আটোরিকশায় বাসের ধাক্কা, ঈদে বাড়ি ফেরা হল না দম্পত্তির
Published: 30th, March 2025 GMT
গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ী উড়ালসড়কের পশ্চিম পাশে তাকওয়া বাসের ধাক্কায় অটোরিকশায় থাকা এক দম্পতিসহ তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় ওই দম্পতির দুই সন্তানসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে।
রবিবার (৩০ মার্চ) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের কোনাবাড়ী উড়ালসড়কের পশ্চিম পাশে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত দম্পতি হলেন- টাঙ্গাইল কালিহাতি উপজেলার ঘোড়িয়া এলাকার আনসার আলীর ছেলে নাজমুল হোসেন (৩৩) ও তার স্ত্রী ফরিদা ইয়াসমিন।
আহতরা হলেন, নিহত দম্পতির ছয় বছরের মেয়ে ও এক বছরের ছেলে। অপর তিনজন হলেন, কোনাবাড়ী এলাকার এনামুল (৩০), মানিকগঞ্জ জেলার ধামরাইয়ের অজিত চরণ (৪৫) ও তার পিতা গোঙ্গাচরণ (৮০)।
স্থানীয়রা জানায়, আজ সকাল সাড়ে ৭টার দিকে একটি অটোরিকশা উল্টো পথে আসছিল। এমন সময় তাকওয়া পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস বেপরোয়া গতিতে গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে চন্দ্রার দিকে যাওয়ার সময় কোনাবাড়ী দেওয়ালিয়াবাড়ী এলাকায় পৌঁছলে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে অটোরিকশাটি দুমড়ে মুচড়ে যায়। অটোরিকশায় থাকা স্বামী-স্ত্রী, তাদের দুই সন্তান ও চালকসহ সাত জন ছিলেন। তারা সবাই আহত হন। মেডিকেলে নেওয়ার পথে ওই দম্পতিসহ তিন জনের মৃত্যু হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে নিহতের চাচাত ভাই শরিফুল ইসলাম জানান, দুর্ঘটনার পর তাদেরকে টাঙ্গাইল মেডিকেলে আনার সময় পথে মারা যায়। তাদের দুই সন্তানকে টাঙ্গাইল মেডিকেলে ভর্তি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, “সকালে তারা বাড়ির উদ্দেশ্য টাঙ্গাইল আসার জন্য অটোরিকশায় করে কোনাবাড়ীর দিকে যাচ্ছিলেন। তারা দুজনেই স্থানীয় একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন।”
গাজীপুর মেট্রোপলিটন কোনাবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ মো.
অ্যাম্বুলেন্স চালক সুমন বলেন, “কোনাবাড়ি হাসপাতালের সামনে থেকে পাবলিক আমাকে ডেকে নিয়ে আহতদের গাড়িতে তুলে দেয়। তাদের মধ্যে স্বামী-স্ত্রী মারা গেছে। টাঙ্গাইল সদর হাসপাতালে তাদের এক মেয়ে ও ছেলে সন্তানকে ভর্তি করা হয়েছে। পরে ঠিকানা খুঁজে ওই স্বামী-স্ত্রীর লাশ তাদের বাড়িতে দিয়ে আসছি।”
ঢাকা/রেজাউল/এস
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
খুলনায় এক মাসে ১৩ লাশ উদ্ধার, বাড়ছে উদ্বেগ
বাড়িতে ঝগড়া চলছিল বড় ভাই ও ভাবির। ছোট ভাই এসে ঝগড়া থামানোর চেষ্টা করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বড় ভাই ছোট ভাইয়ের মাথায় শাবল দিয়ে আঘাত করেন। মাটিতে লুটিয়ে পড়লে ধারালো বঁটি দিয়ে ছোট ভাইকে হত্যা করেন। পরে বড় ভাই শহিদুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি এখন কারাগারে। ঘটনাটি ঘটেছে গত ৩০ মে, খুলনার কয়রা উপজেলার বাগালী ইউনিয়নের উলা গ্রামে।
এর আগে ২৭ মে কয়রার ইসলামপুর গ্রামের কয়রা নদীর চর থেকে শিকলে বাঁধা অবস্থায় আবদুল মজিদ (৬২) নামের এক বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ছাড়া ৮ জুন কয়রার কাছারিবাড়ি বাজার-সংলগ্ন পুকুর থেকে নমিতা (৪০) নামের এক নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়।
১০ জুন কয়রা সদরের গোবরা সড়কে এক ভ্যানচালকের সঙ্গে এক মোটরসাইকেলচালকের কথা-কাটাকাটিকে কেন্দ্র করে দুই গ্রামের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে আহত হন অন্তত ১৫ জন। ঘটনায় ১২ জনকে আসামি করে থানায় মামলাও হয়েছে। এ ছাড়া কথা-কাটাকাটির জেরে কয়রার পল্লীমঙ্গল গ্রামে গত তিন দিনে কয়েক দফা মারামারি, হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।
অসন্তোষ-দ্বন্দ্বের জেরে কয়রা উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় হত্যা–সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। ১০ মে থেকে ৯ জুন পর্যন্ত এক মাসে খুলনার ১০টি থানা এলাকায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনাসহ ১৩টি লাশ উদ্ধার হয়েছে। এ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে।
কয়রা কপোতাক্ষ মহাবিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষক বিদেশ রঞ্জন মৃধা বলেন, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উপাদান কমে যাওয়ায় মানুষ অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে। মূল্যবোধ ও ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্ব ও ভালোবাসা কমে যাচ্ছে। এতে খুনখারাবি বাড়ছে। একসময় সমাজের একজনের ভালোতে সবাই আনন্দ পেতেন। নেতিবাচক দিকগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ করতেন। এখন সেই ব্যবস্থা উঠেই গেছে বলা যায়। পাশাপাশি রাজনৈতিক আধিপত্যের লড়াইয়ে প্রভাববলয় সৃষ্টি করতেও সহিংসতার ঘটনা ঘটছে।
৩ জুন খুলনা শহরে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে সবুজ হাওলাদার (৩০) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়। ৪ জুন খুলনা সদর থানার মতিয়াখালী খালের মধ্যে আটকে ছিল এক নারীর মরদেহ। পরে পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে। ওই নারীর পরিচয় না পেয়ে বেওয়ারিশ হিসেবে আঞ্জুমান মুফিদুলে দাফন করা হয়। গত ৯ জুন বিকেলে রূপসা উপজেলার আঠারোবেকী নদীতে পাওয়া যায় অজ্ঞাতনামা যুবকের মরদেহ। মরদেহের শ্বাসনালিতে গভীর ক্ষতচিহ্ন ছিল। রূপসা নৌ পুলিশের ওসি আবুল খায়ের বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, এটি একটি হত্যাকাণ্ড।
এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে রহস্য উদ্ঘাটন ও অপরাধী শনাক্তে দীর্ঘসূত্রতার কারণেই অপরাধ বেড়ে চলেছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ মানবাধিকার ব্যুরোর কয়রা উপজেলা শাখার সভাপতি তরিকুল ইসলাম। তাঁর ভাষ্য, প্রতিটি ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত শেষে দোষীদের আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে পারলে অপরাধপ্রবণতা কমে আসবে। আইনি প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতার কারণে অপরাধ বেড়ে চলেছে।
কয়রা উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুলী বিশ্বাস বলেন, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কয়েকটি ঘটনায় এলাকার মানুষের মধ্যে উৎকণ্ঠা বাড়ছে, এটা ঠিক। তবে প্রতিটি ঘটনায় পুলিশও তাৎক্ষণিকভাবে আইনি ব্যবস্থা নিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। যে বিষয়গুলো পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও সামাজিক ভ্রাতৃত্ববোধের মধ্য দিয়ে সমাধান করা যায়, সেখানে খুনাখুনি, অস্থিরতা, মামলা-হামলার মধ্য দিয়ে একধরনের বিভীষিকাময় পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে; যা সবার জন্যই অকল্যাণকর ও ভয়ানক।