বার্তা আদান-প্রদানের অ্যাপ সিগন্যাল-এ যুদ্ধ-পরিকল্পনা ফাঁস হওয়ার ঘটনায় অস্বস্তিতে পড়েছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। এ নিয়ে দেশে-বিদেশে সাংবাদিকদের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে তাঁর প্রশাসনের কর্মকর্তাদের।

রাষ্ট্রীয় সফরে জ্যামাইকায় গিয়ে সিগন্যাল কেলেঙ্কারি নিয়ে বুধবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়েন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। এ সময় তিনি বলেন, ‘এটা স্পষ্ট যে, কেউ একজন বড় ভুল করেছেন এবং একজন সাংবাদিককে (সিগন্যালের গ্রুপ চ্যাটে) যুক্ত করেছেন।’

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে বলছি না, তবে আপনাদের ওই বিষয়ে কথা বলার কথা নয়।’

সিগন্যাল গ্রুপে নিজের ভূমিকাকে এতটা বড় করে দেখছেন না রুবিও। তিনি বলেন, তাঁর দিক থেকে যোগাযোগের বিষয়টি যাচাইয়ে তিনি বার্তা দিয়েছিলেন। হামলার পর অভিনন্দন জানাতে তিনি আবার বার্তা দেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সিগন্যালে দেওয়া তথ্য বাইরে প্রকাশের ইচ্ছা থেকে দেওয়া হয়নি। অবশ্য প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর পেন্টাগন বলেছে, এসব তথ্যের কোনোটিই মার্কিন বাহিনীর সদস্যদের জীবন ঝুঁকিতে ফেলবে না।

গ্রুপ চ্যাটে দেওয়া কোনো তথ্য গোপনীয় ছিল কি-না এমন প্রশ্নে রুবিও বলেন, ‘পেন্টাগন বলেছে এমন তথ্য ছিল না।’

আরও পড়ুন‘যুদ্ধ–পরিকল্পনা’ ফাঁস হওয়ায় চাপে ট্রাম্প প্রশাসন৪ ঘণ্টা আগে

ইয়েমেনের হুতিদের ওপর হামলার পরিকল্পনা নিয়ে সিগন্যাল অ্যাপে হওয়া আলাপের বিবরণ বুধবার প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম দ্য আটলান্টিক। গ্রুপ চ্যাটের তথ্য ফাঁস হওয়ার এ ঘটনায় বিরোধী ডেমোক্রেটিক পার্টির আইনপ্রণেতারা প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়ালৎজের পদত্যাগ দাবি করেছেন।

এই বিস্তারিত বিবরণ বের হওয়ার আগেই মঙ্গলবার থেকে বিষয়টি নিয়ে কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটের ইন্টেলিজেন্স কমিটিতে শুনানি চলছে। ডেমোক্র্যাটদের দাবি, হুতিদের ওপর হামলার পরিকল্পনা প্রকাশ হওয়ার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য ফাঁস হয়ে গেছে। এতে জাতীয় নিরাপত্তা হুমকিতে পড়েছে।

আরও পড়ুনজেরার মুখে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দাপ্রধানেরা, ট্রাম্প বললেন গোপনীয় কিছু ছিল না২৫ মার্চ ২০২৫

কয়েক দিন ধরে ইয়েমেনে হুতি নিয়ন্ত্রিত এলাকার বিভিন্ন স্থাপনায় ড্রোন ও বিমান হামলা চালিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। এ হামলার পরিকল্পনা নিয়ে দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স, প্রতিরক্ষামন্ত্রী হেগসেথ ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়ালৎজসহ ট্রাম্প প্রশাসনের শীর্ষস্থানীয় আরও কিছু কর্মকর্তা সিগন্যাল অ্যাপে আলাপ করছিলেন।

এই চ্যাট গ্রুপে ভুলক্রমে দ্য আটলান্টিকের সম্পাদক জেফরি গোল্ডবার্গকেও যুক্ত করা হয়েছিল। মাইক ওয়ালৎজ ভুলবশত গোল্ডবার্গকে চ্যাট গ্রুপে যুক্ত করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। বুধবার আটলান্টিকে ওই গ্রুপ চ্যাটের বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পরর ষ ট রমন ত র কর ছ ন হওয় র

এছাড়াও পড়ুন:

৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে

বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।

আরো পড়ুন:

ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০

বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী

প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন। 

দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।

হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী। 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”

 

শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।

লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।

স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, ‍“হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”

রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?” 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”

তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”

বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”

ঢাকা/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজায় ২৬ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টির শিকার: জাতিসংঘ
  • গ্রাহকের কাছে পেয়ারা খেতে চায় জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা
  • গল্পটা এই ক্লাসরুম থেকেই শুরু: ইরফান সাজ্জাদ
  • রাশিয়ায় এক বাঙালি বিপ্লবীর খোঁজে
  • আপনার এত সাহস হয় কী করে, সাংবাদিককে নায়িকা
  • দুবাইয়ে বিকৃত যৌন ব্যবসা চক্রের প্রধানকে চিহ্নিত করল বিবিসির এক অনুসন্ধান
  • মহানবী (সা.)–এর ইন্তেকালের পরে শাসন নিয়ে যা ঘটেছে
  • কুবিতে নতুন ১৮ বিভাগ ও ৪ ইনস্টিটিউট চালুর সুপারিশ
  • সংগীতশিল্পী দীপ মারা গেছেন
  • ৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে