বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনসের (বিসিপিএস) সভাপতির কার্যালয়ে বিএনপিপন্থী বলে পরিচিত কিছু চিকিৎসক তালা লাগিয়ে দিয়েছেন। প্রতিষ্ঠানটির কাউন্সিলরদের পদত্যাগ চান তাঁরা। এর পর থেকে কাউন্সিলররা কার্যালয়ে যাচ্ছেন না। এতে প্রতিষ্ঠানটিতে তৈরি হয়েছে স্থবিরতা। স্নাতকোত্তর পর্যায়ের প্রায় ১২ হাজার শিক্ষার্থী তাঁদের পরীক্ষা নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন।

আগামী ১ জুলাই ফেলো অব কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনস (এফসিপিএস) পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করা আছে। পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরি ও অন্যান্য প্রস্তুতিমূলক কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল ২ মার্চ। সভাপতির কার্যালয়সহ বিভিন্ন দপ্তর বন্ধ থাকায় এসব কাজ শুরু হয়নি। কে, কবে তালা খুলবে, তার ঠিক উত্তর কারও কাছ থেকে পাওয়া যাচ্ছে না।

বিসিপিএস স্নাতকোত্তর চিকিৎসা শিক্ষা ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করে। এখান থেকে এফসিপিএস ডিগ্রি দেওয়া হয়। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিসিপিএসের ডিগ্রিকে গুরুত্ব ও সম্মান দেওয়া হয়। দেশে মেডিকেল শিক্ষার মান নিয়ে নানা সমালোচনা হলেও বিসিপিএস মান ধরে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

গত সোমবার রাজধানীর মহাখালীতে বিসিপিএসে গিয়ে দেখা যায়, সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লা অফিসে আসেননি। বিসিপিএস ভবনের অষ্টম তলায় সভাপতির কার্যালয়ে তালা। কয়েকজন কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কিছু চিকিৎসক গত ২৫ ফেব্রুয়ারি সভাপতির কার্যালয়সহ বিভিন্ন কক্ষে তালা লাগিয়ে দেন। তাঁরা কাউন্সিলরদের পদত্যাগ করতে বলেন। এরপর থেকে সভাপতি বা বিসিপিএসের কোনো কাউন্সিলর আসছেন না।

ওই দিন অন্যদের সঙ্গে বিসিপিএসে গিয়েছিলেন সার্জন ফিরোজ কাদের। যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি কোনো দল বা গোষ্ঠীর হয়ে কথা বলছি না। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে এবং ভবিষ্যতে পরীক্ষার কাজে কোনো ব্যাঘাত না ঘটে, সে জন্য আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম।’ ওই দিনের ঘটনার ছবিতে ফিরোজ কাদেরসহ যেসব চিকিৎসককে দেখা যায়, তারা বিএনপিপন্থী চিকিৎসক হিসেবে পরিচিত। একাধিক চিকিৎসক সংগঠনের সঙ্গে কথা বলে তাদের পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

বিসিপিএস স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। এর নীতি ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী বিসিপিএস কাউন্সিল। কাউন্সিলের সদস্য ২০ জন। চারজন সদস্য সরকারের মনোনীত। অপর ১৬ জন বিসিপিএসের সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত। প্রতি চার বছরের জন্য আটজন করে নির্বাচিত হন। এ বছর আটজনের মেয়াদ শেষ হয়েছে। সেই আট কাউন্সিলর পদে নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছিল। এরই মধ্যে বাকি আটজনের পদত্যাগের জন্য চাপ দেওয়া হয়। ২৫ ফেব্রুয়ারির পরই বাকি সবাই পদত্যাগপত্র জমা দেন।

এখন সরকারকে অর্থাৎ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে। রশীদ-ই-মাহবুব, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি

পদত্যাগপত্র জমা দেওয়া কাউন্সিলরদের মধ্যে আছেন স্নায়ুবিশেষজ্ঞ ও নিউরোসায়েন্সেস ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক কাজী দীন মোহাম্মদ, শিশুরোগবিশেষজ্ঞ ও ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিশু বিভাগের সাবেক প্রধান আবিদ হোসেন মোল্লা, ঢাকা মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক টিটু মিয়া, স্বাস্থ্যসেবা অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক এ বি এম খুরশীদ আলম, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মাকসুদুল আলম, ইমতিয়াজ ফারুক, বিল্লাল আলম, নূর হোসেন ভূঁইয়া শাহীন। তবে তাঁদের পদত্যাগপত্র কেউ গ্রহণ করেননি।

পদত্যাগকারী চিকিৎসকদের কেউ কেউ ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে স্বাস্থ্য খাতের সরকারি সংস্থায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন। তাঁরা পেশাদার চিকিৎসক হিসেবে সুপরিচিত। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কেউ কেউ বলছেন, বিসিপিএসে যে পরিবর্তনই আসুক না কেন, প্রতিষ্ঠানটিকে সক্রিয় করা দরকার এবং গুণগত মানও বজায় রাখতে হবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিসিপিএসের একজন কর্মকর্তা গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ১ জুলাই এফসিপিএস পরীক্ষার আগে প্রায় তিন হাজার শিক্ষার্থীর বেশ কয়েক ধরনের ওয়ার্কশপ ও থিসিস উপস্থাপন শেষ হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু তা হয়নি। সার্বিকভাবে পরীক্ষা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এসব ছাড়াও বিসিপিএসের দৈনন্দিন অনেক কাজ বন্ধ আছে।

ঘটনার ব্যাপারে প্রবীণ চিকিৎসক ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক রশীদ-ই-মাহবুব প্রথম আলোকে বলেন, এখন সরকারকে অর্থাৎ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব স প এস র র পদত য গ পর ক ষ র চ ক ৎসক সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইসরায়েলের হামলা

রবিবার বিকেল থেকে ইরানজুড়ে নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। সামরিক স্থাপনার পাশাপাশি ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।

রবিবার রাতে ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইদ খাতিবজাদেহ ইসরায়েলি হামলার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে তিনি জানান, রবিবার রাজধানী তেহরানে ইসরায়েলি হামলায় ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খবর তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলুর।

এক্স-পোস্টে সাইদ বলেছেন, “ইসরায়েলের অপরাধী শাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঠিক বিপরীতে অবস্থিত ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবনে ইচ্ছাকৃত এবং নির্মম হামলা চালিয়েছে।”

আরো পড়ুন:

ইসরায়েলের নতুন হামলায় ইরানের আইআরজিসির গোয়েন্দা প্রধান নিহত

ইসরায়েলে ৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল ইরান, তেল আবিব ও হাইফাতে সরাসরি আঘাত

উপ-মন্ত্রী আরো বলেন, “এই হামলায় বেশ কয়েকজন বেসামরিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন, আমার বেশ কয়েকজন সহকর্মীও আহত হয়েছেন, যাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।”

সাইদ বলেন, “এটি আরো একটি স্পষ্ট যুদ্ধাপরাধ, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি শাসকগোষ্ঠীর চলমান ও নিয়মতান্ত্রিক আগ্রাসন অভিযানের অংশ।”

এর আগে শনিবার ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তরে হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা তেহরানের অস্ত্র উৎপাদন ক্ষমতা ধ্বংস করার লক্ষ্যে ইরানের আইআরজিসি ও সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে রবিবার নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে।

বিবৃতিতে  বলা হয়, এই হামলায় ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি), গার্ডস কুদস ফোর্স এবং ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর অবকাঠামো লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আরো জানিয়েছে, ইরানজুড়ে অসংখ্য অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্রে হামলা চালানো হয়েছে। 

ইরানি বার্তাসংস্থা তাসনিম নিউজ জানিয়েছে, ইসরায়েলের এই হামলায় আইআরজিসিরি গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ কাজেমি এবং তার সহকারী হাসান মোহাকিক নিহত হয়েছেন। এছাড়া মোহসেন বাঘারি নামে আইআরজিসির আরো একজন জেনারেল নিহত হয়েছেন। এর প্রতিশোধ নিতে রবিবার রাতে ইসরায়েলে ৫০টি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও শতাধিক ড্রোন ছুড়েছে ইরান।

ইসরায়েলের ফায়ার ও রেসকিউ সার্ভিসের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, উত্তর ইসরায়েলে দুটি এবং হাইফায় একটি আবাসিক ভবনে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হানার খবর পেয়েছে তারা।

ইসরায়েলি জাতীয় জরুরি সেবা সংস্থা জানিয়েছে, হাইফায় ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে সাতজন আহত হয়েছেন। এছাড়া কিরিয়াত গাটের কাছে দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি শহরে একজন আহত হয়েছেন।

এ ঘটনায় ইসরায়েলি সেনাপ্রধান ইয়াল জামির ইরানের ওপর আক্রমণ আরো তীব্র করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। একটি বিবৃতি জারি করে ইসরায়েরি সেনাপ্রধান বলেছেন, “আমরা আমাদের অভিযান তীব্রতর করে যাব এবং এটি করে, আগামী বছরগুলোতে আমাদের নিরাপত্তা জোরদার করব। আমরা জানতাম এর একটি মূল্য দিতে হবে এবং এটিই বোঝায় যে, আমরা কেন এখনই পদক্ষেপ নিয়েছি, তা অনেক দেরি হওয়ার আগেই।”

ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুক্রবার থেকে ইসরায়েলি হামলায় ২২৪ জন নিহত এবং ৯০০ জন আহত হয়েছেন।

ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে ১৩ জন নিহত এবং ৩৭০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ