দুইদিনের বৃষ্টিতে সতেজ হয়ে উঠলো আমের গুটি
Published: 21st, March 2025 GMT
রাজশাহী অঞ্চলে দুইদিনের গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে সতেজ হয়ে উঠেছে গাছের আমের গুটি। বৃষ্টির পানিতে গুটির পাশে লেগে থাকা শুকনো মুকুল, যা চাষিদের কাছে ‘পোড়া মুকুল’ হিসেবে পরিচিত তা ঝরে পড়েছে। ফলে তরতাজা-সতেজ হয়ে উঠেছে মটরদানা কিংবা মার্বেলের আকারের গুটিগুলো।
এদিকে, বৃষ্টি ও মেঘলা আবহাওয়া নিয়ে কিছু চাষি দুশ্চিন্তায় থাকলেও কৃষি বিভাগ বলছে, এই বৃষ্টি আমের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। এতে গুটি দ্রুত বড় হবে, গুটি ঝরে পড়া কমবে এবং পোড়া মুকুল ঝরে যাওয়ায় আমের গায়ে দাগ কম পড়বে। ফলে বাজারে ভালো মানের আমের সরবরাহ বাড়বে।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, গত বুধবার রাজশাহীতে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৬.
আরো পড়ুন:
১৩ জেলায় মৃদু তাপপ্রবাহ, ঢাকায় গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি
ভরা ফাগুনের বৃষ্টিতে আমের মুকুলের ক্ষতির শঙ্কা
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত বছর আমের ফলন কম হয়েছিল। তবে, এবার ফলন বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। চলতি মৌসুমে নওগাঁর ৩০ হাজার ৫০০ হেক্টর জমি থেকে ৪ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৩৭ হাজার ৫০৪ হেক্টর জমি থেকে ৩ লাখ ৮৬ হাজার মেট্রিক টন, রাজশাহীর ১৯ হাজার ৬০০ হেক্টর জমি থেকে ২ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার আমচাষি ইসমাইল খান বলেন, “বৃষ্টির পর বাগানে এসে মনে হলো- গুটিগুলো অনেকটা বড় হয়ে গেছে। এখন ঝরে পড়াও কমবে। পোড়া মুকুলও ঝরে গেছে, এতে আমের গায়ে দাগ কম হবে।” শিলাবৃষ্টির আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি জানান, এই বৃষ্টি হলে ফলনের ক্ষতি হতে পারে।
রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আমচাষি আনোয়ার হোসেন পলাশ বলেন, “বৃষ্টিতে আবহাওয়া ঠাণ্ডা হয়ে গেছে, যা ছত্রাক সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়ায়। তাই রোদ উঠলেই গাছে ছত্রাকনাশক স্প্রে করব।”
রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, “বৃষ্টির ফলে আমের বোঁটা শক্ত হবে এবং পোড়া মুকুল ঝরে যাবে। বৃষ্টির পর ছত্রাকনাশক স্প্রে করলে আমের গুটি ভালো থাকবে।”
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বিভাগীয় কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক ড. আজিজুর রহমান বলেন, “রাজশাহীর ৬৫ শতাংশ মুকুল বর্তমানে মটরশুঁটির আকার ধারণ করেছে, আর ৩৫ শতাংশ মার্বেলের মতো হয়েছে। বৃষ্টির পর গুটির বৃদ্ধি দ্রুত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।”
তিনি আরো বলেন, “বৃষ্টির ফলে আমের গুটি সতেজ হয়েছে এবং পোড়া মুকুল ঝরে পড়েছে, যা ভালো ফলনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। তবে শিলাবৃষ্টি ও ছত্রাক সংক্রমণ নিয়ে কিছুটা উদ্বেগ রয়েছে। সঠিক পরিচর্যা ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবার আমের ভালো উৎপাদন হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।”
ঢাকা/কেয়া/মাসুদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আম র গ ট ট র পর র আম র বগঞ জ
এছাড়াও পড়ুন:
বৃষ্টিস্নাত রমনায় সবুজের উল্লাস
রমনা উদ্যানের গাছগুলো বৃষ্টিতে ভিজছে, ভিজছে মাটি ও মাটির ওপরের ঘাসগুলো। বর্ষায় রমনার রূপ হয় দেখার মতো। চারদিকে কেবল সবুজ আর সবুজ। বসন্তের মতো ফুল নেই তো কী হয়েছে? আছে শ্যামল রূপ, আছে অপার স্নিগ্ধতা। বুকভরে ধুলাহীন নিশ্বাস নেওয়ার অবকাশ, প্রকৃতির উদার আমন্ত্রণ।
‘পাগলা হাওয়ার বাদল-দিনে’ ঢাকার রমনা পার্কের গাছের পাতাগুলো এখন আরও সবুজ। টলটলে জলের নয়নাভিরাম ঝিলটা টইটম্বুর। ধুলাময়লাহীন পায়ে চলার পথ। আর গাছের পাতার ফাঁকে রয়েছে অজস্র ফুল। কোনোটা লাল, কোনোটা বেগুনি আবার কোনোটা সাদা। বৃষ্টির মধুর আশকারা পেয়ে রমনা পার্কে এখন সবুজের উল্লাস।
এই পার্কটিকে ঢাকার ফুসফুস বলা হয়। এর যথেষ্ট কারণ আছে অবশ্য। এ রকম প্রগাঢ় নিরেট সবুজ এ শহরে কমই আছে। রমনা তাই ঢাকার জনজীবনের স্পন্দন। এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।
সম্প্রতি ‘বৃষ্টি নেশাভরা’ এক বিকেলে অরুণোদয় ফটক দিয়ে রমনা পার্কে প্রবেশ করলাম। অনেকে শরীরচর্চায় ব্যস্ত। কেউ দল বেঁধে করছেন, কেউ একাকী। কোনো দল ব্যায়াম করে ভোরে, কেউ আবার বিকেলে বা সন্ধ্যায়। আবার অনেকে আছেন দুই বেলাই হাঁটাহাঁটি করেন। হাঁটা সেরে কেউ কেউ লেকের পাশে এসে দুদণ্ড জিরিয়ে নেন। লেকে চলছিল বোট।
বর্ষার ফুলের উৎসব
বর্ষা এলেই রমনা পার্ক যেন রঙের নতুন ভাষা শেখে। আমাদের ঋতুচক্র অনুযায়ী, বসন্ত ও গ্রীষ্মকালেই এ দেশে ফোটে অধিকাংশ ফুল। তবে বর্ষারও নিজস্ব কিছু ফুল আছে, আর গ্রীষ্মের কিছু ফুল টিকে থাকে বর্ষা পর্যন্ত। সেদিন রমনায় গিয়ে এমনই কিছু ফুল চোখে পড়ল—বৃষ্টিভেজা পাতার ফাঁকে তাদের রং যেন আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল। মনে হলো, প্রকৃতির এই নিঃশব্দ উৎসবেও কত কথা লুকিয়ে থাকে!
রমনার গোলাপবিথি সেদিন দর্শনার্থীদের সবচেয়ে বেশি মনোযোগ কাড়ছিল। সারি সারি ঝোপে ফুটে আছে হরেক রঙের গোলাপ—লাল, সাদা, হলুদ, কমলা, গাঢ় গোলাপি। বর্ষার ভেজায় যেন আরও সতেজ, আরও তাজা হয়ে উঠেছে প্রতিটি পাপড়ি। নরম আলো আর বৃষ্টিজলে ভেজা ফুলগুলোর সৌন্দর্য মোহিত করেছে পথচলার মানুষকে। কেউ থেমে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন, কেউ ভিডিও করছেন—মুঠোফোনে বন্দী হচ্ছে বর্ষার রঙিন রমনা।
এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।