ইমাম, ঢাকা জেলা কমিটির সদস্য ইকবাল কবির ও আঁখি মনি এবং ভাসমান উদ্যোক্তা নুরুজ্জামান কমলসহ উচ্ছেদের শিকার কয়েকজন হকার।
মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন শবনম হাফিজ। তিনি বলেন, টিএসসি, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও আশপাশের এলাকাজুড়ে তিন শতাধিক হকার কাজ করতেন। গত অক্টোবরে মাদক বিক্রি ও সেবনের অভিযোগ এনে ডাকসুর সদস্যরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহায়তায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেন। এতে অসংখ্য হকার বিপর্যস্ত অবস্থার মধ্যে পড়েছেন।
শবনম হাফিজ আরও বলেন, এই মানুষগুলোকে উচ্ছেদের নামে হয়রানি করা হলো, জিনিসপত্র নষ্ট করা হলো। এই ক্ষতির জবাবদিহি চাই, ক্ষতিপূরণ চাই এবং তাঁদের যেন সসম্মানে কাজের সুযোগ দেওয়া হয়, সেটি চাই। প্রয়োজনে কর্তৃপক্ষ যেন তাঁদের পরিচয়পত্রের ব্যবস্থা করে দেয়।
আয়োজকেরা বলেন, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন ও ভুক্তভোগী হকাররা উচ্ছেদের পর নিজেদের কার কী পরিস্থিতি ও কীভাবে তাঁদের বর্তমান জীবন চলছে, তা জানতে একটি জরিপ পরিচালনা করছেন। এর আওতায় এ পর্যন্ত তাঁরা ৫০ জনের বিস্তারিত সাক্ষাৎকার নিতে পেরেছেন। এর মধ্য দিয়ে যে চিত্র বেরিয়ে এসেছে, তা তুলে ধরার লক্ষ্যেই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে।
সভাপতির বক্তব্যে রুবি আক্তার নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, করোনাভাইরাসের মহামারির সময় স্বামীর গাড়ি ভাড়ার ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেলে তাঁরা মাশরুম চাষ শুরু করেছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় চাহিদার ওপরই নির্ভর ছিল তাঁদের সংসার। হকার উচ্ছেদের পর সেই বাজার প্রায় হারিয়ে গেছে।
রুবি আক্তার বলেন, ‘একজন হকারের সঙ্গে আরও অনেকের আয় জড়িয়ে থাকে—সরবরাহকারী, পানিওয়ালা ও সবজিওয়ালা। একজনের আয় বন্ধ হলে বহু পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমরা চাই, হকারদের কাজের জায়গা আবারও ফিরিয়ে দেওয়া হোক, বসতে দেওয়া হোক আগের জায়গায়। তাতে আরও অনেক পরিবার বেঁচে যাবে।’
অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ বলেন, হকার উচ্ছেদ ডাকসুর দায়িত্ব নয়। এটি মানবিক বা ন্যায়সংগত কোনো পদক্ষেপ নয়। হকারদের সম্মানজনক ব্যবসার ব্যবস্থা করা সরকারের দায়িত্ব। এ বিষয়ে যথাযথ পরিকল্পনা করা সম্ভব।
ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শামীম ইমাম বলেন, জনগণের মৌলিক অধিকার ও কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্ব। পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করে উচ্ছেদ করা অন্যায় ও অমানবিক বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও কয়েকজন হকার নিজেদের বর্তমান সংকটের কথা জানান।
চার দফা সুপারিশঅনুষ্ঠানে আয়োজকেরা চার দফা সুপারিশ তুলে ধরেন। এগুলো হলো উচ্ছেদ করা হকারদের আগের কাজের জায়গায় ফেরার সুযোগ দেওয়া; কিছুদিন পরপর উচ্ছেদের নামে হয়রানি ও নির্যাতন বন্ধ করা এবং যাঁরা এই নির্যাতন করেছেন, তাঁদের বিচার করা; প্রয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা সিটি করপোরেশন বা নিজেদের সমবায় বা ট্রেড ইউনিয়নের পরিচয়পত্র ব্যবহার করার ব্যবস্থা করা এবং কয়েক দফায় ভাসমান উদ্যোক্তাদের হাঁড়িপাতিল ও অন্যান্য যে মালামাল প্রক্টরিয়াল টিম নিয়ে গেছে, তা দ্রুত ফেরত দিতে হবে।