দেশে নব্য ফ্যাসিবাদ শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জি এম কাদের)। তিনি বলেছেন, শেখ হাসিনার মতো এখনো তাঁকে ব্ল্যাকমেল করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে কারা তাঁকে ব্ল্যাকমেলের চেষ্টা করছেন, তা স্পষ্ট করেননি তিনি।

আজ শুক্রবার বিকেল পাঁচটার দিকে চার দিনের সফরে রংপুরে আসেন জি এম কাদের। রংপুর নগরের সেনপাড়ায় নিজ বাড়িতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ অভিযোগ করেন।

অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করায় তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা হয়েছে উল্লেখ করে জি এম কাদের বলেন, ‘আমি কী হঠাৎ করে এসে এমপি হয়েছি। ২০১৪ সালে নির্বাচন না করার কারণে শেখ হাসিনা আমার পেছনে সব গোয়েন্দা সংস্থাকে দিয়ে দুর্নীতি খুঁজতে লাগিয়েছিলেন। কিন্তু আমার কোনো দুর্নীতি বের করতে পারেননি। এখন দুর্নীতি বের করছে কী, আমি মনোনয়ন দিয়ে, পদ-পদবি দিয়ে ২ হাজার, ৫ হাজার টাকা নিয়েছি, এটা আমার দুর্নীতি।’

জি এম কাদের বলেন, ‘আমার মুখ বন্ধ করার জন্য শেখ হাসিনা ফ্যাসিবাদ করেছেন। নব্য ফ্যাসিবাদ এখন শুরু হয়েছে। শেখ হাসিনা যেটা করে আমাদের ঠেকানোর চেষ্টা করেছেন, ধমক দিয়ে বিভিন্নভাবে ব্ল্যাকমেল করে, এখন ওরা আমাকে ব্ল্যাকমেল করতে চাচ্ছে।’

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, তিনি আওয়ামী লীগ সরকার ও শেখ হাসিনার কঠোর সমালোচনা করেছিলেন। তারা (আওয়ামী লীগ) তাঁকে নানাভাবে ব্যঙ্গ ও কটু কথা বলেছিল। কিন্তু তাঁর কথা সত্য হয়েছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থেকে চলে গেছে। তিনি সাম্প্রতিক সময়ে বলেছেন, দেশ একটা দুর্যোগময় পরিস্থিতি পার করছে এবং ভয়াবহ দুর্যোগের দিকে ধাবিত হচ্ছে বলে তিনি আশঙ্কা করছেন। এই কথার অর্থ হলো, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোটাই ভেঙে পড়েছে। দেশের ইতিহাসে আইনশৃঙ্খলার এত খারাপ পরিস্থিতি কখনো ছিল না।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কিছু ঘনিষ্ঠজনেরা এমন কিছু কাজকর্মে উৎসাহিত করছেন বলে অভিযোগ করেন জি এম কাদের। তিনি বলেন, ‘এগুলো রাজনীতির নামে অপকীর্তি ও লুটতরাজ। পুলিশ বাহিনীকে সম্পূর্ণভাবে মনোবল ভেঙে দেওয়া হয়েছে। অকার্যকর করে দেওয়া হয়েছে। এটাও ‍ওনাদের দায়। এই সরকারের উদ্দেশে এ জন্য আমি বলছিলাম, আপনারা পারছেন না, না পারেন অন্য কাউকে দেন।’

বাংলাদেশে অল্প সম্পদ, বেশি লোকসংখ্যার দেশ উল্লেখ করে জি এম কাদের বলেন, ‘আমাদের মতো দেশ যেকোনো সময় বিপর্যয়ের ‍মুখে পড়তে পারে। এটা তারা বুঝছে না। কোনো প্রতিষ্ঠানকে নষ্ট করা চেয়ে খারাপ কাজ আর হতে পারে না। পুলিশকে নষ্ট করে তারা বুঝতে পারছে। আর্মিকে (সেনাবাহিনী) নষ্ট করার জন্য তারা এখন লাগছে।’

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের পক্ষে জাতীয় পার্টি নেই মন্তব্য করে জি এম কাদের বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটি দল। দলের ভেতরে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা খারাপ হতে পারেন। একটি বিশাল অঙ্কের জনসংখ্যাকে বাইরে রেখে তাঁরা ইচ্ছেমতো নির্বাচন করতে চেয়েছেন। হাসিনার ফ্যাসিবাদী এখন আবার দেখছি। অর্ধেক লোককে বাইরে রেখে নির্বাচন করবে জোর করে। ইনারা (অন্তর্বর্তী সরকার) জোর করে আমাদের বাদ দিয়ে জোর করে নির্বাচন করবে। এই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। এই নির্বাচনে দেশে স্থিতিশীলতা আসবে না। দেশে সামনে সংঘাতময় ও দুর্যোগপূর্ণ হয়ে যাবে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ষ ট কর সরক র আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

অজ্ঞাতনামা লাশ আর কারা হেফাজতে মৃত্যু বেড়েছে, শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকায় জনমনে সন্দেহ: এমএসএফ

চলতি অক্টোবর মাসে দেশে অজ্ঞাতনামা লাশ এবং কারা হেফাজতে মৃত্যু সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায় বেশ খানিকটা বেড়েছে। এ তথ্য তুলে ধরেছে মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)। প্রতিষ্ঠানটির অক্টোবর মাসের মানবাধিকার প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এমএসএফ বলেছে, এসব ঘটনায় জনজীবনের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি জোরালোভাবে সবার সামনে প্রতিফলিত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ দুই ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে জনমনে সন্দেহ আছে।

এমএসএফ প্রতি মাসে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরে। আজ শুক্রবার অক্টোবর মাসের প্রতিবেদন গণমাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং নিজস্ব তথ্যানুসন্ধানের ওপর ভিত্তি করে এমএসএফ মানবাধিকার প্রতিবেদন তৈরি করে।

বেড়েছে অজ্ঞাতনামা লাশ

এমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অক্টোবর মাসে মোট ৬৬টি অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে। এটি অনাকাঙ্ক্ষিতই নয়; বরং নাগরিক জীবনে নিরাপত্তাহীনতার বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত মাসে (সেপ্টেম্বর) এর সংখ্যা ছিল ৫২। এসব অজ্ঞাতনামা লাশের বেশির ভাগই নদী বা ডোবায় ভাসমান, মহাসড়ক বা সড়কের পাশে, সেতুর নিচে, রেললাইনের পাশে, ফসলি জমিতে ও পরিত্যক্ত স্থানে পাওয়া যায়। অল্পসংখ্যক মৃতদেহ গলাকাটা, বস্তাবন্দী ও রক্তাক্ত বা শরীরে আঘাতের চিহ্নসংবলিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।

এমএসএফ বলেছে, অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের ঘটনা বেড়েই চলেছে এবং তা জনজীবনের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি জোরালোভাবে সবার সামনে প্রতিফলিত হচ্ছে। পাশাপাশি অজ্ঞাতনামা লাশের পরিচয় উদ্ধারে অপারগতায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। এমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ১টি শিশু, ১ কিশোর, ১১ জন নারী ও ৫৩ জন পুরুষের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭ বছর বয়সী শিশু; ১৫ বছর বয়সী কিশোর; ২০ থেকে ৩০ বয়সী ১৫ জন পুরুষ ও ২ জন নারী; ৩১ থেকে ৪০ বয়সী ১৯ জন পুরুষ ও ৬ জন নারী; ৪১ থেকে ৫০ বয়সী ১ নারী ও ৫ জন পুরুষ এবং ৫০ বছর বয়সের বেশি ১১ জন পুরুষ ও ১ নারী রয়েছেন। এর মধ্যে অজ্ঞাতনামা তিনজনের বয়স শনাক্ত করা যায়নি।

এমএসএফ বলেছে, শুধু অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে বলে জানিয়েই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না; বরং পরিচয় জানার বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি। পরিচয় উদ্ধার করে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের কর্তব্য।

কারা হেফাজতে মৃত্যু বাড়ছেই

এমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে কারা হেফাজতে মোট ১৩ জন বন্দীর মৃত্যু হয়েছে। গত মাসে এ সংখ্যা ছিল মোট ৮। এ মাসে ছয়জন কয়েদি ও সাতজন হাজতির মৃত্যু হয়েছে।

কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে চারজন কয়েদি ও দুজন হাজতি, গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে একজন কয়েদি ও শেরপুর জেলা কারাগারে একজন কয়েদি মারা যান। এ ছাড়া খুলনা জেলা কারাগারে, টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে, চট্টগ্রাম জেলা কারাগারে, সিরাজগঞ্জ কারাগারে ও মানিকগঞ্জ জেলা কারাগারে একজন করে হাজতি বন্দী মারা যান। সব বন্দীর মৃত্যু হয় কারাগারের বাইরে হাসপাতালে।

এমএসএফের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, কারা হেফাজতে মৃত্যু এবং অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের সংখ্যা বৃদ্ধি মানবাধিকার পরিস্থিতির চরম অবনতির চিত্র তুলে ধরে। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এই লাশ উদ্ধার করেই ক্ষান্ত হচ্ছে। কিন্তু এসব লাশ উদ্ধার করে তার পরিচয় শনাক্ত করা এবং সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত করে মৃত্যুর কারণ উদ্‌ঘাটন করাই শুধু নয়, এসব লাশ আত্মীয়-পরিজনের কাছে পৌঁছে দেওয়া এসব বাহিনীর কাজ। কিন্তু একটি অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলা করা ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আর কোনো কাজ নেই।

সাইদুর রহমান বলেন, অজ্ঞাতনামা লাশের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং হেফাজতে মৃত্যু বৃদ্ধি জনমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি করে।

গণপিটুনিতে হত্যা চলছেই, বেড়েছে রাজনৈতিক সহিংসতা

অক্টোবর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৪৯টি ঘটনার শিকার হয়েছেন ৫৪৯ জন। এর মধ্যে ২ জন নিহত এবং ৫৪৭ জন আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে চারজন গুলিবিদ্ধ এবং নিহত ব্যক্তিরা বিএনপির কর্মী–সমর্থক। সেপ্টেম্বর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৩৮টি ঘটনা ঘটেছিল।

সহিংসতার ৪৯টি ঘটনার মধ্যে ১১টি ঘটনায় রাজনৈতিক বিরোধ ও সহিংসতাকে কেন্দ্র করে পার্টি অফিস, বসতবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ও অগ্নিকাণ্ড এবং ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। তবে এসব ঘটনায় হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

অক্টোবর মাসে মোট গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে ৪৪টি। আগের মাসে এ ঘটনা ঘটেছিল ৪৩টি। এ মাসে গণপিটুনির শিকার হয়ে নিহত ব্যক্তির সংখ্যা ছিল ১২। আগের মাসে নিহত হয়েছিলেন ২৪ জন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মানবাধিকার রক্ষার প্রতিশ্রুতি ও বাস্তবতা ভিন্ন
  • প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ
  • প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ, নির্বাচন প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা
  • ‘আওয়ামী পুলিশ, বিএনপি পুলিশ’ তকমা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ কঠিন: সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা
  • গণভোট নিয়ে উত্তাপ নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে না: প্রেস সচিব
  • অজ্ঞাতনামা লাশ আর কারা হেফাজতে মৃত্যু বেড়েছে, শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকায় জনমনে সন্দেহ: এমএসএফ
  • কথার আগে গুলি চালায় ‘কাকন বাহিনী’, দাপিয়ে বেড়াচ্ছে পদ্মার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল