ওরিয়ন ইনফিউশনের শেয়ার কারসাজি, জড়িতদের ৫৩.২৫ কোটি টাকা অর্থদণ্ড
Published: 3rd, March 2025 GMT
পুঁজিবাজারে ওষুধ ও রসায়ন খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ওরিয়ন ইনফিউশন লিমিটেডের শেয়ার কারসাজিতে জড়িত থাকার অভিযোগে বিনিয়োগকারী শাহাদাত হোসেন ও তার ১৪ সহযোগীকে ৫৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা জরিমানা করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। কোম্পানির শেয়ার কারসাজিতে জড়িতরা ২০টি বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাব ব্যবহার করে অনৈতিকভাবে সিরিজ ট্রানজেকশন (লেনদেন) করেছেন।
২০২৩ সালের ২৯ নভেম্বর থেকে ২০২৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়ে ওরিয়ন ইনফিউশনের শেয়ার কারসাজি করে দাম বাড়ানো হয়। কোম্পানির শেয়ার কারসাজিতে শাহাদাত হোসেনের নেতৃত্বে তার সহযোগীরা একাধিক বিও হিসাব খুলে সিরিজ ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে অস্বাভাবিকভাবে দাম বাড়িয়ে মুনাফা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে বিএসইসির তদন্তে উঠে এসেছে।
পুঁজিবাজারে কয়েক বছর ধরে গুঞ্জন ছিল শাহাদত ও তার সহযোগীরা ওরিয়ন ইনফিউশনের শেয়ার নিয়ে কারসাজি করেছে। অবশেষে তদন্ত সাপেক্ষে কোম্পানির শেয়ার কারসাজির সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় এনেছে বিএসইসি।
আরো পড়ুন:
শেয়ার কারসাজি, ২৮ বিওধারীকে ১.
পুঁজিবাজারে সূচকের পতন, বেড়েছে লেনদেন
সম্প্রতি বিএসইসির খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএসইসির একাধিক কর্মকর্তা এ তথ্য রাইজিংবিডি ডটকমকে জানিয়েছেন।
গত সরকারের আমলে আইন লঙ্ঘন করা শেয়ার কারসাজিকারীদের বিরুদ্ধে তেমন কোনো কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তবে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পুনর্গঠিত বিএসইসির খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন যেকোনো ধরনের কারসাজির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে।
বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, ওরিয়ন ইনফিউশনের শেয়ার কারসাজির দায়ে সিকিউরিটির অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ এর সেকশন ১৭(ই)(৫) এর ক্ষমতাবলে আজাদ গাজীকে ৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা, জামাল হোসেনকে ৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা, মো. আবু ইউসুফকে ৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা, মো. ইমাম হোসেনকে ১ লাখ টাকা, মো. জসিম মিজিকে ৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা, মো. খোকন মিয়াকে ৬ কোটি ৭০ লাখ টাকা, মো. মাহফুজুর রহমানকে ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা, মো. সেলিমকে ১ লাখ টাকা, মো. সিরাজুল ইসলামকে ৪৩ লাখ টাকা, মো. মোহর আলীকে ৬৩ লাখ টাকা, মো. রহিম বাদশাকে ৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা, পারভেজ হোসেনকে ৫ কোটি টাকা, শাখাওয়াত হোসেনকে ১ লাখ টাকা, সাহাবুল আহমেদকে ১ লাখ টাকা এবং শাহাদাত হোসেনকে ১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সে হিসেবে আলোচ্য আইন অনুযায়ী অভিযুক্তদের মোট ৫৩ কোটি ১০ লাখ টাকা জরিমানা ধার্য করা হয়েছে।
এছাড়া কোম্পানির শেয়ার কারসাজি করার দায়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শেয়ার অর্জন, অধিগ্রহণ ও কর্তৃত্ব গ্রহণ) বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি ৪(১) এর ক্ষমতাবলে আজাদ গাজীকে ১ লাখ টাকা, জামাল হোসেনকে ১ লাখ টাকা, মো. আবু ইউসুফকে ১ লাখ টাকা, মো. ইমাম হোসেনকে ১ লাখ টাকা, মো. জসিম মিজিকে ১ লাখ টাকা, মো. খোকন মিয়াকে ১ লাখ টাকা, মো. মাহফুজুর রহমানকে ১ লাখ টাকা, মো. সেলিমকে ১ লাখ টাকা, মো. সিরাজুল ইসলামকে ১ লাখ টাকা, মো. মোহর আলীকে ১ লাখ টাকা, মো. রহিম বাদশাকে ১ লাখ টাকা, পারভেজ হোসেনকে ১ লাখ টাকা, শাখাওয়াত হোসেনকে ১ লাখ টাকা, সাহাবুল আহমেদকে ১ লাখ টাকা এবং শাহাদাত হোসেনকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সে হিসেবে আলোচ্য আইন অনুযায়ী অভিযুক্তদের মোট ১৫ লাখ টাকা জরিমানা ধার্য করা হয়েছে।
কারসাজিতে জড়িতদের পরিচিতি
ওরিয়ন ইনফিউশনের শেয়ার কারসাজি করে শাহাদাত হোসেনের নেতৃত্বে আজাদ গাজী, জামাল হোসেন, মো. আবু ইউসুফ, মো. ইমাম হোসেন, মো. জসিম মিজি, মো. খোকন মিয়া, মো. মাহফুজুর রহমান, মো. সেলিম, মো. সিরাজুল ইসলাম, মো. মোহর আলী, মো. রহিম বাদশা, পারভেজ হোসেন, শাখাওয়াত হোসেন ও সাহাবুল আহমেদ বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। এ কাজে নেতৃত্ব দেন শাহাদাত হোসেন নিজেই। শাহাদাত হোসেনকে সহযোগিতাকারী সবাই শেয়ার ব্যবসায়ী।
বিএসইসির তদন্ত কার্যক্রম
শাহাদাত হোসেন ও তার সহযোগীরা যোগসাজেস করে ওরিয়ন ইনফিউশনের শেয়ার লেনদেন করেন। কারসাজিকারীরা ২০২৩ সালের ২৯ নভেম্বর থেকে ২০২৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়ে কোম্পানিটি শেয়ার কারসাজি করে দাম বাড়ায়। এ সময়ের মধ্যে কোম্পানির শেয়ারের দাম ২৯০.৭০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭০২.৫০ টাকায় নিয়ে যাওয়া যায়। আলোচ্য সময়ে কোম্পানির শেয়ারের দাম ৪১১.৮০ টাকা বা ১৪১.৬৬ শতাংশ বেড়ে যায়।
কারসাজির পরিপ্রেক্ষিতে বিএসইসির সিদ্ধান্ত
শাহাদাত হোসেন ও তার সহযোগীরা ২০টি বিও হিসাব থেকে ওরিয়ন ইনফিউশনের বিপুল সংখ্যক শেয়ার লেনদেন করেন। এ কর্মকাণ্ডের মাধ্যেমে তারা একটি কৃত্রিম বাজার সৃষ্টি ও পুঁজিবাজারের সাধারণ বিদনিয়োগকারীদের শেয়ার ক্রয়ের জন্য প্রভাবিত করার অপপ্রয়াস চালিয়েছেন। যার ফলে শেয়ারটির বাজার মূল্য অযৌক্তিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। যেটা সুস্পষ্ট সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিনেন্স, ১৯৬৯ এর সেকশন ১৭(ই)(৫) লঙ্ঘন হয়েছে। আর সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিনেন্স, ১৯৬৯ এর সেকশন ২২ অনুযায়ী তা দণ্ডনীয় অপরাধ।
এদিকে, শাহাদাত হোসেন ও তার সহযোগীরা উল্লিখিত সময়ের মধ্যে ওরিয়ন ইনফিউশনের শেয়ার লেনদেন করে বিভিন্ন তারিখে সম্মিলিতভাবে কোম্পানির ১০ শতাংশ বা তার অধিক পরিমাণ শেয়ার ধারণ করেছেন। এর মাধ্যমে সুস্পষ্ট তারা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শেয়ার অর্জন, অধিগ্রহণ ও কর্তৃত্ব গ্রহণ) বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি ৪(১) লঙ্ঘন করেছেন। যেটা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন, ১৯৯৩ এর সেকশন ১৮ অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ।
শেয়ার কারসাজিতে জড়িতদের বক্তব্য এবং তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা থেকে প্রতীয়মান হয়, উপস্থাপিত অভিযোগসমূহ সঠিক ও ইচ্ছাকৃত এবং কর্মকাণ্ডের ফলে পুঁজিবাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, যা পুঁজিবাজার উন্নয়নের পরিপন্থী। সেহেতু অভিযুক্তদের ব্যাখ্যা কমিশনের নিকট গ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়নি। যেহেতু অভিযুক্তদের কর্মকাণ্ড কমিশনের বিবেচনায়, সিকিউরিটিজ আইন ও বিধি-বিধান পরিপালনে ব্যর্থতার জন্য, পুঁজিবাজারের শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা এবং জনস্বার্থে আলোচ্য অভিযুক্ত ব্যক্তিদের জরিমানা করা হলো।
ঢাকা/এনটি/এসবি
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স এসই ড এসই ও ত র সহয গ র ৫০ ল খ ট ক ব এসইস র ল নদ ন আল চ য অন য য় গ রহণ তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
নারী স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগে সময় বাড়াল বিএসইসি
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিটি কোম্পানিতে এক-পঞ্চমাংশ স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এর মধ্যে কমপক্ষে একজন নারী স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগে সময় বেধে দিয়েছিল বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। তবে অনেক কোম্পানি ব্যর্থ হওয়ায় এবং ওইসব কোম্পানির আবেদনের আলোকে সময়সীমা বাড়িয়েছে বিএসইসি।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) এ সংক্রান্ত একটি চিঠি ইস্যু করা হয়েছে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৪ সালের ২৯ এপ্রিল প্রকাশিত গেজেটে এক বছর সময় দিয়ে গত ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত প্রতিটি তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে কমপক্ষে এক জন করে নারী স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের জন্য সময়সীমা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অনেক কোম্পানি এ শর্ত পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। ওইসব কোম্পানি থেকে সময় বাড়ানোর জন্য আবেদন করা হয়েছে। যার আলোকে নারী স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগে আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।