জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের ৩০ শতাংশ কোটা বাতিলসহ ছয় দফা দাবিতে চট্টগ্রাম নগরে সড়ক অবরোধ করেছেন ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীরা। আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নগরের ২ নম্বর গেট এলাকায় অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করেন তাঁরা। ফলে সিডিএ অ্যাভিনিউ সড়ক বন্ধ হয়ে যায়।

এদিকে শিক্ষার্থীদের অবস্থানের ফলে কক্সবাজারমুখী একটি ট্রেনও ২ নম্বর গেট রেললাইন এলাকায় আটকে আছে। বিষয়গুলো দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ঘটনাস্থলে থাকা পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ সোলাইমান।

আজ সকালে ৩০০ থেকে ৪০০ শিক্ষার্থী ২ নম্বর গেট এলাকায় অবস্থান নেন। এ সময় তাঁরা ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে হওয়া নানা বৈষম্যের বিপক্ষে স্লোগান দিতে থাকেন। তাঁদের দাবি, গত মঙ্গলবার জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের জন্য যে ৩০ শতাংশ কোটার সিদ্ধান্ত হয়েছে, তা অবিলম্বে বাতিল করতে হবে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ২ নম্বর গেট মোড়ে সড়কের ওপরেই বসে আছেন শিক্ষার্থীরা। তাঁদের হাতে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড। ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের ব্যানারে সেখানে চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, শ্যামলী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটসহ আরও বেশ কয়েকটি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়েছেন। সিডিএ অ্যাভিনিউ সড়কের দুই পাশেই একই সময় ব্যারিকেড দিয়ে বন্ধ রাখা হয়েছে।

চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী আসিফ আহামদ বলেন, আদালতের এই রায় বাতিল করতে হবে৷ জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদটি ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য বরাদ্দ ছিল। আদালত যে রায় দিয়েছেন, সেখানে নন–টেকনিক্যালদের কোটা দেওয়া হয়েছে। এটি ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈষম্য।

শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো, জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর (টেক) পদে বাধ্যতামূলকভাবে ডিপ্লোমা প্রকৌশল ডিগ্রিধারীদের নিয়োগ দিতে হবে এবং ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরসহ দেশের সব কারিগরি পদে কেবল কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবল নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষার প্রসার ঘটাতে প্রতিটি বিভাগীয় শহরে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা প্রয়োজন, বিশেষ করে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধির জন্য। তৃণমূল পর্যায়েও কারিগরি শিক্ষার গুরুত্ব বাড়াতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক পদে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের আবেদন করার সুযোগ প্রদান করতে হবে। এ ছাড়া বেসরকারি খাতে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের জন্য একটি ন্যূনতম বেতন কাঠামো নির্ধারণ করতে হবে, যাতে তাঁরা ন্যায্য পারিশ্রমিক পান। সর্বোপরি জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ৩০ শতাংশ ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টর কোটা অবিলম্বে বাতিল করতে হবে, যেন ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের জন্য অধিক নিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি হয়।

ঘটনাস্থলে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রাম উত্তর জেলার সদস্যসচিব রইছ উদ্দিন বলেন, ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টর পদে সাধারণত নন–টেকনিক্যাল থেকে পাস করা ব্যক্তিরা যোগ দেন। জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদটি কারিগরি শিক্ষার্থীদের জন্য। নন–টেকনিক্যালদের কীভাবে কারিগরি পদে সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: দ র জন য অবস থ ন

এছাড়াও পড়ুন:

পবিত্র কোরআনে ‘রুকু’ কীভাবে এল

আমরা কোরআন তিলাওয়াত করার সময় প্রতিটি সুরার শুরুতেই আয়াত সংখ্যার সঙ্গে ‘রুকু’ সংখ্যাও লেখা দেখি। পৃষ্ঠার মাঝেও রুকু লেখা থাকে। এই রুকু মানে কী? কী কাজ এই রুকুর?

এই প্রবন্ধে রুকুর ধারণা, কোরআন তিলাওয়াতের সঙ্গে এর সম্পর্ক এবং কোরআনে রুকুর সংখ্যা নিয়ে আলোচনা করা হলো।

রুকু কী

রুকু আরবি শব্দ, যার অর্থ ‘নমন’ বা ‘বাঁকানো’। নামাজে রুকু বলতে কোমর ঝুঁকিয়ে আল্লাহর প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের অঙ্গভঙ্গিকে বোঝায়।

তবে কোরআন তিলাওয়াতের ক্ষেত্রে রুকু একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ আয়াতের সংকলনকে বোঝায়, যা তিলাওয়াতকে সংগঠিত ও সহজতর করে। এটি বিশেষ করে হাফেজদের (যাঁরা কোরআন মুখস্থ করেন) জন্য সুবিধাজনক।

ইমাম সারাখসি (মৃ. ৪৮৩ হি.) রুকুকে রাকাতের সঙ্গে সম্পর্কিত করে বলেছেন, এক রাকাতে তিলাওয়াতের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ আয়াতের সংকেত হিসেবে রুকু ব্যবহৃত হতো।কোরআন তিলাওয়াতে রুকুর ভূমিকা

রুকু নির্ধারণের উদ্দেশ্য ছিল তিলাওয়াতের সময় আয়াতের বিষয়বস্তুর ধারাবাহিকতা বজায় রাখা এবং বিরতি নেওয়ার সুবিধা প্রদান। ইসলামের প্রাথমিক যুগে, বিশেষ করে হাফেজরা তিলাওয়াতের পর নির্দিষ্ট আয়াতে এসে রুকুতে যেতেন, যা এই প্রথার উৎপত্তির ইঙ্গিত দেয়।

ঐতিহাসিকভাবে রুকু নির্ধারণের প্রথা মা-ওয়ারাউন্নাহার (বুখারা, সমরখন্দ) অঞ্চলে ব্যাপকভাবে প্রচলিত ছিল। এটি তারাবিহ নামাজের সময় কোরআন তিলাওয়াতকে সংগঠিত করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত।

ইমাম সারাখসি (মৃ. ৪৮৩ হি.) রুকুকে রাকাতের সঙ্গে সম্পর্কিত করে বলেছেন, এক রাকাতে তিলাওয়াতের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ আয়াতের সংকেত হিসেবে রুকু ব্যবহৃত হতো। অন্য একটি মত অনুসারে, হাফেজরা নির্দিষ্ট পরিমাণ তিলাওয়াতের পর রুকুতে যাওয়ার কারণে এই নামকরণ হয়েছে। (আল-সারাখসি, আল-মাবসুত, বৈরুত: দার আল-মা’রিফা)

আরও পড়ুনধীরে ধীরে কোরআন অবতীর্ণ হওয়ার কারণ৩০ মে ২০২৫কোরআনে রুকুর সংখ্যা

কোরআনে রুকুর সংখ্যা বিভিন্ন অঞ্চলে ও ঐতিহ্য অনুসারে ভিন্নতা দেখায়। প্রধানত তিনটি ধারা প্রচলিত: ৫৫৮, ৫৪০ ও ৪৮০।

৫৫৮ রুকু: বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের মুসহাফে সাধারণত ৫৫৮টি রুকু ব্যবহৃত হয়। প্রতিটি সুরায় রুকুর সংখ্যা উল্লেখ থাকে এবং আরবি অক্ষর ‘আইন’ দিয়ে রুকু চিহ্নিত করা হয়। এই চিহ্নে তিনটি সংখ্যা থাকে:

 ১. ওপরের সংখ্যা: সুরার মধ্যে রুকুর ক্রম।

 ২. মাঝের সংখ্যা: রুকুর আয়াতসংখ্যা।

 ৩. নিচের সংখ্যা: পারার (জুজ) মধ্যে রুকুর ক্রম।

 এই পদ্ধতি তিলাওয়াতকে সুসংগঠিত করে এবং হাফেজদের জন্য সুবিধাজনক। (সিদ্দিকি, এ, ২০১৭, কোরআনিক ম্যানুস্ক্রিপ্টস অ্যান্ড দেয়ার ডিভিশনস, জার্নাল অব ইসলামিক স্টাডিজ, ২৮(২), (১৪৫-১৬৭)

বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের মুসহাফে সাধারণত ৫৫৮টি রুকু ব্যবহৃত হয়। প্রতিটি সুরায় রুকুর সংখ্যা উল্লেখ থাকে এবং আরবি অক্ষর ‘আইন’ দিয়ে রুকু চিহ্নিত করা হয়।

৫৪০ রুকু: বুখারায় প্রথম রুকু নির্ধারণের সময় এর সংখ্যা ছিল ৫৪০। বুখারার মাশায়েখরা রমজানে তারাবিহ নামাজে প্রতি রাকাতে ১০টি আয়াত তিলাওয়াতের প্রথা অনুসরণ করতেন। এভাবে ৩০ দিনে কোরআনের প্রায় ৬ হাজার আয়াত তিলাওয়াত হতো। তবে দশ আয়াতের ভিত্তিতে তিলাওয়াত করলে বিষয়বস্তুর মাঝখানে বিরতি পড়ত, তাই তারা বিষয়ের ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য রুকু নির্ধারণ করেন। (রহিম বখশ, আল-খাত্ত আল-উসমানি ফি রাসমিল কোরআন, লাহোর: মাকতাবা কুদ্দুসিয়া, ১৯৮২)

৪৮০ রুকু: সিন্ধুর হাশিম থাট্টুভি কোরআনের রুকুসংখ্যা ৪৮০ নির্ধারণ করেছিলেন। তিনি সুরাভিত্তিক নয়, বরং পারাভিত্তিক রুকু নির্ধারণ করেন। প্রতি পারায় ১৬টি রুকু ধরে ৩০ পারায় মোট ৪৮০ রুকু হয়।

তিনি ‘রুকু’ শব্দের পরিবর্তে ‘মাকরা’ বা ‘মাকারি’ শব্দ প্রস্তাব করেন, যা ‘কিরআত’ (পাঠ্যাংশ) থেকে উদ্ভূত। (আজমি, এম এম, ২০০৩, দ্য হিস্ট্রি অব দ্য কোরআনিক টেক্সট: ফ্রম রেভল্যুশন টু কম্পাইলেশন, যুক্তরাজ্য: আল-কোরআন সোসাইটি)

আরও পড়ুনসহজে কোরআন বোঝার পাঁচটি কৌশল০৩ মে ২০২৫রুকুর প্রচলন

হিজাজ, আন্দালুসিয়া, মিসর, আফ্রিকা ও সিরিয়ায় রুকুর প্রচলন তেমন ছিল না। রুকুর প্রচলন মূলত মা-ওয়ারাউন্নাহার (বুখারা, সমরখন্দ), ভারতবর্ষ ও তুরস্কে ব্যাপক ছিল। ওসমানি খেলাফতের পর তুরস্কে এটা বিলুপ্ত হয়ে, তবে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে এখনো রুকুর প্রচলন আছে।

বুখারার মাশায়েখরা রমজানে তারাবিহ নামাজে প্রতি রাকাতে ১০টি আয়াত তিলাওয়াতের প্রথা অনুসরণ করতেন। তবে এভাবে তিলাওয়াত করলে বিষয়বস্তুর মাঝখানে বিরতি পড়ত, তাই তারা বিষয়ের ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য রুকু নির্ধারণ করেন।

ইমাম দানি (মৃ. ৪৪৪ হি.) তাঁর গ্রন্থ আল-বায়ান ফি আদ্দি আয়িল কোরআন-এ কোরআনের বিভিন্ন ভাগ নিয়ে আলোচনা করলেও রুকু নিয়ে বিস্তারিত বলেননি। তবে ইমাম সারাখসি এবং রহিম বখশ তাঁদের লেখায় রুকুর ঐতিহাসিক বিবরণ দিয়েছেন।

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সময়ে সাহাবিরা ১০টি আয়াত করে মুখস্থ করতেন এবং এর ব্যাখ্যা বুঝে পরবর্তী আয়াত শিখতেন, যা রুকু নির্ধারণের প্রাথমিক ধারণার সঙ্গে সম্পর্কিত। (আল-দানি, আল-বায়ান ফি আদ্দি আয়িল কুরআন, কায়রো: দার আল-মা’আরিফ)

সারকথা, রুকু কোরআন তিলাওয়াতকে সহজ ও সংগঠিত করে, বিশেষ করে হাফেজদের জন্য। এটি ইসলামের প্রাথমিক যুগ থেকে প্রচলিত একটি পদ্ধতি, যা বুখারা, সমরখন্দ ও ভারতীয় উপমহাদেশে ব্যাপকভাবে গৃহীত হয়েছে। ৫৫৮, ৫৪০ ও ৪৮০ রুকুর ধারা বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচলিত হলেও বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে ৫৫৮ রুকুই বেশি ব্যবহৃত হয়।

লেখক: খণ্ডকালীন শিক্ষক, আরবি বিভাগ, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

আরও পড়ুনযে ঘটনায় কোরআনে পূর্ণ দুটি রুকু নাজিল হয়১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সম্পর্কিত নিবন্ধ