টলিউডের জনপ্রিয় তারকা জুটি বনি সেনগুপ্ত ও কৌশানী মুখার্জি। সিনেমায় এ জুটির রসায়নে বরাবরই মুগ্ধ হন দর্শকরা। ব্যক্তিগত জীবনেও চুটিয়ে প্রেম করছেন বনি-কৌশানী। এমনকি প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে কোনো লুকোছাপাও নেই দুজনের। সম্পর্ক নিয়ে দুজনেই বেশ খোলামেলা। সোশ্যাল মিডিয়ায় বনি-কৌশানী নিয়মিত নিজেদের ঘনিষ্ঠ ছবিও পোস্ট করে থাকেন। এই প্রেমিক যুগলের প্রশংসায় পঞ্চমুখ তাদের ভক্তরাও।

প্রায় এক দশক ধরে প্রেম করছেন বনি-কৌশানী। যার ফলে, গত কয়েক বছর ধরেই তাদের বিয়ের গুঞ্জন উড়ছে। গত বছর বনি সেনগুপ্ত বলেন, “২০২৫ সালের আগে কোনোভাবেই বিয়ে নয়। আর সেই আয়োজন অবশ্যই গ্র্যান্ড হবে। উৎসব বলা যেতে পারে। মেহেদি, সংগীত সমস্ত কিছুতে থাকবে ফিল্মি স্টাইল।”

নিজের বিয়ে নিয়ে নায়কের এই সংলাপ কলমের কালিতে আবদ্ধ, বিয়ের সানাই বাজেনি তাদের। বিয়ে নিয়ে এত আলোচনা-সমালোচনা হওয়ার পরও কেন বিয়ের পিঁড়িতে বসছেন না বনি-কৌশানী? এ নিয়ে ভারতীয় একটি গণমাধ্যম বনির মা পিয়া সেনগুপ্তর সঙ্গে কথা বলেন।

আরো পড়ুন:

বাড়ি ফিরে অঝোরে কাঁদলেন ‘সারেগামাপা’ বিজয়ী দেয়াশিনী (ভিডিও)

সারেগামাপা’র বিজয়ীরা কে কত টাকার পুরস্কার পেলেন?

ইস্টার্ন ইন্ডিয়া মোশন পিকচার্সের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন পিয়া সেনগুপ্ত। ফলে, ব্যস্ত সময় পার করতে হয় তাকে। কথার শুরুতে ছেলের বিয়ে নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করেন তিনি নিজেও। পিয়া সেনগুপ্তর ভাষায়— “ছেলেটা আমার বিয়ে করছে না। কবে করবে কে জানে?”

পিয়া সেনগুপ্তর খুব ইচ্ছা, ছেলের বিয়ে এলাহি আয়োজন করে দেবেন। কৌশানীকে নিজের সন্তানের চেয়েও বেশি ভালোবাসেন পিয়া। সব ঠিক পথেই এগোচ্ছে। কিন্তু ছেলে ও হবু পুত্রবধূর কর্মকাণ্ড দেখে নিরাশ তিনি। কিছুতেই বিয়ে করছেন না তারা। প্রতি বছর নানা বাহানা দিচ্ছেন।

পিয়া বলেন, “যখন জিজ্ঞাসা করি, ‘হ্যাঁ রে, বিয়ে করবি কবে?’ জবাবে বনি বলে, ‘এই তো পরের বছরই করব।’ কিন্তু একটা না-একটা সিনেমার কাজ চলে আসেই। আর বিয়েটা হয় না।” বছর ঘুরে যায়, পরের বছর চলে আসে। কিন্তু বনির মা পিয়ার সাধ আর মেটে না। ছেলেকে সংসারী হিসেবে দেখাও হয় না তার।

এরপর বনি সেনগুপ্তর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। এই অভিনেতা বলেন, “ওরে বাবা, আবার বিয়ের প্রশ্ন!” তারপর মা পিয়ার প্রসঙ্গ তুলতেই শান্ত স্বরে বনি বলেন, “মা অনেকদিন ধরেই চাইছেন আমি আর কৌশানী বিয়ে করে নিই। আমাদেরও তাই-ই ইচ্ছে। অনেক প্ল্যানিংও করে রাখা আছে। ডেস্টিনেশন বিয়ের কথাও ভেবে রেখেছি। কিন্তু ওই যে সিনেমার কাজ চলে আসছে, আমরা শুটিংয়ে মেতে উঠছি। আর বছর পার হয়ে যাচ্ছে।”

ঢাকা/শান্ত

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চলচ চ ত র করছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

গন্ধগোকুলের বাঁচার লড়াই

দেশের অনেক এলাকা থেকেই গন্ধগোকুল হারিয়ে গেছে; কিন্তু পাবনার বেড়া পৌর এলাকার কয়েকটি মহল্লায় এখনো এ প্রাণীর বিচরণ চোখে পড়ে। তবে আগের মতো অত বেশি দেখা যায় না। প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক সংস্থাগুলোর আন্তর্জাতিক জোটের (আইইউসিএন) তালিকা অনুযায়ী এগুলো ‘বিপদাপন্ন’ প্রাণী।

প্রাণীটির আসল নাম গন্ধগোকুল হলেও বেড়া উপজেলায় এটি ‘নেল’ নামে পরিচিত। অনেকে এগুলোকে বাগডাশও বলেন। এর শরীর থেকে পোলাও চালের গন্ধের মতো মিষ্টি গন্ধ ছড়ায়। সন্ধ্যার পর অন্ধকার নামলে পৌর এলাকার বিভিন্ন বাড়ির ঘরের চাল ও গাছের ওপর দিয়ে শুরু হয় এর চলাচল। এ সময় এর শরীরের গন্ধ উৎপাদনকারী গ্রন্থি থেকে রস নিঃসৃত হতে থাকে বলে যে স্থান দিয়েই এরা যাক না কেন, বেশ কিছুক্ষণ ধরে সেখানে সেই গন্ধ নাকে আসে। তখন মহল্লার বাসিন্দারা বুঝতে পারেন, আশপাশে হয়তো গন্ধগোকুল আছে, নয়তো একটু আগেই আশপাশ দিয়ে গেছে।

দীর্ঘদিন ধরেই গন্ধগোকুল বা নেল নামের প্রাণীটির সঙ্গে বেড়া পৌরবাসীর সম্পর্ক। বেশির ভাগ বাসিন্দার কাছেই প্রাণীটি বেশ পছন্দের। তবে অল্প কিছু মানুষ এগুলোকে অপছন্দ করেন গৃহপালিত হাঁস-মুরগি, কবুতর ধরে নিয়ে যাওয়ার কারণে। তবে গত ১০-১২ বছরের মধ্যে পৌরবাসী এই প্রাণীকে ফাঁদ পেতে ধরেছেন বা এগুলোর কোনো ক্ষতিসাধন করেছেন বলে শোনা যায় না।

বন্য প্রাণী ও পরিবেশবিশেষজ্ঞদের মতে, গন্ধগোকুল প্রকৃতির উপকারী একটি নিশাচর প্রাণী। গন্ধগোকুল ব্যাঙ, ইঁদুরসহ ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে উদ্ভিদের বংশবৃদ্ধিতে দারুণ ভূমিকা রাখে; কিন্তু ভুল ধারণার কারণে অনেকেই প্রাণীটির জীবন হুমকির দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। একটি সময় ছিল, যখন এগুলোকে দেশের প্রায় সর্বত্রই— বনাঞ্চল বা বনসংলগ্ন ঝোপঝাড় বা গ্রামাঞ্চলে দেখা যেত। তবে এখন এগুলো বিলুপ্তির পথে।

গন্ধগোকুল তাল ও খেজুরের রস পান করে, ইঁদুর, ছোট পাখি ও পোকামাকড় প্রভৃতি খেয়ে জীবনধারণ করে; কিন্তু কখনো কখনো গৃহপালিত হাঁস-মুরগি বা কবুতর ধরে নিয়ে যায় বলে মানুষ এগুলো ফাঁদ পেতে ধরে হত্যা করে। আবার অনেক সময় রাস্তা পারাপারের সময় গাড়িচাপায়ও মারা যায়। এতে এগুলোর অস্তিত্ব কিছুটা হুমকির মুখে পড়েছে। এগুলোকে বিপদাপন্ন বলা যেতে পারে।

পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গন্ধগোকুলের রয়েছে বিশেষ এক ভূমিকা। খাদ্যশৃঙ্খলের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থান প্রাণীটির। এগুলো মূলত ক্ষতিকর পোকামাকড় ও ফলমূল খেয়ে এর বীজ বিস্তারের মাধ্যমে পরিবেশের প্রচুর উপকার সাধন করে। যেমন বটের ফল বা অন্যান্য ফল যখন খায়, তখন এর মলের দ্বারা নির্গত সেই বীজগুলো সফল উদ্ভিদে পরিণত হয়। অর্থাৎ এর পেটের ভেতর দিয়ে ফলের বীজগুলো গজানোর উপযুক্ত পরিবেশ (জার্মিনেশন) পায় বলে তা পরবর্তী সময়ে বীজের অঙ্কুরোদ্‌গমে শতভাগ কার্যকর হয়ে থাকে।

বছরে সাধারণত দুবার প্রজনন করে। গর্ভধারণকাল দুই মাসের কিছু বেশি। পুরোনো গাছের খোঁড়ল, গাছের ডালের ফাঁক, পরিত্যক্ত ঘর, ধানের গোলা বা তাল-সুপারির আগায় ছানা তোলে। সাধারণত প্রতিবারই ছানা হয় তিনটি।

বেড়ার মনজুর কাদের মহিলা কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী অধ্যাপক আবদুস সালাম বলেন, ‘দেশের অনেক এলাকা থেকেই গন্ধগোকুল বিলুপ্ত হতে বসেছে। তবে বেড়া পৌর এলাকায় এগুলোর বিচরণ যেমন কিছুটা বেশি, তেমনি পৌরবাসীও এগুলোর প্রতি সহানুভূতিশীল।’

প্রাণীটির ছবি তুলে রাজশাহী বিভাগীয় বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বন্য প্রাণী পরিদর্শক জাহাঙ্গীর কবিরের কাছে পাঠালে তিনি সেটিকে ‘বাগডাশ’বলে শনাক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘প্রাণীটির অস্তিত্ব এখনো দেশের বিভিন্ন জায়গায় আছে। এর মধ্যে বেড়া পৌর এলাকায় এগুলোর বিচরণ কিছুটা বেশি বলে শুনেছি।’

বেড়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, বাগডাশ বা গন্ধগোকুল মানুষের কাছাকাছি থাকে; কিন্তু মানুষ দেখলে খুবই ভয় পায়। খুবই লাজুক স্বভাবের প্রাণী এটি। আবাসভূমি ধ্বংস ও হাঁস-মুরগি বাঁচানোর জন্য ব্যাপক নিধনের কারণে এগুলো এখন বিপন্ন। তবে প্রাণীটি কিন্তু প্রকৃতির বন্ধু। তাই সবারই উচিত এগুলোর প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া।

সম্পর্কিত নিবন্ধ