এখন ওরা আমাকে ব্ল্যাকমেল করতে চাচ্ছে: জি এম কাদের
Published: 21st, March 2025 GMT
দেশে নব্য ফ্যাসিবাদ শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জি এম কাদের)। তিনি বলেছেন, শেখ হাসিনার মতো এখনো তাঁকে ব্ল্যাকমেল করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে কারা তাঁকে ব্ল্যাকমেলের চেষ্টা করছেন, তা স্পষ্ট করেননি তিনি।
আজ শুক্রবার বিকেল পাঁচটার দিকে চার দিনের সফরে রংপুরে আসেন জি এম কাদের। রংপুর নগরের সেনপাড়ায় নিজ বাড়িতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ অভিযোগ করেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করায় তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা হয়েছে উল্লেখ করে জি এম কাদের বলেন, ‘আমি কী হঠাৎ করে এসে এমপি হয়েছি। ২০১৪ সালে নির্বাচন না করার কারণে শেখ হাসিনা আমার পেছনে সব গোয়েন্দা সংস্থাকে দিয়ে দুর্নীতি খুঁজতে লাগিয়েছিলেন। কিন্তু আমার কোনো দুর্নীতি বের করতে পারেননি। এখন দুর্নীতি বের করছে কী, আমি মনোনয়ন দিয়ে, পদ-পদবি দিয়ে ২ হাজার, ৫ হাজার টাকা নিয়েছি, এটা আমার দুর্নীতি।’
জি এম কাদের বলেন, ‘আমার মুখ বন্ধ করার জন্য শেখ হাসিনা ফ্যাসিবাদ করেছেন। নব্য ফ্যাসিবাদ এখন শুরু হয়েছে। শেখ হাসিনা যেটা করে আমাদের ঠেকানোর চেষ্টা করেছেন, ধমক দিয়ে বিভিন্নভাবে ব্ল্যাকমেল করে, এখন ওরা আমাকে ব্ল্যাকমেল করতে চাচ্ছে।’
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, তিনি আওয়ামী লীগ সরকার ও শেখ হাসিনার কঠোর সমালোচনা করেছিলেন। তারা (আওয়ামী লীগ) তাঁকে নানাভাবে ব্যঙ্গ ও কটু কথা বলেছিল। কিন্তু তাঁর কথা সত্য হয়েছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থেকে চলে গেছে। তিনি সাম্প্রতিক সময়ে বলেছেন, দেশ একটা দুর্যোগময় পরিস্থিতি পার করছে এবং ভয়াবহ দুর্যোগের দিকে ধাবিত হচ্ছে বলে তিনি আশঙ্কা করছেন। এই কথার অর্থ হলো, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোটাই ভেঙে পড়েছে। দেশের ইতিহাসে আইনশৃঙ্খলার এত খারাপ পরিস্থিতি কখনো ছিল না।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কিছু ঘনিষ্ঠজনেরা এমন কিছু কাজকর্মে উৎসাহিত করছেন বলে অভিযোগ করেন জি এম কাদের। তিনি বলেন, ‘এগুলো রাজনীতির নামে অপকীর্তি ও লুটতরাজ। পুলিশ বাহিনীকে সম্পূর্ণভাবে মনোবল ভেঙে দেওয়া হয়েছে। অকার্যকর করে দেওয়া হয়েছে। এটাও ওনাদের দায়। এই সরকারের উদ্দেশে এ জন্য আমি বলছিলাম, আপনারা পারছেন না, না পারেন অন্য কাউকে দেন।’
বাংলাদেশে অল্প সম্পদ, বেশি লোকসংখ্যার দেশ উল্লেখ করে জি এম কাদের বলেন, ‘আমাদের মতো দেশ যেকোনো সময় বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে। এটা তারা বুঝছে না। কোনো প্রতিষ্ঠানকে নষ্ট করা চেয়ে খারাপ কাজ আর হতে পারে না। পুলিশকে নষ্ট করে তারা বুঝতে পারছে। আর্মিকে (সেনাবাহিনী) নষ্ট করার জন্য তারা এখন লাগছে।’
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের পক্ষে জাতীয় পার্টি নেই মন্তব্য করে জি এম কাদের বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটি দল। দলের ভেতরে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা খারাপ হতে পারেন। একটি বিশাল অঙ্কের জনসংখ্যাকে বাইরে রেখে তাঁরা ইচ্ছেমতো নির্বাচন করতে চেয়েছেন। হাসিনার ফ্যাসিবাদী এখন আবার দেখছি। অর্ধেক লোককে বাইরে রেখে নির্বাচন করবে জোর করে। ইনারা (অন্তর্বর্তী সরকার) জোর করে আমাদের বাদ দিয়ে জোর করে নির্বাচন করবে। এই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। এই নির্বাচনে দেশে স্থিতিশীলতা আসবে না। দেশে সামনে সংঘাতময় ও দুর্যোগপূর্ণ হয়ে যাবে।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বাম দলগুলোর প্রতিক্রিয়া: ‘তফসিল হয়েছে, তবে সামনে বড় চ্যালেঞ্জ’
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণাকে স্বাগত জানালেও অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে দেশের বাম দলগুলো।
তারা দাবি করছেন, তারিখ ঘোষণার পরও মাঠে এখনো কাঙ্ক্ষিত রাজনৈতিক পরিস্থিতি তৈরি হয়নি,বরং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি জনমনে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। তাই ভোটাধিকার সুনিশ্চিত করতে সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বিত ও দায়িত্বশীল ভূমিকা এখন জরুরি।
আরো পড়ুন:
অসত্য তথ্য ছড়ানোও শাস্তিযোগ্য অপরাধ: সিইসি
তফসিল ঘোষণা করায় নির্বাচন কমিশনকে প্রধান উপদেষ্টার শুভেচ্ছা
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, “১৭ বছর পর অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের অপেক্ষার অবসান ঘটাতে পারে এই তফসিল। জনগণও নিজেদের দল ও প্রতীকে ভোট দেওয়ার সুযোগের অপেক্ষায় ছিল। ১২ ফেব্রুয়ারি সেই সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।”
তিনি মনে করেন, “একই দিনে সংসদ নির্বাচন ও গণভোট-বাংলাদেশের ৫৪ বছরের ইতিহাসে নতুন অভিযাত্রার ইঙ্গিত হলেও সামনে বেশ কিছু ঝুঁকি রয়েছে।”
“একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচনের জন্য যে পরিবেশ প্রয়োজন, তা এখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি। গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়গুলো নির্বাচন কমিশনের অধীনে এনে কঠোর নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে মানুষের আস্থা ফেরানো জরুরি। ভোটে টাকার খেলা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে”, বলেন সাইফুল হক।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স তফসিল ঘোষণায় নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “এখন থেকে প্রতিটি মুহূর্তে ইসি ও সরকারকে এমন সব পদক্ষেপ নিতে হবে, যা দেখলে সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করবে, এবার সত্যিকার অর্থে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে।”
তিনি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ওপর জোর দিয়ে বলেন, “প্রার্থী হওয়া ও ভোট দেওয়ার সমান সুযোগ সবার জন্য নিশ্চিত করতে ইসিকে আরো সক্রিয় হতে হবে। প্রয়োজনে উপদেষ্টা পরিষদকে পুনর্গঠন করে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষতার বার্তা আরো দৃশ্যমান করতে হবে।”
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, “বহুল প্রত্যাশিত তফসিল ঘোষণায় স্বস্তি এসেছে, তবে অবাধ সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পথ এখনো মসৃণ নয়।”
“নির্বাচনকে টাকার প্রভাব, পেশিশক্তি, সাম্প্রদায়িকতা, আঞ্চলিকতা এবং প্রশাসনিক কারসাজিমুক্ত করতে হবে। সারাদেশে আইন-শৃঙ্খলার অবনতিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে”, যোগ করেন তিনি।
সরকার, ইসি ও রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছা এবং জরুরি উদ্যোগ ছাড়া গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয় বলেও মন্তব্য করেন বজলুর রশীদ ফিরোজ।
ঢাকা/এএএম/রাসেল