শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয় গত বছরের ৫ আগস্ট। ওই দিন দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন তিনি। এরপর আত্মগোপনে চলে যান তার দল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। কেউ কেউ বিদেশে পালিয়ে গেছেন। তবে, অনেকে পালানোর সুযোগ পাননি। ধরা পড়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে। তারা এখন বিভিন্ন মামলায় কারাগারে আছেন। শিগগিরই কারামুক্ত হওয়ার সম্ভাবনাও নেই। তাই, এবার কারাগারেই ঈদ পালন করতে হবে তাদের।

গত ১৩ আগস্ট নৌপথে পালানোর সময় গোপন তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর সদরঘাট এলাকা থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে গ্রেপ্তার কর হয়। এরপর একে একে গ্রেপ্তার করা হয় আওয়ামী লীগের কয়েক হাজার নেতাকর্মীকে। তাদের মধ্যে অনেকে শেখ হাসিনা সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী-এমপি ছিলেন। 

কিছু দিন আগেও যারা আরাম-আয়েশে প্রাচুর্যের মধ্যে ঈদ উদযাপন করতেন, তাদের অনেককেই এবার কারাগারের চার দেয়ালের মধ্যে ঈদ পালন করতে হবে জৌলুসহীনভাবে। চারপাশে থাকবে না তোষামোদকারীদের ভিড়।

কারা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ঈদে ডিভিশনপ্রাপ্ত ভিআইপি আসামিদের জন্য থাকবে বিশেষ সুবিধা। ঈদের দিন দেখা করার সুযোগ মিলবে পরিবারের সদস্য ও স্বজনদের সঙ্গে। পাবেন স্বজনদের পাঠানো ঘরে বানানো খাবার খাওয়ার সুযোগ। 

নিরাপত্তার জন্য তাদের ফোনে কথা বলার সুযোগ বন্ধ ছিল। তবে, ঈদ উপলক্ষে দেওয়া হবে ফোনে কথা বলার সুযোগ। শুধু তাই নয়, ঈদের দিন এসব ভিআইপি কারাবন্দির জন্য বিশেষ খাবার পরিবেশন করা হবে। পায়েস, পোলাও, গরুর মাংস, ডিমের কোরমা, মুরগির রোস্ট, মাছসহ থাকবে নানা পদের খাবার। থাকবে মিষ্টান্ন ও পান-সুপারির ব্যবস্থাও। 

কারা অধিদপ্তর ও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের মাধ্যমে জানা গেছে, কাশিমপুর কারাগারে আছেন সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, জাতীয় সংসদের সাবেক চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ, সাবেক সংসদ সদস্য হাজী সেলিম, বি এম ফজলে করিম চৌধুরী, এম এ মালেক, আব্দুর রহমান বদি, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক এমপি মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ও সাবেক এমপি আবদুস সোবহান মিয়া গোলাপ, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক এমপি আহমদ হোসেন, সাবেক এমপি ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত, সাংবাদিক মোজ্জাম্মেল হক বাবু, শ্যামল দত্ত, শাকিল আহমেদ ও দেশ টিভির এমডি আরিফ হোসেনসহ অনেকে। কাশিমপুর কারাগারে নারীদের ভবনে সাবেক শিক্ষা ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডা.

দীপু মনি, সাবেক এমপি ও হুইপ মাহবুব আরা বেগম গিনি, সাবেক এমপি মাসুদা সিদ্দীক রোজী ও সাংবাদিক ফারজানা রুপা আছেন। 

ঢাকার কেরানীগঞ্জে কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন—সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় মহাজোটের মুখপাত্র আমির হোসেন আমু, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক তথ্যমন্ত্রী ও জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাবেক মন্ত্রী ও বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, সাবেক ভূমিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, সাবেক কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, সাবেক সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম, সাবেক বেসামরিক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুহাম্মদ ফারুক খান, সাবেক ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান, সাবেক এমপি সাদেক খান, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, সাবেক মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান, দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. শাহ কামালসহ অনেকে।

কারা অধিদপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি- উন্নয়ন ও গণমাধ্যম) জান্নাত-উল-ফরহাদ জানিয়েছেন, সকল বন্দি সাধারণ নিয়মে ১৫ দিনে একবার স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে পারেন। এর বাইরে ঈদ উপলক্ষে ভিআইপিসহ সব আসামি একবার স্বজনদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাবেন। ঈদের দিন ও পরের দুই দিনে একবার দেখা করার সুযোগ পাবেন আসামিরা। এই তিন দিনে যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে একবার কারাগারের বাইরে থেকে স্বজনদের দেওয়া খাবার পাবেন ভিআইপিসহ সব আসামি। খাবার নিরাপদ কি না, তা যাচাইয়ের সুযোগ থাকবে। 

তিনি বলেন, ঈদের দিন ও পরের দুই দিন মিলে তিন দিনে সব আসামি একবার ৫ মিনিট ফোনে কথা বলার সুযোগ পাবেন। তবে, আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিসহ ভিআইপি আসামিদের ক্ষেত্রে কোন নাম্বারে কথা বলা হবে, তা আগেই জানাতে হবে। সে নাম্বার যাচাই-বাছাই শেষে কারা কর্তৃপক্ষ নিরাপদ মনে করলে তারা কথা বলার সুযোগ পাবেন।

ঈদের দিন যা যা খাবার থাকবে ভিআইপি বন্দিদের জন্য: 
কারা কর্তৃপক্ষ সকল আসামির জন্য ঈদের দিনে উন্নত খাবারের ব্যবস্থা করবে বলে জানিয়েছেন জান্নাত-উল ফরহাদ। তিনি বলেছেন, ঈদের দিন তিন বেলা সব বন্দির জন্য ভালো খাবারের ব্যবস্থা থাকবে। সকালে খাবারের তালিকায় থাকবে পায়েস ও মুড়ি। দুপুরে থাকবে পোলাও, গরুর মাংস, মিষ্টি ও সালাদ। দুপুরের খাবার শেষে থাকবে পান-সুপারির ব্যবস্থা। রাতের খাবারের তালিকায় থাকবে মাছ, ডিমের কোরমা, ভাত ও আলুর দম। 

জান্নাত-উল-ফরহাদ বলেন, নিরাপত্তার জন্য ডিভিশনপ্রাপ্ত ভিআইপি বন্দিদের আলাদা সেলে রাখা হয়। ঈদের দিন প্রত্যেক কারাগারে ভিআইপি বন্দিদের একসঙ্গে নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা থাকবে, সাধারণ কয়েদিদের সঙ্গে নয়। কারাগারে খোলা মাঠে ঈদের নামাজ পড়ার ব্যবস্থা থাকবে। নারীদের জন্য ঈদের নামাজের কোনো ব্যবস্থার নির্দেশনা এখনো পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।

ঢাকা/রফিক

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র র ব যবস থ বল র স য গ স ব ক এমপ স বজনদ র ঈদ র দ ন দ র জন য যমন ত র মন ত র একব র সদস য ভ আইপ আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

সিজারের সময় নবজাতকের পা ভেঙে ফেলার অভিযোগ

পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় সিজারিয়ান অপারেশনের সময় এক নবজাতকের পা ভেঙে ফেলার অভিযোগ উঠেছে ক্লিনিকের চেয়ারম্যান ও আবাসিক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। রবিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাতে বিষয়টি নিয়ে রোগীর স্বজনদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে নবজাতকসহ তাদেরকে ক্লিনিক থেকে বের করে দেওয়া হয়। ওই রাতেই শিশুটিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (শেবাচিম হাসপাতালে) নেওয়া হয়। 

অভিযুক্ত চিকিৎসক পার্থ সমদ্দার কলাপাড়া পৌর শহরের জমজম ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের আবাসিক চিকিৎসক এবং চেয়ারম্যান।শিশুটির

স্বজনদের অভিযোগ, গত বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) প্রসব বেদনা নিয়ে জমজম ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভর্তি হন লালুয়ার ইউনিয়নের গোলবুনিয়া গ্রামের সিদ্দিক মিয়ার মেয়ে ও রফিকুলের স্ত্রী মিম বেগম। ওই রাতেই মিমের সিজারিয়ান অপারেশন করেন ডা. পার্থ সমদ্দার। সিজারের কিছুক্ষণ পরই টিকার কথা বলে নবজাতকের পায়ে একটি ইনজেকশন পুশ করা হয়। পরের দিন থেকেই নবজাতকের বাম পা ফুলতে শুরু করে এবং কান্না বাড়তে থাকে। বিষয়টি চিকিৎসক ও নার্সদেরকে অবহিত করলে তারা তাতে কর্ণপাত করেননি। উল্টো ওই ক্লিনিকের কর্মী ও নার্সরা নবজাতকের স্বজনদের সঙ্গে অসদাচরণের পাশাপাশি তাদের ক্লিনিক থেকে বের করে দেন। পরে অন্যত্র এক্সরে করে জানা যায়, সিজারের সময় নবাজতকের পা ভেঙে ফেলেছেন চিকিৎসক। 

নবজাতকের মা মিম আক্তার বলেছেন, বাচ্চা অনবরত কান্না করলে প্রথমে নার্স ও পরে চিকিৎককে অবহিত করা হয়। বাচ্চার বাম ফুলে গেলে তা জানানো হয়। কিন্তু, তারা এর কোনো প্রতিকার না করে আমাদের ধমকাতে থাকেন। ক্লিনিক ছেড়ে চলে যেতে চাপ প্রয়োগ করেন। 

নবজাতকের নানা সিদ্দিক বলেন, টিকার কথা বলে আমার নাতিকে শরীর অবশ করার ইনজেকশন দিয়েছিল নার্সরা। ইনজেকশনের কার্যকারিতা শেষ হওয়ার পরপরই আমার নাতি অনেক কান্না করে। আমার স্ত্রী নার্সদের বললে তারা তাকে মারধরের চেষ্টা করে। আমাদের সঙ্গে ক্লিনিকের সবাই অনেক খারাপ আচরণ করেছে। এভাবে রোগীদের সঙ্গে প্রাইভেট ক্লিনিকের কর্মকর্তারাও যদি অসদাচরণ করে, তাহলে আমরা কোথায় যাব?

সিজারের সময় নবজাকের পা ভাঙেনি, দাবি করে জমজম ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের চেয়ারম্যান ডা. পার্থ সমদ্দার বলেছেন, আমি শিশু বিশেষজ্ঞ নই। নবজাতককে একজন শিশু বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। 

কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শংকর প্রসাদ অধিকারী বলেছেন, যদি সিজারিয়ান অপারেশনের প্রশিক্ষণ থাকে, তাহলে এনেস্থেসিস্টও সিজার করতে পারেন। তবে, এনেস্থেসিস্ট একাই সিজারিয়ান অপারেশন করতে পারেন না।

ঢাকা/ইমরান/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মাদারীপুরে পুকুরে ডুবে দুই ভাইয়ের মৃত্যু
  • সিলেটে রোগীর মৃত্যুর জেরে হাসপাতালে হামলা-ভাঙচুর, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া
  • সিজারের সময় নবজাতকের পা ভেঙে ফেলার অভিযোগ