ধর্ষণ ও শিশু নির্যাতনের বিচার দ্রুত করতে আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সংশোধিত আইনটি আগামী বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অনুমোদন পাবে। এতে শিশু ধর্ষণের বিচারের জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিধান রাখা হবে।

গতকাল সোমবার উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ সভা শেষে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এ সময় উপস্থিত ছিলেন। 

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, দেশে যেভাবে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন বেড়ে যাচ্ছে, সেই বিবেচনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধন করতে আইনটি সংশোধনের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। 
তিনি বলেন, মাগুরা ও বরগুনায় ধর্ষণ ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। সবকিছু বিবেচনায় রেখে ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০’-এর বেশ কিছু সংশোধন প্রস্তাব করেছে আইন মন্ত্রণালয়। প্রস্তাবগুলো যাচাই-বাছাই শেষে বৃহস্পতিবার উপদেষ্টামণ্ডলী অনুমোদন দেবে বলে আশা করছি। 

আইনটির বিষয়ে কিছু মতামত পাওয়া গেছে জানিয়ে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, সেগুলো আজ মঙ্গলবার ও আগামীকাল বুধবার যাচাই-বাছাই করা হবে। বৃহস্পতিবারের মধ্যে অধ্যাদেশ চূড়ান্ত হবে। 
ধর্ষণের বিচারের ক্ষেত্রে বিলম্বের অন্যতম কারণ পর্যাপ্ত সংখ্যক ডিএনএ ল্যাব না থাকা বলে উল্লেখ করেন সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, এই মুহূর্তে একটি ডিএনএ ল্যাব আছে ঢাকায়। চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে আরও দুটি ডিএনএ ল্যাব স্থাপন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া বিশেষ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে দ্রুত কিছু বিচারক নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। 

আইনে কী পরিবর্তন 
আইন উপদেষ্টা ড.

আসিফ নজরুল বলেন, আইনে বিচার ও তদন্তের সময় কমিয়ে আনা হচ্ছে। শুধু শিশু ধর্ষণের মামলার বিচার করার জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল স্থাপনের বিধান রাখা হচ্ছে। বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী শিশুর বয়স ১৬। 

নারী ও শিশু আদালতে ধর্ষণের মামলার জট লেগে থাকার কথা জানিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘এখানে দুই ধরনের মামলা আসছে। একটি হচ্ছে, সম্মতিসহ বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ। এগুলোর অনেক আধিক্য ছিল। বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে সম্মতিতে প্রতারণামূলকভাবে হোক বা যেভাবে হোক ধর্ষণের ঘটনাগুলোর বিচার একটি আলাদা অপরাধ। সম্মতি ব্যতিরেকে যে ধর্ষণ, সেটার ক্ষেত্রে বিচার ও তদন্তের সময় কমিয়ে আনা হচ্ছে। এ ধরনের মামলায় আমরা বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছি। এগুলো প্রয়োজনে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হচ্ছে।’ 

ধর্ষণ মামলার সংজ্ঞা পরিবর্তন করার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, শুধু পুরুষ কর্তৃক নয়, যে কোনো ব্যক্তি কর্তৃক ধর্ষণকে শাস্তিযোগ্য করা হচ্ছে। বলাৎকারকেও এখানে যুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া অন্য কোনো বস্তু (যৌনসামগ্রী ব্যবহার) ব্যবহার করা হলে; পায়ুপথ বা যে কোনোভাবে ধর্ষণ করা হলে, তাও শাস্তির আওতায় আনছি। 
চাঞ্চল্যকর ধর্ষণের ক্ষেত্রে ডিএনএ টেস্টের রিপোর্টের অপেক্ষায় না থেকে পারিপার্শ্বিকতা বিবেচনায় সাক্ষ্যর ভিত্তিতে রায় দিতে বিচারককে সুযোগ দেওয়া হবে বলে জানান আইন উপদেষ্টা। আইনের সংশোধনীতে এ ব্যবস্থাটা যুক্ত করা হবে। তিনি বলেন, ডিএনএ রিপোর্ট পাওয়ার অপেক্ষায় অনেক মামলা ঝুলে থাকত। আদালত যদি মনে করেন, মেডিকেল রিপোর্ট ও পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্যের ভিত্তিতে বিচার করা যায়, তাহলে সেটা পারবেন। ডিএনএ রিপোর্টের অপেক্ষায় থাকতে হবে না।
নতুন আইনে ধর্ষণের উদ্দেশ্যে কারও ওপর আক্রমণ করে ব্যর্থ হওয়ার পর যদি ভিকটিমকে শারীরিকভাবে ক্ষতি করা হয়, সেটাও শাস্তির আওতায় রাখা হচ্ছে বলে জানান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ভিকটিমের সুরক্ষার জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা করেছি। ধর্ষণকালে ধর্ষণ করার উদ্দেশ্যে যদি জখম করা হয়, সেটাকে শাস্তির আওতায় রেখেছি।

মাগুরায় শিশু আছিয়া ধর্ষণ ও নির্যাতনে নিহত হওয়ার ঘটনাটি প্রচলিত আইনে দ্রুত বিচার করা হবে বলে জানান আইন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘সংশোধিত আইনের সঙ্গে মাগুরায় ধর্ষণের ঘটনার সম্পর্ক নেই। মাগুরার সেই ঘটনায় কয়েক দিনের মধ্যে বিচার শুরু হয়ে যাবে এবং খুব দ্রুত বিচার শেষ করা হবে। কারণ এখানে অনেক অকাট্য প্রমাণ রয়েছে।’ 
আইনের অপব্যবহার বিষয়ে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, মিথ্যা মামলার ক্ষেত্রে কঠোর বিধানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আগে মিথ্যা মামলার ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে অভিযোগ জানাতে হতো। এ ক্ষেত্রে বিধান করা হয়েছে, বিচার শেষের পরে কোনো বিচারকের যদি মনে হয় উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মামলা দেওয়া হয়েছে, তিনি স্বপ্রণোদিত হয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আইন উপদ ষ ট ন উপদ ষ ট র জওয় ন ব যবস থ ড এনএ ন আইন র ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

ইরানের হামলায় ২০ ইসরায়েলি নিহত

ইসরায়েলের সঙ্গে ইরানের পাল্টাপাল্টি হামলা চারদিন ধরে চলছে। এসব হামলায় উভয় দেশের মধ্যে নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলছে। ইসরায়েলের জাতীয় পরিষেবা জানিয়েছে, আজ সোমবার ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে গত শুক্রবার থেকে আজ সোমবার পর্যন্ত ইসরায়েলে নিহতের সংখ্যা  ২০ জনে পৌঁছুল। আজ সোমবার এ তথ্য জানিয়েছে বিবিসি।

অন্যদিকে আল-জাজিরা বলছে, ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় রোববার পর্যন্ত ইরানে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২৪ জনে পৌঁছেছে।

ইসরায়েলের জাতীয় জরুরি পরিষেবার প্রধান ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডমের বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, মধ্য ইসরায়েলজুড়ে ইরানের হামলায় চারজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে দুইজন নারী। 

এর আগে সিএনএন ইসরায়েলের ১৫ জন নিহত হওয়ার খবর দেয়। ইসরায়েলের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম কানের খবর বলছে, বন্দরনগরী হাইফায় অন্তত দুইজন আহত হয়েছেন। এছাড়া, তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন।

রোববার ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানায়, ইরান থেকে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু হয়েছে। একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করেছে ইসরায়েল। বর্তমানে হামলা প্রতিহত করার কাজ চলছে বলে জানিয়েছে আইডিএফ।

আজ সিএনএনের এক খবরে বলা হয়েছে, তেল আবিব ও জেরুজালেমসহ ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে জরুরি সতর্ক সংকেত (সাইরেন) বাজতে শুরু করেছে। আইডিএফ সতর্ক করে বলেছে, তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পুরোপুরি অভেদ্য নয়।

সিএনএনের একজন প্রযোজক জেরুজালেমে সাইরেন এবং একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। তার তোলা ভিডিওতে আকাশে বহু ক্ষেপণাস্ত্র ছুটে যেতে দেখা গেছে।

ইসরায়েলের জরুরি পরিষেবা সংস্থা ম্যাগেন ডেভিড আদোম জানিয়েছে, তাদের দলগুলো আক্রান্ত এলাকার দিকে রওনা দিয়েছে।

সারা দেশের নাগরিকদের আশ্রয়কেন্দ্রে ঢুকতে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সেখানে থাকার আহ্বান জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেছে, বর্তমানে বিমানবাহিনী হামলা প্রতিহত করার পাশাপাশি পাল্টা হামলা চালানোর কাজ করছে।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ওয়াইনেট নিউজ জানিয়েছে, মধ্য ইসরায়েলের পেতাহ টিকভা শহরের একটি ভবনে একটি ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হেনেছে। হামলার ফলে ওই স্থানে আগুন ধরে যায়। তবে এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

এদিকে মধ্য ইরানে একাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির সেনাবাহিনী এ তথ্য জানিয়েছে। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনীর দাবি, বিভিন্ন ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হয়েছে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলি বিমানবাহিনী সফলভাবে মধ্য ইরানে অবস্থিত একাধিক স্থাপনায় আঘাত হেনেছে। আমাদের গোয়েন্দা তথ্য বলছে, এসব স্থাপনা থেকে ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হচ্ছিল।’

তবে ইসরায়েলের এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরান এখনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি।

এদিকে ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় রোববার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২৪ জনে পৌঁছেছে।

বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে ৯০ শতাংশেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক। হামলায় ১ হাজার ২৭০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।

এপির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত ১৩ জুন ইরানে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ওই হামলায় ইরানের নাতাঞ্জ ও ইসফাহান অঞ্চলের পারমাণবিক স্থাপনা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ও পারমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত হন। ইরানে বর্তমানে মসজিদ ও মেট্রো স্টেশনগুলোকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলের তিন শিশুসহ অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন। রোববার ইসরায়েল সরকারের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন।

ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ বলেছে, এছাড়া ইরানের হামলায় কমপক্ষে ৩৮৫ জন আহত হয়েছেন, যার মধ্যে সাত জনের অবস্থা গুরুতর।

এদিকে ইসরায়েলি পুলিশের বরাতে আল জাজিরা জানিয়েছে, তেল আবিবের দক্ষিণে অবস্থিত বাত ইয়াম শহরে ৬ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুই শিশু রয়েছে। এছাড়া সাতজন এখনও নিখোঁজ। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছেন জরুরি সেবাদানকারীরা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ