গাজীপুরে কারখানায় নিরাপত্তাকর্মীদের বেঁধে ডাকাতি, যন্ত্রপাতি লুট
Published: 19th, March 2025 GMT
গাজীপুরের শ্রীপুরে একটি কারখানায় নিরাপত্তাকর্মীদের হাত-পা বেঁধে ডাকাতি। গতকাল মঙ্গলবার রাত আড়াইটার দিকে উপজেলার তেলিহাটী ইউনিয়নের বেকাসহরা এলাকায় ইকোট্রিমস বাংলাদেশ লিমিটেডের কারখানায় এ ডাকাতির ঘটনা ঘটে।
খবর পেয়ে গতকাল রাতেই পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। মৌখিক অভিযোগ পেয়ে ডাকাতির ঘটনায় তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জয়নাল আবেদীন মণ্ডল।
কারখানাটির ব্যবস্থাপক (সাপ্লাই চেইন অ্যান্ড ওয়্যার হাউস) মিজানুর রহমান বলেন, গতকাল রাতে ৯–১০ জনের একটি ডাকাত দল সীমানাপ্রাচীর টপকে কারখানার ভেতরে ঢোকে। তারা তিন নিরাপত্তাকর্মীকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে হাত-পা বেঁধে ফেলে। পরে কারখানাটির ইউটিলিটি ভবনের দুটি দরজার তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। আরএম কেবল, ওয়েল্ডিং মেশিন ও বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি পিকআপ ভ্যানে ভরে নিয়ে চলে যায় ডাকাত দল। কারখানার ৩০ লাখ টাকার বৈদ্যুতিক তার ও যন্ত্রপাতি লুট হয়েছে।
কারখানার সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, গতকাল রাত দুইটার পর কারখানার পশ্চিম পাশের একটি দেয়াল টপকে ভেতরে প্রবেশ করে ডাকাত দল। এ সময় একজন নিরাপত্তাকর্মী এগিয়ে এলে তাঁকে দেশি ধারালো অস্ত্রের মুখে জিম্মি করা হয়। পরে আরও দুজন নিরাপত্তাকর্মী এগিয়ে আসেন, তাঁদেরও অস্ত্রের মুখে জিম্মি করা হয়। তিনজনের হাত-পা ও চোখ বেঁধে ফেলা হয়। এরপর কারখানাটির অন্য নিরাপত্তাকর্মীদের জড়ো করে বেঁধে রেখে লুটপাট শুরু করে ডাকাত দল। পরে মূল ফটক খুলে ওই পথে একটি পিকআপ ভ্যান ভেতরে প্রবেশ করে। লুটপাট করা জিনিসপত্র পিকআপে ভরে মূল ফটক দিয়েই বেরিয়ে যায় ডাকাত দল।
শ্রীপুর থানার ওসি জয়নাল আবেদীন মণ্ডল আজ বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি সেখানে গিয়ে সিসিটিভি ফুটেজ দেখেছি। এ ঘটনায় কারখানা কর্তৃপক্ষ একটি অভিযোগ দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমরা তদন্ত শুরু করেছি। মালামাল উদ্ধার ও ডাকাত দলের সদস্যদের আটকের চেষ্টা চলছে।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস
স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’
সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
অনাহারে মৃত্যু ১৫৪গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।
গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।
ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।
বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।
গাজায় স্টিভ উইটকফশুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।