মহাসড়ক বন্ধ করে বিএনপির নেতা–কর্মীদের ঝাড়ুমিছিল, যানজট
Published: 25th, March 2025 GMT
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মিরসরাই উপজেলা বিএনপির নতুন ঘোষিত আহ্বায়ক কমিটির বিরুদ্ধে ঝাড়ুমিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে দলটির পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা। আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় মিরসরাই উপজেলা পরিষদ চত্বর থেকে ঢাকামুখী লেনে ঝাড়ু হাতে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন তাঁরা।
মিছিলটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ঢাকামুখী লেনে কিছু দূর গিয়ে মিরসরাই সরকারি মডেল উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। মিছিল ও সমাবেশ চলাকালে ঢাকামুখী লেনে ২০ মিনিট যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। এ সময় মহাসড়কের মিরসরাই উপজেলা সদর থেকে দক্ষিণ দিকে অন্তত ২ কিলোমিটার রাস্তায় যানজট তৈরি হয়।
বিক্ষোভকারী নেতা-কর্মীরা সাবেক মিরসরাই উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমিনের অনুসারী বলে জানা যায়। বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য দেন উপজেলা যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক শাহিনুল ইসলাম, উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য মেজবাউল আলম, উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক কামাল উদ্দিন, জোরারগঞ্জ থানা যুবদলের আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম, দুর্গাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সদস্যসচিব আজিজুল হক, ইছাখালী ইউনিয়ন বিএনপির সদস্যসচিব মঞ্জুরুল হক, করেরহাট ইউনিয়ন বিএনপির সদস্যসচিব ইয়াছিন মিজান, হিঙ্গলী ইউনিয়ন বিএনপির সদস্যসচিব রফিকুল ইসলাম, জোরারগঞ্জ ইউনিয়ন বিএনপির সদস্যসচিব মাসুক আলম প্রমুখ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, বিএনপির দুঃসময়ে আন্দোলন–সংগ্রামে যেসব নেতাকর্মী অগ্রগামী ছিলেন, তাঁদের বঞ্চিত করে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেনের বিনিময়ে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খন্দকার সুবিধাবাদী, চাকরিজীবী ও আওয়ামী লীগের সহযোগীদের পদে রেখে মিরসরাই উপজেলা বিএনপির নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেছেন। তাঁরা এই কমিটি ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেন। একই সঙ্গে অবিলম্বে প্রহসনের এই কমিটি বিলুপ্ত করে উপজেলার সব ত্যাগী নেতা-কর্মীদের মূল্যায়নের মাধ্যমে নতুন কমিটির দাবি জানান।
১৮ মার্চ বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগের পুনর্গঠন কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মিরসরাই উপজেলা বিএনপি, বারিয়ারহাট ও মিরসরাই পৌরসভার আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। এরপর ২৪ মার্চ চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খন্দকার স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে মিরসরাই উপজেলা, বারিয়ারহাট ও মিরসরাই পৌরসভা বিএনপির নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। নতুন এ কমিটিতে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক করা হয় আবদুল আওয়াল চৌধুরী ও সদস্যসচিব মনোনীত হন আজিজুর রহমান চৌধুরী।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খন্দকার বলেন, ‘দলের কোনো ইউনিটের নতুন কমিটি ঘোষণা করলে সেখানে কেউ কেউ অসন্তুষ্ট হতে পারে, এটি স্বাভাবিক। আগের কমিটি দায়িত্ব পালনে কিছুটা ব্যর্থ হওয়ায় আমরা বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগের পুনর্গঠন কমিটির পরামর্শে নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেছি। নতুন কমিটিতে যাঁরা এসেছেন, তাঁদের অতীতের অভিজ্ঞতা ও ত্যাগের বিষয় বিবেচনা করেই পদ দেওয়া হয়েছে। আর মিছিল–সমাবেশ করতে গিয়ে মহাসড়ক বন্ধ রাখা সমীচীন নয়। বিএনপির কোনো অংশ এমনটি করে থাকলে আমরা তদন্ত করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মিরসরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘মহাসড়কে বিএনপির মিছিল ও সমাবেশের বিষয়ে আমাদের কোনো অনুমতি নেয়নি কেউ। সমাবেশের কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ঢাকামুখী লেন কিছুক্ষণ বন্ধ ছিল। লোকবল কম থাকায় আমরা সেখানে বাধা সৃষ্টি করতে পারিনি। তবে খুব বেশি জনভোগান্তি না করেই তাঁরা দ্রুত সমাবেশ শেষ করেছেন।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইউন য ন ব এনপ র সদস যসচ ব ম রসর ই উপজ ল ব এনপ র ন র নত ন কম ট র ন কম ট
এছাড়াও পড়ুন:
আসামি না হয়েও স্বেচ্ছায় কারাগারে যাওয়া সেই যুবক প্রতারণা মামলায় গ্রেপ্তার
চট্টগ্রামে মাদকের একটি মামলায় আসামি সেজে আদালতে আত্মসমর্পণের পর কারাগারে যাওয়া এক যুবককে জালিয়াতি ও প্রতারণার মামলায় গ্রেপ্তার (শ্যোন অ্যারেস্ট) দেখিয়েছেন আদালত। তাঁর নাম মো. রাকিব। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এস এম আলাউদ্দিন মাহমুদ শুনানি শেষে এই আদেশ দেন। কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে প্রকৃত আসামি মো. সুমনের হয়ে আদালতে স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করেন রাকিব। আদালতের আদেশে ১ জুলাই থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) মফিজ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, কারাগারে আটক রাকিবকে জালিয়াতি ও প্রতারণা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করে কোতোয়ালি থানা-পুলিশ। শুনানি শেষে আদালত তা মঞ্জুর করেন। আসামিকে রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে।
আদালত সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের ৩১ আগস্ট নগরের আকবর শাহ থানার কৈবল্যধাম এলাকায় একটি পিকআপ ভ্যানে অভিযান চালিয়ে ৪০ কেজি গাঁজা উদ্ধার করে র্যাব, যার মূল্য ৪ লাখ টাকা। ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার করা হয় গাড়িচালক রাহাত ইসলামকে। পালিয়ে যান চালকের সহকারী (হেলপার) মো. সুমন। এ ঘটনায় র্যাব কর্মকর্তা বাদী হয়ে আকবর শাহ থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেন। তদন্ত শেষে চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। এতে রাহাত ইসলাম ও মো. সুমনকে আসামি করা হয়।
আদালত পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রটি গ্রহণ করে পলাতক আসামি সুমনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। এরই মধ্যে সুমনের গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার পূর্বধলা এলাকায় অভিযান চালায় পুলিশ। বিষয়টি জানতে পেরে সুমন নিজেকে কারামুক্ত রাখতে তাঁর পরিবর্তে নোয়াখালীর রাকিবকে আদালতে আত্মসমর্পণ করায় ১ জুলাই। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোস্তফা শুনানি শেষে আসামির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান। সুমনের হয়ে রাকিব আত্মসমর্পণের সময় তাঁর পক্ষে আইনজীবী ছিলেন ওয়াহিদ মুরাদ।
আদালতে একজনের পরিবর্তে আরেকজন আত্মসমর্পণের বিষয়টি ধরা না পড়লেও কারাগারে গিয়ে ধরা পড়ে। জাতীয় পরিচয়পত্রের ডেটাবেজে (তথ্যভান্ডার) ভোটারদের আঙুলের ছাপ সংরক্ষিত আছে। এ পদ্ধতিকে বলা হয় ফিঙ্গারপ্রিন্ট আইডেনটিফিকেশন অ্যান্ড ভেরিফিকেশন সিস্টেম। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ পদ্ধতি ব্যবহার শুরু করে চট্টগ্রাম কারা কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে আঙুলের ছাপে ধরা পড়েছে অনেক বন্দীর আসল পরিচয়। এসব ঘটনায় মামলাও হয়েছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি মাসের জুলাই পর্যন্ত আত্মসমর্পণ করে জালিয়াতির মাধ্যমে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে আসা ১৬ জনের আঙুলের ছাপে শনাক্ত করা হয়।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক মো. ইকবাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আদালত থেকে কারাগারে আসা প্রত্যেক নতুন আসামির আঙুলের ছাপ নেওয়া হয়। সেখানে আসামির জাতীয় পরিচয়পত্রে থাকা আসল পরিচয় উঠে আসে। ইকবাল হোসেন আরও বলেন, ‘সুমনের হয়ে কারাগারে আসা রাকিব স্বীকার করেছেন তিনি মাদক মামলার প্রকৃত আসামি নন। ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে তিনি সুমন সেজেছেন। তাঁকে বলা হয়েছে, দ্রুত কারাগার থেকে ছাড়িয়ে নেওয়া হবে। তাই তিনি রাজি হয়েছেন। বিষয়টি চিঠি দিয়ে আদালতকে জানানো হয়েছে।’
আরও পড়ুনচট্টগ্রামে ‘আয়নাবাজি’, ধরা পড়েছে আঙুলের ছাপে০৮ নভেম্বর ২০২৩কারাগার থেকে চিঠি পাওয়ার পর মামলা করার নির্দেশ দেন চট্টগ্রাম চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মিজানুর রহমান। একই সঙ্গে আসামিকে আত্মসমর্পণকারী আইনজীবী ওয়াহিদ মুরাদের কাছে কারণ ব্যাখ্যা চেয়েছেন আদালত। আদালতের প্রসিকিউশন শাখার আকবর শাহ থানার জিআরও সাইদুর রহমান বাদী হয়ে গত রোববার রাতে নগরের কোতোয়ালি থানায় প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগে মামলা করেন। মামলায় মো. রাকিব ও মো. সুমনকে আসামি করা হয়। সুমন এখনো পলাতক।