রাজশাহী অঞ্চলে দুইদিনের গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে সতেজ হয়ে উঠেছে গাছের আমের গুটি। বৃষ্টির পানিতে গুটির পাশে লেগে থাকা শুকনো মুকুল, যা চাষিদের কাছে ‘পোড়া মুকুল’ হিসেবে পরিচিত তা ঝরে পড়েছে। ফলে তরতাজা-সতেজ হয়ে উঠেছে মটরদানা কিংবা মার্বেলের আকারের গুটিগুলো।

এদিকে, বৃষ্টি ও মেঘলা আবহাওয়া নিয়ে কিছু চাষি দুশ্চিন্তায় থাকলেও কৃষি বিভাগ বলছে, এই বৃষ্টি আমের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। এতে গুটি দ্রুত বড় হবে, গুটি ঝরে পড়া কমবে এবং পোড়া মুকুল ঝরে যাওয়ায় আমের গায়ে দাগ কম পড়বে। ফলে বাজারে ভালো মানের আমের সরবরাহ বাড়বে।

রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, গত বুধবার রাজশাহীতে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৬.

২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা মৃদু তাপপ্রবাহের লক্ষণ। গতকাল বৃহস্পতিবার তাপমাত্রা কমে ২৫.৯ ডিগ্রিতে নেমে আসে। দুপুর ২টার পর রাজশাহীতে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়, যা শুক্রবার (২১ মার্চ) দুপুর ২টা পর্যন্ত ছিল। ৫.৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। রাজশাহীর পাশাপাশি চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও নাটোরেও বৃষ্টি হয়েছে। ফলে চাষিরা মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন- তাদের কেউ খুশি, কেউ শঙ্কিত।

আরো পড়ুন:

১৩ জেলায় মৃদু তাপপ্রবাহ, ঢাকায় গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি

ভরা ফাগুনের বৃষ্টিতে আমের মুকুলের ক্ষতির শঙ্কা

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত বছর আমের ফলন কম হয়েছিল। তবে, এবার ফলন বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। চলতি মৌসুমে নওগাঁর ৩০ হাজার ৫০০ হেক্টর জমি থেকে ৪ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৩৭ হাজার ৫০৪ হেক্টর জমি থেকে ৩ লাখ ৮৬ হাজার মেট্রিক টন, রাজশাহীর ১৯ হাজার ৬০০ হেক্টর জমি থেকে ২ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার আমচাষি ইসমাইল খান বলেন, “বৃষ্টির পর বাগানে এসে মনে হলো- গুটিগুলো অনেকটা বড় হয়ে গেছে। এখন ঝরে পড়াও কমবে। পোড়া মুকুলও ঝরে গেছে, এতে আমের গায়ে দাগ কম হবে।” শিলাবৃষ্টির আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি জানান, এই বৃষ্টি হলে ফলনের ক্ষতি হতে পারে।

রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আমচাষি আনোয়ার হোসেন পলাশ বলেন, “বৃষ্টিতে আবহাওয়া ঠাণ্ডা হয়ে গেছে, যা ছত্রাক সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়ায়। তাই রোদ উঠলেই গাছে ছত্রাকনাশক স্প্রে করব।”

রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, “বৃষ্টির ফলে আমের বোঁটা শক্ত হবে এবং পোড়া মুকুল ঝরে যাবে। বৃষ্টির পর ছত্রাকনাশক স্প্রে করলে আমের গুটি ভালো থাকবে।”

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বিভাগীয় কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক ড. আজিজুর রহমান বলেন, “রাজশাহীর ৬৫ শতাংশ মুকুল বর্তমানে মটরশুঁটির আকার ধারণ করেছে, আর ৩৫ শতাংশ মার্বেলের মতো হয়েছে। বৃষ্টির পর গুটির বৃদ্ধি দ্রুত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।”

তিনি আরো বলেন, “বৃষ্টির ফলে আমের গুটি সতেজ হয়েছে এবং পোড়া মুকুল ঝরে পড়েছে, যা ভালো ফলনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। তবে শিলাবৃষ্টি ও ছত্রাক সংক্রমণ নিয়ে কিছুটা উদ্বেগ রয়েছে। সঠিক পরিচর্যা ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবার আমের ভালো উৎপাদন হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।”

ঢাকা/কেয়া/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আম র গ ট ট র পর র আম র বগঞ জ

এছাড়াও পড়ুন:

‘আমরার এইতা দিবস-টিবস দিয়া কী অইব’

ঘড়ির কাঁটায় তখন দুপুর ২টা ২০ মিনিট। মাথার ওপর প্রখর রোদের উত্তাপ। প্রচণ্ড গরমে ত্রাহি অবস্থায় একটু বিশ্রাম নিতে গাছের ছায়ার খোঁজে ক্লান্ত পথিক। এমন সময় ঘর্মাক্ত শরীরে একটি ভবন নির্মাণের কাজ করতে দেখা গেল কয়েকজন শ্রমিককে। তাদের একজন তোঁতা মিয়া, অপরজন হাবিবুল।

হাবিবুল পাথর ভরেই যাচ্ছেন, তোঁতা মিয়া সেগুলো মাথায় করে একের পর এক টুড়ি ছাদ ঢালাইয়ের জন্য পৌঁছে দিচ্ছেন নির্দিষ্ট স্থানে। সেখানেও বালু-পাথরের মিশ্রণ করছেন আরও কয়েকজন। তাদের কর্মযজ্ঞের এক ফাঁকে কথা হয় তোঁতা মিয়ার সঙ্গে।

আলাপকালে তোঁতা মিয়া বলেন, ‘সারাদিন কাম (কাজ) কইরা ৫০০ ট্যাহা (টাকা) হাজিরা পাই। এইডি দিয়া কোনোমতে বউ-পুলাপান নিয়া দিন পার করতাছি। মে দিবস-টিবস কী কইতারতাম না। আমরার মতো গরিব মানুষ কাম না করলে পেডে ভাত জুটতো না এইডাই কইতারবাম।’

গতকাল বুধবার ঈশ্বরগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণকাজ করার সময় এসব কথা বলেন তোঁতা মিয়া (৪৫)। তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার আকুয়া এলাকায়। এ সময় কথা হয় আরেক নির্মাণ শ্রমিক একাদুল মিয়ার সঙ্গে। একাদুলও জানেন না মে দিবস কী। তিনি বলেন, ‘এই কাম কইরা খাইয়া-না খাইয়া বউ-পুলাপান লইয়া কোনোরহমে দিন পার করতাছি। বর্তমান বাজারো জিনিসপাতির দাম বাড়লেও আমরার মজুরি বাড়ে না। পাঁচ বছর আগেও যা পাইতাম, অহনও তাই পাই।’ তিনি বলেন, ‘কয়েক ট্যাহা সঞ্চয় করবাম এই বাও (উপায়) নাই। অসুখ অইয়া চার দিন ঘরে পইড়া থাকলে না খাইয়া থাহন লাগব। আমরার এইতা দিবস-টিবস দিয়া কী অইব?’

আজ বৃহস্পতিবার মহান মে দিবস। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের এই দিনটি সারাবিশ্বের শ্রমিক শ্রেণির কাছে গুরুত্বপূর্ণ। বহির্বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হয় নানা আয়োজনে। কিন্তু যাদের অধিকার আদায়ের জন্য এ দিনটি পালন করা হয়– তারাই জানেন না দিবসটি সম্পর্কে। তাদের আরেকজন দিনমজুর রাজন মিয়া। রাজন জানান, এসব দিবসে তাদের মতো গরিব মানুষের কোনো লাভ-লোকসান নেই। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ