ঢাকার ধানমন্ডিতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রাফট স্টোর উদ্বোধন করল দেশের শীর্ষস্থানীয় ফ্যাশন ও লাইফস্টাইল ব্র্যান্ড আড়ং। এটি তাদের নতুন ফ্ল্যাগশিপ আউটলেট। ৬০ হাজার বর্গফুট জায়গা জুড়ে ৮তলা বিশিষ্ট এই স্টোরটি বাংলাদেশের স্থাপত্যশৈলী এবং কারুশিল্পের এক অনন্য নিদর্শন।

আড়ং জানিয়েছে, এই নতুন আউটলেট শুধু একটি ক্রয়কেন্দ্র নয়; এটি বাংলাদেশের ঐতিহ্য ও সৃষ্টিশীলতার প্রতীক। ভবনটির বিশেষ নকশা ও শিল্পসমৃদ্ধ ইন্টেরিয়র, কারুশিল্প, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির প্রতি আড়ং-এর সম্পৃক্ততার পরিচয় বহন করে।

গ্রাহকেরা প্রতিটি তলায় পাবেন অসাধারণ কিছু শিল্পকর্ম। এখানে রয়েছে চারতলা উচ্চতাবিশিষ্ট নকশিকাঁথা: স্টোরের কেন্দ্রে অবস্থিত এই চমৎকার শিল্পকর্ম বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী সূচিকর্মের মাধ্যমে আড়ং-এর গল্প তুলে ধরে।

মৃৎশিল্পের দেয়াল: মাটির তৈরি শিল্পকর্মের এক অনন্য সংগ্রহ যা ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্পের সঙ্গে আধুনিক নকশার সমন্বয় ঘটিয়েছে।

আলকেমি: তামা ও পুনর্ব্যবহৃত কাচ দিয়ে তৈরি ঝুলন্ত শিল্পকর্ম, যা আলো ও ছায়ার অপরূপ খেলা তৈরি করে।
এই আউটলেটের প্রতিটি কোনা সুন্দরভাবে সাজানো হয়েছে, যেখানে থাকবে হাতে তৈরি বিভিন্ন টেক্সটাইল ও নান্দনিক হস্তশিল্পের অনন্য সংগ্রহ; বিশেষ করে শিশুদের জন্য থাকছে একটি জাদুকরী বন থিমের প্লে গ্রাউন্ড।
এই স্টোরের সপ্তম তলায় রয়েছে অরেঞ্জ প্যারট রেস্টুরেন্ট, যেখানে পরিবেশন করা হবে সুস্বাদু বাংলাদেশি ফিউশন খাবার। 

ব্র্যাক এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তামারা আবেদ বলেন, ‘এই নতুন ফ্ল্যাগশিপ স্টোর বাংলাদেশের কারুশিল্প ও ঐতিহ্যকে বিশ্বদরবারে তুলে ধরার এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের প্রতিটি পণ্য একেকটি গল্প বলে, যা গ্রাহক ও কারুশিল্পীদের মাঝে মেলবন্ধনস্বরূপ। এই স্টোর আড়ংয়ের বিশ্বমঞ্চে এগিয়ে যাওয়ার যে অঙ্গীকার, তারই প্রতিফলন।’

আড়ং বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ সামাজিক উদ্যোগ, যা ব্র্যাক পরিচালিত। ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে আড়ং স্থানীয় কারিগরদের ক্ষমতায়ন, ঐতিহ্য সংরক্ষণ এবং নতুন ট্রেন্ড তৈরির মাধ্যমে বাংলাদেশের লাইফস্টাইল খাতের পথিকৃৎ হয়ে উঠেছে। দেশীয় সংস্কৃতির সঙ্গে আধুনিক নকশার সমন্বয়ে আড়ং বাংলাদেশের শিল্প ও কারুশিল্পের ঐতিহ্য উদ্‌যাপন করে আসছে। বিস্তারিত জানা যাবে  www.

aarong.com লিঙ্কে।

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর শ ল পকর ম

এছাড়াও পড়ুন:

তাণ্ডব হচ্ছে ডায়মন্ড নেকলেসের সবুজ লকেট

তান্ডব সিনেমা কি সত্যিই তান্ডব বইছে নাকি অশ্বডিম্ব ছাড়া কিছুই না? সবই মিডিয়ার হাইপ? মোটাদাগে তান্ডবের প্রধান দিকগুলো নিয়ে আলোচনা করা যায়। সিনেমার গল্পে দেখা যায়, প্রতিশোধ নিতে একদল গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তিদের জিম্মি করে স্বাধীনে টিম (শাকিব)। জিম্মিদের সাথে আলোচনা হবে টিভি লাইভে, যেনো দেশবাসী সরাসরি জানতে পারে। কেনো জিম্মি করলো, শুরু হয় শাকিবের গ্রামের গল্প। প্রেম ভালোবাসা, পাওয়া না পাওয়া, আশা-নিরাশা- হতাশার গল্প পরিণতির দিকে এগিয়ে যায়। এর মাঝে উঠে আসে, বেকারত্ব, মামা-চাচার জোর না থাকলে চাকরি না পাওয়ার চিত্র।  এই সমস্যার মূলে রয়েছে রাজনীতিবীদ, প্রশাসন, টিভি চ্যানেল ও বড় ব্যবসায়ীরা। এই সুবিধাবাদিশ্রেনি সিন্ডিকেট করে সব কিছু নিজেদের দখলে রাখে, বঞ্চিত হয় দেশের সাধারণ মানুষ। এই হল তাণ্ডবের গল্প। তবে গল্প এখানেই শেষ নয়, এখান থেকে শুরু মাত্র। 

সিনেমার শেষের দিকে একবার মনে হতে পারে গল্প শেষ, কিন্তু নিশোর আগমন বাড়তি টুইস্ট যোগ করে। তান্ডবের সিক্যুয়ালে শাকিব, নিশোর লড়াই বেশ জমজমাট হবে, এমন ইংগিত দেওয়া হয়েছে এতে। গল্পে সাবিলা নূরের ট্রাজেডি খুব একটা যুক্ত সঙ্গত ছিল না। পরিণতি ভিন্ন হতে পারতো। গল্পে ইমপেক্ট পড়ে নাই সিয়ামের ক্যামিও চরিত্র। তবে সিনেমা তার  চরিত্রে সিয়াম অসাধারণ অভিনয় করেছে। অনেক তারকার ভীড়ে তান্ডবের সব আলো কেড়ে নিয়ে একাই জ্বলজ্বল করছেন শাকিব খান।  

চেনা চেনা লাগে: ক্রাইম থ্রিলার জনরার সিনেমা তাণ্ডব। গল্পে থ্রিল আছে তবে ইউনিক না। থ্রিলগুলো খানিকটা ধার করা বলা যায়। কারো কারো মনে হতে পারে,  বহু সিনেমার বহু দৃশ্যের সুষম মিশ্রণ। দৃশ্যটি দেখলে, চরিত্রের ডিটেইলটা চেনা চেনা লাগতে পারে। বিশেষ করে গল্পের শুরুতে সবাই মুখোশ পড়ে আসে। এটি বহুল প্রচারিত দৃশ্য কিন্তু ভালো লাগবে। গল্পে শাকিব খান মুখোশ পড়ে যে ভাবে হাত দিয়ে উড়ার মতো করে আসে, এই দৃশ্যও দর্শকদের আনন্দিত করেছে, সিনেমা হলে উল্লাস করেছে। তবে গল্পাংশ, চরিত্রায়ণ যেখান থেকেই মিল থাকুক না কেনো, সব মিলিয়ে সিনেমাটি দেখতে দারুণ লাগবে।

গান: তিনটি গানের মধ্যে “লিচুর বাগান” গানটি জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এই গানের বিশেষ দিক হলো, বাংলা লোকগানের আধুনিক মিউজিক আয়োজন। এটা দারুণ ব্যাপার। তবে এই ধরণের গান কোক স্টুডিও বাংলায় বহুবার ব্যবহৃত হয়েছে। গল্পের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না এই গান। যদিও গানটি মিউজিক অ্যারেঞ্জমেন্ট খুব ভালো ছিল। একটি টাইটেল ট্রাক ছিল, সেই গানের শব্দগুলো বুঝতে সমস্যা হয়েছে। রোমান্টিক গানটা  শ্রুতিমধুর ছিল।

অভিনয় ও চরিত্রায়ণ: শাকিব খান দারুণ অভিনয় করেছেন। একটা গ্রামের ছেলে আরেকটা গ্যাংস্টার। দুইটা কন্ঠ দুই রকম ছিল। বডি ল্যাগুয়েজ, হাঁটা চলা, কথা বলার ধরণে ভিন্নতা ছিল। গ্যাংস্টারে খষখষে কন্ঠ হওয়াতে চরিত্রের মধ্যে ডায়মেনশন এসেছে। শাকিব দিন দিন অভিনয়ে গড হয়ে উঠছে যেনো। সাবিলা নূর এই চরিত্রের জন্য খুবই মানানসই। এক ঝাঁক তারকা অভিনয় করেছে সিনেমাটিতে। সবাই চরিত্র অনুযায়ী ভালো অভিনয় করেছেন। তবে আলাদা করে বলতে হয় জয়া আহসানের কথা। জয়া ঠিকই নিজের চরিত্রে সেরাটা দিয়েছে, এবং তাকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে কল্পনা করার সুযোগ ছিল না। আফজাল হোসেন, শহীদুজ্জামান সেলিম, গাজী রাকায়েত, নাঈম, সালাউদ্দীন লাভলু, ফজলুর রহমান বাবু, সাইফুল জার্নাল, রোজী সিদ্দিকী নিজ নিজ চরিত্রে দারুণ। যদিও কারো কারো চরিত্র প্রস্ফুটিত হয়নি ঠিক মতো।  

সেট, লাইট, কস্টিউম: তান্ডবের সেট লাইট দারুণ। দৃশ্যে আয়োজন, আলোর ব্যবহার খুবই মানানসই। টিভি চ্যানেলের সেট বিশ্বাসযোগ্য ছিল। চরিত্রানুযায়ী পোশাক ব্যবহৃত হয়েছে। বিশেষ করে শাকিব, জয়া, সাবিলার পোশাক সুন্দর লেগেছে। অন্যান্য চরিত্রের পোশাকও ছিল দারুণ।  

আবহ সঙ্গীত, সংলাপ: সংলাপ দারুণ। কিছু কিছু গালি দর্শকদের আনন্দ দিয়েছে। গল্পের সাথে গালিগুলো যথাযথ ভাবেই মানিয়ে গেছে, তাই অশ্লীল লাগে নাই। আবহ সঙ্গীত মনে দাগ না কাটলেও খারাপ লাগে নাই। গল্পের মুড বুঝেই আবহ সঙ্গীত এগিয়ে গেছে। সংলাপে যখন দেশের কথা বলে, তখন বুকিশ লাগে নাই, শুনতে ভালো লেগেছে।

নির্মাণ: আধুনিক নির্মাণের সকল বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা গেছে। শট ডিজাইন, ট্যাকিং, ক্লোজ আপের ব্যবহারে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে পরিচালক। মুভমেন্ট শটগুলো গল্পকে গতিশীল করতে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে। জনবহুল বড় বড় দৃশ্যগুলো ঠিকঠাক তুলে আনা গেছে। 

সবশেষে: তাণ্ডব একটি গ্যাংস্টার মুভি। কতগুলো অসৎ লোকের ভাগবাটোয়ারা নিয়ে দ্বন্দ্ব। এই ধরণের মুভি গরম গরম দেখতে ভালো লাগে, বিনোদন পাওয়া যায়, সমাজ বাস্তবতার সাথে মিল পাওয়া যায় কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে কোন ইমপেক্ট পড়ে না। শেষ কথা হলো, কালচারাল ইন্ডাস্ট্রিতে বাংলা সিনেমা সোনালী অতীত পেরিয়ে এখন ডায়মন্ড যুগে প্রবেশ করেছে। তাণ্ডব  হলো সেই ডায়মন্ড নেকলেসের সবুজ লকেট।   

লেখক: লেখক ও নাট্যকার

সম্পর্কিত নিবন্ধ