ঈদ উপলক্ষে নতুন জামা, সাজপোশাকের জিনিস কেনেন সবাই। প্রত্যেকেই চান ঈদের সাজে সুন্দর ও সাবলীল থাকতে। উৎসবের এ দিনটিতে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিভিন্ন আয়োজন থাকে। প্রতিটি সময়ের জন্য চাই আলাদা সাজভাবনা। তাছাড়া এবারের ঈদ গরমের মধ্যে পড়ছে বলে আবহাওয়ার কথা মাথায় রেখে সাজটা হওয়া উচিত হালকা, আরামদায়ক ও দীর্ঘস্থায়ী। এ বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন রেড বিউটি স্টুডিও অ্যান্ড স্যালুনের স্বত্বাধিকারী ও রূপবিশেষজ্ঞ আফরোজা পারভীন।
সকালের সাজ
ঈদের সকাল শুরু হয় নামাজের আয়োজন, পারিবারিক আড্ডা আর মিষ্টিমুখের আনন্দে। এ সময় চাই হালকা, পরিপাটি ও প্রশান্তির অনুভূতি জাগানো সাজ।
ঈদের দিনের বাহারি সাজ নিয়ে রূপবিশেষজ্ঞ আফরোজা পারভীন বলেন, সকাল বেলার মেকআপে ত্বকের সঙ্গে মানানসই হলেও বিবি ক্রিম, সিসি ক্রিম এমন কিছু ফেইসে ব্যবহার না করাটাই ভালো। প্রথমেই সিরাম এবং একটি ময়েশ্চরাইজার ব্যবহার করে ফাউন্ডেশন দিতে হবে। ফাউন্ডেশনের পর যেখানে আমাদের কনসিলিং করা দরকার, যেমন ঠোঁটের পাশে, চোখের নিচে হালকা করে কনসিলারের সঙ্গে লুজ পাউডার দিয়ে সেট করে নেব। পরে আইব্রাশটা সুন্দর করে এঁকে নিয়ে হালকা কালারের আইশ্যাডো ব্যবহার করে মাশকারা দিলেই চোখের সাজ শেষ। এখানে কাজল, লাইনার ব্যবহার না করলেই দেখতে সুন্দর লাগবে। ঠোঁটে ন্যুড কালার অথবা হালকা পিংক কালার লিপস্টিক দিতে পারেন।
সকালের সাজে খোলা চুলেই দেখতে ভালো লাগবে বলে জানালেন এই রূপ বিশেষজ্ঞ। সকালের সাজের সঙ্গে হালকা ও মসৃণ ফেব্রিকের, যেমন–কটন, লিনেন, মসলিনের পোশাক পরার পরামর্শ দেন আফরোজা পারভীন। তিনি বলেন, পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে সকালে হালকা গহনা বেছে নিন। হালকা সাজের সঙ্গে ছোট্ট কানের দুল, হাতের পাতলা চুড়ি বা রিস্টওয়াচ ভালো লাগবে।
দুপুরের সাজ
দুপুরের সাজ হতে হবে ভারসাম্যপূর্ণ, যেখানে থাকবে স্টাইল, আরাম এবং সিজনাল স্পর্শ। কারণ, এ সময় থাকে অতিথি আপ্যায়ন, ছবি তোলাসহ প্রিয়জনদের সান্নিধ্যে কাটানো আনন্দঘন মুহূর্ত। তবে, গরমের কথা মাথায় রেখে সাজপোশাকের ক্ষেত্রে আরাম ও সাচ্ছ্বন্দ্য প্রাধান্য দিন।
দুপুরের সাজের ব্যাপারে আফরোজা জানান, দুপুরের মেকআপে স্মোকি লুক মানাবে না। ফ্রেশ লুকের সঙ্গে একটু পিংকিশ ব্লাশন, আইলাইনার, মাসকারা থাকলে দেখতে সুন্দর লাগবে। ঠোঁটে হালকা চকচকে গ্লোসি বা ম্যাট ব্রাইট পিঙ্ক রঙের লিপস্টিক দুপুরের জন্য মানানসই।
তিনি আরও জানান, দুপুরের সাজে আমরা সামনের চুলগুলোকে যদি একটু আটকে নিই তাহলে দেখতে সুন্দর লাগবে। এক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন স্টাইলে সামনের চুলের ডিজাইনটা করা যায়, এতে সৌন্দর্য বাড়বে। আবার কেউ চাইলে চুলে খোঁপাও করে নিতে পারবে, এটি আরামদায়কও হবে। এছাড়া চুল খোলা রাখতে চাইলে হেয়ার সিরাম বা সেটিং স্প্রে ব্যবহার করতে হবে।
পোশাক বাছাইয়ে সফট রঙের সালোয়ার কামিজ বা হালকা কাজের শাড়ি পরতে পারেন। এর সঙ্গে মিলিয়ে মিডিয়াম সাইজের ঝুমকা বা স্টাডস পরতে পারেন।
রাতের সাজ
রাতের দাওয়াত, পার্টি বা পারিবারিক জমায়েতের জন্য প্রত্যেকেরই চাই একটু বেশি জমকালো লুক। সে লুক যেন অতিরিক্ত ধরনের না হয়।
এ ব্যাপারে আফরোজা পারভীন বলেন, রাতের বেলা মেকআপ করার আগে ময়েশ্চারাইজার এবং সিরাম ব্যবহার করে স্কিনটাকে সঠিকভাবে প্রস্তুত করে নিতে হবে। তারপর ফাউন্ডেশন, কনসিলার দিয়ে বেইজ তৈরি করে, হাইলাইটার দিয়ে গ্লো করে বেইজ কমপ্লিট করতে হবে। গোল্ডেন বেস রোজ, গোল্ডেন আইশ্যাডো ব্যবহার করা যায়। চাইলে চোখের সাজের ক্ষেত্রে একটু স্মোকি ফিল করতে পারি বা ন্যাচারাল আই লুকে মোটা করে লাইনার করতে পারি। ঠোঁটে ডার্ক, রেড, বেরি অথবা যেকোনো ডার্ক কালারের ক্লাম টোনের লিপস্টিক পরতে পারি।
রাতের সাজে হেয়ার স্টাইল নিয়ে তিনি বলেন, চুল কার্ল করা যায়, চুলে টিজিং করা যায়। চুল তুলে খোঁপা করাসহ বিভিন্ন হেয়ারস্টাইল করা যায়। চুল খোলা রাখতে চাইলে ওয়েভি বা স্ট্রেইট লুক দিতে পারেন। পোশাকের ক্ষেত্রে ভারী এমব্রয়ডারি বা সিল্কের শাড়ি বা গর্জিয়াস কুর্তি পরতে পারেন। এর সঙ্গে মানিয়ে স্টেটমেন্ট জুয়েলারি, যেমন– বড় কানের দুল, মালা বা ককটেল রিং পরতে পারেন। এই রূপবিশেষজ্ঞ আরও বলেন, সকাল, দুপুর, রাত যেকোনো সময়েই সাজগোজের পর মেকআপকে দীর্ঘস্থায়ী করতে সেটিং স্প্রে ব্যবহার করুন। তাছাড়া হাতে থাকতে পারে মেহেদির হালকা ডিজাইন, আর কাঁধে ট্রেন্ডি এমব্রয়ডারি করা দোপাট্টা, যা আপনাকে আলাদা করে তুলবে।
অন্যান্য সাজ
হালকা পারফিউম বা বডি মিস্ট ব্যবহার করতে পারেন, যা দিনভর আপনাকে ফ্রেশ রাখবে। হিল বা ফ্ল্যাটস বেছে নেওয়ার সময় আরামকে গুরুত্ব দিন, কারণ ঈদের দিন চলাফেরা বেশি হয়। তাই জুতা বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে আপনাকে ভেবেচিন্তে নেওয়া উচিত হবে। তাছাড়া চুল ও স্কিনের হাইড্রেশন বজায় রাখতে ঈদের আগের দিন ভালো করে কন্ডিশনিং করুন।
ঈদের সাজ মানে কেবল বাহ্যিক রূপচর্চা নয়, বরং আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা। তাই পোশাক, সাজ ও স্টাইল সবকিছুতে আরাম এবং ব্যক্তিত্বের ছাপ রাখুন। এতেই ফুটে উঠবে আসল সৌন্দর্য।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব যবহ র কর স ন দর আফর জ
এছাড়াও পড়ুন:
কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন
টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।
এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।
গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।
প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।