দুর্বল ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় আসছে নতুন আইন
Published: 3rd, March 2025 GMT
দেশের দুর্বল ব্যাংকগুলো একীভূতকরণ বা অবসায়নসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনায় আসছে নতুন আইন। এ লক্ষ্যে ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া চূড়ান্ত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। রোববার অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে খসড়ার ওপর অংশীজনের মতামত চাওয়া হয়েছে।
খসড়ায় বলা হয়, মূলধন বা তারল্য, দেউলিয়াত্ব বা ব্যাংকের অস্তিত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ অন্য যে কোনো ঝুঁকির সময়োপযোগী সমাধানের জন্য আমানতকারীদের স্বার্থ সুরক্ষার মাধ্যমে আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে রেজল্যুশন ক্ষমতা দেওয়া প্রয়োজন। তাই এ অধ্যাদেশ চূড়ান্তের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে আরও বলা হয়, আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনের বিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হলে এই অধ্যাদেশের বিধান প্রাধান্য পাবে।
অধ্যাদেশের আওতায় দেশের দুর্বল ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনায় গঠিত হবে ‘ব্রিজ ব্যাংক’। ‘ব্রিজ ব্যাংক’ হলো এমন একটি প্রতিষ্ঠান, যা কেন্দ্রীয় ব্যাংক দ্বারা একটি ব্যর্থ ব্যাংক পরিচালনার জন্য তৈরি করা হবে। ব্রিজ ব্যাংক রেজল্যুশন প্রক্রিয়া চলাকালে নিরবচ্ছিন্ন ব্যাংকিং কার্যক্রম বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। দুর্বল ব্যাংকগুলোর একীভূতকরণ বা অবসায়নসহ অন্যান্য কার্যক্রম সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত ব্রিজ ব্যাংক ব্যর্থ প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক অস্থিতিশীলতা মোকাবিলার সময় প্রয়োজনীয় ব্যাংকিং পরিষেবা নিশ্চিত করবে।
আমানত রক্ষা করা, সরকারি আর্থিক সহায়তা ন্যূনতম পর্যায়ে রেখে সরকারি তহবিলের সুরক্ষা, ব্যাংকের সম্পদের মূল্য হ্রাস এড়ানো এবং পাওনাদারদের লোকসান ন্যূনতম পর্যায়ে রাখাসহ আর্থিক খাতে সার্বিক স্থিতিশীলতায় বেশ কিছু উদ্দেশ্যে এ আইন হচ্ছে বলে খসড়ায় উল্লেখ করা হয়।
এতে বলা হয়, এ অধ্যাদেশের অন্যান্য বিধান এবং আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন, বাংলাদেশ ব্যাংক যদি এই মর্মে সন্তুষ্ট হয় যে একটি তপশিলি ব্যাংক আর কার্যকরী নয়, অথবা কার্যকরী হওয়ার সম্ভাবনা নেই, তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংক ওই ব্যাংককে এ অধ্যাদেশ অনুযায়ী রেজল্যুশন করার সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।
এতে আরও বলা হয়, আবশ্যক বিবেচিত হলে কোনো তপশিলি ব্যাংকের ওপর আশু সংশোধনমূলক ব্যবস্থা অথবা অন্য কোনো তত্ত্বাবধানমূলক ব্যবস্থা বাংলাদেশ ব্যাংককে ওই ব্যাংকের ওপর রেজল্যুশন পদক্ষেপ গ্রহণে বাধা দিতে পারবে না। যখন বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো তপশিলি ব্যাংককে রেজল্যুশন করার সিদ্ধান্ত নেবে, তখন তা লিখিতভাবে অবহিত করবে এবং এ অধ্যাদেশের অধীনে রেজল্যুশন ব্যবস্থার বাস্তবায়ন শুরু করবে। প্রস্তাবিত অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক তৃতীয় পক্ষের কাছে রেজল্যুশন প্রক্রিয়ায় থাকা ব্যাংকের শেয়ার, সম্পদ ও দায় হস্তান্তর করতে পারবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: দ র বল ব য ক ব যবস থ আর থ ক
এছাড়াও পড়ুন:
সিআইডিতে বিচারবহির্ভূত হত্যার তদন্ত বিষয়ে আন্তর্জাতিক কর্মশালা
বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের নিরপেক্ষ তদন্ত নিশ্চিত করতে ‘সম্ভাব্য অবৈধ মৃত্যুর তদন্তসংক্রান্ত মিনেসোটা নীতিমালা’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর (ইউএনআরসি) কার্যালয় এবং বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) যৌথ আয়োজনে ৩০ ও ৩১ জুলাই ঢাকার সিআইডি সদর দপ্তরে এই কর্মশালার আয়োজন করা হয়। বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায় সিআইডি।
কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন সিআইডির প্রধান ও বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মো. ছিবগাত উল্লাহ। উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘সিআইডি এখন একটি আধুনিক, তথ্যভিত্তিক ও প্রযুক্তিনির্ভর তদন্ত সংস্থা হিসেবে গড়ে উঠছে। মানবাধিকার রক্ষা ও বিচারপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে প্রমাণনির্ভর নিরপেক্ষ তদন্ত অপরিহার্য এবং এ ধরনের আন্তর্জাতিক কর্মশালা আমাদের সে লক্ষ্যে পৌঁছাতে সহায়তা করে।’
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতিসংঘের বিচারবহির্ভূত, সংক্ষিপ্ত বা ইচ্ছামতো মৃত্যুবিষয়ক বিশেষ প্রতিবেদক মরিস টিডবল-বিন্জ। তিনি বলেন, মিনেসোটা নীতিমালা একটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মানদণ্ড, যা সন্দেহজনক মৃত্যুর নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে বিচারব্যবস্থার প্রতি আস্থা সৃষ্টি করে। উপস্থাপনায় তিনি লিবিয়া ও ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জে আইনবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের তদন্তের উদাহরণ তুলে ধরেন।
কর্মশালার শুরুতে সিআইডির ফরেনসিক বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার শম্পা ইয়াসমীন দেশের ডিএনএ ও ফরেনসিক সক্ষমতা নিয়ে আলোচনা করেন। দুই দিনব্যাপী এই কর্মশালায় অংশ নেন দেশের বিভিন্ন পুলিশ ইউনিটের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিচারক, চিকিৎসক ও ফরেনসিক সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ, মানবাধিকার সংস্থার প্রতিনিধি এবং প্রযুক্তি ও অনুসন্ধান-সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীরা।
আলোচনার মূল বিষয়গুলোর মধ্যে ছিল, আন্তর্জাতিক নীতিমালা অনুযায়ী মৃতদেহ শনাক্তকরণ (দুর্যোগে নিহত ব্যক্তি শনাক্তকরণ), নিরপেক্ষ ফরেনসিক প্রতিবেদন তৈরির কৌশল, মানবাধিকার সংরক্ষণে তদন্তকারীদের নৈতিক ও পেশাগত দিকনির্দেশনা এবং বাস্তব ক্ষেত্রভিত্তিক কেস স্টাডি উপস্থাপন।
বিশেষ অধিবেশন পরিচালনা করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মমতাজ আরা, পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক জান্নাতুল হাসান এবং সিআইডির ডিএনএ বিশ্লেষক আহমেদ ফেরদৌস। তাঁদের আলোচনায় জুলাই আন্দোলনে সংঘটিত অপরাধের তদন্তের অগ্রগতি, সীমাবদ্ধতা ও চ্যালেঞ্জও উঠে আসে।
সমাপনী দিনে বক্তারা বলেন, প্রযুক্তি, প্রশিক্ষণ এবং আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে দেশের তদন্তপ্রক্রিয়াকে আরও মানবিক, কার্যকর ও স্বচ্ছ করা সম্ভব। সিআইডির প্রধান ভবিষ্যতে ফরেনসিক সক্ষমতা সম্প্রসারণ এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
সমাপনী বক্তব্যে মরিস টিডবল-বিন্জ বলেন, আইনবহির্ভূত মৃত্যুর তদন্তে প্রযুক্তির ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভ্রাম্যমাণ ডিএনএ পরীক্ষাগার, ঘটনাস্থলে মরদেহ শনাক্তকরণ পদ্ধতি ও অন্যান্য প্রযুক্তিনির্ভর উদ্যোগে জাতিসংঘ প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে প্রস্তুত।