আওয়ামী লীগকে ‘পুনর্বাসনচেষ্টার’ অভিযোগকে কেন্দ্র করে হঠাৎ করেই রাজনীতিতে উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে জনমনে। অনন্য এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকারের বয়স সাত মাস পেরোনোর পর এ ধরনের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা কোনোভাবেই কাম্য নয়। 

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে জনগণের বিভিন্ন অংশ ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে অভূতপূর্ব ঐক্য সৃষ্টি হয়েছিল, তাতে স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটেছিল। উত্তরাধিকারসূত্রে অন্তর্বর্তী সরকার একটি বিপর্যস্ত অর্থনীতি এবং ভেঙে পড়া রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো পেয়েছে। ভুলত্রুটি সত্ত্বেও তঁারা লাইনচ্যুত একটি দেশকে লাইনে ফেরানোর যে গুরুদায়িত্বটা নিয়েছেন, সেটা নিঃসন্দেহে যে কারও জন্যই বিশাল চ্যালেঞ্জের কাজ। এ রকম বাস্তবতায় যেকোনো রাজনৈতিক অস্থিরতা বহুমুখী সংকট ও ঝুঁকিই তৈরি করবে।

অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতাদের ফেসবুক স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার রাত থেকেই আলোচনায় আসে ‘আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনচেষ্টার’ বিষয়টি। এই স্ট্যাটাসের জেরে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ হয়। এসব কর্মসূচি থেকে বিচারের আগে আওয়ামী লীগকে রাজনীতিতে পুনর্বাসনের চেষ্টা করা হলে তা প্রতিহতের ঘোষণা দেওয়া হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও চলে নানা বাদ-প্রতিবাদ, জল্পনাকল্পনা।

চব্বিশের অভ্যুত্থানে জনগণের মধ্যে পরিবর্তনের জন্য বিশাল একটা জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে। ছাত্রদের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে জনগণের সব অংশ সমর্থন দিয়ে, প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে, এটিকে ধাপে ধাপে গণ-অভ্যুত্থানে রূপ দেয়। এই অভ্যুত্থানে ছাত্রদের ও রাজনৈতিক দলগুলোর যেমন ভূমিকা আছে, তেমনি সেনাবাহিনীও সেই সংকটময় সময়ে ইতিবাচক অবস্থান নিয়েছে। অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার শুরু থেকেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাসহ সেনাবাহিনী সরকারের সহযোগীর ভূমিকা রেখে চলেছে।

এ দেশের মানুষকে আর যাতে পুরোনো রাজনৈতিক বন্দোবস্তে না ফিরতে হয়, সে জন্য সরকার সংবিধান, নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগ, আমলাতন্ত্রসহ গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও কাঠামো সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। দু-একটি বাদে প্রায় সব কটি কমিশনও তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার জন্য একটি ঐকমত্য কমিশনও গঠন করা হয়েছে। ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রতিবেদনগুলোর ওপর মতামত দিতে বলেছে। রাজনৈতিক দলগুলো কমিশনগুলোর প্রতিবেদনের ওপর মতামতও দিচ্ছে। ইতিমধ্যে আলোচনাও শুরু হয়েছে। এটি নিঃসন্দেহে স্বাস্থ্যকর গণতান্ত্রিক অনুশীলন। 

প্রধান উপদেষ্টা এরই মধ্যে বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলো যদি কম সংস্কার চায়, তাহলে এ বছরের ডিসেম্বর আর বেশি সংস্কার চাইলে আগামী বছর জুনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন হবে। এ বক্তব্যের পরে নির্বাচন নিয়ে কারও দ্বিধা, সংশয় থাকার কথা নয়। ফলে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনা শুরুর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্রটি যে গণতান্ত্রিক রূপান্তর অভিমুখে যাত্রা শুরু করেছে, সেটা বলাই বাহুল্য।

তবে আমরা মনে করি, এই গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন ডিসেম্বরের মধ্যে হলেই সবচেয়ে ভালো হয়।

রাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশ একটি জটিল ও কঠিন সন্ধিক্ষণ পার করছে। ইতিহাস বলে, এ দেশের মানুষ বারবার রক্ত দিয়েছে, পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখেছে, কিন্তু তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। এই ব্যর্থতা শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক ব্যর্থতা। ভিন্নমত, মতপার্থক্য থাকা সত্ত্বেও গণতান্ত্রিক উত্তরণের প্রশ্নে অভ্যুত্থানের সব শক্তির মধ্যে ঐক্যটা এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি দরকার। এটি এমন এক মুহূর্ত, যখন যেকোনো পক্ষের অপরিণামদর্শী পদক্ষেপ পুরো দেশ ও জাতিকে গভীর অনিশ্চয়তায় ফেলে দেবে। 

জনপ্রত্যাশার অঙ্গীকার পূরণে অভ্যুত্থানের সব শক্তির ধৈর্য ধারণ করা ও বিচক্ষণতা দেখানোয় জরুরি কর্তব্য। 

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সরক র আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

‘আমরা ভোটের পরিবেশ নিশ্চিতে কাজ করছি’

পাবনার নবাগত পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার জাহিদ বলেছেন, “পুলিশ যে সুশৃঙ্খল ও সুশিক্ষিত সেটা আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনে সেটা প্রকাশ পাবে। সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বাত্মক অবস্থানে থাকবে। যারা স্বপ্ন দেখছেন ভোট দেবেন, আমরা সে পরিবেশ নিশ্চিত করতে কাজ করছি। যে কোন ধরনের নাশকতা বা অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আমরা সর্বদা সজাগ আছি এবং থাকব।” 

বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় পাবনা প্রেসক্লাবের সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রেসক্লাবের ভিআইপি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন পাবনা প্রেসক্লাবের সভাপতি আখতারুজ্জামান আখতার। 

ক্লাবের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক ইয়াদ আলী মৃধা পাভেলের সঞ্চালনায় অন্যান্যর মধ্যে বক্তব্য দেন, পাবনা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি, বিশিষ্ট শিক্ষাবীদ প্রফেসর শিবজিত নাগ, প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপারেশন) মশিউর রহমান মন্ডল, প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি এবিএম ফজলুর রহমান ও সাবেক সম্পাদক আঁখিনুর ইসলাম রেমন। 

মতবিনিময় সভায় নবাগত পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার জাহিদ বলেন, “সদাচরণ, আইনের শক্ত প্রয়োগ আমার মূল লক্ষ্য। সামনের দিনগুলোতে পুলিশ বাহিনীর কাজ দেখতে পাবেন। আইনপরিপন্থী চ্যালেঞ্জগুলো অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে আইন প্রয়োগের মাধ্যমে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা বর্তমান পুলিশের বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ বাস্তবায়নে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। এজন্য জনগণ, জনপ্রতিনিধি, জনপ্রশাসন তথা সর্বস্তরের মানুষের সহযোগিতাও লাগবে।” 

এসময় কিশোর গ্যাং, মাদক, ছিনতাই, সন্ত্রাসীসহ নানা অপরাধ ও আইনশৃঙ্খলা পরিপন্থী নানা অপরাধ ও কর্মকাণ্ড সংক্রান্ত সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি। 

মতবিনিময় সভায় বক্তারা পুলিশ সুপারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “দল দাস হবেন না। পূর্ববর্তী শিক্ষা নিয়ে পুলিশ বাহিনীকে সামনে আগাতে হবে। নিরপেক্ষতা বজায় রেখে আপনাদের উপর অর্পিত আইন শৃঙ্খলা দমন ও জনগণের জানমাল হেফাজতে অগ্রণী ভূমিকা রাখবেন।”

মতবিনিময় সভায় স্থানীয় দৈনিকসহ জাতীয় প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় কর্মরত সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা/শাহীন/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নেত্রী খালেদা জিয়ার প্রথম রাজনৈতিক সাক্ষাৎকার
  • খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় এটিএম কামালের দোয়া মাহফিলে মাসুদুজ্জামান   
  • ভোটের মাঠে জোটের ভিড়ে জনপ্রত্যাশা কোথায় গেল 
  • পার্বত্য ৩ আসনে প্রার্থী না দিতে জাতীয় দলগুলোর প্রতি আহ্বান ইউপিড
  • ‘আমরা ভোটের পরিবেশ নিশ্চিতে কাজ করছি’
  • শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিত করার আহ্বান ইসলামী ফ্রন্টের
  • তফসিল ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস
  • ‘নির্বাচন সহজ হবে না, পরিকল্পনা নিয়েই মাঠে নামতে হবে’
  • আগামী নির্বাচনে বিএনপিকে পুরোপুরিভাবে জয়লাভ করতে হবে: নেতাদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল
  • বাবুগঞ্জে এবি পার্টির ফুয়াদের বিরুদ্ধে ঝাড়ুমিছিল