ভয়ংকর সল্ট রেঞ্জ পেরিয়ে ‘আতঙ্কে’র লিবার্টি চকে
Published: 2nd, March 2025 GMT
হঠাৎই থেমে গেল ফয়সাল মুভার্স। ইসলামাবাদ টু লাহোর বিশাল মোটরওয়ে দিয়ে এতক্ষণ যে মসৃণ গতিতে ছুটছিল বাসটি, তাতে এই থেমে যাওয়া কৌতূহল জাগাতে বাধ্য।
চ্যাম্পিয়নস ট্রফির রাওয়ালপিন্ডি পর্ব শেষ হওয়ার পরদিন খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের আকোরা খট্টক শহরে আত্মঘাতী বোমা হামলায় ছয়জন নিহত হয়েছেন। ইসলামাবাদ থেকে আকোরা খট্টক সড়কপথে মাত্র দুই ঘণ্টা দূরে। পাকিস্তানের রাজধানীবাসীকে ভালোই নাড়া দিয়েছে ওই ঘটনা।
এর পরদিনই ইসলামাবাদ থেকে লাহোর যাওয়ার পথে আকস্মিক যাত্রাবিরতি মনে প্রশ্নের উদ্রেক করবেই, বিশেষ করে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি কাভার করতে পাকিস্তানে আসা বাংলাদেশি সাংবাদিকদের মতো যাঁরা এই সড়কের নিয়মিত যাত্রী নন, তাঁদের মনে। আবার কোনো অঘটন নয় তো!
বাসের অ্যাটেনডেন্টকে কারণ জিজ্ঞাসা করে কিছুটা স্বস্তি বোধ হলো। তাঁর উর্দু ও ইংরেজি মেশানো উত্তরে তাৎক্ষণিক ধরে নিলাম, কোনো একটা ভিআইপি মুভমেন্ট হবে সম্ভবত। তাঁর প্রটোকল রক্ষার্থেই এই বিরতি।
অনুমান কিংবা তাঁর কথার অনুবাদটা যে ভুল ছিল, তা বোঝা গেল প্রায় মিনিট তিরিশেক পর বাস আবার চলতে শুরু করলে। ততক্ষণে ফয়সাল মুভার্সের পেছনে আরও অনেক বাসের দীর্ঘ সারি। বিলাসবহুল বাস ফয়সাল মুভার্সের সামনে অবশ্য আর একটিই মাত্র বাস, আর তার সামনে ধীরগতিতে চলছে মোটরওয়ে পুলিশের একটি গাড়ি।
মহাসড়কের ডান দিক দিয়ে সাঁই সাঁই করে অন্য যানবাহন চলে যাচ্ছে, কিন্তু বাঁ দিকের লেন ধরে যাত্রীবাহী বাসের লম্বা বহরটাকে বেশ ধীরগতিতে চলতে হচ্ছে পুলিশের গাড়ি অনুসরণ করে। মোটরওয়ে পুলিশের গাড়ি কি তাহলে বাসগুলোকেই ‘ভিআইপি প্রটোকল’ দিচ্ছে! ব্যাপার অনেকটা সে রকমই, তবে ঠিক ‘ভিআইপি প্রটোকল’ নয়। আসলে দিচ্ছিল পাহারা।
পুলিশি প্রহরায় সল্ট রেঞ্জ পার হওয়ার অপেক্ষায় ইসলামাবাদ-লাহোর মটরওয়েতে বাসের দীর্ঘ সারি।.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসল ম ব দ
এছাড়াও পড়ুন:
বৃষ্টিস্নাত রমনায় সবুজের উল্লাস
রমনা উদ্যানের গাছগুলো বৃষ্টিতে ভিজছে, ভিজছে মাটি ও মাটির ওপরের ঘাসগুলো। বর্ষায় রমনার রূপ হয় দেখার মতো। চারদিকে কেবল সবুজ আর সবুজ। বসন্তের মতো ফুল নেই তো কী হয়েছে? আছে শ্যামল রূপ, আছে অপার স্নিগ্ধতা। বুকভরে ধুলাহীন নিশ্বাস নেওয়ার অবকাশ, প্রকৃতির উদার আমন্ত্রণ।
‘পাগলা হাওয়ার বাদল-দিনে’ ঢাকার রমনা পার্কের গাছের পাতাগুলো এখন আরও সবুজ। টলটলে জলের নয়নাভিরাম ঝিলটা টইটম্বুর। ধুলাময়লাহীন পায়ে চলার পথ। আর গাছের পাতার ফাঁকে রয়েছে অজস্র ফুল। কোনোটা লাল, কোনোটা বেগুনি আবার কোনোটা সাদা। বৃষ্টির মধুর আশকারা পেয়ে রমনা পার্কে এখন সবুজের উল্লাস।
এই পার্কটিকে ঢাকার ফুসফুস বলা হয়। এর যথেষ্ট কারণ আছে অবশ্য। এ রকম প্রগাঢ় নিরেট সবুজ এ শহরে কমই আছে। রমনা তাই ঢাকার জনজীবনের স্পন্দন। এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।
সম্প্রতি ‘বৃষ্টি নেশাভরা’ এক বিকেলে অরুণোদয় ফটক দিয়ে রমনা পার্কে প্রবেশ করলাম। অনেকে শরীরচর্চায় ব্যস্ত। কেউ দল বেঁধে করছেন, কেউ একাকী। কোনো দল ব্যায়াম করে ভোরে, কেউ আবার বিকেলে বা সন্ধ্যায়। আবার অনেকে আছেন দুই বেলাই হাঁটাহাঁটি করেন। হাঁটা সেরে কেউ কেউ লেকের পাশে এসে দুদণ্ড জিরিয়ে নেন। লেকে চলছিল বোট।
বর্ষার ফুলের উৎসব
বর্ষা এলেই রমনা পার্ক যেন রঙের নতুন ভাষা শেখে। আমাদের ঋতুচক্র অনুযায়ী, বসন্ত ও গ্রীষ্মকালেই এ দেশে ফোটে অধিকাংশ ফুল। তবে বর্ষারও নিজস্ব কিছু ফুল আছে, আর গ্রীষ্মের কিছু ফুল টিকে থাকে বর্ষা পর্যন্ত। সেদিন রমনায় গিয়ে এমনই কিছু ফুল চোখে পড়ল—বৃষ্টিভেজা পাতার ফাঁকে তাদের রং যেন আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল। মনে হলো, প্রকৃতির এই নিঃশব্দ উৎসবেও কত কথা লুকিয়ে থাকে!
রমনার গোলাপবিথি সেদিন দর্শনার্থীদের সবচেয়ে বেশি মনোযোগ কাড়ছিল। সারি সারি ঝোপে ফুটে আছে হরেক রঙের গোলাপ—লাল, সাদা, হলুদ, কমলা, গাঢ় গোলাপি। বর্ষার ভেজায় যেন আরও সতেজ, আরও তাজা হয়ে উঠেছে প্রতিটি পাপড়ি। নরম আলো আর বৃষ্টিজলে ভেজা ফুলগুলোর সৌন্দর্য মোহিত করেছে পথচলার মানুষকে। কেউ থেমে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন, কেউ ভিডিও করছেন—মুঠোফোনে বন্দী হচ্ছে বর্ষার রঙিন রমনা।
এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।