আ.লীগ নিষিদ্ধ করা এই মুহূর্তে দেশের মানুষের গণদাবি: নাহিদ
Published: 31st, March 2025 GMT
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার কোনও অধিকার নেই। দলটির কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা এই মুহূর্তে বাংলাদেশের মানুষের গণদাবি।
আজ সোমবার দুপুরে জুরাইন কবরস্থানে জুলাই গণঅভ্যূত্থানের শহিদদের কবর জিয়ারত শেষে তিনি এ কথা বলেন।
নাহিদ বলেন, আওয়ামী লীগের বিষয়ে অবস্থান খুবই স্পষ্ট। আগেও বলেছি, এখনও বারবার করে বলছি, আওয়ামী লীগের এ দেশে রাজনীতি করার কোনও অধিকার নেই। আওয়ামী লীগ বাংলার মাটিতে আর রাজনীতি করতে পারবে না। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ ও মুজিববাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জনগণ রায় দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এখন সেই রায় কোন প্রক্রিয়ায় কার্যকর হবে, সেটা হচ্ছে আলোচনার বিষয়। যেহেতু বিচার চলছে, আমরা বিচারের প্রতি আস্থাশীল। আমরা মনে করি, বিচার এবং রাজনৈতিক ঐকমত্যের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের যে বিষয়টি সেটি সুরাহা হতে পারে।
এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, ঈদে আনন্দের মাঝেও আমাদের মধ্যে দুঃখ রয়েছে, কারণ গণঅভ্যুত্থানে আমরা যেসব ভাইবোনকে হারিয়েছি, তাদের ছাড়া অনেকগুলো পরিবার ঈদ পালন করছে। সেই কষ্ট, সেই বেদনার ভাগ নিতেই জুরাইন কবরস্থানে এসেছি। এখানে ১০–১২ জন শহীদের কবর রয়েছে। আমরা কবর জিয়ারত করেছি। পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি, এই ঈদের আনন্দের মাঝে পরিবারগুলো কেমন আছে, সেই শহিদদের স্মরণ করা এবং সেই পরিবারগুলোর কষ্ট ভাগ করা যার জন্য মূলত আজকে এখানে আসা।
আওয়ামী লীগের বিচারের বিষয়ে তিনি বলেন, বিষয়টি বরাবরের মতোই বলে আসছি। এই পরিবারগুলোর সামনে তো আমরা দাঁড়াতে পারব না। জাতি হিসেবে আমরা যদি তাদের ন্যায়বিচার দিতে না পারি, প্রত্যেক মা-বাবার কাছে সরকার থেকে সহযোগিতা; এগুলো তাদের কাছে বড় বিষয় না, মূলত ন্যায়বিচারটা তারা যাতে পায়, তাদের সন্তানকে যারা গুলি করেছে, হত্যা করেছে এবং আমাদের দলীয় এজেন্ডার মধ্যে বিচার, সংস্কার, গণপরিষদ নির্বাচন তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের মধ্যে বিচারটাকে আমরা প্রথমে রেখেছি এবং গুরুত্ব দিচ্ছি।
নাহিদ ইসলাম বলেন, আপাৎকালীন আমরা বলছি যে, আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল করা উচিত। আওয়ামী লীগ মার্কা আগামী নির্বাচনে থাকবে না। এটাই শহিদ, আহত পরিবারসহ গণদাবি আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।
অভ্যুত্থানে আহত ও নিহতের পরিবারকে সহযোগিতার বিষয়ে তিনি আরও বলেন, আর সরকারের পক্ষ থেকে পাশে দাঁড়ানো ও সহযোগিতার যে কমতি রয়েছে, সেটা আরও বাড়ানো উচিত, আমি যখন দায়িত্বে ছিলাম, আমি আমার জায়গা থেকে চেষ্টা করেছি, যে পরিবারকে যেটা সহযোগিতা মাসিক ভাতার যে ঘোষণা হয়েছিল সেটা ঈদের আগে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আমরা যোগাযোগ করেছি, খুব কম পরিমাণ পরিবারের কাছে সেটি পৌঁছাতে পেরেছে। আমরা আশা করব, সরকার এসব বিষয়ে যে প্রতিশ্রুতি বা ঘোষণা দিয়েছে, তা দ্রুতগতিতে বাস্তবায়ন করবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: জ ত য় ন গর ক প র ট এনস প ন হ দ ইসল ম সহয গ ত র জন ত পর ব র আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
দুই বন্ধু ও দুটি স্বপ্নের বিদায়
উত্তরার ১৭ নম্বর সেক্টরের ৬ নম্বর অ্যাভিনিউতে বিজিএমইএ ভবন। রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠান টিম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল্লাহ হিল রাকিবের জানাজায় শোকাবহ পরিবেশ। প্রিয় মানুষকে চিরবিদায় জানাতে এসেছেন দীর্ঘদিনের সহকর্মী, বন্ধু, পরিবারের সদস্য ও পরিচিতজন। শোক ও অশ্রুতে তারা রাকিবকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করছিলেন। রাকিবের অসমাপ্ত কাজ ও স্বপ্ন এগিয়ে নেওয়ার অঙ্গীকার করেন সহকর্মীরা।
৯ জুন কানাডায় একটি লেকে ভ্রমণের সময় নৌকাডুবে মারা যান আবদুল্লাহ হিল রাকিব ও তাঁর বন্ধু বাংলাদেশ বিমানের ক্যাপ্টেন মো. সাইফুজ্জামান। কানাডায় বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া মেয়ের সঙ্গে সাইফুজ্জামান ঈদের ছুটি কাটাতে স্ত্রী ও আরেক মেয়েকে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে বন্ধু ব্যবসায়ী রাকিব ও তাঁর ছেলের সঙ্গে একটি লেকে ঘুরতে গিয়েছিলেন। অন্টারিও প্রদেশের স্টারজিয়ন লেকে ক্যানুতে (সরু লম্বা ছোট্ট নৌকা) চড়ে ভ্রমণে বের হন। নৌকাটি উল্টে গেলে পানিতে ডুবে প্রাণ হারান দু’জন। বিদেশের মাটিতে একসঙ্গে দুই বন্ধুর মৃত্যু, একই ফ্লাইটে ফেরা, দেশে ফিরে একই কবরস্থানে শেষ শয্যা!
অশ্রুসজল চোখে রাকিবের কানাডাপ্রবাসী মেয়ে লামিয়া তাবাসসুম বলেন, ‘বাবা স্বপ্ন দেখতেন, দেখাতেন। তিনি যেসব স্বপ্ন আমাদের দেখিয়েছেন, যেসব কাজ রেখে গেছেন, আমরা যেন সুন্দরভাবে তা বাস্তবায়ন করতে পারি। পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে কানাডায় গিয়েছিলেন বাবা।’
রাকিব ও সাইফুজ্জামান ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। তাদের মরদেহ বিমানের একই ফ্লাইটে শুক্রবার রাতে ঢাকায় আনা হয়। জানাজা শেষে ঢাকায় বিমানবাহিনীর কবরস্থানে দু’জনকে সমাহিত করা হয়। তাদের সহকর্মী ও বন্ধুরা বলছেন, এর মধ্য দিয়ে অকালে দুটি স্বপ্ন বিদায় নিল।
রাকিবের সহকর্মীরা বলেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক পণ্য রপ্তানিকে ১০০ বিলিয়ন বা ১০ হাজার কোটি ডলারে উন্নীত করার স্বপ্ন দেখতেন রাকিব। তারা সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে সর্বাত্মক সহায়তা করবেন বলে জানান।
উত্তরায় জানাজার আগে বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘আবদুল্লাহ হিল রাকিবের সঙ্গে বেশ কয়েক বছর কাজ করেছি। সব সময়ই দেখেছি, তিনি নিজের পরিবার, বন্ধু, ব্যবসা ও বিজিএমইএকে সমান অগ্রাধিকার দিয়েছেন। তৈরি পোশাকশিল্প খাতের যে কোনো সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তিনি সামনে চলে যেতেন। রাকিবের দর্শন ছিল– সফলতার মাত্রা নেই। তবে একজন ব্যক্তি কতটা সফল, সেটি তাঁর কর্মযজ্ঞ দেখলে বোঝা যায়।’
বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি এস এম ফজলুল হক বলেন, রাকিব উজ্জ্বল প্রদীপ। স্বপ্ন ছিল অনেক। ঝোড়ো হাওয়ায় সেই প্রদীপ নিভে গেছে। সবাই তাঁর জন্য দোয়া করবেন।
রাকিবের জন্য সবার কাছে দোয়া চান বিজিএমইএর সর্বশেষ নির্বাচনে বিজয়ী রাইজিং ফ্যাশনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদ হাসান খান। স্মৃতিচারণা করে বক্তব্য দেন রাকিবের বড় ভাই আবদুল্লাহ হিল নকীব।
ক্যাপ্টেন সাইফুজ্জামানের সহকর্মীরা জানান, শুক্রবার তাঁর মরদেহ কানাডা থেকে ঢাকায় আনার সময় তাঁর সঙ্গে স্ত্রী, দুই মেয়ে, বোন এবং ভগ্নিপতি ছিলেন। মরদেহ পৌঁছার পর উপস্থিত পাইলটরা সহকর্মীর মরদেহে স্যালুট দেন। এর পর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও পাইলটস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। পরে মরদেহ ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) মর্গে রাখা হয়। সেখান থেকে মরদেহ নেওয়া হয় তাঁর বনানীর ডিওএইচএসের বাসায়। বেলা ১১টার দিকে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর ঘাঁটি বাশারের কেন্দ্রীয় মসজিদে জানাজা হয়। সাবেক বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল মোহাম্মদ ইনামুল বারীসহ পাইলট, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা এতে অংশ নেন। পরে জোহরের নামাজ শেষে ডিওএইচএস মাঠে একসঙ্গে ক্যাপ্টেন সাইফুজ্জামান ও রাকিবের জানাজা হয়। সাইফুজ্জামানকে বাবা-মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হয়। একই কবরস্থানে দাফন করা হয় রাকিবকে। তাঁর বাবা বিমানবাহিনীর সদস্য ছিলেন।